28 October 2015

♠ সংবেদ্য ।। প্রথম বর্ষ ।। প্রথম কুঁড়ি ।। প্রথম সূচী ♠


=:মুক্তগদ্য:=
রত্নদীপা দে ঘোষ
বাবুল হোসেইন
শ্যামলী চ্যাটার্জী

=:গল্পামী:=
মাহমুদ সিদ্দিকী
মামুন রণবীর
জাকিয়া জেসমিন যূথী
প্রতিশোধ

=:একক কাব্যকথা:=
জয়তী অধিকারী -বিজ্ঞাপিত সাফল্য
আইরিন সুলতানা-একটি হারানোবিজ্ঞপ্তি
সাবরিনা সিরাজী তিতির-রঙহীন
রাসেল রহমান-অবিনাশী
শুভ্র আলোক-আপোষ অথবা মৃত্যু
তানি হক-সঙ্কেত
তানজিনা জান্নাত-চোখের অতলে
সুস্মিতা শীল-স্বপ্নের মধ্যে ঘুম
শাওন হাসান-শিরোনামহীন
কাজী ফাতেমা ছবি-হেমন্তেরসকাল

=:যুগল কাব্যরুপ:=
সুলতানা শিরীন সাজি
রিয়া চক্রবর্তী
শফিকুল রাজু
সেলিম রেজা
ডা.সুরাইয়া হেলেন
অনিন্দিতা মুক্তা
এমদাদুল হক তুহিন

:=কাব্য তিন:=

♠ চৈতী আহমেদ এর কবিতা 

♠ রিকিদাশ এর কবিতা ♠

♠ সোহেল মাহরুফ এর কবিতা 



=:নিমগ্ন আলোচনা:=
ফ্লোরা সরকার
রুখসানা কাজল
মৌসুমী রহমান

=:দীর্ঘ কাব্য:=
দেবাশীষ মজুমদার

=:সুদূর সাহিত্য:=
পিয়ালী বসু
কিথ জ্যারেট-এর

সাজিদ আবির
এডগার এলেন-পো’র

=:গল্পকথা:=

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

মাহবুব আলী

মাসুম বিল্লাহ

আরিফুন নেছা সুখী

মনোজি কুমার দাস

নাসরিন চৌধুরী

তাপসকিরণ রায়

রাজীব চৌধুরী

=:ছন্দরুপ:=

বাবুল হোসেইন




যাপন ও বিবিধ ছলাকলার ভিতর ক্রমেই নিজেকে নিমজ্জিত করে ফেলি। ভিনেগারে চোবানো টাটকা সতেজ জীবন এখন আমার। সদাইপাতির ফরমালিন আর বিষ ধীরে ধীরে কাবু করে ফেলছে সমস্ত বেঁচে থাকাকে। কোনোদিন ভোরে হিমেল বাতাসের ঘ্রাণে কুয়াশা ও কবিতার রাতযাত্রা শেষে আমাকেও পেতে পারো। আমি এভাবেই আছি এখন। শিউলি কুড়ানো শৈশবে- ফুল কুড়ানো বালক। শাদা থান রক্তিম সিঁধুর চক্রাকার। আজাদ মঞ্জিল স্বপ্নের ভিতর দিব্যি রয়ে যায় বড় হতে হতে।

