আম্মাগো কয়ডা ভিক্ষা দেন গো আম্মা? সারাদিন কিচ্ছু খাইনাই গো আম্মা!
নিয়ামত আলী সবার দরজায় আজকাল এভাবেই কড়া নাড়েন। কেউ সাড়া দেয় কেউবা সাড়া দেয়না। তবে বেশির ভাগ লোকই গালিগালাজ আর অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। জীবনটাকে তার আজকাল বেশ অতিষ্ঠ মনে হয় । বারে বারে নিজের মনকেই প্রশ্ন করে ক্ষুধা'র ক্যান দানবের এত মত জোর? অন্ধকার গলি থেকে শুরু করে সেই রাজপথ বিরামহীন এই যাত্রা তার! বড্ড ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেবে এমন এক চিলতে জায়গা কোথাও খুঁজে পায়না। বিষাক্ত হয়ে গেছে আজ এই নগরী। মানুষের বোধের দেয়ালগুলোতে জমেছে স্যাঁতস্যাঁতে ঘন সবুজ শ্যাওলা! সোনালী সুখগুলো বিক্রি হয়ে গেছে আজ অসুখের পেয়ালায়! এমন ভাবতে ভাবতে চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিয়ামত।
বয়স ষাটের কাছাকাছি। বয়সের ভারে নুয়ে গেলেও চোখের দৃষ্টি ও মনের জোর বেশ ভালই আছে তার। হলুদ রঙের ছয়তলা বাড়িটাতে মাঝে মাঝে তার যাওয়া হত। ওই বাড়িতে সত্যিই কিছু ভাল পরিবার থাকে। দয়া করে কিছু খেতে দিত বা কিছু সাহায্য করত। ছয় সাত বছরের কয়েকটা বাচ্চাও আছে এই বাড়িতে। ওর গলার আওয়াজ শুনলেই ওরা দরজা খুলে দেয়। যদিও ওদের বাবা মা পছন্দ করেনা। সেদিন এক পিচ্চি দরজা খুলে একশ টাকার একটি নোট গুঁজে দিয়ে গেল কিন্তু নিয়ামত নিতে চায়নি। এর মধ্যেই ছেলেটির মা এসে দেখে ফেলে। তখন চিৎকার চেঁচামেচি করে লোকজন জড়ো করে বলল, “এই ফকির তার ছেলেকে ফুঁসলিয়েছে এবং তাই ছেলে মায়ের মানিব্যাগ থেকে টাকা চুরি করছে এই ফকিরের জন্য।” সকলে মিলে তখন তাকে কি যে মার মারল! এক সপ্তাহ সে শোয়া থেকে উঠতে পারেনি। একটা চোখ এতটাই ফুলে গিয়েছিল যে, সে চোখ খুলতে পারেনি। কিন্তু সে কাউকে বোঝাতে পারেনি যে, সে বাচ্চাটিকে একবারও টাকার কথা বলেনি- কোনদিন বলেনি! এরপর থেকে ওই বাড়িতে নিয়ামত আর পা ফেলেনি কিন্তু রাস্তায় মাঝে মধ্যে ছেলেটিকে তার বাবা মায়ের সাথে দেখে। বাচ্চাটি অপলক তাকিয়ে থাকে তার দিকে আর নিয়ামত দূর থেকে তাকে আশির্বাদ করে দেয়।
মাঝে মাঝে রেল গেইটার পাশে বসে থাকত সে। যদি কেউ এক দুটো টাকা ফেলে যায়! এখানে তার আয় বেশ ভালই হত। তাতে তিন বেলা খাবারের যোগান নিয়ে খুব বেশি ভাবতে হতো না। কিন্তু একদিন সন্ধ্যাবেলায় দু'তিনজন যুবক এসে তার সারাদিনের জমানো টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেল। অনেক অনুরোধ করে নিয়ামত কিন্তু ওরা শোনে না। এমন করে প্রতি সন্ধ্যায় ওরা এসে এভাবেই তাকে নিঃস্ব করে বীরদর্পে প্রস্থান করে। নিয়ামতের ভাবনায় আসেনা যে কেন ওর মত একজন নিরীহ ভিখারিও রেহাই পায়না! এভাবে তাকে এলাকা বদল করেই চলতে হয়। অনেক কিছু দেখেও না দেখার ভাণ করতে হয়, অনেক কিছু বুঝেও না বোঝার মত করে চলতে হয়।
