কোথায় কি!

22 August 2017

রিয়া চক্রবর্তী



রাত একটা বেজে গেছে
রাত একটা বেজে গেছে, তুমি হয়তো ঘুমোচ্ছো।
আকাশ গঙ্গার স্রোত বেয়ে নিশাচর পাখির ডানার মতো রাত্রি নামে পৃথিবীর চোখে;
তোমার বুকে যে বিষাদ ঘুমিয়ে আছে-
আকস্মিক বার্তায় তাকে আমি জাগাবো না।
আমার কোন ব্যস্ততা নেই।
যেমন সবাই বলছে ,আমাদের বিচার পর্ব শেষ।
ভালবাসার নৌকা বিষাদ স্রোতে ক্ষতবিক্ষত।
সময় এসেছে আমাদের ছাড়াছাড়ির,
প্রয়োজন নেই অতীতের দুঃখ,
যন্ত্রণা ও ক্ষতগুলো ব্যবচ্ছেদের।
বরং চুপ করে থাকো আর শোন
নিঃশব্দে ঝরে পরা পৃথিবীর রাত।
রাত একটা বেজে গেছে, তুমি হয়তো ঘুমোচ্ছো।
নিশব্দ গভীর রাতে, কারা যেন,
অশান্ত পৃথিবীর বুকে গোপনে কান পাতে;
কে যেন জেগে থেকে কথা বলে ওঠে,আর -
বুকের শেষ প্রেমটুকু ,রাত ছড়াল মহাকাশে!
এমন মায়াবী আলোয়, ইতিহাসের গল্প
শুনতে শুনতে চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে;
রাত অনেক হলো, হয়তো তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো।

তোর জন্য
ইথার তরঙ্গে রেখে গেলি তোর ফিসফিস।
মনের আয়নায় তোরই প্রতিচ্ছবি।
তোর জন্যই ধূপ-জ্বেলে-রাখি মন্দিরে।
আমি বরাবরই আগুন মুখী,
নায়াগ্রাকে বেঁধে রাখি চোখে।
এই যে তুই  মেপে নিচ্ছিস সময়
প্রতি পদক্ষেপে অজানা ঠিকানা।
বৃত্তবন্দি বিন্দুতে ভাবছি বসে
কোন পথে যাবো? স্বর্গে,
না কি পাতাল মুখে!
প্রত্যাখ্যানের কিছু রং থাকে নিজস্ব।
পুড়িয়ে দেয় চোখ, আত্মা, মন।
তবু সন্ধ্যা হলেই আলো জ্বেলে রাখা,
তোর জন্যই মঙ্গলগান।




অবুঝ স্বপ্ন
স্বপ্নগুলো আজকাল ঘুমোলে আসেনা আর,
রাতজাগা চোখের পাতার নিচে কালচে দাগ।  রোজকার কাজ-অবসরে-ভিড়ে-ব্যস্ত থাকি
রোজনামচায় সূচীপত্র ধরে কলের মানুষ হয়ে।
অবাক হয়েই আমি চেয়ে থাকি, মিলিয়ে যাওয়া বিশ্বাসটুকুর দিকে। আলো রং স্বচ্ছ করে ভালোবেসে ভয়ানক দোষ করে ফেলি। একদিন স্তুতিতে ভাসিয়েছিল ,আজ নির্বিকারে কাঠগড়ায় দাঁড় করায়, শুনানি হয়ে যায় কোন ফাঁকে, বিচার শেষ।



বৃষ্টি রাতের কথারা
বর্ষা আমার প্রিয় ঋতু। আজও আমি বৃষ্টি ভিজি আজও আমি বৃষ্টি দিনে হারিয়ে যাই আমার রূপকথার দিনগুলোতে। টিপটিপ বৃষ্টি সারাদিন।বৃষ্টি হয়ে যাবার পর,মন চলে যায় ছোটবেলার বৃষ্টি রাতের সময়ে।সে সব রাত,যখন টিমটিমে হ্যারিকেনের আলোর চারিপাশে, বাদল পোকারা উড়ে বেড়াত রূপকথার গল্প নিয়ে। আবার যখন জোনাকির ডানায়, বয়ে আনা আলো জানলার বাইরে একটা মায়াবী পরিবেশের সৃষ্টি করতো।তখন ঝিঁঝিঁর সুরে ভেসে আসত ঘুম।
বৃষ্টি হয়ে যাবার পর,মন চলে যায় বৃষ্টির রাতের দিনে।যখন অবহেলার আটপৌরে দিনগুলোতে পোষা বেড়ালের মতো ওম পোহাতাম, চাঁদের আলোয় জানলার পাশের কাঠাল গাছটার নীচে,নেমে আসত 'ব্ল্যাক বিউটি'আর আমি তার পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াতাম তেপান্তরের মাঠগুলোতে।তারপর একসময় কোন এক গাছের কোটরে নেমে আসতো নরম ঘুম ।
বৃষ্টি হয়ে যাবার পর,মন চলে যায় বৃষ্টির রাতের দিনে
যখন কুচি কুচি বৃষ্টি কনা নিয়ে হাওয়ারা উড়ে যেত ঢেউ ভেঙ্গে মনের আনাচে কানাচে। রাতভাসি তারারা সিরসিরে সুর নিয়ে যেতো রাতপরীদের দেশে।ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমীরা ডানায় বয়ে আনতো পরী ছানাদের। তাদের সাথে খেলতে খেলতে, পালকের ওমে নেমে আসতো আদুরে ঘুম।
ভোরে একদিন উঠে দেখি, বৃষ্টি ভেজা ছাদে পায়রার ডানা বেয়ে মেঘের কুচি ছড়ানো। বছরের প্রথম বৃষ্টিতে আজও ভিজি। আজও একটা একটা করে কাগজের নৌকো ভাসিয়ে দিক জমা জলে।কখনো মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে ছাদে দাঁড়াই। একটা একটা করে তারা জমায় আকাশ, কখনো বা আধখানা, কখনো বা পুরো চাঁদ অপেক্ষায় থাকে।সেই চাঁদের আলোয় আসে শান্তির ঘুম।



নারী
আমার এই ভীষণ চেনা চেনা শরীরের ভেতর
আস্তে আস্তে বেড়ে উঠেছে একটা চারা গাছ,
আমার বুকের মাঝে,আমার ভেতরে
বিস্তৃত করে চলেছে তার শাখা প্রশাখা,
আর নিতান্তই ছোট্ট, এই চারা গাছটা
হয়ত এখন বাঁচতে শেখেনি একা একা;
তাই মধ্য রাতে যখন বাতাসের সাথে
খিলিখিলিয়ে হাসতে চায় সে,
আর তীব্র  যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাই আমি।
একটা সত্যিই শিশু বেড়ে উঠছে আমার ভেতর,
আমার অহংকার হয়ে, এই পৃথিবীর মাঝে।
এসেছে আমার নারীত্বকে পূর্ণ করতে ...




No comments:

Post a Comment