কোথায় কি!

25 January 2018

গুচ্ছ কবিতা- অক্ষর অনীক


|| বৃষ্টির শহরে 
শহরে ভীষণ বৃষ্টি এখন। বেওয়ারিশ লাশের বুকে ভালোবাসাতোমার অলিতে গলিতে হারিয়ে যাওয়া পুরনো স্মৃতি। বৃষ্টির জলের মাঝে কি এখনো তুমিচোখের জলের তফাৎ খুঁজো?

বিশাখার প্রাক্তন প্রেমিকও এখন,  মাঝে মাঝে সেই তোমার মতো বিশাখার গল্প বলে। ওদের গল্পটা লিখেই ফেলবো ভাবছি আমি। আমাদের তো অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি।

শালুকালয়ে একাই ঝিমোয় দেশ বাঁচাও, দেশ বাঁচাও বলতে গিয়ে কালো বুটের দালালের লাথি খাওয়া সদ্য বউয়ের সিঁথিতে সিঁদুর পড়িয়ে আসা নব্য জামাই। কবিদের তালিকা থেকে সরকার ও তার নাম কেটেছে বহুকাল আগে।

  


|| কবি
দেখতে দেখতে কুড়িটা বছর পেরিয়ে গেলো
হাই ইস্কুল পাস কোরে কলেজ অব্ধি শেষ
বাবা এখন আর আইসক্রিমের বাটি এনে বলেনা
বলতো খোকা ভ্যানিলা না চকলেট
মায়ের মুখটিও কেমন পানসে দ্যাখি
বোন গুলো সব কিশোরী হয়ে উঠেছে
ভাসানটেকের ছেলে গুলো আড্ডা দেয় কচুক্ষেত
বাসার সামনেই দুবেলা ঘুরোঘুরিবুঝছি সবই


আগে নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে
নান্না বিরিয়ানি চলতো পুরাণ ঢাকায়
আহা ঢাকারূপ তোমার কমছেই না
ধপাস করে পড়লো একদিন
মনিপুরী কলেজের এক মেয়ের প্রেমে
সে যায় সে আসে, সে আসে সে যায়
দু'জনেতে বড্ড বেশি চোখাচোখি হচ্ছে খুব
     ঢাকার রাস্তায়
কে কার দিকে তাকায়, তাতে কার কি আসে যায়


মা আর বাবার মাঝে ঝগড়া ভীষণ
বাবা এখন ছেলের সাথেই ঘুমোয় বেশি
স্বপ্নে তার প্রেমিকা আসবেনা ভেবে
বাবাকে পাশে নিয়ে অস্বস্তিতেই রাত কাটে
দু'বেডের ঘরে একলা থাকতো একাত্তরের সোফাতে
ড্রইং রুমের টিভিতে রাতে খুঁজত ফ্যাশন টিভি
না এখন তার বেড মিলেছেফ্যাশন টিভি বন্ধ হয়ে
মায়ের সাথে অন্য দুই কিশোরী সারারাত গপ্পো করে
বাবার বুকে হাশফাসকিছুটা হলেও বুঝতে পারে
অভাব এসে কড়া নাড়লে পুরুষাঙ্গ বেঈমানি করে


একটা চাকুরী দরকারকী করবেন বাবু
রিক্সা নাকি ভ্যান, কোনটা আপনার পোষাবে শুনি
আধখানা লেখাপড়া দিয়ে
কেরানির চাকুরীও জুটে না ঢাকার বাজারে
আহা ঢাকাজাদুর শহর
শুনলাম সেনাবাহিনীতে লোক নিচ্ছে
বর্ডারে নাকি ভীষণ যুদ্ধ লাগে
তার জন্য আধখানা পড়ুয়াই যথেষ্ট
যাননা ঢুকেকে আর পায়

লম্বা লম্বা বুট পায়ে
জেনারেল সালামসশস্ত্র সালাম
একদুই  তিইনএক
সেনাবাহিনীর কেউ কি কবিতা পড়ে
শালার বর্ডারে যখন গুলি ছুড়ে
জীবনানন্দ কোথায় আসবে ফিরে

