কোথায় কি!

01 January 2016

আসমা অধরা




নির্মীলিত গ্রস্থতা
ওগো উত্তাপ, এসো তোমাকে পাঠ করি একান্ত নিরলস,
কবির হৃদয়ে গড়ে তোল কক্ষ বক্ষ সমরেখ
মস্তিষ্কে পুরে দাও বায়ুহীন আদিগন্ত আকাশ, আর
চতুষ্কোণ এই ঘরে যদি জানালা কপাটে খিল লেগে যায়-
সেখানে কিছু টুপটাপ অমৌসুম শিশির ঝরিয়ে যেও।
নবজ্বর থেকে উন্নীত হও বিষমজ্বরে,
গরলের সাথে মিশ্রিত সিনকোনা পান করে বেদম পড়ে থাকো
না হয় পান করো সামান্য পরিমান করবীর নির্যাস;
জ্বরঘ্ন হৃদয় আরো শক্তিশালী হয়ে উঠুক।
এসো অবিরাম সবিরাম জ্বর, দিয়ে যাও আরো কিছু ঘোর
তন্মধ্যে পৌঁছে যাই ঔদার্যে, দুলতে থাকা ওক গাছের চুঁড়োয়
ডিঙি বেয়ে আসি ফোরাতের জলে,
শ্যাম বাঁশী বাজালে প্রলয় নৃত্যে দুভাগ হয়ে যাবে উন্মত্তা পদ্মা
আবিষ্ট ভ্রমণ শেষে, এইসব শুন্যকাল ভরে দেই কোলাহলে-
তেমনি এক আশীর্বাদ বয়ে এসো,
যেন সিসিলের আবাদে ক্ষয়ে যায় সমূহ কাঁটা, আর
পারদের বিস্তার ওই ক্ষুদ্র কাঁচের ঘরে আমূল ব্যর্থতায় ভরে যায়;
উবে যাওয়ার অক্ষমতায় ডুবে যায় বিষাদ কর্পূর,
জরাগ্রস্ত সেই তরুণী গোলাপী নেশায় প্রবল বৃষ্টিতেও প্রলয় ঝংকার তোলে,
ব্যাধিত বোধের নিরহং কোন একাকী রাজপথে।






নিবাসে রাত, রাতে চাঁদ
বলপেন নিয়ে বসে থাকা, নিবটা কেমন টিপটপ হয়ে নিঃশব্দ লিখে যায়। ঘর অন্ধকার হয়ে গেলে নেমে আসে মিথ, রাতের দেব-দেবী নিক্স ও এরিবাস। আঁধার কেটে আলোর বন্যায় তখন চোখ জ্বলে যায়, দীপ্তির সাথে পাল্লা দিয়ে উড়তে থাকা ঘ্রানেরা যেন দুহাতে ঠেলে নিয়ে যায় জানালা গলে এক ফিকে চান্দের নিচে। সেই চাঁদোয়ায় দেখি এক হিলহিলে সাপ অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে জানালায় ঝোলানো বাঁশীত্রয়ী।

ওই যে এক মানুষ থাকে দুর গাঁয়ে, পুড়ে যায় জ্বরঘ্ন কাথায় আঙ্গুল জড়িয়ে; তার শিয়রে এক তেতোপাখি ডাকে। মুখ বিস্বাদ হয়ে যেতেই মনে পড়ে যায় জিভে জড়ানো পানসে আদর, আর ঠিক তখন কোথায় এক টুনটুনি ডেকে ওঠে। রেকাবিতে জল, জলে এক সাদা পদ্ম কলকল করে কথা কয়, তাকে কপালে চেপে দিতেই চোখ জবা হয়ে ফোটে। ওইখানে খুব ব্যাথা।

আহা আজ এমন চাঁদ, সে জাহাজি দেখতে পেলনা। এ আলোয় সন্ন্যাস ভাসে-সুপুরীর খোলে জমে থাকা জল আনচান করে ওঠে এক এলাচ সুগন্ধের জন্য। উন্মুখ দম্পতি ভুলে যায় চুমুকথা। রাত যেতে যেতে খেই হারিয়ে এক অন্ধকার ঘোরানো সিঁড়ি ধরে চলে যায় মায়াপাঁজড়ের নিচে।

ও রাত, রাত গো, প্রিয়তমর মতো পাশে বসে থাকো। আজ ফিরে যাক ভোর। প্রতিদিন যে অনিবার্য ক্লেদ লিখি, তা আজ ডুমুরের ফুল হয়ে যাক। আজ নাহয় আমরা মিলেমিশে একটি দিন ভাঙ্গি, তারপর সেই টুকরো গুলো গেঁথে রাখি ক্যাকটাসের কাঁটায়। পয়জনে তুলো ভিজিয়ে মুছে দেই রুপবতী কাঁটার উদ্ধত মুখ।

এমন রাতে নাহয় এক তিতির হয়ে যাই, ঘাসের বনে বনে গিয়ে খুঁজে আনি বনৌষধি, তার তপ্ত মুখে অদৃশ্য হতে ঝরে পড়ুক বহুবছর ধরে জ্বাল করা মদের মতো কুইনাইন, সহনীয় দাঁতে কেটে দিই আঙ্গুলের ডগা। তারপর অজ্ঞাত ফুলে ভুল করে ফেলে আসি নিজস্ব দন্তনখর, নতমুখে মাটিলগ্না হতে চাই হিজলের ঝুকে পড়া ডালসদৃশ।


হাওয়া বাতাস চাঁদ আর রাত সাথে নিয়ে খুঁজে যাই উত্তর দক্ষিনে, তুমি অভিভূত সুবর্ণরেখার ওইপাড়ে ঘুম খুলে তুলে রাখো অনিচ্ছাদের। সুন্দরীকাঁটায় পা আটকে গেলে নাহয় তিলক্ষেতে দাঁড়িয়ে যাব স্কেয়ারক্রো'র মতো। কোন এক পক্ষাঘাতগ্রস্ত গোধুলীতে ঘুম ভাঙে যদি, তখন নাহয় সে আলোয় ভাসিয়ে দেয়া যাবে কিছু শঙ্খচূড় শ্বাস, উদ্বাস্তু স্বপ্নশিবিরে।

No comments:

Post a Comment