চারুত্ব
অলঙ্করণ কৌশল ভুলে গেছে;-সমান্তরাল একটা জীবন।
ছোট ছোট দুঃখের ঢেউ ব্যথিত করেছে বারবার
এখন মরা নদীর মতো শুকিয়ে যাচ্ছে ভরাট একটা জীবন
জীবনের ষোলআনা কখনোই পূর্ণ হয়ে ওঠে না।
কারো কারো জীবন অংশের সহিত মন্তব্যের ঘরে
পড়ে থাকে;-নৈঃশব্দ্যে।
তবু প্রতিদিন ঘনীভূত হতে থাকে নন্দনচিন্তা-
ইতিহাসের আদিখ-মেলে দেখে নেই সৌন্দর্যতত্ত্ব
অথচ তাকালেই দেখি;-পরিণতিমুখি তোমার চারুত্ব
জানি, নিজের মুদ্রা দোষে-একাকী যাপন বয়ে বেড়াচ্ছো!
সত্যি, অলঙ্করণ কৌশল ভুলে গেছে;-সমান্তরাল একটা
জীবন।
রোডম্যাপ
অর্থশূন্য হয়ে
পড়ছে যাপিত জীবন সংগ্রাম
অথচ একটা রোডম্যাপ
আঁকা হচ্ছে না- পরিকল্পিত!
নিয়ন্ত্রণহীন
বাজার অর্থনীতি;- দুর্বিষহ করে তুলছে
প্রত্যহ আকাশচুম্বীর
মতো পণ্য দর! আর-
মুক্তবাণিজ্যের
ঘেরাটোপে ছুঁড়ে দিচ্ছো কৌশলী দৃষ্টি
এসব এখন প্রাত্যহিক
জীবনের অংশ বিশেষ
যা কিছু নিয়ে
অগ্রসর হয়ে উঠি সেখানেই অন্যরূপ- অহমিকা
বিধিবদ্ধ হয়ে
থাকা জীবন রহস্যালাপে মেতে উঠছে প্রত্যহ!
তবু বিমুগ্ধ
হয়ে অনুবর্তন করে যাচ্ছি সময়ের কৌশলী খেলা
জীবনগতি ক্রমশ
সন্ধ্যারাগের দিকে হাঁটছে-
অথচ একটা রোডম্যাপ
আঁকা হচ্ছে না- পরিকল্পিত!
গন্ধাভাস
রাতের অন্ধকার পৃষ্ঠাগুলো ভাঁজ খুলে নেয় নিজস্ব নিয়মে-
আলোকবর্ষ প্রতীক্ষমাণ;- সমগ্র রাত জুড়ে একটা চাঁদ
চক্রাকারে ঘূর্ণায়মান হতে থাকে-
জাগ্রত হয় পাশাপাশি আলোআঁধার।
তোমাদের হাসিমুখে যে রঙের ফোয়ারা ফুটে ওঠে-
সেই প্রতিটি হাসিমুখের বর্ণচ্ছটার অনুবাদিত ভাষা
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা।
সময় একটা নিঃসঙ্গ ভাবনা;-
শুধু টিক টিক শব্দের মধ্যে কিছুটা ব্যঞ্জনা জমা রাখা;-বেঁচে থাকার।
যেনো- জানান দিয়ে যাচ্ছে অন্তিম সময়ক্ষণ
এসে গেলো আরামপ্রিয় বাক্সবন্ধি ফ্রেমের বেড়াজাল!
গন্ধাভাস ছড়িয়ে পড়ছে;- চারিদিকে মুহু মুহু...
অভিজ্ঞানপত্র
ইদানিং- প্রাত্যহিক বৃষ্টিস্নাত সময় ভিজিয়ে দিচ্ছে ডুবজলে।
ভিজতে ভিজতে দাঁড়িয়ে থাকছি ভেজা কাকের মতো-
মন্দ্রিত স্মৃতিকথার দুয়ারে।
পেছনে তাকিয়ে স্মৃতিচোখ; দেখে নিচ্ছে-
পৌরাণিক রাস্তায় জোড়া ভেজাকাকের দৃশ্যকল্প!