ইয়া লম্বা বাবার চিঠি
প্রথমেই খোকা কেমন আছো?
তারপরেই বর্ণনা
সব দ্যাখি অভাবের গল্প লেখে আপনার বাবা
সেনাবাহিনীর বেতন কত,  বলতে কি ইচ্ছে করে
না থাক সরকারি চাকুরী,  তবে কোথায় গেলো কবিতিকা
দিন রাত করছেন শুধু বাম ডান বাম - বাম ডান বাম
গভীররাতে ক্লান্ত ভীষণ
অভাবে নাকি মেয়েরাও রাতে বিক্রি হয়ে যায়
ইশ্কতো আজেবাজে চিন্তে করে


প্রেমিকা নাকি বউ হয়েছে, তবে অন্য ঘরে
দুটো ফুটফুটে কন্যার জননী সে
দ্যাখতে দ্যাখতে চাকুরীটা প্রায় বিশ বছর
অভাব গেলোবয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে বাপ ও মা
এক টিকেটেই হানিমুনে
জান্নাতুল ফেরদৌস নাহয় জান্নাতুল মাওয়া
নিশ্চিত মশাই

বোনদের শ্বশুরঘরের লোকজনের আনাগোনা নেই
উচ্চশিক্ষিত বোনজামাইরা স্ত্রী নিয়ে বিদেশেই থাকে
শুধু একাত্তরের সোফাটা আছে আগের মতো সৈনিকের ঘরে
পুরনো দুটো ছবি- মা ও তার স্বামীর সাথে দু কন্যা এক সৈনিক,
আরেকটি গোপন প্রমিকার সাথে একদিন বোটানিক্যাল গার্ডেন


রাত তিনটে কুড়ি
"অল স্টেশন স্ট্যান্ডবাই "ইমারজেন্সি এলাম।
জীবনবাবু কি বর্ডার ক্রস করছে নাকি!
     বনলতা কি পালিয়ে গেলো!
নাকি সদ্য জন্ম কবিতার তৃতীয় প্রেমিকা মা হয়েছে!


কাল সকালের খবরের শিরোনাম
"সরকারকর্তৃক ঘোষণা হয়েছে,
বর্ডারে যেসব সৈনিকদের মৃত্যু হলো তাদের
সশস্ত্র মর্যাদায় দাফনকাজ শেষ করে
অতি সত্বর তাদের পেনশনের সাথে অতিরিক্ত
দশলাখ টাকা করে তাদের পরিবার ও স্ত্রীর হাতে
তুলে দেওয়া হবে। তাদের পরিবারবর্গদের অনুরোধ
করা হচ্ছে অতি সত্বর সেনা দপ্তরে নির্ধারিত ফ্রম পূরণ
করে সরকারকে দাপ্তরিক কাজে সহায়তা করার জন্য।"

প্যারেডজেনারেল সালাম, সশস্ত্র সালাম
      একদুই তিইনএক



অভাব চলে গেলো পুরুষাঙ্গ ফেরত আসে
                        শুধু
মানুষ গুলো একলা থাকেওটা স্বর্গ কিংবা নরক নয়
                        পৃথিবী





                                  || শেষ উপহার 
সমুদ্রের নিচ হতে অভেদ্য নীরবতায় দু হাত ছড়িয়ে
মুছে যাওয়া সব অদেখা দাগ
পুড়ে যাওয়া যতো পুরনো ক্ষত
ফিনিক্সেরা সব রাতের অরণ্যের আকাশে উড়ে একা
ঘাসেদের বুকে আজো মাতাল আমির পদক্ষেপ
অবশেষে একটি উজ্জ্বল ধারালো ইস্পাত

প্রিয়তমা
আর কতোটা পথ অতিক্রমের অপেক্ষায় তুমি
যে স্বপ্নগুলো হারিয়ে ফেলেছো
মাতাল আমির পদতলে লেপ্টে আছে ঘাসের বুকে
আর কতোটা দূরে তুমি

প্রিয়তমা
মায়ার খেলায় একটি শাদা ছোট বাগানে সন্ধ্যেবেলায়
অপেক্ষা করবো আমি,  তুমি আসবে বলে
অতীতের সব পবিত্র ভুল গুলো
একে একে লুটিয়ে দিবো সন্ধ্যের আলোতে তোমার পায়ে
সকল পবিত্র প্রার্থনালয়ে হাজারো মন্ত্র উচ্চারিত হবে
ফেলে আসা দুঃখ ছিঁড়ে ফেলার