না ফুরানো দিনের ছবি আঁকি। তবুও ফিরিয়ে যায় দিগন্তের রঙ। সন্ধ্যামালতি একদিন ফ্রক ছেড়ে শাড়ী ধরে তার সুউচ্চ মিনারের গজিয়েছে শ্যাওলা পাতা-সবুজ সুন্দর। শিউলির ঘ্রাণ ভুলে হঠা সবুজের ঘ্রাণ কাবু করে বিকেলের দস্যু বাতাস। আর নিরঞ্জন পড়শী থেকে কেবল বন্ধুই হতে থাকে। বুকের অর্গল ভেঙে ঢুকতে থাকে আরো গহিনে। পাড়ার যাবতীয় রুপসীরা আমাদের অন্দরমহলে এসে হানা দিতে থাকে প্রতিদিন। আমরা কুড়িয়ে নেই ঝরাপাতা, মরা ডাল, হরিত ছিটেফোঁটা। নিরঞ্জন হরণ করে দস্যুতা, রমনীয় আভা। শ্রীমতি শিপ্রাকে ভালোবেসে একদিন দেহফুল দেখতে চেয়েছিলো নিরঞ্জন। শুনে, শিপ্রার স্কুলশিক্ষক বাবা জাতপাতের দোহাই দিয়ে ছোট জাতের নিরঞ্জনকে ভরা মজলিসে জুতাপেটা করেছিলেন। নিরঞ্জন, পেটানো দেহাকৃতি, পুরুষালি প্রচণ্ড, একদিন শিপ্রার লাল ফ্রক খুলে অতলে হারাতে হারাতে বলেছিলো তোর বাপ একটা বেশ্যাবাজ, এই তার প্রতিশোধ, বলিস তাকে। শিপ্রা'রা কোনোদিন আর মুখোমুখি বসেনি। এই গল্পে বরাবরই হিরোর সাজে চোখ রাঙাত নিরঞ্জন আর তার প্রচণ্ড দেমাগি মুখাবয়ব দেখে আমিও স্বপ্ন দেখতাম একদিন প্রেমিক হবো নিরঞ্জনের মত।

কোন ছবিটা মনে ধরে থাকে। পালতোলা নৌকার স্মৃতি, বাশবনে পাখিদের হানা দিয়ে শিকার করে নিতাম বকের ছানা, ঘুঘুর ছানা। অসীমানন্দে খাঁচায় পুরে নিজের অহংকার ষোলআনা দেখাতাম। আহারে সঙ্গীদল- তোরা এখন বিশ্বনাগরিক। দেশ বিদেশের যাবতীয় পাপ ও পঙ্কিলতা মাড়িয়ে স্বভূমে ফিরলে কোনোদিন আমরা মুখোমুখি বসবো ভাঙা সিন্দুকের চাবি হাতে নিয়ে। রিলভর্তি ছায়াছবি দেখবো আর কাঁদবো আর হারিয়ে যাবো সাঁকো ডিঙিয়ে অতল অতল। তোরা আসিস। আমিতো ফেরারি হয়েই আছি এইসব মনোকষ্ট আর ভালোবাসাহীনতার দায়ে। আর জলকাঁদামাখা তুমুল কৈশোর আমাদের। দেখা হোক তবে। একদিন দূরদেশে বসে সুমন লিখেছিলো অইসব না ফুরানো গল্পবেলা। ইনবক্স ঘন হওয়া কান্নাজলে নীরবতা পালন করেছিলো। লিখেছিলো একদিন তুমুল আড্ডা দিবে। আমি আড্ডাপ্রিয় নই জেনেও বলেছিলাম হবে। লিখতে যতোটা পারি বলতে অনেক কম বলে বলা হয়না চৌদ্দআনাই। তবু লিখে রাখি সেইসব বাদামী স্মৃতিগল্প- ডোরাসাপ কোনোদিন যদি তেজোদীপ্ত হয়।


বেতবনে ফুটে আছে বেতফুল। নক্ষত্রের শুভ্রআলো এসে রাঙিয়েছে চরাচর। ঘন জঙ্গলের ভিতর সাপ বেজি মাড়িয়ে তুলে আনতাম জীবনদাশের উপমা- তখনো শিখিনি অইসব যাপন তিনি নিভৃতে করে গেছেন এক শতাব্দি আগেই। আরাধ্য দেবতা হয়ে তিনি কবেই বসে আছেন আমাদের বেদিমূলে। থোকা থোকা জঙলি ফুল দেখে প্রণতি দিকে কোনোদিন বলা হল না তার খোঁপায় একজোড়া জঙলি ফুল কতোটা মোহময় করত জগ-সংসার। তার লম্বা ছেড়ে দেওয়া অলকার বনে সবুজ অরণ্য ক্রমেই ঘনকৃষ্ণ হয়ে উঠত।

---------------------------------------------------------------------------------------------

25 October 2015

শ্যামলী চ্যাটার্জী






১.
জীবনযুদ্ধে আমি পরাজিত সৈনিক। সংসাররূপ অমিয় সাগরে অবগাহন করিয়া ইস্তক আমি রণক্লান্ত,অবসন্ন। প্রতিটি মুহূর্তেই আমার নিকট বর্তমানযেন দুর্বিসহ। অভাগীর স্বর্গেরক্ষুদ্র বালকটির ন্যায় আমার এই সংক্ষিপ্ত সংসার সংগ্রামে বড়ই তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করিলাম।

সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু অনলে পুড়িয়া গেল।
অমিয় সাগরে সিনান করিতে সকলি গরল ভেল॥
সংসারের পঙ্কিল আবর্তে যতই জড়াইতেছি প্রেম প্রীতির প্রতি মোহ ততই তিরোহিত হইতেছে। মূর্খ ও ক্ষুদ্র প্রাণী গণ বিস্মৃত হইয়া যাই বন্ধন অনিত্য, কর্মই অবিনশ্বর। কবি হেমচন্দ্র যথার্থই বলিয়াছেন-
দারা পুত্র পরিবার তুমি কার, কে তোমার"
এই অমর বানী যেই রূপে একজন পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সেই রূপে নারীর ক্ষেত্রেও নিয়মের ব্যতিরেক না ঘটাই স্বাভাবিক। পুরুষোত্তম বলিয়াছেন, “পিতার জন্য, সত্যের জন্য দুঃখ ভোগ করিও পরম শান্তির অধিকারী হইবে । কিন্তু আমার এ দুঃখ পিতার তরেও নহে, সত্যের তরেও অদ্য আর নহে। তবে সেই দুর্দশা ভোগ উপরন্তু কি প্রকারে শান্তির অধিকারিণী হইব? দীর্ঘদিন ধরিয়া ভোগ করিতেছি ,মৌখিক প্রতিবাদও করিয়াছি ফললাভ হয় নাই। বুঝিয়াছি এই উন্মাদনা ভালোবাসা নহে ভালোবাসার অপলাপ মাত্র। তাহা দিয়া আর যাহাই হউক সুস্থ সমাজ গঠিত হইতে পারেনা। হয়ত ভাবিতে পারেন পূর্বের অতি সাধারণ রমণী অদ্য স্বৈরাচারিণী। সত্তা একটিই, বিভিন্ন রূপান্তর। এত ঘৃণা , এত উপেক্ষা লইয়া মানুষ বাঁচে না। চরম সত্য হইল এই মায়ার বাঁধন হইতে সে নিষ্কৃতি চাহে। ভুল সে বহু প্রকারে শোধন করিবার প্রয়াস করিয়াছে কিন্তু মাত্রা এতটাই উর্ধ্বে যে মার্জনা করিবার কোন অবকাশ নাই ।

২.
একটি আশা বৃক্ষের বীজ বপন করিয়াছিলাম। অঙ্কুরিত রূপ হইতে ধীরে ধীরে চারা হইল। চেতনা বোধ রূপ জল প্রদান উপরন্তু অদ্য উহা মহীরুহে রূপান্তরিত। শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটাইয়া দিব্য বাঁচিয়া বর্তিয়া আছে। ব্যাথা, দুঃখ, কামনা, বাসনা, ক্রোধ, সংযম, আনন্দ, হৃদয়হীনতা, আবেগ, হিংসা,প্রণয়, প্রভৃতি সুদৃশ্য ফল গুলির বিকাশে বৃক্ষ মনলোভা। ক্রমে সুমিষ্ট পরিপক্ক ফল তাহাদের সুবাস ছড়াইয়া পথিক হৃদয় হরণ করিতেছে। সকলের ভাগ্য প্রসন্ন নহে তাই যে কটিতে পচন ধরে সেই গুলিই তাহাদের অদৃষ্টে জুটিয়া থাকে। উত্তম ফল গুলি অবশ্যই খারাপ গুলানের সহিত থাকিয়া একপ্রকার নষ্টই হইয়া যায়। তখন সেগুলিও কাহারো গ্রহণের যোগ্য রহে না। একক্ষণে সমস্যা হইল এই দুই জাতির ফল পৃথকীকরণ হইবে কি প্রকারে? ইহা ভাবিয়া হই সারা।


