কনডেম সেল
আদালতের রায়ের পর-পর কনডেম
সেলে তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি
অর্ধেক পথ তোমার চুল ধরে টেনে
হিচরে নিয়ে এলে
আমার কেমন জানি কষ্ট পোহাতে
হলো
খুব রাগ জমেছে শরীরে আর তখনই
আমার হাত উঠে গেলো তোমার শরীরে
ভীষণ জোড়ে একটা থাপ্পড় বসালাম
তোমার গালে।
আমার হাত পোড়াচ্ছে এতটাই বেগ
ছিল চড়ে
আবারও রাগ হলো, কেনো হাত
পোড়াবে কোমল গালে হাত রাখলে
খুব রাগে তোমার ঠোঁটে ঠোঁট
বসিয়ে দীর্ঘ চুম্বন দিলে
খুব আরাম হচ্ছিলো,
যেনো আমার রাগের উপর কেউ
মালিশ করে দিচ্ছে।
রাগ জেদ মুহূর্তেই নেমে এলো
বরফগলা হীম জলের মত
খেয়াল করলাম তুমিও চোখ বন্ধ
করে নিষ্পাপ ফুলের মত উজ্জ্বল ওঠো
ধুয়েমুছে বাষ্প হয়ে গেছে
কুৎসিত পাপ
সব মিলিয়ে তুমি উপভোগ করছিলে
আমাদের শেষ চুম্বন
আর রক্তাক্ত গালে হাতের পাঁচ।
বাকি অর্ধেক পথ তুমি
স্বেচ্ছায় হাঁটছ আমার সাথে
আমিও ভুলে গেছি আমি জেলার
মনে হচ্ছিলো যুবকের প্রথম
প্রেম ফিরে এলো
প্রথম সাক্ষাৎ এর সেই মেয়েটা
যাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম রাস্তায়
রোদের কিনারায়, জ্যোৎস্নার
মায়াভরা রাতে
হতাশ হয়ে পরতাম যখন সে
অন্ধকারে ঢুবে যেতো
সন্ধ্যায় কিংবা আলো নেভার
পরে-
সেই মেয়েটার সাথেই হাঁটছি
দীর্ঘপথ
ভুলে গেছি আমি জেলার
ফাঁসির আসামী আমার হাতে
যেতে হবে কনডেম কক্ষে।
স্বৈরাচারী ধ্বনিত ব্রিটিশদের
তৈরি নাগরিক কারাগারের দুয়ারে
তোমার আমার দীর্ঘশ্বাস
কে যাবে ভেতরে, কে আসামী, কে,
কেনো, কেমন করে...
আমি ভেতরে তাকে প্রবেশের জন্য
খুব বিনয়ী হয়ে উঠলাম
অথচ ভেতরে কারা যেনো শ্লোগানে হাঁকছে
এক কথা একদাবী, প্রেমিকার
মুক্তি প্রেমিকার মুক্তি
কারা দিচ্ছি এই শ্লোগান, কারা
?
কনডেম সেলের দুয়ার আটকে ফিরে
যাচ্ছি ব্যর্থ প্রেমিকের মত
জেলার আমি। নাকি প্রেমিক !
দুয়ার আজো খোলা, আকাশ রক্তিম
বাতাসে দুর্গন্ধ, জঙ ধরা শীতের
প্রকট তাণ্ডব
আমি বস্ত্রহীন, শিক্ষাহীন
বুকের মাটি পুড়ে ইট হয়ে
ভেঙ্গে গেছি সুনীল
আমার মাথায় ঘুরছে শেষ ইচ্ছাটা
ওর জানা হলো না
যদিও জানি, তবুও আমাদের আর
ফেরা হলো না।
শুনতে চাও?