প্রিয়তমা
যদিও খুব করে আমার লুকিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়
নীল অন্ধকারের এই পৃথিবী ছেড়ে
একদিন ঝড়ে যাবো শুকনো পাপড়ির মতো
তোমার দেয়া শাদা বাগানের মৃত্তিকার কোলে
অধীর প্রতীক্ষায় বসে আছি
তোমার হাতে তুলে দিবো এক শেষ উপহার

বিস্মৃত শহরবাসী লজ্জা ফেলে দেখবে সেদিন
তোমার প্রেমিকের চোখে
ধূসর শাদা চোখের জলে
তার প্রেমিকার অবিচল ছুটে চলা বাঁধাহীন বিশ্বাসে

শেষ উপহার গ্রহণ করো
এই সন্ধ্যেবেলায় পৃথিবীর সকল প্রেমিকের উপাসনালয়ে
আজ প্রার্থনা শুধু আমার প্রেমিকার নামে
ক্ষত বিক্ষত করে দাও তুমি
অপরাধীর মঞ্চে দাঁড়িয়েছে আজ তোমার প্রেমিক
শুনো কান পেতে শুনে
প্রার্থনারত প্রেমিকেরা সব বলছে তোমায়
নয় কোন অশুভ যুদ্ধ সমাপ্তি
রক্তস্রোতে ভাসিয়ে দাও তোমার প্রেমিকের ভালোবাসা
নীলনদ হতে মিসিসিপি - বয়ে যায় রক্তাক্ত ছন্দময় আর্তনাদ
ঘাসেদের বুকে লেপ্টে থাকা দুঃখ বিলাস
শিশিরের মতো জেগে উঠুক এক বিন্দু হয়ে
মুছে যাক সব অতীত , নিরব ভুল ত্রুটি
হাজারো চুম্বনে সাজিয়েছি শেষ উপহার

প্রিয়তমা
আজ ক্ষতবিক্ষত করো আমায়
সত্যি বলছি ভুলে যাবো সব কিশোরী  অন্যায়
শুধু আরেকবার বিশাল এক রাত্রিতে মহাকালের বুকে
লিখে দিবো তোমার নাম আমার আমিতে।




|| আমাকে ভুলে যেতে পারেন 
আমাকে ভুলে যেতে পারেন
          ভুলে যেতে পারেন
গতকাল রাতে মেরে ফেলেছেন আপন সন্তান
লাশ গুলো সনাক্তকরণ চলছে বেসরকারী মেডিকেলে
আমাকে ভুলে যেতে পারেন করতোয়ার খরস্রোতে
ভেসে যাওয়া রক্তকণিকাদ্যাখা মেলেনি আজো

আজকাল আমি কবিতা লিখি,  কবিতায় লিখি
লাশেদের গল্প করি, মৃতদের সাথে আমি ঘুমোই
মৃতরা এসে কানেকানে বলে ক্যাপিটালিজমের বীজে
মায়ের মতো দেশ, বাবার মতো শহর
রক্ত দিয়ে কেনা মাতৃভূমি,  চিৎকার কোরে বলা বাঙলা ভাষা
আমি ভুলিনি বাবার লাশের ওজন,  আজ আপনি ভুলে গেছেন
লাল শাড়িতে আপনি দ্যাখেননি বিধবা,  দ্যাখেছেন বহুবিবাহ
     কালেমা না, না কোন সাতপাঁকে বাঁধা
ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলা শরীরের মাংসহায়নার দাঁতে বিষ
     আজ কেনো ভুলে যাবেন আমায়?

