কোথায় কি!

01 December 2015

মাসুম আহমদ







শাড়ি
দুই বছর আগে বড় মেয়ের জন্মদিনে তাকে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছিলাম। গত বছর একটা ত্বক ফর্সাকারী ফেয়ারনেস ক্রিম কিনে দিলাম। এই বছর শাড়িটা সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছে।

সিঁড়ি
বাড়ির ছাদে বাগান করা আর সিঁড়ি বেয়ে বাড়ির ছাদে উঠে পুরো শহরের সৌন্দর্য দেখার বড় শখ ছিল। অবশেষে আমাদের একটা পাঁচ তলা বাড়ি হল। কিন্তু ততদিনে আমার শখেরা হুইল চেয়ারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।

উড়াল পঙ্খী দম্পতি
ছেলেটি ঘরের বাইরে মাঠে-হাটে-পথে-পার্কে-উঠানে-ছাদে যেখানে সুযোগ পাচ্ছে সেখানেই দুই হাত দুদিকে প্রসারিত করে উড়ার জন্য নিয়মিত প্র্যাকটিস করছে। অন্যদিকে মেয়েটি লুকিয়ে লুকিয়ে ঘরের ভেতর পিঠে দুটি নকল পাখা লাগিয়ে উড়ার জন্য নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ তারা দুজন মিলে পরিকল্পনা করেছে- কোন একদিন ভোরে তারা একসাথে উড়াল দিবে এবং সন্ধ্যা হলে তারা একসাথে, তাদের একান্ত নিজেদের ঘরে ফিরবে!

দুই চাকার সাইকেল
আমি একটা মানুষ বানাব ভেবে প্রেমিকার কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। প্রেমিকা আমার চোখ বড়বড় করে বলে উঠল, কি-সব নাফরমানি কথাবার্তা শুরু করেছ! তুমি ঈশ্বর নাকি যে মানুষ বানাবে? না, আমি ঈশ্বর নই। আমি একটা দুই চাকার সাইকেল! যে সাইকেল হাওয়ায় উড়ে।
আমি আমার লাশ কাটা ঘরের চিরকুটে প্রেমিকাকে লিখে গেলাম- প্রিয়তমা, মানুষ বানাতে হলে ঈশ্বর হতে হয় না, দুই চাকার সাইকেল হলেই মানুষ বানানো যায়।

বাবারা সব সময় দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকেন
বাবা তার মেয়েকে জীবনের প্রথম স্কুলে নিয়ে আসছেন, ফাস্ট ড্যা এ্যাট স্কুল। মেয়েটা ক্লাসরুমে ঢুকে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যই ছিল । কিন্তু যখনি টিচার বললেন এখন গার্ডিয়ানদের চলে যেতে হবে তখনি মেয়েটা দৌড়ে এসে বাবার কোলে উঠে কেঁদে কেঁদে বলল বাবা আমিও তোমার সাথে বাড়িতে চলে যেতে চাই। বাবা মেয়েকে প্রায় জোর করে কোল থেকে নামিয়ে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে আসলেন। টিচার সাথে সাথে ক্লাসের দরজা লাগিয়ে দিলেন। বাবা দরজা ওপাশে মেয়েটার কান্না থামা না পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিলেন, তার চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ছিল।
একুশ বছর পর আজকে মেয়েটার বিয়ে। মেয়েটা বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে শ্বশুর বাড়ি। আজকেও বাবা দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছেন, বাবার চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ছে।

একা থাকার গল্প
মেয়েটা খুব বেশি সেলফি তুলে। সেটা ফেইসবুকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় পোস্ট করে। ফ্রেন্ড লিস্টের অনেকে তাতে বিরক্ত হয়ে তাকে আনফ্রেন্ড করে, অনেকে আনফলো করে নিউজ ফিড থেকে আউট করে দেয়। ছেলেটা কিছুদিন পরপর ফেইসবুকে তার জন্মদিন পরিবর্তন করে। ব্যাপারটা এক সময় সবার কাছে ধরা পড়ে যায়। ফ্রেন্ড লিস্টের অনেকে বিরক্ত হয়ে তাকে আনফ্রেন্ড করে, অনেকে আনফলো করে নিউজ ফিড থেকে আউট করে দেয়।
এই ছেলে আর মেয়ের মাঝে প্রচণ্ড রকম একটা মিল আছে। সে মিল নিয়ে আমি একটা গল্প লিখছি। গল্পে আমি তাদের প্রথমে ফেইসবুক ফ্রেন্ড বানাই। তারপর ফেইসবুক থেকে বাস্তবে নিয়ে আসি। তারা একে অপরের সাথে একটা একলা ক্যাফেটেরিয়ায় দেখা করে। তারপর একসময় তারা হাত ধরাধরি করে পথ চলা শুরু করে।
পথ চলা শুরু করার পর তারা নিজেরা আবিষ্কার করে তাদের মাঝে যে অদ্ভূত একটা মিল আছে। আর তাদের মধ্যেকার সেই অদ্ভূত মিল নিয়ে এক লোক একটা একা থাকার গল্প লিখছে।

No comments:

Post a Comment