ভালোই হলো!
রাতবিরাতে আর জেগে থাকতে হবেনা…
দিনে কয়েকবার ফোন দেবার মহড়া চলবে না। মোবাইল বিলও কমে যাবে…!
অপেক্ষার কথা নাইবা মনে করলাম।
আর কি প্রয়োজন আছে এসবের।
বুঝছিস আনভীর জীবনে কাউকে ভালোবাসার আগে তার পরীক্ষা নিস...
কথাগুলো রিশাদ বলছিলো।আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ঝর-ঝর করে পানি পড়ছিল। কয়েকদিন আগে রাফার সাথে ওর ব্রেকআপ হয়ে গিয়েছে। অনেকবার জানতে চেয়েছি কেন এমন হলো। ও বলেনি।অনেক কষ্ট নিয়ে ও নিজের কাজটা করে গেছে। ক্যামেরায় রিশাদের হাত ছিলো খুব পাকা, কি ফটোগ্রাফি কি ভিডিওগ্রাফি। ফটোগ্রাফিতে বেশ কয়েকটা পুরস্কারও পেয়েছে। এখন ছবিগুলো দেখলে আনমনেই অস্থির হয়ে যাই রিশাদের অনুপস্থিতিতে।
মার্চ মাস।
আমাদের ভাবনাজুড়ে তখন শর্টফিল্ম। চার পাঁচটার কাজও শেষ করেছি। ক্যামেরাতে রিশাদই ছিলো। ছয় নম্বর ফিল্মটা বানাচ্ছিলাম। তখনই রিশাদের ব্রেক-আপের সূচনা। রিশাদকে আনমনা দেখতাম শুটিংয়ের আগে পরে।কিন্তু শুটিং চলার সময় ও খুব সিরিয়াস থাকতো। ফিল্মটির সব কাজ শেষ করে ১৫ তারিখ ফিল্মফেস্টে জমা দিলাম। এরপর সবাই আড্ডায় আসলেও রিশাদ আসতো না।ওর বাসায় গিয়ে ওকে হালকা করার চেষ্টা করা হলো। কিন্তু কিছুতেই ও ফিরে আসতে পারছিলো না। সারাদিন নেশায় বুদ হয়ে থাকতো। ওর বাবা ব্যাপারটি জেনে ওকে খুব গালাগাল করেছিলো। পরদিন থেকে রিশাদের কোন খোঁজ নেই।ফোনও বন্ধ।
আজ শর্ট ফিল্ম পুরস্কার ঘোষণা হয়েছে। সেরা ফিল্ম জিতেছে “পতাকা”,পরিচালক রিশাদ খান এবং আনভীর রায়হান। আমি গিয়ে পুরস্কার গ্রহণ করলাম। মঞ্চে প্রচন্ড মিস করছিলাম রিশাদকে। সন্ধ্যার আড্ডায় সবাই যখন অভিনন্দন জানাচ্ছিলো তখন কিছুক্ষণের জন্য কষ্ট আর চোখের জল আড়াল করে হাসলাম এই ভেবে রিশাদ আজ জয়ী। রিশাদের কথা উঠতেই আমাদের উপর দিয়ে হাহাকার বয়ে গেল। কাঁদলাম না ,রিশাদ কাঁদতে মানা করেছিলো। তবু কেন যেন চোখ ভিজে গেল।
কয়েক বছর পর একটা ডকুমেন্টারির কাজে চিটাগাং স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় আছি।ক্যামেরা অন করে শটটা কেমন আসে একটু আচ করার চেষ্টা করছি।পাগল বেশের এক লোক ক্যামেরার সামনে দাড়িয়ে পড়লো। অ্যাসিস্ট্যান্টের চেঁচামেচির পরও সরছে না।আমি তাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে যেন জীবনের কঠিন বাস্তবতা আবিষ্কার করলাম। তার ভয়েসটা অবিকল রিশাদের মতো। মুখে লম্বা দাড়ির কারণে ঠিক চেনা যাচ্ছেনা। কথাবার্তার মধ্যে অসামঞ্জস্যতা। তাকে নিয়ে আমি ঢাকা ফিরতে চাইলাম। এ প্রসঙ্গ আসতেই কথা নেই, বার্তা নেই ছুট দিল। বেশ কয়েকদিন খোঁজেও আর তাকে পাওয়া যায়নি।
এখন ট্রেনে করে ফিরছি আর ভাবছি রিশাদকে ধরে রাখতে পারলাম না। এতো কাছে থেকেও সে চলে গেছে বহুদূর। আর তার ক্যামেরায় ক্লিক দেয়া হবেনা।
__________________________০______________________________
No comments:
Post a Comment