আমি স্বীকার করিনা আর কোন নিয়মকানুন
আমি ইস্তেহার লিখি রাতের অন্ধকারে
আপনার কাছে পত্র পাঠিয়েছি আগে বহুবার
"আমাকে মুক্তি দিন" শিরোনামে
আজ তাই ইস্তাহার লিখতে বসে আপনার কথা পড়ে মনে
নির্লজ্জ কতোটা হয়ে অবলীলাক্রমে লিখে যান স্বাধীনতা
আমি স্বাধীন করেছিলাম আপনার মা'কে
আপনার বাবার বুকে গুলি লেগেছিল নভেম্বরের ত্রিশ তারিখ
হিন্দু ছিলেন আপনার বাবা, মুসলমানের মেয়েকে বিয়ে করে
আজ আপনি বৈষম্য করেন দ্বিধাহীন

আজ কবিতা লিখতে এসেছি আপনার সীমান্তের কাঁটাতারে
আমাকে ভুলে যেতে পারেন তবু আমি ভুলিনি -একটি বাঙলাদেশ
আমি কোলকাতাগামী কোন কবি নইঢাকায় বসবাস করি
বাঙলায় কথা বলি, বাঙলায় খিস্তি মারি
বাঙলায় ঈশ্বরের সাথে ফুর্তি করিতার ভাষা জানি না
আমার কবিতা বাতিল করবেন আপনি কোন ছার

ছারপোকারা রক্ত খায় রাতের অন্ধকারেপাকিস্তান খেয়েছে বহুকাল আগে
আমি কি পেয়েছি বলুন কবিতার পিছে
লিখেছি প্রেম,  লিখেছি আর্তনাদ,  লিখেছি স্বাধীনতা বিনিময় শুধু কি শুভেচ্ছা
লাথি মারি আপনার শুভেচ্ছার পুচ্ছদেশে
আমার ছেলেটা বেকার আজ চাকরি নাই বহুদিন
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড থেকে ডিগ্রী নিয়ে বন্ধুদের সাথে এখন পরে থাকে দিনরাত
              ও কি আপনার সন্তান না!
শুনেছি গোপনে নাকি সেও পিতা হয়েছে, তবে সে মেয়ের মা কোথায় গেলো
সেতো আমারই প্রেমিকা ছিলো, ছিঁড়ে খেয়ে ফেলেছে আপনার সভ্য সমাজবিধবা বোলে
আমাকে ভুলে যেতে পারে প্রাক্তন প্রেমিকারাদোষ নেই
আমি সস্তা কবি - কবিতা বেঁচি না, কবিতা খাই
যেমন খেয়েছে আমার বাবা দাদা, আমিও তেমন কোরে খাই

চা'য়ের দোকানে সাহিত্য আড্ডার পাছায় লাথি মারি দিনে দশবার
বোকাচোদা সব ল্যাঙটা কবির দলমেয়েমানুষ হাসলেই শেষ হয়ে যায়
দেখিসনি তোরা মধুমালার লাশ, বোনের প্রেমিকের চিৎকার
অবেলায় শিশু হত্যা করিস দু' টাকার কনডম পরে, নার্সিং হোমের বারান্দায় মুখ ঢেকে ঘুরিস
আর মদ গিলে মাতাল হয়ে মাতাল কবি উপাধি নিয়ে কবিতা লেখিস
তবে এটাও একটা কবিতা সাতচল্লিশ বছর পরে
আমি কী পেলাম?
আমি কী পেলাম?
জবাব দে, মাতাল কবির দল ওরে সাহিত্যচোদনা

আবারো সম্মান জানিয়ে বলতে চাই;
আমাকে ভুলে যেতে পারেন  তবে আমি আজো
                      একটি বাঙলাদেশ, কবিতার শহর ।



|| আরোভী 
রাত এখন শুরু হয়েছে মাত্র
আমি জানি তুমি ঘুমিয়ে আছো
তুমি ঘুমিয়ে থাকো প্রতিদিন
ঠিক আগের মতো
তবে গত বিষ্যুদবারের কথা কি
তোমার মনে পড়ে না

তুমি এসেছিলে
আমি তাকিয়েছিলাম
তুমি বসেছিলে
আমি ছুঁয়েছিলাম
তুমি আমার চোখ দেখেছিলে
আমি স্বপ্ন এঁকেছিলাম - তোমার বুকে

তুমি কি দেখেছিলে সেই স্বপ্ন আরোভী
সেখানে তুমি ছিলে
তোমার সাথ একটি নদী ছিলো
নদী বয়ে যায়
স্রোত বয়ে যায়
আর মাঝিচেয়ে থাকে

