সিরিজ কবিতা
লালটিপ
১
তোমার বিছানা হেঁটে হেঁটে
গতরাতের আমার কাঁচা ঘাম
রুমের মেঝে ভিজে বারান্দা পর্যন্ত
শেষ সিগারেট আমাদের ঠোঁটে ভাগাভাগি
আমরা ছাই হয়ে গেলাম।
বালিশে মুখ গুঁজলে
তোমার দাঁতের যন্ত্রনায় রুম কাঁপে
রাত শেষে বারান্দায় গজালো
একটি নতুন চারা।
২
লোকাল বাস শাহবাগেই
নামতেই
এক কাপ চা গরম চুলায়
রোদগুলো মোড়ের পাশে
অপেক্ষায়
ভায়োলিনের সুর তখন রকমেটাল
ঘুমমুখো হাসির চেহারায়!!
হাতিরপুল বাজারে এসে রোদেরা ছায়া হয়ে গেলে
গতরাতের কন্ঠটি ছায়ার ভেতর শব্দ করে
৩
এক চিলতে রোদ আমাদের সাথে হাঁটছিলো, ঠিক গলির মাঝখানে এসে
বিভাজন হয়।অর্ধেকটা হাতের বাম পাশে দিয়ে রওনা,বাকিটা সোজা পথ।
আর তখনি আকাশটা মেঘ হতে থাকে,কেবল গতরাতের হাসিগুলো
ডেথমেটাল বাজায় সারাক্ষণ।
সেই অর্ধেকটা শনির আখড়া পৌছতেই, হাতিরপুল দিয়ে মেঘজল আড়ালে
গলি থেকে গলি ভিজিয়ে হাঁটতে থাকে।
৪
কোন একদিন সাটারে প্রেসার পড়তেই ছবিটি নেড়ে উঠেছিলো। ছবির মানুষ দুটো চেয়ে আছে সামনের দিকে।সামনে একটি বিশাল রাস্তা, রাস্তার এক পাশেই সেই পুরনো লাইব্রেরী। সেখানে একটি বই আছে যার উপর ক্যামেরার নজর পড়েছিলো,কেবল জুম ইন করার পর ছবির মানুষগুলো আর দেখা যায় না।বইটি স্থির হয়ে থাকে। লাইব্রেরীতে এখন শুধু মানুষ দুটো থাকে,গতকালও তারা একসাথে থাকতো না।
৫
আমাদের একটা পারস্পারিক আবেগ শাহবাগে স্থির হয়। সেদিন রৌদ্রজলে ভায়োলিন সুর মিশিয়ে পান্ডুলিপি লিখতে শুরু করে আবেগ নিয়ে অযথা।আমরা কেউ সোঁদা ফুল ফুটাতে পারিনি তার আগেই সোঁদা মাটির ডায়েরী টিএসসির ক্যাফেটোরিয়ায় যায়,যেখান থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছবির হাটে অবেলার গানের আসর লুকিয়ে থাকে ডায়েরীতে। আমি সমস্ত বিকেল হয়ে সন্ধ্যার ছবির হাটে ভাঙা মাটির দলা গুণেছিলাম।একটি মিছিল মিশে শহীদ মিনারে পৌছাতেই ভায়োলিন থেমে যায়, পান্ডুলিপি অর্ধেক শেষ হয়। আমরা একটি সিগারেট শেয়ার করেছিলাম কিন্তু এনড্রয়েডের শেয়ার ইট জানতো না সেটা।সোঁদা ফুল আমাদের ঠোঁটেই ফুটেছিলো কিন্তু সেলফি সেটা ধরতে পারেনি।
৬
গত তিনমাস ধরে লালটিপটির উপর আঙুলের ছাপ।সেইভাবে নীল ডায়েরীতে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে বহু গল্প কথা লিখা হচ্ছে।যতবারই তুমি লাল টিপটি ধরেছো আঙ্গুলের ছাপ দেখেছো।তোমরা অনলাইন ইউজাররা কেউ কেউ ফিসফিস করে হয়তো চোখ রেখেছিলে,আঙ্গুলের ছাপ নজরে আসেনি।তোমরা অনেক চেষ্টা করেও আঙ্গুলটি খুজে পাওনি।পাবেও নয় কোনদিন। কপালের সাথে কেবল তিনমাস চুক্তি করেছিলো। গত তিনমাস ধরে লাল টিপটি'র উপর আমার আঙ্গুলের ছাপ।
৭
কলিং রেকর্ডের তোমার গানগুলো এখন মহাকাশযানের রেডিও স্টেশনে। কারণ সেখানে আমাদের বসবাস শুরু হয়েছে তিন মাস শেষ হওয়ার পর থেকে।অনেকগুলো মেঘগোলাপ নিয়ে নভোচারীরা ধুমকেতুর সন্ধানে যাত্রা করেছিলো,যেখানটায় লালটিপের ছবি পাওয়া গেছে। তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।ইতিমধ্যে দশ বছর শেষ।নাজনীন, তুমি গান গাওয়া শুরু করলে যেদিন পৃথিবীর সমস্ত অনলাইন মেমোরীতে আমাদের মেসেঞ্জার! কেউ এখনো তাদের খুঁজে পায়নি বলেই মহাকাশযানে আমরা শুধু আছি। গন্তব্য ওই ধুমকেতুর দিকে।আমাদের মহাকাশযানে আমেরিকান একজন নভোচারী আছেন যার পর্যবেক্ষণ ধুমকেতুতে রাতদিন।আরেকজন রাশিয়ান নভোচারী বেরিয়ে পড়েছেন আগামী বিশ বছর পর আরেকবার তিনমাসের দর্শনে আকাশে সেই ধুমকেতুর সন্ধানে। তোমার কপালে এবার লাল টিপ জ্বলেছে,আমি এখন ভায়োলিন বাজাচ্ছি আঙ্গুল দিয়ে।
৮
তোমরা এখন আমাকে যা দেখছো আমি তা নয়,এটা আমার জেনেটিক কাঠামো মানে রোবট।
এই যে একটা ধুমকেতু এসেছিলো বিশ বছর আগে আমি সেখানেই।বিশ বছর ধরে আমি নিজেকে
ধুমকেতুবাসী মনে করলেও তাদের কাছে আমি পৃথিবীবাসী এখনো।কারণ আমার রোবট নিয়ে
তোমরা ইচ্ছেমতো আমাকে মানুষ বানাচ্ছো।
No comments:
Post a Comment