রেলগেইট থেকে দু'মাইল হেঁটে গেলেই পাওয়া যাবে নিষিদ্ধ পল্লী। ওখানে যে সরু ও নোংরা গলিটি আছে যেটাকে ভদ্রলোকেরা রাতের আঁধারে ব্যবহার করে, নিয়ামত সেখানেও বসে থাকে মাঝে মাঝে। অনেক ভদ্রলোকেরাই মাতাল হয়ে তার থালাতে বড় নোট ফেলে যায়-- কিন্তু নিয়ামতের কেমন জানি ঘেন্না হয় সেই টাকাগুলো দিয়ে নিজের পেটের ক্ষুধা মেটাতে! সে জানে, সজ্ঞানে হলে হয়ত এই পরিমান টাকা ওরা কখনই দিতো না। সেজন্য নিজের কাছে নিজেকে কেমন জানি অপরাধী লাগে। সেজন্য ওদিকটায় খুব একটা পা দিতে চায়না নিয়ামত, তবে যেদিন একেবারেই রোজগার না হয় তখন সেখানে গিয়ে বসে। সেজন্য আল্লাহ'র কাছেও মাফ চেয়ে নেয় মনে মনে।
এরই মধ্যে ওই পল্লী'র চমনের সাথে তার একটু ভাব হয়েছে। তার বয়স এতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। চমন মাঝে মাঝে এসেই তাকে ভাল মন্দ জিজ্ঞাসা করে। টুকটাক খাবার নিয়ে আসে। এক প্যাকেট করে দামী বেনসন সিগেরেটও দেয় মাঝে মাঝে। কোন সাহেবরা হয়ত ফেলে যায় সেগুলোই চমন তার জন্য নিয়ে আসে। চমনের বয়স পঁয়ত্রিশ হবে। দেখতে শুনতে বেশ ভাল। মনে মনে ভালবাসার একটা জগৎ সাজায় চমনকে নিয়ে। চমনের সাথে কথা বলতে গেলেই নিয়ামতের কেমন জানি শরীর গরম হয়ে যায়। জড়িয়ে ধরে শরীরের যত কামনা আছে সব মিটিয়ে ফেলতে চায়। কিন্তু চমন কি তারে ভালবাসে! সেকি পারবে নিয়ামতের হাত ধরে এই পল্লী থেকে বেরুতে? কি জানি নিয়ামত অতোসতো বোঝেনা, যা হবার তাই হবে।
“মেঘ না চাইতেই যেন বৃষ্টি” একদিন চমনই তাকে লোক দিয়ে ডেকে পাঠায়। নিয়ামত গিয়ে দেখে চমন তার দিকে কেমন জানি তাকাচ্ছে। ওই চোখে যে গভীর তৃষ্ণা ছিল তা আজ অব্দি কোন নারীর চোখে দেখেনি নিয়ামত! এক অনাগত সুখের নির্লিপ্ত আহ্বান জানিয়েছিল চমনের আধখোলা শরীর। নিয়ামত নিজেরে ধরে রাখতে পারেনি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখ পেয়েছিল সেদিন চমনের বুকে, ভাবে এভাবেই যদি কেটে যেত জীবনের বাকিটা দিন! এরই মধ্যে দরজায় টোকা পড়ে--কেউ এসে জানায় চমনের খদ্দের এসেছে তাকে সেজেগুজে রেডি হতে হবে। কথাটি শুনেই কেমন জানি মিইয়ে যায় নিয়ামত। এতক্ষণ যারে পাগলের মত আদর করে নিজের সম্পদ ভাবল আসলে সে যে “মিছে মরীচিকা” সেটা সে ভুলেই গিয়েছিল। ঘোর কেটে সে বাস্তবে ফিরে এল। আসার সময় তার সমস্ত দিনের উপার্জন চমনের হাতে গুঁজে দিল কারন সে মনে করে সব কিছুরই একটা বিনিময় মূল্য থাকে।
