কোথায় কি!

05 July 2016

রুদ্র আমিন


ভালোবাসার অভিব্যক্তি
প্রথমা জানো,
আঁধার আজ খুব ভালো লাগে
ভালো লাগে বদ্ধ করাগার
এখানে আলোক স্বল্পতা, বাতাসে গা পচা উপ্ততা
সবই যেন কেমন কেমন অমৃত লাগে
এখানে কেউ আর রুদ্র বলে ডাকে না 
ডাকে না তসলিমার প্রেমিকা বলে

কানের পাশে বাতাসের কথা বলা শুনতে পাই মাঝে মাঝে
শুনতে পাই অতৃপ্তিকর বাণী, কখনো ধর্ষক কখনো প্রতারক
শুধু শুনতে পাইনা প্রেমিক শব্দটি কিংবা ভালোবাসা
এখানে কয়েদী নামেই বেশ পরিচিত
জেনে রেখো প্রথমা,
এই নামেই বেশ ভালো আছি

যখন কারো মুখে ভালোবাসা বা প্রেমিক শব্দটি শুনতে পাই
মাথায় চৈত্রা পাগলের মতো ফুটন্ত পানির ন্যায় রক্ত টগবগ করতে থাকে
মনে হয় আরেকটি অপরাধ করি-
প্রেয়সীর মিথ্যে অপবাদের চেয়ে খুনীর খেতাব অনেক ভালো
কেউ কি ভালোবাসায় প্রতারক শুধু শুধু হয়?

অতীতে ভালোবাসা প্রতিদিন প্রতিমুহূর্ত এতোটাই পেটাতো যে 
ধারালো ব্লেড দিয়ে শরীর কেটে হৃদপিণ্ড টুকরো টুকরো করে ফেলতে ইচ্ছে হতো
তবুও পারিনি, কেননা
ভালোবাসার খিদের যন্ত্রনা এতোটাই কাবু করে দিয়েছিলো 
তবুও ভালোবাসার দরজায় বারংবার ঠকঠক কড়া নেড়েছি
চলে গেছে অনেক দিন, যন্ত্রণা মাউন্ট এভারেস্ট পেরিয়ে গেছে
জীবনের শেষ হিসেব নিকেষ বুঝে নিতে,
সেদিন চৌকাঠ পেরিয়েছিলাম
জানতে চেয়েছিলাম, কেন আজ এতো অবহেলা অযত্ন ভালোবাসার
কিন্তু পারিনি, প্রেয়সীর স্পর্শে স্পর্শিত না হয়েও পেলাম 
নির্যাতিত নির্যাতনের মামলা অবশেষে, সেটা আর কিছুই নয় শুধু ধর্ষক
বলতে পারো প্রেয়সী 
এতোটা ঘৃণা নিয়ে কীভাবে বেঁচে থাকা যায়? 
অতঃপর আজও জানতে ইচ্ছে করে কেমন আছো? 
হৃদপিণ্ডটা বড্ড জ্বালাতন করে সেদিনের মতো
প্রথমা, পারলে ৩০২ ধারায় আরেকটা মামলা দিও
ভণ্ড প্রতারক যতদিন বেঁচে থাকবে দুজনার তানপুরাটা সঙ্গীত রচনা করে যাবে
কীভাবে ভুলে যাবে সেদিনের কথা, বুকের মাঝে মাথা রেখে বলেছিলে
হৃদয় শুধু তোমারি নাম উচ্চারণ করে চলেছে 
প্রতিশ্রুতিতে বলেছিলে, চলো আমরা দুজন পালিয়ে বিয়ে করি
কিন্তু, জীবন মানেই যে বাহুল্য বাতাস, সে তুমিই তার জ্বলন্ত প্রমাণ
ভালোবাসা, আজ তোমাকে মনে হলেই বড্ড ঘেন্না হয়