আসলে আমি কাকে ডাকছি
কার শব্দ শুনে পথ চলি
আসলে আমার হাতে কোনো লাঠি
নেই
আসলেই আমি দেখছি অথচ অন্ধের
মত।
শব্দ শুনতে শুনতে মস্তিষ্কের
ভেতর প্রগাঢ় ঘাঁ জন্মেছে
নাম দিয়েছি 'শেয়ারড প্যাথেটিক
ডিজওয়ার্ড'।
বাস্তুসংস্থানের নিম্ন
শ্রেণীর প্রণীর মত
কখনো মস্তিষ্কের ভাষা বোঝার
চেষ্টা না করে
ভয়ে পেয়েছি জীবন্ত আকাশ, পথ,
নারী এবং পুরুষ
বিশ্বাস বলতে বাতাসকেই করতাম
কিন্তু দুর্ভাগ্য বাতাস ঘুরে
বসেছে ঠোঁটে ঠোঁটে।
আসমানে ঘূর্ণিপাক খেলেছে আমিও
জানি না যে গোপন
সে গোপন নারীকে নিয়েছে উত্তরে
দক্ষিণে পুরুষ
হাহাকার ঠোঁট আমার নতুন
ব্লেডের মত হাসছে
কুঁচি কুঁচি করে কাটছি বুক-
হাসছে মুখ
সুখিত সুখ।
আজ বুকের উপর কান পেতেছে
একযোজী বৃক্ষ
লজ্জা করে না মানুষ ! যখন তখন
যার তার বুকে বৃক্ষ হও
দেবতা কর্তৃক এমন রায় দেয়নি,
আমি জানি
আমি জানি কারণ কিছু কাল আমিও
ছিলাম দেবতার কমিনিউটিতে।
লজ্জা নেই বুঝি তোমার
লজ্জাহীন অবয়ব কখনো বৃক্ষ হয় না
কারো ছায়া হতে পারে না, কারো
অক্সিজেন হতে পারে না
পারেন বিষাক্ত নাইট্রোজেন
মদের মত গিলতে।
বুকের মাটি আর উর্ব নেই- তুমি অন্য কোথায়ও যাও
অন্যকারো বুকের উপর মাথা
গুঁজে দাঁড়াও।
শুনতে চাইলে মস্তিষ্কে আসো,
কামড় খেয়ে যাও ঠোঁটে বুকে চিবুকে
মস্তিষ্কে জন্মেছে বিষাক্ত
পোকা, পোকায় কিলবিল সকাল বিকাল সন্ধ্যা বেলা
আমার সারা নিশিভোর।
পলিথিনের মানুষ
রাস্তার মোড়ে মোড়ে পলিথিনের
মানুষ
ড্যান্ডি ভড়া পলিথিনের মানুষ
অন্যদিকে আমি নেশাখোর নই
আমি নিঃশ্বাস ফেলি না কারো
মুখে
নিঃশ্বাস নেই বুক ভরে
আমার কোন বন্ধু নেই।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে পলিথিনের
মানুষ
দু-পয়সার পলিথিন মোড়ানো লক্ষ
স্বর্ণমুদ্রার রূপ
অন্যদিকে আমি লোভী নই
আমার কোনো স্বাচ্ছন্দ্য
প্রয়োজন নেই
বুকের ভেতর পলিথিনের
প্রহেলিকা
বুক ভরে ওঠে জাগতিক ধোঁয়ায়
স্বজনে চেপে রাখার ধোঁয়ায়।
জীবন শুনশান নিরিবিলি রাস্তা
দিয়ে হেটে যায়
জল নেই চোখের কোণে, ঠাঁই নেই
কোনো ঘরে
জীবন রাস্তার মোড়ে মোড়ে
দুদিকে বেঁকে গেছে।
শোকের খবর
কোনো এক শোক খেলে যায় ভাবনার
অগোচরে
মৃত্যুর শোক। ভয়ের তাণ্ডবে
শুকিয়ে যায় গলা
ফুলে ফুলে ওঠে শিরা, কে জানি
যাচ্ছে চলে
আমাকে শোকাবহ করে, গহীন
অরণ্যে
ভয়ে শরীর কাঁপে, চোখ বুজলেই
দূরে অন্ধকার ডাকে।
কেউ হয়তো চলে যাবে খেলাঘর
ভেঙ্গে
কেউ হয়তো ফিরে আসবে নষ্টঘরে
খেলতে
শরীর জুড়ে আসা যাওয়ার বিষ বয়ে
চলে
এ জীবনের লেনদেন ফুরায় না তবু
জন্ম থেকে হাজার বার জন্ম
নিলেও
মৃত্যু আসে না- অমূল্য রত্ন
আমার আর পাওয়া হয় না।
কোনো এক দিবা স্বপ্নে কারো হিসাব
বুক পকেটে রেখে
যদি ঝাউ বনে একলা শুয়ে থাকি
দক্ষিণা বাতাস সারাটা দুপুর
এভাবে বাঁচাবে জানি
বিকেল গড়াতেই শার্টের কলার
ছিড়ে নিলে
তবুও বাতাস বাঁচিয়ে রাখে
মানি,
হিসাব বুঝিয়ে পেয়ে বসন্তের
বাতাস হৃদয়ে ঢালে
হৃদয়ও নাচে অমুক তমুক শরীর
নিয়ে
মান অভিমান কিংবা অপমান কিসের
কি।
একটি শোকের মাসে ফুলের তোড়া
হাতে
আমি কার কবরের পাশে গিয়ে
দাঁড়াবো ?
