25 October 2017

পরিতোষ হালদার





মা ও আপেলের ঘুম
মায়ের আঁচল থেকে টুপ-টাপ খসে পড়তো সংসার, দিদিরা তা কুড়িয়ে এক্কাদোক্কা খেলতো।
আমি ভাবতাম সংসার বুঝি খেলা।

বাবা বলতেন- সংসার একটি বিজ্ঞান।

মা বিজ্ঞান জানতো কিনা জানিনা,
তবে সে যখন সারা বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের মতো হেঁটে বেড়াতো তখন যাবতীয় গতির সূত্রগুলি তার পিছে পিছে দৌড়াতো।
আপেলগুলি মাধ্যাকর্ষণের মতো ঘুমিয়ে থাকতো আলমারিতে।
 
একদিন মাও ঘুমিয়ে গেলো। কী দ্রুত উড়ে গেল একটি ডানাওয়ালা ঘড়ি।

আজ সমস্ত বোধ তার কবরের কাছে স্তব্দ হয়ে যায়।
আর সে বিজ্ঞানের সীমায় অদৃশ্যমান এক নদী।


নাহিদা নাহিদ





সুখেন,
যেদিন চলে গেলে , পিছন থেকে ডাকতে গিয়েও ডাকতে পারিনি , গলার মধ্যে কিছু একটা বিঁধে ছিলো, কিছু একটা! তোমার ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হয়ে শূন্যে মিলিয়ে গেলো, তুমি ফিরে চাইলেনা আর! এভাবেই হয়তো চলে যেতে হয়, চলে যায় কেউ!- কি হতো যদি একবার ফিরে চাইতে?
সুখেন, তোমার সাথে কিছুই মেলেনি আমার, কিছুই না; তবুও বুকের ভেতরটা শূন্য করেছো তুমিই আমার। তোমার বাঁকা বাঁকা কথা, চোখের চকচকে তেজ, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝামেলা করার বাহানা, কিছুই না। তুমি ঘাড় কুচকে থাকা থুত্থুড়ে বুড়ো , দণ্ডে দণ্ডে খুঁজে ফেরো ভুল, অসভ্য আদিম মানুষ তুমি! তবুও জানো তুমি, তোমার সবটাতেই আমার কেমন ঘোর! তোমার খেয়ালিপনা, তোমার তুচ্ছতায়ও আমার আসক্তি, জেনে রেখো একমাত্র তুমিই ছিলে আমার বুকের ভেতরে জমে থাকা সবটুকু হেমলক বিষ! আমার সুখ! 

শাহ আজিজ



হেমন্তের বিচ্ছেদ
সজোর বর্ষণ নেমেছিল দুচোখ ভরে
হৃদয় আকাশ ভরা কালো দুঃখ মেঘ
৩২ টি হেমন্ত -যেন এইতো সেদিন 
সিড়িতে বসে পাশাপাশি , মেনে নিতে
জীবনের প্রস্তরসম বাস্তব ব্যবচ্ছেদ ।
ক’ ধাপ নিচেই পুড়ছিল শেষহীন শেষের কাব্যমালা
আমাদেরি ইচ্ছায় - স্বেচ্ছায় চির নির্বাসনে ! 
এতটুকু মান নেই , নেই অভিযোগ
শুধু চোখ চিক চিক হোয়াং হোর 
বালুতট  - মাঝে দুফোটা জল
সযত্নে মেখে নিলাম গণ্ডে – মেলাবো
আজীবন আমারি যমুনার ধারাপথে ।
হেমন্ত ভালোবাসাকে দ্বিখণ্ডিত করে
ভাসিয়ে দেওয়ার তরে বো -হাই উপসাগরে
দূর-দূরান্ত হতে অমোঘ শর্তহীন ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি
আঙ্গুলে লেখালেখি সিঁড়ির ধুলিতে
শতপদের রেখে যাওয়া পদচিহ্নর মাঝে ।
আবারো কখনো হবেনা, হবেনা দেখা জেনেও
দিলাম জানিয়ে , বিচ্ছেদের দেহ দুটি দুপথে ।
আমি সাথে নিয়ে যাবো হটাৎ পাওয়া
ভালোবাসার মৃগনাভি সম সুগন্ধি আঁধার
আমি সবেগে টেনে নিলাম নিলাম বাওলিকে
আমার কাধে, বুকে, ঠোঁটে শেষবারের মত ।। 


তৈমুর খান




 

সরবত

আবেগের জলে সরবত বানাও
দু চামচ মেধার চিনিও দেবে তাতে
শব্দ আর বাক্যের গ্লাসে ঢালো

কমা দাঁড়ি যতির চুমুকে স্বাদ অনুভব হলে
ভাগ করো উপমা রূপকে
চিত্রকল্পের নকশা কাটা নতুন নতুন আধারে

সরবত বানাও ভাষার সরবত
নতুন আগন্তুক এলে তুলে দাও

কবিরা সবাই সরবত ওয়ালা
পাঠক তার লক্ষ্মী, আগন্তুক


নিয়াজ সুমন





স্বপ্ন
শরৎ আকাশে দুধসাদা মেঘের আল্পনায়
গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুলের নরম ছোঁয়ায়
হাতে রেখে হাত বলেছিলে সেদিন
যাবেনা ছেড়ে আমায় কোনদিন।

ভালোবাসার বিশ্বাসে আবদ্ধ হয়ে
রঙিন স্বপ্ন বুনেছিলাম তোমায় নিয়ে
স্বপ্নগুলো এখনো সতেজ আছে
শুধু তুমি নেই আমার পাশে।

এম.আর.লিটন





চোরাবালি
স্রোতের মুখে দাঁড়িয়ে
পদ্মা পাড়ি দিবার স্বপ্ন
বান আসুক নদীতে
হেঁটেই পাড়ি দিবো
পা ফেলেই দেখি
চোরাবালি !

রাজেশ পাল






১.
কালের ছোঁয়াচে বিষ
আজ নয় কাল আমাদের ছোঁয়
তখন একখানি সাদা কুয়াশার চাদর
বিধবার ঘোমটার মত
টানা দেওয়া থাকে আমাদের মনের উপর...