কোথায় কি!

08 May 2016

দেবাশীষ ধর



বেমানান মত্‍স্যকন্যা

ঘামমাখা শার্ট আর ময়লা সোয়েটার আপাতত শীত ঢাকছে।আড্ডার কিচিরমিচির গরম পেয়ালার সাথে আরো উত্‍সুক,ক্ষুধা মিটছে জটিল তত্ত্ব আর তর্কে। বহু গ্রুপের ছোট ছোট গোল সমাগম। একদিকে সংগীতের সুর পেয়ালায় ফাটছে, নিশাচর গান এর লিপিগুলো সন্ধ্যার গরম অন্ধকারে ঘুম থেকে জেগেছে। অন্যদিকে কবিতার শব্দরা হেঁটে হেঁটে নান্দনিক শিল্প আড্ডায় রং এর বাহার,সিগারেটের ধোঁয়ায় যেন কবিতাগুলো প্রাণ নিচ্ছে। সেই ধোঁয়া গিয়ে মিশেছে গল্পের সিনেমাতে, স্ক্রিপ্ট এর কাহিনীতে চরিত্রের বহুরুপী চুলছেঁড়া বিশ্লষণ ।মিছিলের আদর্শ প্রেমিরা দর্শনের অলি-গলি ঘুরে ঘুরে সমীকরণের নতুন কৌশল পাকানোর সভা বসিয়েছে। আর একটু রাত শুরু হলে মোটরবাইকের লাইন পড়ে যায়, যত সংবাদের এপিঠ ওপিঠ যত রিপোর্ট এর আহাজারি এই ক্ষুদে রাজ্যে এসে জমা হয়। সাথে গাঁজার গোপন ধোঁয়ার কল কালো বাদুড়ের মতো উড়তে থাকে।সেখানে কখনো দর্শনের মৃত্যু খুঁজতে খুঁজতে নতুন দর্শনকে না পেয়ে ঘোর বিবর্ণ জালকে সাথি করে পরিবর্তনটাকেই সস্তা বুলির খিস্তিতে রেখে স্বকীয়ের জাত সৃষ্টি করার প্রয়াস পায়,মাটির স্বকীয় তাদের কাছে অচেনা।
বহু সন্ধ্যার পর সন্ধ্যা বদলাতে থাকে।নিয়মিত এই সব পাগল গ্রুপদের পাগলামি রাতের কুয়াশায় গিয়ে গরম হয়।সমস্ত দুর্ভিক্ষ আর ক্ষুধার যন্ত্রনা হুঁশ ফেরা স্মৃতির লাইনে থামে।তেমনি এক রমরমা সন্ধ্যায় জটলা পাকাল প্রতিদিনকার পাগলেরা।ভীষণ মুহুর্তে গিয়ে ডোবার জলে মত্‍স্যকন্যার জাগন। সাথে সাথে মাছিগুলো পালিয়ে যায়।যত তুখোড় প্রজাপতিদের উপর যেন সজোড়ে আঘাত আসল,ফিকে হয়ে গেল পাগলদের পাগলামি এই অনাকাঙ্খিত বিভত্‍স মত্‍স্যকন্যার রসালো হাসিতে।ইতিমধ্যে হাসির সংক্রামক ব্যাধিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে এক পাগল।কসমেটিকস মসলার সুবিশাল কর্পোরেট রাজ্যের দূত হিসেবে তাকে পাঠানো হয়েছে ।এই ক্ষুদে রাজ্য তার টার্গেট ।কিন্তু সচেতন পাগলেরা বেমানান সন্ধ্যায় সংক্রামক বুঝতে পেরে তাদের পাগলামির অস্তিত্ব রক্ষায় মগ্ন।
সুচতুর বেমানান মত্স্যকন্যা পরবর্তী শিকাড়ের খোঁজে অধীর আক্রমণাত্মক হয়ে বিচরণ...




মদ ও মধ্যরাত

মধ্যরাত। ঘুটঘুটে আঁধারকে ইচ্ছেমতো মেঘেরা জড়িয়ে রেখেছে। অনেক্ষণ ধরে মদ গিলেছে ,তারপর ঢালছে একটু একটু করে। ঘাস, লতা, মাটি, নির্জন আঁধার অরণ্য স্বাদ নিয়ে সন্তুষ্টি করছে আর প্রলাপ বকে বেড়াচ্ছে অনবরত।

আমি পায়ে হেঁটে হেঁটে এগোচ্ছি মদের হালকা গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে।পায়ের শব্দে মাটির কেঁচোরা কালো গর্ত থেকে ধড়ফড় করে বের হয়ে উঁকি দিচ্ছে। ডোবার জলে শিকাড়ী মাছেদের বিভত্‍স চোখ, জোনাকির দল ঘিরে ফেলেছে আমাকে,বেশ আগ্রহের অনুসরণ তাদের।কিছু পথ আসতেই পাশের ঝোঁপ থেকে ঘাপটি মারা বিষাক্ত সাপটি বোকার মতো ফণা তুলে বসে আছে। বেশ ভয় ভয় লাগছে তার। তন্দ্রার গাঢ়ত্ব ভেঙ্গে গাছেরা নিস্তেজ ও চিন্তিত হয়ে পড়েছে। পরক্ষণেই তাদের কাঁপানো স্বর আর কথোপকথন শুরু হলো।কাঠবিড়ালীর দল তাদের খাদ্য অভিযান থামিয়ে পাতার ফাঁকে আপাতত লুকিয়ে। পেঁচা খুব ভয় পেয়ে এক দৃষ্টিতে কি যেন ভাবছে । হাঁটতে হাঁটতে মদের বৃষ্টি আমাকে আরো কড়া ও উত্তপ্ত করে তুললো। সেই পরিচিত শ্মশান ঘাট, তার কাছে আসতেই তাল গাছটি একটু নড়েচড়ে উঠলো; এতক্ষণ হয়ত পোড়া ছাইগুলোর সাথে গোপন বৈঠক করছিল। বাদুরের নিরব সহবাস কৌশল পর্বে ঘোর আঘাত আসলো।

অবশেষে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ রাত পেরিয়ে বিছানায় যখন ফেরা হলো পূর্ণিমার চাঁদের পেন্ডুলামে তখনো মধ্য রাত ঝুলে আছে।কিন্তু অবিরত মদ বৃষ্টি থেমে নেই,ঝরছেই...

No comments:

Post a Comment