05 September 2016

হাফিজ রহমান


শিহরিত বৃষ্টি
আষাঢ়ের শিহরিত বৃষ্টি সারা দিনমান ক্লান্তিহীন ঝরে,
আমি তার কতটুকু হৃদয়ে করেছি ধারণ,
অসীম নির্জনে দুজনে ভিজবো বলে।

সীমাহীন খোলা প্রান্তরে, নরম ঘাসের বিছানায়,

দুজনে নিবিড় হবো।
তৃষ্ণার্ত ওষ্ঠ বেয়ে ঝরে পড়া বৃষ্টির নির্মল জলের স্বাদটুকু
তুমি যত্ন করে রেখে দিও তোমার ওষ্ঠে জড়িয়ে।
শিহরিত তনুখানি ধরবো যতনে পালকের মত-
মেখে নেবো সারা অঙ্গে স্বর্গের সৌরভ।
মুহূর্তগুলো অনন্তকাল ধরে রাখবো যতন করে,
শুধু তুমি আর আমি আর প্রেমাসক্ত খোলা আকাশ!

তারপর স্বপ্ন হারাবে- জেগে দেখবো বালুচরে
ভেসে আছি একা আমি, তুমি নাই পাশে,
হারাতে পারবো না যে তাই লাগে ভয়,
তাই তো ভালবেসে দূরে দূরে রই,
আর শরতের শিউলিতে তোমাকে খুঁজি!



সেই শরতের ভোর
পিছনে ফিরে দেখি, সেই শরতের ভোর,
নরম ঘাসের বুকে শিউলি ঝরানো পথে
হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত আমি-
সারারাত জেগে জেগে ভেবেছি যে কথাগুলো,
আমার সারা অবয়বে সে কথা লিখে নিয়ে, ভালবাসি-
এইটুকু বোঝাতে, যতবার তোমার সামনে গেছি,
আমার উদ্ভ্রান্ত মুখের পানে চেয়ে একটা বর্ণও কি বুঝতে পারোনি তুমি?
নাকি প্রতিবার না বোঝার ভান করে দিয়েছো ফিরায়ে।

যতবার সামনে দাঁড়াই, লেখাগুলো কি অস্পষ্ট থেকে যায়
আমার খারাপ হস্তাক্ষরের মত?
কোনদিন পড়তে পারোনি তুমি
সে লেখা গোপন থেকেছে হৃদয়ে আমার।
মুখেও বলিনি আমি কি এক গভীর অভিমানে,
তাইতো শিউলি ভোরের সেই প্রেমগাঁথা
কখন যে ঝরে গেছে বিবর্ণ শুষ্ক শীতে।
আর এক বসন্তদিনে তাই তুমি হেঁটে যাও
আমার হৃদয় দলে কত সহজেই,
আমার না বলা কথা ঝরে যায় শুকানো শিউলি হয়ে।

এতোদিন পর মনে হয়, বুঝতে যদি সেই হৃদয় লেখা,
এই যে পৃথিবীর আজকের ছবিগুলো অন্যরকম হতো!
হয়ত আজ একাকী বিরহী নই,
তোমার হাত ধরে হাঁটতাম নরম ঘাসের বুকে,
সূর্য যে আলো ছড়াতো তোমার মুখে
সে আলোর শক্তিতে পেরিয়ে যেতাম নরকের সীমানা,
কত অনায়াসে-




Bottom of Formকথোপকথন
তার সাথে কথা হয়, কিযে বলি, কেন বলি,
কিভাবে বলি, কিছুই কি মানে হয়?
এই যে যেমন-
: তোমার আকাশে চাঁদ আছে?
: চাঁদ কোথায়? খটখটে রোদ!
 একটু মেঘ আছে- হয়ত বৃষ্টি হবে!
 আষাঢ়ের মেঘতো!

: আমার মনেই থাকেনা, তোমার ওখানে দিন!
 আমার এখানে রাত, আরো পরে চাঁদ উঠবে,
আমি হয়তো দেখতে পাবোনা, ঘুমিয়ে যাবো!
আচ্ছা, তোমার টবে ফুল ফোটে?
: ফোটে তো, একটা লাল গোলাপ ফুটে আছে, তোমাকে দেবো।
: কি করে নেবো? আমি যে দূরে, যোজন যোজন!
: মন দিয়ে নাও!
: কি যে হয় ছাই, ভালো লাগে না কোনকিছু!

তারপর শুনশান, চারদিক নৈঃশব্দ ছেয়ে থাকে,
কি যে এক অস্থিরতা ঘিরে রাখে!

এভাবেই কতক্ষণ যায়, অস্থিরতা, আবার শুধাই-
: আচ্ছা, এটা কি নেশার মতন?
: কোনটা?
: এই যে অর্থহীন কথা বলা।
কতকিছু বলি, কিছু মানে হয়, কিছু হয় প্রলাপ,
কিছুতো মনেও থাকেনা।
: প্রেমে পড়লে এমন হয়, তুমি প্রেমে পড়েছো।
হা হা হা...

তারপর যতক্ষণ যায়, তোমার হাসির শব্দ প্রতিধ্বনি হয়,
আমার হৃদয় গুহায়- বার বার যেন বলে যায়,
ভালো আমি বেসেছি তোমায়!

তবুও সজাগ হই, নিজেকে শাসাই।
তোমাকেও বলি, অত প্রশ্রয় দিওনা মেয়ে,
নিজের দিকে চেয়ে একটু কঠোর হও!
মাঝে মধ্যে ধমক-ধামক দাও!
তোমার জন্য মরতে পারিনা,
আরেক জীবন বাঁচতে পারি, যদি হাত বাড়াও!
সত্যি আমি আসবো, তুমি যদি সাহস দাও!





