কোথায় কি!

16 August 2016

রেজওয়ান তানিম




রৌদ্রদিনের রাগ
জানি দেখা হবে একদিন, দূরবর্তী নদীগান যেমন উদাস করে
বলে যায় আমাদের ঘাসপুতুলের সুর, নতুন আদর চুমু মেখে
ওম খুঁজবার আরেক ফাগুন উপাখ্যান! উঁচুতে উঠলে শহরের
শেষে দেখা যাবে- মেঘের মিনারে ওই, পাখি ঠোঁটে প্রেম ফোঁটে!

প্রিয়ন্তিকা, ভুলে গেছ রৌদ্রদিন, ঘাসের চাঁদরে শুয়ে আনমনে
ডুবিভাসি প্রেম, সোনালি সোহাগ নিয়ে মিশে যাওয়া মাতাল মন!

কাজল ও চোখে ফেনা জাগে, জানি বালু ও জলের সঙ্গম অনিঃশেষ
দূরে চলে গেলেই যায়না ছিঁড়ে, প্রেমভাষা আনকোরা বেদনার সুর!

এগারো জুলাই, ২০১৬
হুমবোল্টপ্লাস,  ফ্রাইবার্গ

বিষচুমু
ঠোঁটে বিষের লিপস্টিক
মেখে নেয় প্রিয়ন্তিকা, আমাকে
চুমু খাবে বলে।

ওতো জানে না, আজকাল
বিষচুমু খেতে খেতে অদ্ভুত কেমন এক


এন্টিবডি তৈরি করেছে শরীর,
বিষের চুমু খেলেই এখন
শুধু নেশা ধরে!

মনে হয়,
মরে গেলেই ভাল হত!

দেখতে হত না
আরেকটা বিষমাখা সকাল।

কুড়ি জানুয়ারি, ২০১৩
ঢাকা


ডুবসাঁতার
আহত পাথর বলে না কখনো, কোন ক্ষতে
কালো গোলাপটি ঝরে যায়, অসহ্য রৌদ্রের মদ পান করে।

শরীরে কামড়ের দাগ নিয়ে, মরেছে যে সময়-
তার কোলে শুয়ে আছে
ভুলে যাওয়া প্রিয়ন্তিকাদের কঙ্কাল!

আমরা নির্বাক,
সমুদ্রে ফেলে এসেছি কিছু বিশ্বাস
 যাবতীয় প্রেম!

অলৌকিক অন্ধকারে ডুবসাঁতার দিয়ে বেড়াচ্ছে
আমাদের যাপন, বিকেলের রোদ এবং
প্রিয়ন্তিকার খয়েরি চুল!

কুড়ি আগস্ট, ২০১৫
ফ্রাঞ্জ মেহরিঙ প্লাস, বার্লিন


কফিন
মরে গেলে বেঁচে যায় অন্ধকার!

এই বিশ্বাস নিয়ে যতবার শুয়েছি কফিনে,
ততবার উঠে এসেছে মাংশল অসুখ, জেগেছে
নষ্ট বীজের নৈরাজ্য উসব!

প্রিয়ন্তিকার পোড়া ঠোঁট আজকাল যেন
মোহন মৃত্যুর আশ্বাস!

যে শকুন খুবলে খায় মরা লাশ,
তার মুখে হাসি ফোটে জরাথুস্ত্রের নিন্দাবাদে 

ভুল বলেনি ছায়াপুরাণ
আজকাল শকুনেরাও মানুষ হতে চায়!

প্রতিধ্বনির গ্রীবায় লিখে রাখে
সবিস্তার, নিজস্ব ভ্রূণ নষ্ট করার গল্প!

