কোথায় কি!

25 January 2017

কামরুজ্জামান কাজল







বালিশদুটি পাশাপাশি চিৎ হয়ে শুয়ে থাকে। ধবধবে সাদা কাভারে ঢাকা, শিমুল তুলায় পেট বাঁধানোধরলেই মনে হয় হাত গলে যাবে ।
.
লাল রঙের ফুল আঁকানো চাদর । টানটান হয়ে বিছানার সাথে লেপ্টে আছে । ঠিক সামনেই একটা ড্রেসিং টেবিল । পর্দাটা সরানো । আয়না দিয়ে বালিশ দুটি দেখা যায় । ভরাট বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে থাকে ।
.
বালিশদুটির মধ্যে অনেক অনেক কথা হয় । অনেক কথার মানে আছে,আবার অনেক কথারই নাই । অনেক কথা বলার আগেই, দুইজনই হেসে কুটিকুটি 

এইতো সেদিন, দরজা খুলতেই ডান পাশের বালিশের উপর এক ঝাঁক আলো এসে পড়ে । অপ্রস্তুত ডান বালিশটার কি যে লজ্জা! বাম পাশের বালিশ খালি মজা দেখে, আর মুচকি মুচকি হাসে ।
.
আচ্ছা, তুই এত শয়তান কেন ডান বালিশটা খোঁচা দেয় । বাম বালিশটা তখনও হাসছে । হাসতে হাসতে বলে ঐ দুই মিনিটের লোকটা আবার আইছে!
.
মাঝে মাঝেইদুটি মাথা এসে ঢেকে দেয় বালিশদুটিকে । একটি মাথা পরিচিতচুলগুলি মেঘের মতো কালো, পাহাড়ের ঢলের মত কলকলা। অন্যটি, কে জানে! এসময়টায় বালিশদুটি একে ওপরের দিকে তাকায় । আবছা আলোটা খুব আকর্ষনীয় লাগতে থাকে । এরপরেই ঘটে আসল ঘটনা ।
.
মাথা দুটির মধ্যে অনেক গল্প হয় ! বালিশদুটি কান পেতে থাকে । কিছু গল্প হাসির, কিছু গল্প প্রেমের, কিছু আবার শোনাই যায় না । লজ্জা পেতে হয়।
.
মাঝে মাঝেইদুটি মাথা এক বালিশে জড়ো হয় । খুশিতে ভরে ওঠে টানটান চাদরের বুকটিও । তখন অন্য বালিশটি কেমন চুপচাপ হয়ে যায় । ঠিক লজ্জা কিংবা হিংসা নয় । একটা একলা একলা ব্যাপার ।

দিন যায়, দিন আসে । বালিশদুটি আবার আগের মতই শুয়ে থাকে । মান অভিমান পেরিয়ে আবার একটু একটু কথা হয়,
:কিরে, আজ যে বহুদিন হয়ে গেলো!
:হু, বহুদিন
:এভাবে দিন কাটে? কতদিন নতুন কোনো গল্প শুনি না
: পুরনো গল্পই যে শেষ হতে চায় না...

পরিচিত মাথাটি এসে কাত হয়ে ডান বালিশটায় মুখ ঢাকে। বাম বালিশটিও বাদ যায় না । চাদরটি তখন কুঁচকে থাকে । মাঝে মাঝেই ডান বালিশের কাভার ভিজে যায় । এই সময়টাও বালিশদুটি সতর্ক! ঠিক ভালোবাসা কিংবা সহানুভূতি নয় । একটা একলা একলা ব্যাপার ।

{গল্পটি কবি Firoj Ahmed ভাই এর "দুটি বালিশের সংসার চিন্তা" কবিতা থেকে অনুপ্রাণিত}

No comments:

Post a Comment