তুমি কি দেখেছিলে আরোভী
তোমার তর্জনীতে তিলক ছিলো
আমি ছুঁয়েছি
তুমি কি দেখেছিলে
আমি তোমায় নিয়ে কবিতা লিখেছিলাম
তুমি কি পড়েছো সেই কবিতা
" তোমার তর্জনীতে তিলক দেখো "

আমার অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি আমি কবরে রেখেছি
যদি মরে যাই
তুমি তুলে নিও
সাথী হবে তোমার
পাবে আমাকে সেখানে তুমি
আর তোমায় নিয়ে লেখা অসমাপ্ত কাব্যমালা

আরোভী তুমি ঘুমিয়ে আছো
বিষ্যুদবারে কি ঘুমিয়ে ছিলে
আমার কপালে তুমি কপাল দিয়ে
একটু করে ঘষে ছিলে
তোমার কি মনে আছে

আমি সমুদ্রে নগ্ন পায়ে হেঁটেছিলাম
চোরাবালিতে ভীষণ ভয় আমার
আর তুমি সেই বিষ্যুদবারে এসেছিলে
আমায় দু'হাতে শক্ত করে ধরে বলেছিলে
" তুমি পড়বে না, ভয় পেয়ো না "

তুমি কি ঘুমোচ্ছে আরোভী
আমি জেগে আছি
তুমি কি দেখছো
আমি বিষাদ আঁকি
আমি অপেক্ষা করি
তুমি আসবে বলে
তুমি কি ঘুমোচ্ছো
তুমি চোখ খুলো
দেখো
তোমার চোখে আমি স্বপ্ন আঁকি
আমার চোখে বিষাদ
তোমার পায়ে আমি দুঃখ লুটোই
আমার পায়ে দুখের বসতি
তোমার চুলে আমি ঘর বাধি
পাখিদের মতশালিকের মত
সে ঘরে কি আমি ঘুমোতে পারবো
একবার ঘুমোতে চাই
একটি নিশ্চিন্ত ঘুম
তুমি পাশে থেকো
মাঝরাতে উঠে তুমি এলোমেলো গল্প করো
আমি শুনবো তোমার গল্প
আমি গাইবোতোমার কষ্ট
আমি আঁকবোতোমার পৃথিবী

কোন এক হিম সন্ধ্যেবেলায় আরোভী
আমার সেই রঙের কবিতাটা পড়ো তুমি
আমি শুনবো তোমার কন্ঠ
নেশা লাগে
আমি নেশাখোর হয়ে যাই
তোমার কন্ঠের নেশা
তোমার চোখের নেশা
তোমায় ছুঁয়ে দেখার নেশা
তুমি ঘুমোচ্ছো

আমি শেষবার পৃথিবীর কাছে মুক্তি চাই
তোমার কাছে বন্দি হবো বলে
আমি বাতাসের কাছে বলতে চাই
আমি কাঁদতে চাই
তোমার চোখে জল দেখি বলে
বাতাসে এখন জল শুকোয় না আরোভী
বরং চলো দু'জনে কাঁদি নানা রকমে
বাতাস তখন মুখ লুকোবে
বলবে সে হেরে গেছে
চলো পৃথিবীকে হারিয়ে দেই

আবার এক বিষ্যুদবারের অপেক্ষা
তুমি খুন হবে সেদিন
হবে কি?
খুনি তোমার ভীষণ চেনা
তুমি চেনো কি?
খুব গোপনে জানাচ্ছি তোমায়
সেই নীল শাড়িটি পরো তুমি
খুন হবে তো
তার আগে একটু সাজো আমার মতো
তুমি আয়না দেখো
তোমায় কি সুন্দর লাগে
কে না চাইবে খুন করতে
আর কতক্ষণ ঘুমাবে তুমি

আমি প্রহরী নই তবু জেগে থাকি
তোমায় দেখবো বলে
তোমার কাঁধে আমার ক্লান্ত নিঃশ্বাস
দেখো পরস্পরের মুখে অশ্রুজল
আমি অপেক্ষা করি
তুমি মুছে দিবে বলে
আর কত ঘুমোবে তুমি