আসার সময় বলে এল, “মাফ কইরা দিও, ভুইলা গেছিলাম যে আমি একটা ভিক্ষুক আর তুমি!” কথাটা শেষ করতে পারলো না নিয়ামত। মুখের কথা কেড়ে নিয়ে চমন বলল, “আমি একটা বেশ্যা এইতো! কিন্তু এই পরিচয় নিয়া আমার কোন আক্ষেপ নাই। দেখ উঁচুতলার ভদ্র পুরুষ মানুষগুলানরে যারা বাসায় নিজের বউ রাইখ্যা এখানে মেয়েমানুষ ভোগ করতে আসে, পয়সা বিলায়—মাতাল হইয়া পইড়া থাকে। আমি তো মানুষ ঠকাই না নিয়ামত! কত পয়সাওয়ালা মানুষইতো দেহি দিনে রাইতে কিন্তু সত্যিকারের মানুষ দেহি না। তবে তুমি খুব ভালা একজন মানুষ। তোমার চোখ দেখলেই বোঝা যায়। আমি না ডাকা পর্যন্ত এই বাড়ির দিকে কোনদিন ভুলে উঁকিও দাওনি।”
নিয়ামত বলল, “কিসের মইধ্যে কি! আমি উঁকি দিমু ক্যান? আমি তো ভিক্ষুক, পেটে ভাত দিতে পারিনা আর পয়সা দিয়া মেয়ে মানুষ ভোগ করুম! কি যে কও না চমন। জান, যদি টাকা পয়সা থাকত তাইলে মনে হয় আমারও বড়লোকদের মতন এমুন কাজ করতে ইচ্ছা হইত! ফকির অইছি ভালাই অইছে কিন্তু তারপরও দেহ না আজ সুযোগ পাইয়া তোমারে কেমুন ভোগ করলাম! নাহ, আসলে আমরা পুরুষ মানুষ একটা পশু'র লাহান। শরীর গরম অইলেই ঠাণ্ডা করার জন্য উতলা হই!”
চমন বলল, “মানুষ নিয়া কারবার করি তাই মানুষ চিনতে ভুল অয়না আমার। তোমারে আমার মনে ধরছে নিয়ামত।” নিয়ামত বলল, “তাইলে যাইবা আমার লগে? চল আমরা পলাই। কিছু দিতে না পারলেও তোমারে বহুত সম্মান দিমু।” এমন সময় আবার দরজার কড়া নাড়ার শব্দ। চমন বলল, “তুমি এহন যাও নিয়ামত। এই গলিতে আর পা রাইখ্যনা। আমি চাইলেই পলাইতে পারুম না। এই জায়গা থাইক্যা পলান যায়না। তবে তুমিও আমারে ভালবাসছিলা এইডা আমি জীবনেও ভুলুম না।” নিয়ামত মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়। এরপর থেকে নিয়ামত একটা দিনের জন্যও স্বস্তি পায়না। মাঝে মাঝে তাকিয়ে থাকে আনমনে ওই পথের গলিতে। ভাবে কাউকে জিজ্ঞাসা করে খবর নেবে কিন্তু সে পারেনা। জীবনে কোনদিন এভাবে কাউকে ভালবাসে নাই। বাবা মা'র সংসারে সে একমাত্র সন্তান ছিল।
বাবার জমি জিরাত ছিল বেশ। কত লোক তাদের জমিতে কামলা দিত সেদিন গুলো আজ চোখের সামনে ভেসে উঠল। কিন্তু যখন বাবা মারা গেল চাচারা সব নিজের দখলে নিয়ে গেল। মা'কে বাড়ি ছাড়া করল। উপায় না পেয়ে মা তাকে নিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে দু'জন মানুষের পেটে খাবারের যোগান দিতে লাগল। নিয়ামতের যখন পনের কি ষোল বছর তখন মা ও মারা যায়। যে বাড়িতে কাজ করত সেখানকার মালিক নিয়ামতের বিয়ে ঠিক করল কারণ নিয়ামতের মা মারা যাওয়ায় তাদের কাজের মহিলার জায়গাটা খালি হয়ে গেল।
