আজ ভোজটা একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিলো। টেবিল ভর্তি খাবার দেখলে আমার ক্ষুধা বোধ সবসময় উধাও হয়ে গেলেও আজকের ব্যাপারটা ভিন্ন। পদ্মার তেলতেলে ইলিশ মাছ ভাজা, চিংড়ির দোপেয়াজা, মুরগী মোসল্লাম, গরুর ঝাল ভুনা, রূপচাঁদা মাছের কোরমা, সবজির নিরামিষে হাসের ভক্তিমূলক ডিমের ভাজা। আর এর সাথে সবচেয়ে যেটা বেশি টেনেছিলো, আমি বার বার তুলে নিচ্ছিলাম নানারকম সবজি আর টক ফলের সালাদ। আহা! কতদিন এরকম খাবার খাইনা! খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে উঠতে গিয়ে দেখি প্যান্টের বেল্ট ফাঁস আটকে রয়েছে। হেঁটে খুঁজে খুঁজে ওয়াশরুমে গেলাম, ফিরে এসে বন্ধুদের সাথে আড্ডাটা মিস করা যাবে না!
ওয়াশরুমে গিয়ে ঢুকতে না ঢুকতেই পেটের নাড়িভুড়ি সব উলটে আসতে চাইলো। তীব্র ব্যথা! দ্রুত হাইকমোডে বসতেই যেন পাকস্থলী খালি হওয়ার মিশন শুরু হয়ে গেলো। মাথাটাও ঝিমঝিম করছিলো।
বেশি কিছুক্ষণ পর! কতক্ষণ পরে জানি না। ঘরটা অন্ধকার। হালকা আলোয় বোধগম্য হলো, ওহ এটা তো বিয়োগের ঘর। আমি হাতড়ে দরজা খোলা পেয়েই বেরিয়ে এলাম। লোডশেডিং চলছে? বাহ! কিন্তু হৈহুল্লোড় থেমে গেছে কেন? হাতঘড়িতে সময় দেখলাম, রাত বারোটা! ও মাই গড! পার্টি শেষ! সবাই বাড়ি চলে গেছে! যাক, বহু বছর পরে এক সময়ের ক্যাম্পাস কাঁপানো লাভার বয় তার পুরনো প্রেমিকার বাড়িতে দাওয়াত খেতে এসে লুজ মোশনের শিকার-এমন হাস্যকর বক্তব্য উপস্থাপন করতে হলো না বলে স্বস্তিই বোধ করলাম।
কিছুক্ষণের মধ্যেই পা রাখলাম রাস্তায়। দুটো ব্লক পরেই আমার বাসা। আকাশে চাঁদনী রাত। সবকিছু বেশ রোম্যান্টিকতা ছড়াচ্ছে। সূচিতা এতদিন পরেও আমাকে মনে রেখেছে? এতদিন পরেও নিজ হাতে রান্না করেছে কি শুধু আমারই অনারে? আজ খুব খেয়েছি! আগামী এক মাস না খেয়ে থাকলেও আর কোন আফসোস থাকবে না, এই সময়ের ভ্যাগাবন্ড শিহাব সীমান্তের। হাহাহা!
বাড়ির মোড়ে পৌঁছে গেছি! একটা এম্বুলেন্স! আর এত লোক কেন? কি হয়েছে ওখানে? দ্রুত পা চালাই! আরে আমার বাসায় পুলিশ? সূচিতার হাতে হাতকড়া পরানো? কেন? সূচিতাকে পুলিশ ভ্যানে তোলার মুহূর্তে আমার বউ বলে উঠলো, ‘সূচিতা কেন তুমি এ কাজ করলে? এক সময় তো তুমি শিহাবকে পাগলের মত ভালোবাসতে!’
সূচিতা পিশাচীনির অদ্ভূত হাসিতে ঘোরলাগা চোখে চেয়ে জবাব দিচ্ছে, ‘ভালোবাসার মানুষ ভাগ হয়ে যাওয়ার জ্বালা তুমি কি বুঝবে, মৌরি? এই দিনটির অপেক্ষায় দিন গুণে আজ নিজের হাতে খাবারে সায়ানাইড মিশিয়ে শিহাবকে যত্নে খাইয়েছি কি এমনিতেই? আমার ফাঁসি হয়ে যাওয়ার পরে শিহাব আর আমার প্রেমের বৃন্দাবন গড়বো বাতাসের ভুবনে!’
এম্বুলেন্সের ভেতরে চেয়ে একটা লাশের দিকে চেয়ে আমি টাসকি খেয়ে যাই! লাশটা আমার!
যুঁথি, আমি মুগ্ধ। মিথ্যে বলছি না, অন্য রকমত্মের স্বাদ পেলাম আজ তোমার লেখায়। এই স্টাইলটাকে মিস করতে চাইছি না কখনো।
ReplyDelete