প্রাক্তন মুখের ছবি ভেসে আসতেই
ঝিরিঝিরি কম্পনে- দুলছে নৈঋত হাওয়া।
বৃন্তচ্যুত হয়ে ঝরে যাচ্ছে সময়ের কুসুমকলি-
তবু অনুচিন্তায় আচ্ছন্ন বৃক্ষান্তরালে মমতার পরশ মাখবো
প্রাণবায়ু ;- তুমি চলে যাওয়ার পূর্বে-
অন্তত একবার প্রকাশিত হয়ো প্রিয়দর্শনীর দেখা কোন স্থিরচিত্রে।
আকাশচিত্রে একদিন আমাদের নামফলক ভেসে উঠবে
সেখানে পীতবর্ণের মুখচ্ছবি থাকবে দু’জনার
উত্তর প্রজন্ম আমাদের অভিজ্ঞানপত্র খুঁজবে প্রত্নতত্ত্বের নির্দশন রূপে।
ঈশ্বরের অদৃশ্য ছায়া
একটা ছায়া হেঁটে যায়-অনেকগুলো ছায়ার
মিলিত মিছিল হয়ে। কোন ক্লান্তির
অনুভব নেই।
ছায়া কোথায় যায়;- কোথায় বসতি নিত্য
কেউ দেখে- কেউ আবার দেখে নিতে পারে না।
দৃশ্যত ছায়া আপন ভূমিতে বসবাস করেন;-
অদৃশ্যত প্রতিটি হৃদয়ে।
বিশ্বাস নিয়ে তীর্থ যাত্রার-সঙ্গী হয়ে বসে আছি
তার আগে কিছুটা প্রদক্ষিণ মাত্র।
মূলত ঈশ্বরের ছায়া হয়ে প্রদক্ষিণ করে যাচ্ছি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে
ঈশ্বরের অনন্য;- এক প্রাণে সংসার সাজিয়ে মুহূর্তে প্রস্থান
করেন-
অন্য প্রাণে;- অদৃশ্য ছায়ারূপে!
ব্যক্তিগত ট্রেন
থমকে যাচ্ছে;- ব্যক্তিগত ট্রেন শব্দহীন।
নতিদীর্ঘ জীবন
পৃষ্ঠাঙ্ক সাজিয়ে বসে আছে
-অন্যথায় উঠে আসছে না পূর্বাভাষ!
নিখাদ দিনগুলো
গল্প হয়ে উঠে আসছে-
নিরাপদ পোতাশ্রয়
ভেবে;- যেনো নোঙর
প্রত্যাশী জীবন গল্পের
চারিত্র্য।
জলকাদায় হাঁটা
সময় প্যাঁচপ্যাঁচ শব্দে অতিষ্ঠ-
জীবন; যেনো বিষকাঁটালি হয়ে জড়িয়ে নিচ্ছে
কেউ! একটা বিষকণ্ঠ- সম্মুখে!
বিশেষ দ্রষ্টব্য
অবশেষে খুঁজে নিও;- তোমার
প্রেক্ষণীয় মাঝে
চিরহরিৎ এই আমাকে বিন্দুবিসর্গ।
যদিও থমকে যাচ্ছে;- ব্যক্তিগত ট্রেন।
জীবনবরেষু
নথিভুক্ত হচ্ছে ব্যক্তিগত জীবনসমগ্র।
নিত্যকাল;- ঘটনাসূত্রে জড়িয়ে যাচ্ছি এই ভূচিত্রে
তবু ভুলচুক একটা জীবন-
বিরুদ্ধস্রোতে বইঠা ধরে আছে বেঁচে থাকার!