 
আত্মার আর্তনাদ
প্রথমা,
শুনেছি তোমার ঘরে নাকি নতুন পুরাতন বাঁচা মরার অনেক অনেক 
ঔষধের স্তুপ জমা পড়ে আছে 
নতুন না হলেও চলবে, পুরাতন এক ডোজ ঔষধ দিবে?
খেতে বসলে খাওয়া হয় না, ঘুমাতে গেলে ঘুম হয় না
নাওয়া-পড়া কোনো কিছুই সময়ে হয়ে উঠে না
অতৃপ্ত আত্মারা উম্মাদের মতো কেবলই চিকার করে
অবশেষে এক পৃথিবীর যন্ত্রনা এবুকে দিয়ে যায়
মাইলাগী' সেই আধা পাকা ব্রীজের পাশের বটতলে
ডিএন স্কুলের কর্ণারের উম্মুক্ত সেই করিডোরে
চট্টলার সেই বৃষ্টি ভেজা জিএসসির মোড়ের প্রতীক্ষায়
শুধুই স্মৃতির রাণীর যন্ত্রিত অস্পষ্ট কণ্ঠস্বর
আজ অনেকটা বছর পেরিয়ে গেছে, তবুও
মনে পড়ে, মন কাঁদে স্বচ্ছ আকাশে যেমন কালমেঘ লুকোচুরি খেলে
ঠিক তেমনি ভেসে যাওয়া তোমার মুখোচ্ছবি আর সুরেলা কণ্ঠের প্রতিশ্রুতি
আজও শিউরে উঠি প্রতিটি মুহূর্তে, বলি
এতো যন্ত্রনা পাওয়ার চেয়ে তোমার স্তুপ হয়ে পড়ে থাকা ঔষধের মাঝ থেকে
এক বড়ি ঔষধ দাও, হয় বেঁচে থাকবো না হয় মরে যাবো
ভালো-মন্দ সত্য-মিথ্যের নিশ্চুপ পৃথিবীতে বেঁচে থেকে কি লাভ?
প্রথমা,
শুনেছি তোমার ঘরে নাকি নতুন পুরাতন বাঁচা মরার অনেক অনেক 
ঔষধের স্তুপ জমা পড়ে আছে
সেখান থেকে যত্ন করে নিশ্চিত ঘুমের এক ডোজ ঔষধ দাও





মরে গেলে কেঁদো না
জানি, মরে গেলে তুমি হাসবে, খেলবে
ভুলে যাবে জগতের সকল কান্নাকাটি, এটাও মনে রেখো
মরে গেলে চাই তুমি কেঁদো না ভুল পবনে
চৈত্রের খা খা দুপুরে যখন যেদিন মাথা গুজে বসেছি
বৃক্ষের বুকে সর্বাঙ্গ চাপিয়ে যেদিন স্বর্গ স্বপ্ন দেখেছি ঠিক তখনি
মাটির ঘ্রাণ মিশ্রিত শীতল জলে জাগিয়ে তুলে হাসতে
কিচ্ছু বলিনি, কিচ্ছু বলার নেই, কি--বা আছে বলার
ভালোবাসা যেখানে খেলে মান-অভিমানের খেলা।
তিন আঙ্গুলের স্পর্শ আর একগ্লাস তরতাজা টিউবওয়েল জল
আমাকে,শত মাইল হেটে চলার শক্তি জোগান দিয়ে হৃদয়ের ক্ষত হয়ে বসেছিলে
স্নিগ্ধা,মনে রেখো, জেনে রেখো; কেউ হারিয়ে যায় না; কিচ্ছু হারায় না
আলো আসে, আলো যায়; আঁধার আসে, আঁধার ধায়
মরণে কেউ সুখ পায়, কেউ মরে সুখী করে যায়, 
জানো স্নিগ্ধা, রূপান্তরকে কখনোই হারান বলি না, রূপান্তর হারায় না
মরে গেলে তুমি কেঁদো না, জল মাটির পাতিলে যেমন, সিরামিক পাত্রেও তেমন।




পুরস্কার
প্রথমত যা জেনেছি যা বুঝেছি
তার সবটুকুই ছিল ভুল
ভালোবাসার মাঝে ভালোবাসার বৃক্ষ বপণ করে
ধবংস করেছি প্রকৃতির কূল
ভালো লাগা ভালোবাসা বেঁচে থাক
খুনসুটি মান-অভিমান বিশ্বাস-অবিশ্বাস থাক সব বাদ
ধরার মাঝে 'দিন আছে বেঁচে মানুষের স্বাদ
দ্বিতীয়ত যা চেয়েছি যা পেয়েছি
তার সবটুকুই একান্ত আপন পাপ
বেঁচে থাক যার যা আছে সুখ দুখ উন্মুখ ভালোবাসা
প্রেমিক-প্রেমিকা- জানে কোনটা ভালো কোনটা ভুল
অধিকার আদায়ে চাই না ঢেকে থাক শান্তির আশা, এযে মহাপাপ
মোনালিসা হয়েই বেঁচে থাক কারো ভালোবাসা সুখে দুখে আঁকা
ধরার মাঝে 'দিন- বা যায় বেঁচে থাকা
অতঃপর, 
কবি' কণ্ঠ, কবি' চিত্ত, হাসি কান্নায় ভরা ভালোবাসা
কবি' মুখ, কবি' চোখ, কবি' হৃদয় বিস্মিত বিহবলপ্রায়
মৃদ হাসে মৃদ কাঁদে নিভৃতে কবি' জয়গান
প্রতিবারই বিদায়ের ক্ষণে কবি'রা হয়ে যায় দেব-দেবী তুল্য,
রুদ্র, নজরুল, আজাদ, রফিক সবার মনে প্রাণে আজ পূর্ণ, ঠিক
তেমনি প্রেমিক-প্রেমিকা বিচ্ছিন্নতায় হয় উঠে নক্ষত্রের দ্রুতি

__­­­­­­___________

No comments:

Post a Comment