দুই এপ্রিল, ২০১৬ 
পল ম্যুলার স্ট্রাসে,  ফ্রাইবার্গ



শাদা পরচুল অন্ধকার-পাঁচ
টপলেস সূর্য তৃষাতুর সারমেয় বুকে চাবুক চালায়, জলাধারে জীবন খুঁজতে নামলেই কেন তেড়ে আসে মহাশোল? জানেনা পলিমাটি মন। বলতে পারে না কেউ, কেন কখনো কখনো নিরাশ্রয়ের সকালে আশাতুর বাবুইয়ের ঠোঁটে আদার তুলে দেয় সোনালি বাণমাছ। মনে পড়ে যায়, দীর্ঘস্থায়ী অবিশ্বাসের চিকিসায় ফল আসেনি এক বিপ্লবে। আরো কয়েকটি বিপ্লব বিষয়ক কর্মশালা আশু প্রয়োজন, পেলব কবিতা লেখবার স্বার্থে। উষ্ণতর হিংসায় পুড়তে থাকা পৃথিবীর মুখ, জমে যায় স্নেহহীন বরফকুঁচির বুকে গ্লেসিয়ার আর্ট হিসেবে। সবশেষে নীরবতা। প্রিয়ন্তিকার খয়েরি চুলে এখন গুজবের ঘরকন্না, একটু আগে ত্রিমুখী ক্রসফায়ার চালিয়েছে শাদা পরচুল। কেউ কেউ ঘুম যায় লাবণ্যের কবরে, দুগ্ধস্নান শেষ করে নেমে পড়ে কাদাজলে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই একে জলহস্তীদের চারিত্রিক প্রবণতা হিসেবেই মনে করে বালুঘড়িতে মাপা আপেক্ষিক সময়।

ঊনত্রিশ এপ্রিল, ২০১৩
ঢাকা




কেমন আছ প্রিয়ন্তিকা?
নিঃসীম সমুদ্র তট-
একা আমি দাড়িয়ে। হাতে বেনসন সিগারেট;
আমার একাকীত্বের সাথী, আমার প্রেমিকা!
অবাক লাগছে? অথচ জানো আমার কিন্তু
ভীষণ ভালো লাগছে ভাবতে- ওই যে
প্রতিটা ঢেউ ছুটে আসে নিয়ত,
কূলের কাছে, জড়িয়ে ধরে চুমু খায়;
আর আমি তখন-
চুম্বন স্পর্শ, খুঁজে নেই সুখ শলাকায়।

প্রিয়ন্তি,আসবার কথা ছিল না তোমার?
এই সাগর সঙ্গমে, আমায় নিয়ে!
তুমি কী এসেছ আজ?
অন্য কারও দেহে, নিজের আদরটুকু বিলিয়ে দিয়ে!
নাকি তুমি, সামনে ছড়িয়ে দেয়া-
ওই ধোঁয়াশায় মিলিয়ে গেছ, নিজেরই মত করে।

প্রিয়ন্তিকা! হয়ত ভালবাসতাম তোমায়, আগে-
চাইতাম বেলাভূমি কুড়াবো নুড়ি!
তবে এখন আর চাইনা তোমায়।
এখন আমি পেয়েছি সঙ্গী, আমরণ বন্ধুতা!
কেমন বাধ্যগত- মরতে চাইলেও
বাঁধা দেবে না।

প্রিয়ন্তিকা, মনে পড়ে তোমার-
নীরব জোছনাহীন সন্ধ্যা কত
কেটেছে তোমার সাথে, হৃদয়ের লেনদেনে-
ঠুনকো আড্ডায়, কিংবা
তোমার আবেগ ঝরা অধর মিলনে।
এখন, এসবের কোন দরকার পড়ে না!
এখন আমার কত প্রেমিকা!
চাইলেই চলে আসে রাতের আকর্ষণ -
নেশা ধরা রাঙা স্কচ।
যে সুধা পাত্রে তাকালেই মনে হয়-
লাল আভায় ছাওয়া তোমার ঠেঁট!
আমি এক মনে পান করি;
তোমার মেখে দেয়া বিষাক্ত ওষ্ঠসুধা।
ওফ! কী প্রবল আনন্দ, কী অসীম প্রাবল্য
তার ভালবাসায়; মাথায় তোলে
মত্ততার ঝড়- দুরন্ত সাইক্লোন, তপ্ত আগুন
জ্বালিয়ে আমায় করে অঙ্গার!
তুমি! এত ভালবাসা জানতে না মেয়ে।

প্রিয়ন্তিকা, আমি ভালো আছি
অনেক, অনেক ভালো।
মাঝে মাঝেই এখন, আকাশের তারাদের-
খুব আপন মনে হয়;
চলে যেতে ইচ্ছে হয়, ওদের কাছে।
হয়ত ওরাও আমার মত একাকী বলে!
আমি ভালই আছি। তুমি,
কেমন আছ প্রিয়ন্তিকা?

ষোল জুলাই, ২০১০
ঢাকা।

No comments:

Post a Comment