মহাশূন্যের সর্বনাশে চলো হারিয়ে যাই
তুমি হারাবে?
তুমি আঁধার হয়ে আমার চোখে ঘুম হয়ে যাও
আর কত একা ঘুমোবে তুমি
আমি ঘুম হয়ে যাই
তুমি স্বপ্ন হয়ে রও
আমি তোমার চুলে ঘর হয়ে যাই
তোমার তর্জনীতে তিলক হতে চাই


|| আমার ফাঁসি চাই
আমি ফাঁসি চাই সেনাপতি  ব্রুটাস এর
আমি ফাঁসি চাই এফিয়েলটাস এর
জুডাস এর মত পাদ্রি,
সিঙ তান দুঙ এর মত জিনী,
বেনেডিক্ট আনার্ল্ড
সফল বিপ্লবে যার অনেক সুনাম ছিল
আলফ্রেড রেড
পাঁচ লক্ষ মানুষের আর্তনাদের নাম
ওয়াঙ জিং ওয়াই, জন ড্যাস,
ভিডকুল কুইসালিং
         আর- রয়েস বার্স দম্পতি।।

এর পরেও হয়নি শেষ,
এদের দূষিত রক্ত নিয়ে
কিছু জারজ, কুলাঙ্গার এসেছে বাংলাদেশ
স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বকে করেছে বিক্রি তারা পরদেশ
আমি ফাঁসি চাই আমার ভাই আর মা বোনের হত্যাকারীর,
আমি ফাঁসি চাই- এই বাংলার চাটুকার আর দেশদ্রোহীর।।

হয় তাদের ফাঁসি দাও,  না হয়
আমার ফাঁসি দাওআমার ফাঁসি চাই ।।



|| অন্তিম শরীরিণী 
মাধবী
ওই দ্যাখো তোমার বাবা দরোজা খুলে দেখছে আমাদের
তোমার মা তাকিয়ে আছে উৎকণ্ঠা নিয়ে
প্রচণ্ড ভয় /ঘৃণা/ আমাদের ছিমছাম ফ্লাট /ময়লা জমা জানালার পর্দা
মাধবী -
এখনো নিয়মমাফিক সন্ধ্যে হয় আমার শহরে

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মসজিদের পাশেই
সরকারী মর্গ
মুয়াজ্জিনের আজান শুনি প্রতি ভোর সকালে
সাথে সাথে একটি বাজাজ ডিসকভার ১৫০
আওয়াজ শুনেই বুজতে পারি আর কিছুক্ষণ বাদেই
ঈমামের পিছে কাতারবন্দি হবে সকালের মুসল্লিরা

আজকাল কি দুঃখ টুঃখ হয়না তোমার?
ঠিক আগের মতো !
শুনলাম তোমাদের ভালো বাসা নাকি বদল করেছো
 তা যাই হোক না কেনো আমি কিন্তু খুব ঘুমোচ্ছি
পুরনো সেই ময়লা জমা জানালার পর্দার পাশে
তুমি'তো জানো রাতের আকাশের সাথে সন্ধি আমার বহুদিনের
মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে যায় বিরক্তি আর আদুরে থাপ্পড় খেয়ে
তোমার কথাই বলছি আমি ...
এখনতো আর লুকিয়ে লুকিয়ে দ্যাখা করতে হয়না আমাদের 
প্রতিদিনের  সুখস্বপ্নেই আসো তুমি

গতবছরতো তুমি ডাক্তার হয়েছো
ছুড়ি কাঁচি কেমন চালাও শুনি?
 চুপ, একদম চুপ
জানি - তুমিতো মৃত্যুর ভগিনী,  নীল রক্তজবা

আচ্ছা শুনো -
সরকারি মেডিকেলে চাকুরী নাও তাড়াতাড়ি
তোমার বাবাকে বললেই হবে
প্রশাসনে তার জানাশুনা খুব
আর হ্যাঁ - আমার ইবাদত ভেঙে এক সন্ধ্যায় দিয়ে যেও
তোমার শেষ নীলচে চুমু
আমি সরকারি এক মর্গে আছি, সরকারি মসজিদের পাশে
 কিছুটা উষ্ণতা হাতে কোরে এসো তুমি - মর্গে ভীষণ ঠান্ডা লাগে। 

No comments:

Post a Comment