কোথায় কি!

22 August 2017

ফারহানা খানম




পর্ণমোচী প্রেম
কষ চেখে হাতটা মুছে নেয় বিবর্ণ আঁচলে
এমন বেলেল্লাপনায় কোন লুকোছাপা নেই
ছিলনা কোন কালেই
রোদের কটাক্ষ উপেক্ষা করে সে ছুটে যায় দূর মাঠে
শালিখের সাথে বড় সখ্যতা তার
ধান খুঁটে নিতে নিতে হাওয়ার সাথেও চলে খুনসুটি
বালুচরে চোখ পড়তেই মনে পড়ে
গত বর্ষায় এখানে উপচানো জল ছিল
ছিল শাপলার অমৃত ফল
এখন শুধু আছে জলে আঁকা রেখা

কেমন সন্ন্যাসী সেজে আছে সমগ্র পটভূমি
গ্রন্থি ছেড়া আনন্দ উপচে পরে
যতখানি শূন্যতা সেঁটে ছিল ঠিক সেখানেই
ঢিবি ঘিরে পিঁপড়েরা সারি বেঁধে চলে
আগাম রসদ যোগায়
তাপ শুষে নিয়ে নিঃস্ব হতে হতে মাটিও বিদীর্ণ হয়
ওদের তাতে ভ্রূক্ষেপ নেই যতটা জমে ততোটাই লাভ
কষ চেখে কি লাভ হয়?
হৃদয় বসবে না কোন কালেই পর্ণমোচী প্রেম যে
এক দিগন্ত হলুদ আকাশ
হেঁটে যাচ্ছে জীবন নদীর পাড় ধরে



মোহ
অবয়বে নিঃসঙ্গতার মেঘ চোখের কোলে
স্পষ্ট জলের রেখা ,
প্রশ্নমাখা দৃষ্টি ছুড়ে দিয়েই কাজে ডুবে
গেলেন চিত্রকর
.কেমন আছেন ? প্রশ্ন করতেই
উত্তর মেলে
''আজকাল একাকিত্বই ভালোলাগে খুব
যাপিত জীবনের সব অনুষঙ্গ আয়ত্ত করা কঠিন ''
যেন গভীর গহবর থেকে উঠে আসা
করুণ আর্তনাদ!
ইজেলে অসম্পূর্ন ছবিটা দেখি
একটা গাংচিল একলা আকাশ; দুরন্ত বাতাসে ফুলে ওঠা
জাহাজের মাস্তুল,সোনালী রোদ্দুর দোল খায়
রুপোলী জলের বুকে...
বোঝা যায় উপবাসী দিনে প্রবল ছিল জলের তৃষ্ণা
এতোটা শূন্যতাও কাটেনি লৌকিকতার মোহ !



একান্ত ব্যক্তিগত
আমাদের মাঝে তেমন কোন বন্ধন ছিল না
তবুও গাঢ় এক রেশমি সুতোর বাঁধন ছিল হয়ত
তাই ঘুড়ি উড়ছে বেশ
আমরা রোদের সাথে লুকোচুরি খেলছি বিস্তীর্ণ মাঠে
করেছি মেঘের সাথে মিতালি
টের পাইনি কখন বসত গেড়েছে ভালোবাসা
আসলেই কি তাই? নাকি নিজের সাথেই করছি লুকোচুরি
যেমন করে তুমিও জানাওনি ভালবাসি!
কি এক নীরব অভিমানে আমরা দূরে সরে গেছি
তবুও আজো বুকের ভেতর
অপেক্ষারা অপেক্ষায় থাকে ইচ্ছেরা ইচ্ছের সাথে
সাঁতার কাটে স্মৃতির নদীতে
যদিও আমাদের উল্লেখযোগ্য কোন স্মৃতি নেই যে
এক উম্মাদনা ছুটে আসবে বৃষ্টি বৃষ্টিকে বলবে কাছে আছি
যা আছে সব প্রথাগত
তবুও দৃষ্টির অন্তরালে যে গভীর ভালোবাসা
সেটুকুই আমাদের একান্ত ব্যক্তিগত



খাতক
চাঁদ চৈতন্যের মাঝে আছে অদৃশ্য বন্ধন
মাঝরাতে রুপোলী থান জড়িয়ে কেমন উদাসী হয় চাঁদ
যেন সন্ন্যাসিনী
তবু অমাবস্যা ঘিরে ধরে আলোর যাপন রোধ করে
তাই মনে হলো চাঁদ হিসেবী, প্রহর গুণে গুণে নীল দ্যুতি ছড়ায়
রাতপাখিরা জাগে উদ্বেল হয় জোনাক
ঝিঁঝিঁর ডাকে জেগে ওঠে ঘুমন্ত পৃথিবী
জেগে ওঠে আমার চৈতন্য চন্দ্রাহত পৃথিবীর বুকে
শিহরিত হয় জ্যোৎস্নায়
আর তখনই আঁধার ভেঙে কোমল জ্যোৎস্না
ঠাই খোঁজে জমে থাকা শিশিরের বুকে
দূর বাজারের টিম টিম আলোয় আড়তে আড়তে খতিয়ান খুলে
বসে তখনো মহাজনেরা, হাতে অদৃশ্য চাবুক
জেগে জেগে খাতকেরা ম্রিয়মাণ হয় মাটিতে মিশে যেতে থাকে
না ঘুমোনো চোখে অপারগ ক্রোধে!
আমিও এক খাতক বটে অনেক দেনা ভালবাসার কন্দরে




আয়নার দালাল
শরীর ভেদ করে কত কি ভেসে ওঠে
বালিয়াড়ির বাঁকে ডুবে যাচ্ছে
যুবতীর অসহায় দৃষ্টি
যুবক চোরাবালি খোঁজে ঘনশ্বাস ঘেটে
দারুন টানাপোড়েন-অন্তরাল হাতরায় স্বপ্ন
হাতছানিতে গোপন কান্না
অনুরাগে প্রাবল্য, হাসিতে ফেটে পড়ে প্রলয়
নিত্যই ঘটে এসব
বেড়াল চোখে দেখতে শেখো
অন্ধকারে প্রিয় হবে
কারণ ভাল করে দেখো
তোমার গর্ভ একপ্রকার উদ্বাস্তু
অলিগলির চোরা গল্প
অথচ দিনের আলোয় এসবই খুব অন্যরকম
যেন অচেনা বিবিধ শব্দ
সরে থাকে
কিন্তু বাস্তবতা সমার্থক প্রেমের মত
আয়নার দালালী করে
একই কথায় বাক্‌সিদ্ধ

No comments:

Post a Comment