বিয়ে ঠিক হয়েছে কিন্তু বিয়ের দিন নিয়ামতকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলনা। রাত গড়িয়ে সকাল কিন্তু নিয়ামত হাওয়া। বাড়ির পাশেই ছিল আম বাগান—কেউ একজন সকালে দেখল আমগাছের মগডালে হেলান দিয়ে নিয়ামত সুখের নিদ্রা যাচ্ছে। ঘুমালে যদি নীচে পড়ে যায় এই ভেবে একটা শক্ত মোটা দড়ি দিয়ে নিজেকে গাছের ডালের সাথে শক্ত করে বেঁধে রেখেছে। তারপর ওই লোকের চিৎকারে সবাই জড়ো হল, তাকে আমগাছ থেকে নামানো হল। পরের দিন ঠিক করা পাত্রী'র সাথে তাকে জোর করে বিয়ে পড়িয়ে দিল। নিয়ামত রাগে দুঃখে কি করবে মনে মনে চিন্তা করল। ভাবল মেয়েটির কি দোষ তবে সে তার বউকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে দেবেনা। নিজে রোজগার করে সুন্দর একটা সংসার পাতবে কিন্তু এই বাড়ির নুন খেয়ে বড় হয়েছে তারা তাকে কি এত সহজে যেতে দেবে!
বউয়ের সাথে পরামর্শ করে একদিন রাতে বাড়ি থেকে পালাল দুজন। সারা রাত প্রচণ্ড ভয় নিয়ে বিরামহীন দৌড়ে চলেছে। অবশেষে দূর এক অজানা গ্রামে এসে সংসার পাতল কিন্তু নিয়ামত সহজে কোন কাজ খুঁজে পেল না কারন এখানে অধিকাংশ মানুষই মাছ ধরে। নিয়ামত ক্ষেতের কাজ ছাড়া অন্য কিছু জানেনা। তবে কিছু জেলেদের সাথে পরিচয় হল তার এবং তারা তাকে সাথে রাখল। রোজগার যা হত তাতেই চলে যেত ওদের দু'জনের।
কিন্তু আপত্তি হয়ে দাঁড়াল মাছের গন্ধ। বউ প্রতিদিন রাতে অভিযোগ করে “ তুমার গতর থাইক্যা মাছের বোটকা গন্ধ আহে, আমারে ধইরো না। তুমি আমার কাছে আইলেই আমার বমি বমি লাগে!” নিয়ামত এমন অভিযোগে বেকুব বনে যায়। বাজার থেকে সুগন্ধী সাবান এনে প্রতিদিন শোবার আগে শরীরটাকে ভাল করে ঘষে মেজে গোসল করে এবং নাক দিকে নিজের শরীরটাকে ভাল করে শুঁকে দেখে। তারপর ঘুমাতে যায় কিন্তু বউয়ের শরীরে হাত দিতে গেলেই বউয়ের একই অভিযোগ। বউয়ের উপর বেশ রাগ হয় তার! রাগ করে সে বাড়ি ফেরেনি তিনদিন। তিনদিন পর বাড়ি এসে দেখে তার বউ কোথাও নাই। নিয়ামত ডাকাডাকি করতে লাগল, “বউ! ও বউ! কই গেলা তুমি? গোস্বা করছ বুঝি! আমি আর তোমারে না বইলা কোনহানে যামুনা। এই কান ধরলাম, নাকে খত দিলাম।” আশেপাশের লোকজন বলাবলি করতে লাগল, “বউ থাকলেইত আসব! মাছের আড়তের মালিকের লগে তর বউ ভাইগ্যা গেছে। কত বলছি যে, বউডারে চোখে চোখে রাখ, তার মতি গতি ভাল ঠেকতাছেনা। একটা ছাওয়াল পয়দা কর - না আমাগো কতা হুনলি না। এইবার বুঝ মজা!”