এ কেমন ভালোবাসা
কী প্রচন্ড শক্তি ধরে একটা শব্দ- ভালোবাসি
তুমি যখন ডাকলে, আমি নরকের কিনার থেকে শুনলাম,
আর ফিরে এলাম নবযৌবনের উদ্ভাসিত আলোর ঝলকে!
সুদূর থেকে তোমার সে ডাক, আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে কি আলোময়তা ছড়িয়ে দেয়,
আমাকে নিয়ে যায় অমরার পানে।
এতদূরে, তবু মনে হয় পাশে আছি কোন অদৃশ্য বাঁধনে!

এ কেমন ভালোবাসা কে জানে?
শুধু এটুকু জেনেছে হৃদয়, বিশুদ্ধ হৃদয়ের ডাক,
পৌঁছে যায় প্রার্থিত হৃদয়ে।
তাকে উপেক্ষা করার কোন শক্তি থাকেনা।
এতোটাই শক্তিশালী শব্দ তুমি- “ভালোবাসি”!

তুমি যেদিন বললে ভালোবাসি,
সেদিন হতে বদলে গেল চিরচেনা এ ভুবন,
আকাশে আকাশে ধ্বনিত হলো- ভালোবাসি, ভালোবাসি-
সাগরের কল্লোলে ধ্বনিত হলো- ভালোবাসি, ভালোবাসি





তোমার আশায় থাকি
চারিদিক যখন নিঝুম হয়ে আসে,
আমার প্রতীক্ষা শুরু হয়।
তোমার আসার সময় শেষ হয়ে যায়।
কতক্ষণ, কতক্ষণ, অপেক্ষা শেষ হয়না,
অসহ্য সময় কাটেনা, কাটেনা।
আমি থাকি প্রতীক্ষায় তোমার ।

অবশেষে যখন অপেক্ষা অসহ্য হয়,
ঘর ছেড়ে চলে যেতে পা বাড়াই দরজার দিকে-
তখনই তুমি এসে হাত ধরো, ফিরে আসি নিজের ভুবনে।
তুমি এসে হাত রাখো কপালে আমার
সব ক্লান্তি মুছে যায়, অভিমান তবুও থাকে!
-দেরী কেন? আমার সময় যে কাটেনা।
-দেখতে চেয়েছি, কতটা উতলা তুমি, কতটুকু ভালোবাসো,
-এতোদিনেও বুঝোনি তুমি?
তুমি ছাড়া শুন্য হয় আমার জীবন, যেন এক বিরানভূমি!
যেমন দেখেছি পাহাড়ের বিরহী বাতাস,
কেঁদে যায় দেয়ালে দেয়ালে
প্রতিটা গুহার মাঝে সারাক্ষণ হতাশার শ্বাস ফেলে যায়।
যতক্ষণ থাকো, তোমার নরম হাত ছুঁয়ে থাকে কপালে আমার
কখনো বা উষ্ণ ঠোঁট নেমে আসে
আবার ছুঁয়ে তপ্ত কপাল- কি এক গভীর আবেশে
নিবিড় মিলনের স্মৃতি বুকে নিয়ে কখন ঘুমাই,
জেগে দেখি, তুমি নাই-
আবার শুরু হয় অপেক্ষার কাল, এভাবেই অনন্তকাল,
এভাবেই দিবস রজনী- আমি যেন
তোমারই আশায় আশায় থাকি।



শেষ বিকেলে তোমার আশায়
সারি সারি বাবলার বন পেরিয়ে
আকন্দ, বনকলমীর ফুলদল মাড়িয়ে
হলুদ শাড়িতে নিজেকে জড়ায়ে যখন দাঁড়াতে এসে,
শুধু তোমার মুখে সূর্যের যে আভাটুকু লেগে
যে মোহময় আবেশ ছড়াতো,
তাই দেখবো বলে থমকে দাঁড়াতাম
সেই কতদিন আগে, শুধু তোমার অপেক্ষায়,
কেটে গেছে কত সুবর্ণ সময়!
অপেক্ষায় থেকে থেকে কখনো বা বাবলার
হলুদ ফুল কালো হয়ে গেছে,
কখনো বা স্তব্ধ বাতাস হঠা ফেলেছে দীর্ঘশ্বাস,
কখনো রক্ত শুষে চিনে জোঁক গোল হয়ে গেছে,
কখনো মলিন ঘাস কপোল চুমে এলিয়ে পড়েছে,
তবু আমি অপেক্ষায় থেকেছি, শুধু তোমার
সোনালী হাসি দেখবো বলে,
শিহরণ জাগানো সে হাসির শব্দ শুনবো বলে!

দীর্ঘ সে অপেক্ষা একদিন শেষ হয়,
তোমার হাসি হারিয়ে যায় কোন অখ্যাত বনে,
তখনও আমার অপেক্ষা, বোকার মত!
অথচ আমার অপেক্ষায় কত চাঁদ জাগে,
কত চাঁদমুখ জাগে আমাকে ছোঁবে বলে,
আমি তার রাখিনি খবর
তাদের সে সুখের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে
ভাসবো কি সুখের ভেলায়?

জানি না, আমি জানি না, শুধু তোমার মুখ মনে আসে,
শুধু তোমার হাসির ঘ্রাণ ভাসে বাতাসে,

আমি বহতা নদীর কুলে উদাস বসে থাকি!


No comments:

Post a Comment