শাশ্বত
নষ্ট জোয়ারে ভাসো
চোখে গিলে খাও সম্ভ্রম
চুপিচুপি উত্তল ঢেউ তোলো
নারীর অঙ্গ ভাঁজে—দোষ নেই তাতে।
যদি কবিতায় প্রেম ভালোবাসার
কথা বলি
আবেগ উচ্ছলতার কথা বলি, অমনি
বলিরেখা টানো, ত্যাড়া চোখে
দেখ,
দুরভিসন্ধি আঁটো,
মনে জাগাও নষ্ট আভ্রু—
ঢাকনা দিয়ে ডেকে রাখো
নগ্নচিন্তা,
যদি তোমায় পরোয়া না করি—আমি
হয়ে যাই নষ্টার শ্রেণিভুক্তা,
ভেতরের দুর্গন্ধ ছড়ানোর ভয়ে
ত্রিপলে ঢেকে রাখো হৃদয়কে—
উত্তোলিত করতে পারো না ফলার
মতো।
চাঁদের আলো ঢেকে রাখতে হয় না
ও শাশ্বত সর্বজনীন
নিজেকে বিলিয়েই হয় বিলীন।
প্রত্যাহার
কে মানুষ
আমি, তুমি, না কী সে?
ওরা, না তারা?
আমার নামের সামনে—পেছনে তো
কোনো বিশেষণ লাগেনি,
তাহলে মানুষ হলাম কবে—কীভাবে?
ওই যে কানকাটা তরু, গলাকাটা
হারু
বলদ তাজেল, শুয়োর হাসু, দানব
সাজু
ওরাই তো মানুষ পেশাদারি
রক্তখেকো!
আর তারা সব পেশায় নিয়োজিত
ভদ্রবেশী, মেধাবী, চতুর,
স্যুট-কোট পরা
ওদের চোর—ডাকাত বললে ভুল হবে
শুয়োর বললে—বনের শুয়োরদের অপমান হবে—
কারণ ওরা সব খায়, দেশটাকে
গিলে খায়।
ওরা আর তারা জিম্মি করেছে
ষোলো কোটি মানুষ
লজ্জায়-ঘৃণায়-অনুশোচনায়—মানুষ থেকে
নিজেকে প্রত্যাহার করলাম।
যদি কোনোদিন এ সব হায়েনা
মুক্ত হয় দেশ
সেদিন নিজেকে মানুষ দাবি করব।
এ কেমন
ভালোবাসা
আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছিলে
স্বর্ণলতার মতো
ব্যাকরণহীন ভালোবাসায়,
বলা না বলায় বুঝিয়েছ
ব্যাকুলতা নির্দ্বিধায়।
কখনো দিয়েছ উজাড় করে
কখনো রেখেছ মুঠিভরে,
স্রোত আর ভালোবাসা
পরিমাপ করে দেয়া যায় না,
ও গড়িয়ে যায় আপন ধারায়
বহমান স্রোতের মত কূল ছাপিয়ে।
কখনো ভেবেছি এ তোমার
উত্তল প্রাণের ধারা
কখনো বুঝেছি নিতান্তই
অনিচ্ছায় গড়িয়ে পড়া।
গচ্ছিত রাখতে চেয়েছিলে
শতবর্ষী হাহাকার, কষ্ট
জমানো ব্যথা, হতাশা—
এ কেমন ভালোবাসা?
নিজেকে ভেঙে চুরমার করেলে
ক্ষতবিক্ষত করলে,
ধুলো-বালুকণায় পরিণত করলে—
অবশেষে পেয়ে হারাবার ভয়ে
নিজেই হারিয়ে গেলে—
দেখা আর তাকিয়ে
থাকা
চেনাজানা পরিসর থেকে
মাঝেমাঝে হারিয়ে যেতে ভালো
লাগে
ভালো লাগে নাম না জানা
খুবসুরতি
ফুলটির মাতাল ঘ্রাণে
আপাদমস্তক
ভরিয়ে নিতে।
নীলাভ আকাশের পানে তাকাতে
গিয়ে
হঠাৎ আটকে যাওয়া সৌন্দর্যে
বিমোহিত হতে,
তীরে আছড়ে পড়ার আগে
ঢেউয়ের তোড়ে নিজেকে ভিজিয়ে
নিতে,
জোছনার গায়ে সমুদ্র বানিয়ে
আলোর ছটায় ডুবে যেতে—
শিশিরের গায়ে নগ্নপায়ে
মন-প্রাণ ভিজিয়ে নিতে—
দেখা আর তাকিয়ে থাকার মধ্যের
তফাতটা যদি তুমি বুঝতে পারতে—
তবে আর প্রশ্ন করতে না,
কেন এতো ভালোলাগে
কেন সবকিছু ভুলে থাকি, ভুলে
যাই
যখন তোমার পানে তাকাই।
জীবন তরী
সূর্যের তাপ নিরূপণ করে
স্রোতের গতি মাপা যা না,
চাঁদের আলো অনুভব করেও
জীবন তরী বাওয়া যায় না।
তিথি নক্ষত্র গুনে,
লগ্ন মেনে—জোর বাঁধলেও
ভাঙন ঠেকানো যায় না।
চারিদিকে চারটা ওয়াল থাকলেই
তাকে ঘর বলা যায় না
বছরের পর বছর এক বিছানায়
থাকলেই
তাকে দাম্পত্য বলা যায় না।
স্রোতের বিপরীতে তরী বেয়ে যে
জীবন পার করে—
তাকে আর যাই বল
প্রেম শিখাতে যেও না।
No comments:
Post a Comment