আমার ঘরে কবরগুলোর খবর নিও
আজ না হলে কাল নিও
সময় করে দেখতে এসো
তোমার জন্য শোক রেখেছি
জড়িয়ে ধরে বলবো প্রহর।
চোখে জল এলে মুছে দিও
সময় করে দেখতে এসো।
নিভে যাওয়ার আগে
নিভে যাওয়ার আগে আগুন শেষ বার
বীভৎস সুন্দর ভাবে জ্বলে ওঠে
মানুষ মরে যাওয়ার আগে শেষক'টা
দিন ঘটা করে বাঁচে
যেখানে ফাগুন সেখানে যায়,
যেখানে মধু সেখানে প্রজাপতি হয়
তারপর হুট করেই ফুরিয়ে যায়,
ফুরিয়ে যায় আঁধারে।
যুবক যখন ভুলে যায় শেষ কবে
চিৎকার করে কেঁদেছিল
যুবক তখন পূর্ণ সংসারী
ভালোলাগা কি তখন ভুলে খায়
কাদাজল পেরিয়ে জীবন্ত পথ শাদা
বকের ঠোঁটে নেশা ধরায়
কোনো শীতল শরীরের।
যুবকের যখন মুছে আঙ্গুলের দাগ
সহস্র বছর মুষ্টিবদ্ধ করেনা
বন্ধুত্বের হাত
কিংবা মুছে গেছে নদীর রেখা
সেখানে এখন ধূধূ বালুচর।
একটু ব্যতিক্রম জন্মায় যুগে যুগে
মহিষের পাল
শোকের বিলাসিতা কিছু কাল পরে
হবে
তাঁরাই এখন কষ্টের বিলাসিতায় আগুনে জ্বলে
ধোয়া নেই-পুড়ে যাওয়ার ক্ষত
নেই- চারপাশ জুড়ে উষ্ণতা
আউশের উষ্ণতা, অপক্ব
ব্যর্থতার উষ্ণতা।
বেঁচে থাকে হাস মুরগী কবুতর
বাঁচে মানুষ, দল বেঁধে
সন্ধ্যে নেমে এলেই ঢোকে খোঁপে
কেউ কেউ নিয়ে যায় কারো জন্য
খোঁপার ফুল
সকলই ফুরিয়ে যাওয়ার আগে
তবুও তো জ্বলে ওঠে মস্তিষ্ক,
তবুও তো ঠোঁট নড়ে
নশ্বর দেহের ভেতর কেমন জানি-
কেমন জানি এক ঈশ্বর আছে
হাঁপিয়ে ওঠার আগে জানালার
কার্নিশে নিভিয়ে দেয় আলো।
ঘোর অন্ধকারে জুড়ায় চোখ
রাগ অভিমান ভুলিয়ে মঙ্গোলিয়ার
রাতে
একটি তাঁরা হতে তাবু দেখা যায়
দাঁড়িয়ে আছে তাঁরি পাশে প্রিয়
ঘোড়া
তখন কি ইচ্ছে করে না, ঘোড়া
ছুটিয়ে ধরি ছুটে যাওয়া মেঘমালা।
যতদূর জানি, যতদূর জানি,
যতদূর জানি
ততো গভীর আমাদের হৃদয় নয়
আমাদের হৃদয় যতদূর যায় আমাদের
দেহ ততদূর নয়।
যৌবনের জোয়ার
আসন্ন বিষণ্নতার হাত ধরে
হাটতে থাকা আধলা চাঁদের জ্যোৎস্নায়
নবীন শৈশবসঙ্গী যুবকের উপকূলে
যান্ত্রিক ঢেউ তুলে হারায়
ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে হারিয়ে যায়
কার্পাস ফেটে কার্তিকের বাতাসে
বস্তুত যৌবন বর্তমান নিয়ে খুব
ভাবে জেনেই- কষ্ট নেই।
হারানো দিনের গান
হারেন মাস পহেলায় গেয়ে গেছে
বুড়ো কোকিল
শালিক শালুক কেউ জানে না নতুন
ঘরের বেদনাবোধ
নতুন গোলায় ইঁদুরের মুখ
ডুবানো
নতুন টিনের চালায় শুকনো পাতার
বিশ্রাম
কেউ বোঝে না মাটির ঘরে লিপে
যাওয়া গোবরের গন্ধ ভীষণ প্রিয়।
আঁজলা শোকে বুকের ভেতর
নিমজ্জিত শৈশব
বারংবার ঢেউ নিয়ে আসে চোখের
কোণে
জানালার কার্নিশে পূর্ণ চাঁদ
জেগে অমাবস্যা পোহায়
এই রুপ সময়ের, নিদারুণ কন্ঠে
পদ্য জ্বলে
কুপিতে তেল নেই ফুরিয়ে গেছে
সন্ধ্যা জোনাকে।
গভীর রাতে কিছু মুমূর্ষু
প্রাপ্তি গলায় ঝুলিয়ে
খুব যেতে ইচ্ছে করে পড়শির
ঘরে,
কড়া নেড়ে ঘুম ভাঙ্গাবো কার
মুমূর্ষু প্রাপ্তির অধিকাংশই
যৌবনের জোয়ার।
No comments:
Post a Comment