নিয়ামত নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। ঘরের দাওয়ায় অনেকক্ষণ বসে থেকে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। সেই থেকে নিয়ামত আর কোনদিন মেয়ে মানুষ নিয়ে ভাবে নাই। জীবনটা তার পুরাই পাল্টে গেল। খেয়ে না খেয়ে দিন চলে যেতে লাগল। কিন্তু একদিন মাছের জাল টানতে গিয়ে পিছলে পড়ে হাত ভেঙ্গে গেল তার। অনেক টাকা চিকিৎসায় খরচ হবে তাছাড়া এত টাকা নিজের কাছেও নেই। ধারও পেল না কারো কাছে। আড়তের মালিকের কাছ থেকে সুদে টাকা নেয়া যায় কিন্তু সেখানে সে কখনও হাত পাতবে না! বউয়ের সুখের সংসার দেখার কোন লোভ নাই তার! আড়তের মালিক রতনরে সে গালি দেয় না কারন যার সাথে কেটেছে এতগুলা দিন সে যদি সুখের দড়ি কেটে দেয় পালায় তাহলে অন্যকে দোষ দিয়ে কি লাভ! কি জানি রতনের কাছেই হয়ত সে সুখে আছে এই ভেবে সে প্রতিদিন রাতের আকাশের তারাগুলা গুনার চেষ্টা করে। তাদের সাথেই বাসর সাজায়-- গুনতে গুনতে এভাবেই ক্লান্ত হয়ে একসময় সে ঘুমিয়ে পড়ে খোলা উঠানে।
বিনা চিকিৎসায় তার শক্তিশালী ডান হাতটি কাজ করার শক্তি হারিয়ে ফেলে। নিয়তি তার সাথে আবারও ব্যঙ্গ করে হেসে উঠে! বাধ্য হয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে ভিক্ষার থালা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় নগরীর অলিতে গলিতে। চুল সাদা হতে শুরু করেছে তার কিন্তু এ-বেলায় কেন আবার ভালবাসা দরজায় কড়া নেড়ে যায়! নিয়ামত ভাবতে চায়না আর, ভাবতে পারেনা!
সাত আটমাস ধরেই চমনের খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন খবরই পাচ্ছেনা। একদিন খুব ভোর বেলা - আবছা আঁধারে পৃথিবী তখনও ঘুমের রাজ্যে। নিয়ামত শুয়ে ছিল গলির পথে একটা পরিত্যক্ত মোটা পাইপের ভেতর। বাচ্চার কান্নার শব্দে নিয়ামতের ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ খুলে দেখে চমন একটা বাচ্চা কোলে করে দাঁড়িয়ে আছে। নিয়ামতকে বলছে, “এই নাও তোমার জিনিস তোমাকে দিলাম। তুমি পলাও—এইখান থাইক্যা পলাও।” নিয়ামতের ঘোর তখনও কাটেনি। ভালভাবে চোখ কচলে কিছু জিজ্ঞাসা করতেই চমন তার কোলে একটা ছোট্ট ফুটফুটে বাচ্চা মেয়েকে দিয়ে দ্রুত বেগে প্রস্থান করল ওই বাড়ির ভেতর, যেখান থেকে সে চাইলেও বেরুতে পারেনা, কোনদিন পারবেও না।
ছোট্ট মুখটার দিকে তাকিয়ে নিয়ামত ছুটছে, খুব দ্রুত ছুটছে। সেরকম ভয় তার মধ্যে কাজ করছে আজ, যেমনটা করেছিল বউ নিয়ে পালানোর সময়! কিন্তু তাকে ছুটতে হবে, ছুটতেই হবে। কোথা থেকে যেন একটা প্রচণ্ড শক্তি এসে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এক অপার সম্ভাবনার দিকে।
-০-
No comments:
Post a Comment