১.
পুরনো বইয়ের পাতা
উল্টে চোখে পড়লো
মমি হয়ে আছে কয়েকটা
মাছি ও অচিন বৃক্ষের পাতা...
মমি হয়ে আছে পাতার
স্পন্দন আর মাছির উড়াল
সাঁতার কাটি
নয়'শ বছরের পুরনো
সমুদ্রে একা...
এ-কোন বিস্মৃতির
জল কেবল ফেটে ফেটে যায়
এ-কোন কাহিনী গাঁথা-
শবযাত্রী, সানাই আর ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দ
স্বর্গের সিঁড়িতে
দাঁড়িয়ে
চুম্বন শেষে কেন
তারা ঠোঁটগুলো ছুঁড়ে দিলো নরকের দিকে!
দু'চোখ ঝাপসা হয়ে
আসে
দু'চোখে জন্ম নেয়
অজস্র রক্তের ডালপালা...
মেহেকানন্দা নদীতীরে
অহ ঈশ্বর
কোনো এক কুয়াশাভোরে
তুমি কি রক্তডুমুরের ডালগুলো কেটে দেবে!
২.
কে যেন রাস্তার পাশে মলিন চাঁদটাকে
রেখে গেছে
চাঁদের গায়ে হোচট খেলাম
শুধু পা নয়, সমস্থ "আমি"
ভেঙ্গে গেলে চাঁদের শরীর থেকে চাঁদনী ও আগুন বের হয়...
জন্ম হয় দাউ দাউ চিতার...
মহাআনন্দে পুড়তে থাকি পৃথিবীর প্রথম
মানুষ
ওহে শ্রীমতি. ঠাকুর মা আমার
আমিও চিতা জ্বালানোর কৌশল শিখে
গেছি।
৩.
আয়না হতে পিছলে পড়েছে
মুখগুলো
আজ তোমার মুখের গভীরে
দেখি ভেঙ্গে-যাওয়া সেই আয়নার দাগ।
বিবর্ণ থৈ থৈ
বিধবার শাদা থানের
মতো চারদিক...
হে দিন, হে রাত্রি,
হে বসন্ত, হেমন্ত মৌসুম
হে প্রজাপতির ডানা,
পাখির পালক, হে বৃন্দাবনের সিঁদুর
কোথাও কোনো রঙ নেই
আমাদের মেহদীবাগান
কালো কুয়াশার নীচে ঢাকা পড়ে আছে।
শুনেছি পাথরে মেহদীপাতা
ঘষলে রঙের হলাহল বের হয়ে আসে
আমি আজ হৃৎপিণ্ডকে পাথর বানিয়ে নিয়েছি।
৪.
আজ এই শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদ ফেটে
গিয়ে
নীল-বর্ণ আলো ঝরছে
নরক প্রদেশে।
নরকের নয় দরজা খুলে বসে আছি আমি
আর একটা অন্ধ হরিণী...
দু'চোখ ছিদ্র করে
গলিত চোখের রঙে চন্দ্রের পিঠে এঁকে
দিয়েছি গাছের ছবি
এই গাছ স্বর্গের গাছ
এক একটা শিশু মৃত্যুর পর সেই গাছে
একটা করে ফুল ফোটে
ওহ ইশ্বর
সময় হলে কি তুমি দেখে যাবে
সেই গাছে অনেক অনেক ফুল ফুটেছে
তুমি কি একবারও শুঁকে যাবে না হাস্নাহেনা
অথবা মুনিরাহেনার গন্ধ!
৫.
চাঁদের শরীর থেকে
বের হচ্ছে ধূয়া ও শিশির
দুই হাজার বছর আগেকার
রাত ছাই হবে দুই হাজার পনেরো সালে
দু'চোখের অন্ধ ছায়া
উড়ে যাচ্ছে অন্ধকারে
পাখিরা নৌকা চালায়
বাতাসের নদে
নিঃশ্বাস ফেটে যাচ্ছে
ধীরে গাছের, মানুষের
ফাটা-নিঃশ্বাসে তুমি
কি একবারও আত্মহত্যা করতে আসবে না!
৬.
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে ছিপছিপে এক মাতামুহুরী
নদী
নদী পেরিয়ে যাচ্ছে সময়
হাতের নীলবর্ণ রেখায় এ-কার ছায়া
দেখা যায়!
ছাদের উপর বৃষ্টির গুঞ্জণ থামছে
না কিছুতেই
তানপুরার হৃৎপিণ্ডে আঙুল ফেটে গেলে বুজতে পারি
না
এ-কান্না উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে নাকি
মাতামুহুরীর
ঘরের জানালা কিছুতেই বন্ধ হয় না
আমাদের জানালায় আটকে রয়েছে নদীর
দরজা।
অপূর্ব বোধের সমাহার সবগুলো কবিতায়।
ReplyDelete