মাঝে মধ্যে মনে হয় জীবন- ড্যাশচিহ্নের মতো
বিরহপ্রবণতা নিয়ে পড়ে আছে নির্জনে
কেউ একজন রঙের তাস ফেলে ডান নিয়ে যাচ্ছে;-
হেরে যাচ্ছি আমি, তুমি কিংবা আমরা।
খেলার আসরে বসে থাকা;- অই সময়টুকু আমাদের জীবন।
শূন্যায়তন
খুঁজে দেখেছি;- মেলেনি মূল্যবান সবই অমূল্যের কাছে বিলীন।
কুসুমপ্রিয় সময়
চলে যাচ্ছে পদ্মপাতার জলের মতো গড়িয়ে গড়িয়ে
মুগ্ধদৃষ্টি;- কারো চোখে পারে নি তুলে ধরতে মার্জিন করা রূপ।
মায়াবিদ্যা;- কার চোখে তুমি বসত করো ? জাদুমন্ত্রে এখনো-
বশীভূত হওয়া
গেলো না;- জীবন শ্লেটে মানসপ্রতিমা
আঁকছি।
প্রতিক্ষণ অভিমুখে
পড়ছি তোমার যেনো দৃশ্যত আয়নার সামনে-
দাঁড়িয়ে সংগোপনে
দেখে নিচ্ছি একান্ত অবয়ব
সবই পুঁথিগত;- ব্যক্তিগত শুধু বেঁচে আছি একটা শূন্যায়তনে।
পূর্বাভাস
ব্যক্তিগত আবহাওয়াবিদ জানিয়ে গেলো;- আসছে পূর্বাভাস ভালো
নয়। দিনদিন
ক্ষয়িত হচ্ছে মানবিক পাহাড়;- প্রচুর বৃষ্টিপাত, যে কোন সময় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
ততক্ষণে চোখের জলের পরিমাপ সেরে নিলাম। চোখের
দিঘিতে অগভীর জল
টলমল করছে; ভাবলাম এতো ছোট দিঘিতে কতো জলরাশি! তবু তারা নিশ্চিন্তে-
খোলা আকাশের দিকে চেয়ে থাকে; অই আকাশ ফুড়ে বৃষ্টিজল ঝরে পড়ে টুপটাপ-
টুপটাপ করে; অথচ কেউ দেখে না সেই ঝরে পড়া বৃষ্টিজল!
একদিন সত্যি সত্যি ঝড় আসে-
ঝড়ে ল-ভ- হয়ে যায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো নিজস্ব
সাজানো সমগ্র পৃথিবীর উঠোন।
আবহাওয়াবিদ;- তোমার পূর্বাভাসের সাইরেন বেজে ওঠার আগেই আচমকা-
সমস্ত মানবিক পাহাড় ধসে পড়েছে! চোখের দিঘিতে জলরাশি
গরম সাদাভাতের-
জল উৎরানোর মতো উৎরাচ্ছে.. সইতে পারছি না, সত্যি বলছি- সইতে পারছি না।
করুণা
করুণা- যাপিত জীবনে গাঢ় রঙ হয়ে উঠছে! পৃথিবী মঞ্চে- এতোটা নৈঃশব্দ্যের
অভিনয়;- ক্ষণে ক্ষণে রূপভেদ! দু’চার আনার
হিসেব মিলাতেও অন্যের করুণা
জড়িয়ে যাচ্ছে। কোথায়
রাখি- একটা ফুলদানি সজ্জিত প্রকৃতি-জীবন। করুণা-
এতো উচ্চ অহমিকায়
দাঁড়িয়ে আছে;- বর্ণাঢ্য জীবন ছুঁতে পারে না। বরং
জীবনকে
করুণা ভিক্ষা
দিয়ে যায় বেঁচে থাকার সংগ্রামে। করুণা- তোমার দুয়ারে;-
দাঁড়িয়ে আছি
ব্যক্তিগত ভালোবাসা ফিরিয়ে দেবো বলে।
আমি তো করুণা
চাইনি;- চেয়েছি পুনরায় বিনিময়-প্রথা চালু হোক।
ভালোবাসার বিনিময়ে
ভালোবাসার- লেনদেন হোক প্রতিটি চারিত্র্যে।
করুণা- তুমিও পারো পার্শ্ব চরিত্রের ভেতর দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে;- আশ্চর্য!