৩.
তুমি আর আমায় কিসের তরে শঙ্কা জাগাইবার প্রচেষ্টায় অধীর? ঈশ্বর প্রদত্ত সকল আশীষ আমি অবহেলায় করিয়াছি উপেক্ষা, তাই তো আজি বলিতে পারি না...যদি কণ্ঠ দাও আমি তোমার গাহি গান । প্রত্যহ প্রভাতেই নূতন দিনের সূত্রপাত কে নিঃশেষে সমাপ্ত করিয়া থাকি স্বয়ং নিজ হস্তে। তুমি কি শঙ্কা জাগাইবে? খেলা ভাঙিবার স্বরলিপি তো আমারই রচিত, ক্ষুদ্র অথবা বৃহ সকল আশায় নিত্য নিষ্পেষিত হইতেছে আমারই গোচরে। অহরহ যে সৃষ্টি তাহার এক লহমায় বিনাশ ঘটাইতে আমার তুল্য অপারগ আর কে? সমুদয় শুভের সূচনার পূর্বেই তাহার সমাপন ঘটাইবার মত রঙ্গরস তো আমিই দেখাইয়া থাকি। দেখ এই সত্য আমি প্রকাশ করিতেছি , বুঝিয়া লইবার দায়ভার আপনি লহ। তথাপি অনুপ্রেরণা যদি বলিতে চাহ...তাহার রসদ টুকুই অন্বেষণের নিমিত্ত আমি ঘূর্ণাবর্ত স্বরূপ ছুটিয়া বেড়াইতে থাকি তোমারই চারিদিকে....অহরহ।

রিয়া চক্রবর্তী




মিলন মেলা  
রাতের নির্জনে হারিয়ে যেতে চাই,
হারিয়ে যেতে চাই তোমার
গহীন বুকে।
মান অভিমানের দরজার ওপারে
বাঁশির সুরে বেজে চলেছে আমাদের
একান্ত কথামালা।
যেনো রাধার মিলন
  কৃষ্ণের সাথে।
কৃষ্ণ পিয়াসী প্রেমিকা রাধা আমি।
আমার ঠোঁটের ওপরে তোমার ঠোঁটের মানচিত্র স্পষ্ট।
উত্তপ্ত সাহারা মরুতে শুষে নিয়েছি তোমার সবটুকু লালারস।
লতানো গাছের মতো তোমাকে জড়াতে গিয়ে উথলে উঠেছি, আমার
বুকের ওপরে তোমার অভ্যস্ত হাতের আনাগোনায়
তোমার আবেগ দন্ডের লবণামৃত লেগে রয়েছে
আমার হাতে, ঠোঁটে, জিবে, আকণ্ঠ পান করেছি আমি
তোমার অমৃত।
এলোমেলো বিছানায় লেগে রয়েছে সমুদ্র মন্থনের দাগ।
ভিসুভিয়াসে অগ্ন্যু
পাতের লাভারস চলকে পড়েছে চাদরে।
পৃথিবী কাঁপিয়ে ভাসিয়ে দিয়েছি নিজেকে তোমার
তুমুল দংশনে।
সীতা তো সবাই হয়
রাধা ক'জন হতে পারে।





তুমি আর আমার মহাপৃথিবী
তুমি কাছে এলেই
আমার বেঁধে রাখা প্রেম
সমস্ত শিকল ছিঁড়ে বেড়িয়ে আসে।
চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দেয়।
আর তখনই আমার সর্বক্ষণ
কল্পনায় সাথে থাকা অনু অনু তুমি গুলো
দারুন বিদ্রোহে ঝড় তোলে
আমার চোখ তখন তুমিময়।
শরীরের উজানবেয়ে নামে লাভার স্রোত
তুমুল বৃষ্টি আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়
জেগে উঠি বৃষ্টিস্নাত হয়ে, বুকে তখন
ছলা
ছলা, উথাল পাথাল ঢেউ।
তোমার প্রশ্বাস আমার শিরায় শিরায়।
গিরি গুহা উপচে পড়ছে ম্যাগমা স্রোত
ধীর লয়ে বেজে চলেছে ট্রাম্পেটের সুর।
চারিদিকে থৈ থৈ ভিজে ফুলের রেণু।
তারপর সুর্য ক্লান্ত হলে, রণক্লান্ত
আমি শিশুর মতো খুলে দিই
পৃথিবীর ওপরে ঘুমের বাঁধ।