কোথায় কি!

25 October 2017

নাহিদা নাহিদ





সুখেন,
যেদিন চলে গেলে , পিছন থেকে ডাকতে গিয়েও ডাকতে পারিনি , গলার মধ্যে কিছু একটা বিঁধে ছিলো, কিছু একটা! তোমার ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হয়ে শূন্যে মিলিয়ে গেলো, তুমি ফিরে চাইলেনা আর! এভাবেই হয়তো চলে যেতে হয়, চলে যায় কেউ!- কি হতো যদি একবার ফিরে চাইতে?
সুখেন, তোমার সাথে কিছুই মেলেনি আমার, কিছুই না; তবুও বুকের ভেতরটা শূন্য করেছো তুমিই আমার। তোমার বাঁকা বাঁকা কথা, চোখের চকচকে তেজ, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝামেলা করার বাহানা, কিছুই না। তুমি ঘাড় কুচকে থাকা থুত্থুড়ে বুড়ো , দণ্ডে দণ্ডে খুঁজে ফেরো ভুল, অসভ্য আদিম মানুষ তুমি! তবুও জানো তুমি, তোমার সবটাতেই আমার কেমন ঘোর! তোমার খেয়ালিপনা, তোমার তুচ্ছতায়ও আমার আসক্তি, জেনে রেখো একমাত্র তুমিই ছিলে আমার বুকের ভেতরে জমে থাকা সবটুকু হেমলক বিষ! আমার সুখ! 

-মনে আছে সুখেন আমার ঘরের ব্যালকনিতে আমি জোড়া চড়ুই পুষতাম?
-কেন জানো?
চেয়েছিলাম চড়ুই দম্পত্তির ছানাপোনা হলে পুরো সংসার তোমায় দিয়ে দেবো, তারা কিচির মিচির করে তোমার ঘুম ভাঙাবে রোজ। তোমার ঘুম ভাঙতেই আমি হাতে তুলে দেবো ব্রাজিলের পাহাড়ি বাগানের তিতকুটে কফি, দেয়া হলো না আর। কার্নিশটা খালি , ধোয়া ওঠা পাহাড়ি স্বাদ অতীত । সেই চড়ুইগুলোও নাই , উড়ে গেছে কোথায় যেনো; কার বাড়ি!
সুখেন তোমাকেতো বলাই হয়নি জানো, আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তানপুরায় একটা গানের সুর তুলে রেখেছিলাম। কোনটা বলতে পারো ? সেই যে সেবার ফাল্গুনে কলেজ ফাংশনে মহুয়াদির কণ্ঠে একটা গান শুনলে মনে আছে তোমার? তারপর বেহুঁশ ছিলে দুদিন সেই মহুয়া মৌতাতে ; সেই গানটা-

আমি জনম জনম কাঁদিবো প্রিয়
রচিব রজত রাগ--

আহা আমার বুকের ভেতর সেই কতকাল ধরে জমে আছে কান্না। কতকাল! আমারও কাঁদতে হবে আজ!
তুমিই তো তুমি । ছেলেমানুষ একটা ! বাসায় ফিরেই হুমড়ি খেয়ে খুঁজতে অরুন্ধতীর গান, কঙ্কাবতী কবিতা। খুঁজে না পেলেই চিৎকার! তোমার অসুরের মতো চিৎকারে আমি হাসতাম খুব! লুকিয়ে রাখতাম সব। কোথায় যে কঙ্কাবতী আর কোথায় যে অরুন্ধতী, ছাই জানতে তুমি, তোমার মান্নাদেকেও রাখতাম কখনো কখনো দৃষ্টিসীমার আড়ালে, তাঁরাও হাসতো হয়তো আমার জমিয়ে রাখা গোপন বাক্সের ডালায়। কি করার ছিলো বলো তাদের জন্য এত প্রেম দেখানোর, আমার যে হিংসে হতো তাদের খুব, যাদের তুমি রোজ ভালোবাসতে!
সুখেন আমি তোমার হতে চেয়েছিলাম । হলো না। না হওয়টাই হয়তো নির্ধারিত ছিলো । তবু বুক পোড়ো, মন পোড়ে, পোড়ে চোখ। যা কিছুই অসম্ভব তার জন্য কেন এত হাহাকার তোমার আমার ছিল?
-বলতে পারো ?
আমাদের ঘামে ভেজা দুপুরগুলো মিথ্যে আজ । বিশ্বাস করো সুখেন তোমাকে হারানোর পর কোন রাতে আমি ঘুমাইনি, কোন রাতেই না। আমার একটা জীবন তুমি ছাড়া একলা বাঁচা অসম্ভব! জানো তুমি এখন আমার নিঃশ্বাসটুকু শুধু আছে, আমি বেঁচে নেই আর একটুও!
শহরজুড়ে আজ নিয়নবাতি, আলো আর আলো! সানাই বাজছে তোমার উঠোন জুড়ে, আমারও প্রস্তুতি শেষ, আমি জানি এরপর সবাই বলবে আমি পাগল ছিলাম। আমার অসুখ ছিলো? জানো তুমি আমার অসুখটার নাম? খবরদার সিজোফ্রেনিয়া বলোনা কিন্তু। এ রোগটার নাম শুধুই সুখেন।
সুখেন
সুখেন
সুখেন।
সুখেন তুমি সেদিন মুখ ফিরিয়ে একবার দেখোনি। অভিমান হয়েছে খুব, অভিমানগুলো বিদ্রোহ করে আজ আবার দেখতে চাইছে তোমার মুখ। আসবে?
নাহ থাক!
-তোমার নতুন জীবনের সুখ আর নিয়ন আলো সইবে না আমার চোখে।
চললাম, জেনে গেলাম এ পর্যন্ত তুমি আমারই ছিলে, এক জনমের সমাপ্তি শেষে জেনে গেলাম তুমি আমার নও অন্যকারো, তবুও চাই সুখে ভরে থাক তোমার সবুজ উঠোন।

-তোমার আরিয়ানা

No comments:

Post a Comment