গুপ্তবিদ্যা
কোন গুপ্তবিদ্যা জানা নেই বলে গৃহোদ্যানে একা একা হাঁটি-
জীবনের অনুগ্রহে যেটুকু সঞ্চয় তাই নিয়ে দিব্যি দিচ্ছি পাড়ি।
আয়ুস্রোতে ভেসে যাচ্ছে শৈশবের রেলগাড়ি-
আহা জন্মঘুঁটি পৃথিবীদৃশ্যে লাঠিমের মতো ঘূর্ণায়ন চক্রে দৌড়াচ্ছো!
এখন আষাঢ়সন্ধ্যা- মেঘভাঙা অন্ধকার; সামনে
দাঁড়িয়ে একটা আস্ত জীবন।
আগামি জন্মের শুভক্ষণ গুনছে শ্যামলআলোর নিচে পড়ে থাকা ভাঁটফুল
অঞ্চলভেদে ঢুকে যাচ্ছে অযাচিত বায়ুস্রোত!
কাচভাঙা চিকনকণ্ঠে বারবার ধ্বনিত হচ্ছে বিরহপুঁথি
বীজমন্ত্রের সাধনা ভালোই জানো দেখি-
কিছুটা আলোস্রোত যাপিত জীবনে এসে ধাক্কা খাওয়া সুখময় বলেই ভাবছি।
মৃত্যুস্রোত;- আপাতত তুমি বিপরীতমুখি সংসার সাজাও
ঘাসফুল তুলে নিতে চাই দুই-হাত ভরে এই প্রকৃতিমেলায়।
বিরোধাভাস
সবকিছু পূর্ণতা
পায় না জেনেও একটা নির্দিষ্ট গন্তব্য খুঁজে চলা
গন্তব্য কী সত্যি
খুঁজে পাওয়া যায়! নাকি মিলিয়ে যাওয়া-
শেষ রাস্তায়
সঙ্গমের পূর্ণছেদ গন্তব্য হয়ে ওঠে ?
একটা মিথ্যে
ভালোবাসার ভিত;- কতোটা আঁকড়ে রাখে
যোজন পথ;- আয়ুস্রোতে ভেসে বেড়াচ্ছি
আলো-আঁধার মাঝে জোনাকরঙের আনন্দ ক্ষণিকের!
তবু সন্ধ্যা-র চোখে কালোদিঘীর পথ ধরে হেঁটে চলেছি
জীবনকে নতুন
করে জানবো বলে- অথচ
সংশয়, নীল আকাশে তাকিয়ে নীল রঙে মিশে যাচ্ছি শূন্যতায়।
রাস্তা
রাস্তা যে সোজা বলো;- অতোটা সোজা নয়।
রাস্তায় নেমে দেখেছি-
একটা রাস্তা আরেকটা রাস্তার পথ খুলে দিচ্ছে-
ছুটন্ত হয়ে ছুটছে সে;- কতো পথ, কতো মত
কতো তার অলিগলি- শুনেছি, বায়ান্ন বাজার
তিপ্পান্ন গলিও আছে!
অই রাস্তা থেকে ফিরে আসলো- সকাল
দুপুর গড়ালেই ক্ষুধামন্দা- চিরায়ত।
প্রতিটি রাস্তা;- এক একটি পথ বিছিয়ে রেখেছে- আশ্চর্য!
সেই পথে কালো দাগ পড়ে থাকে- অসহায় মোড়ানো সাপের মতো
যেনো অভিশাপ! রাস্তায় ক্ষত পড়ে;- রোদগন্ধ-
চামড়া ওঠে যায়
ধুলোমাখা সময় দীর্ঘশ্বাস ছড়াতে ছড়াতে-
ক্লান্ত হয়ে আসে;- ভাঙা বেহালার করুণ চিৎকারের মতো।
রাস্তাপথে পড়তে পড়তে আচমকা মোড়;- পথে পথে সংঘর্ষ!
জীবন একটা রাস্তা;- পথ খুঁজে চলে অনুসন্ধানী চোখে...
No comments:
Post a Comment