মরীচিকা
আমি যতবার তোমার দিকে আপতিত
হই
তুমি ততোবার প্রতিসৃত রশ্মির
মত বেঁকে যাও।
যেনো প্রতিসরণের সুত্র জানা
তুমি এক চতুর রমনী।
ভেবে আমার খুব দুঃখ বাড়ে, আমি
আরো আপতিত হয়ে উঠি।
তুমি আরো উপরের দিকে উঠে যাও।
তারপর অনেক দূরে দেখি তোমার
উল্টানো ছায়া।
ভাবি ঐখানে রেখেছ জলজ প্রেম।
আমি তোমার ছায়ার দিকে দৌড়াই,
দৌড়াতে থাকি অনন্ত জীবন।
প্রস্বেদন
আটাশি লক্ষ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে একটি গাছ।
সাতষট্টি হাজার মাইল জুড়ে তার
বেদনার শিকড়।
স্বার্থের দামে যারা এ শহরে
ভালবাসা বিকিয়েছে,
মিয়োসিস বিভাজনে এ শহর একদিন
নিজেই গাছ হয়ে গেল।
গাছের কান্না কখনো দেখছো,
মানুষ?
অশ্রু রাতে গাছেরাও কাঁদে।
তোমরা যাকে প্রস্বেদন বলে
জানো।।
সেই কবেকার সন্ধ্যা শেষে আমরা
পাশাপাশি শুয়ে আছি,
শবযাত্রার শব্দ ছাড়া আমাদের
নিজস্ব কোনো স্মৃতি নেই।
আমাদের কৌনিক দূরত্বে ফুটে
আছে অজস্র রক্তকরবী,
আমরা চাইলেই সেগুলো পরস্পর
বিনিময় যোগ্য হতে পারত।
যেহেতু আমাদের ছিল আকাশ ভরতি
ব্যক্তিগত প্রেম।
সময়ের শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে আসে প্লেটোনিক রাত
আমরা এভাবেই
শুয়ে আছি পাশাপাশি স্থির;
অথচ আমাদের মাঝে ঘুমিয়ে আছে
মৃত্যু- মৃত্যু দূরত্ব।
আট কোটি নরক
স্মৃতিরা কঙ্কাল হয়ে ঘুমিয়ে
আছে বিষুবরেখায়
কার্বন আইসোটোপে মাপি তার
অর্ধায়ু,
কাঁটাতারে দাঁড়িয়ে শীৎকার করে
পুরোনো প্রেম
নিষিক্ত বেদনায় মরে যায় সমস্ত স্নায়ু।
সাপ লুডু খেলায় কবেই হারিয়েছি
ঘরবাড়ি
হিমোগ্লোবিনে ছড়িয়ে আছে
বিষাক্ত অক্সিহেমলক,
তুই বুঝি এখন স্বর্গ সুখেই
আছিস, অনুভা?
আমার ভেতরে খেলা করে আট কোটি
নরক।
কান্নার
বাষ্পায়ন
আকাশ দূরত্বে দাঁড়িয়ে আমরা
পালন কোরতে থাকি বিরহ উৎসব
আমাদের তরল কান্নাগুলো ক্যালরিমিতির
নিয়মে বাষ্প হয়ে যায়।
ঠিক তখনি তোমার কিছু কান্না
বিকিরিত হয়,
তাড়িত চৌম্বকীয় তরঙ্গে পৌছে
যায় আমার হৃদপিন্ডে।
ভর শক্তির নিয়মে বিস্ফোরিত হয়
তাবৎ স্মৃতি
দিনে দিনে বাড়ে বিরহের
সামুদ্রিক উচ্চতা।
বিব্রত ঈশ্বর ভাবেন-
এতো প্রেম এতো বিরহ মানুষ
পেলো কোথায়।
সব প্রেম ঘুমায়
কবরে
তুমি যেদিন হত্যা করলে আমার হূদপিন্ড, ফুসফুস, কন্ঠনালী।
শিরা থেকে উপশিরা যেদিন অট্টহাসিতে মরে গেল,
ঈশ্বরীয় পৃথিবী হতে সেদিনই
ছিটকে পড়লাম দূর নক্ষত্রে।
টলেমি তত্ত্বে মাথা গুজে ব্রহ্মান্ডকে দিয়েছিলাম
কান্নার স্বাদ
নিজস্ব কক্ষপথে খানিক স্থির
থেকে বৃহস্পতি শেষ ভালবেসেছিল।
গৃহবন্দী জীবনে গ্যালিলিও
যেভাবে অন্ধ হলেন
সেভাবেই একদিন নিভে গেল পৃথিবীর সমম্ত আলো।
অন্ধকারের রাজত্বে তুমি কি
খুঁজে বেড়াও, অনুভা?
...প্রেম?
পৃথিবীর সব প্রেম কবেই বেদনায় বরফ হয়ে মরে গেছে।
আর এখন তা দিব্যি ঘুমাচ্ছে
কবরে।
হেমলক কিংবা প্রেম
আমার কবরে মাঝে মাঝে নিউটন
আসেন
একটি আপেল নিয়ে কি সব অংক
কষেন। তারপর চলে যান।
আইনস্টাইনও আসেন তবে বৃষ্টি
নামলে।
বৃষ্টি আইনস্টাইনের প্রিয়
কিনা আমি কবরে শুয়ে শুয়ে ভাবি।
হাইপোশিয়াও এলেন একদিন। আমার
কবরের উপর রেখে গেলেন আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির কিছু পুড়া ছাই।
তারপর একে একে এসেছিলেন
কোপারনিকাস, গ্যালিলিও, রাদারফোর্ড আর পীথাগোরাস।
পাবলো নেরুদা, মাইকেলেঞ্জেলো
আর জীবনানন্দকে সাথে কোরে এনেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
কাদম্বরী আর এ্যানাস্কটের
জন্য উনি বেশ কিছুক্ষণ দুঃখ করলেন।
জীবনানন্দ শুধু এতোটুকুই
বলেছিলেন,
"শোভাকে ভালবাসার
অপরাধে মৃত্যুর আগপর্যন্ত আমিও এভাবেই কবরে ঘুমিয়েছিলাম।"
"প্রেম হেমলকের
মতোই অমৃত। মানুষ খেয়ে এভাবেই ঘুমিয়ে থাকে কবরে।"
কবির আত্মহত্যা
সত্তর ডিগ্রি কোনে হেলে
থাকা কাঁঠাল গাছটা কবির খুবই প্রিয়। এখানেই জন্ম হয়েছে অজস্র
কবিতার।
অভিমানী কবি!
কাঁঠাল শিকড়ে শুতে শুতে ভাবল
ঘুম থেকে উঠেই আত্মহত্যা টুকু করে নেবে।
ঘুমন্ত কবির শরীরে উঠে এলো
দুটি সাপ। শরীরকে বিছানা ভেবে তারা পরস্পর
সঙ্গমরত। স্ত্রী সাপের গোঙানির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল কবির।
শুক্লপক্ষের রাত শেষ হচ্ছে।
মধ্য আকাশ হতে যেনো খসে
যাচ্ছে চাঁদ।
সঙ্গমরত সাপদের দিকে তাকিয়ে
কবির আত্মহত্যা বিষয়ক একটি কবিতা লিখার ইচ্ছে হল।
নিজস্ব পাঁজর খোদাই করে কবি লিখে গেলেন,
"দেবতার
যজ্ঞে আজ যে কলাটি পুড়িয়েছো
আর এই যে এখন তা ভক্তিভরে
খাচ্ছো
গতকাল সেই কলাটির আত্মহত্যা
করার কথা ছিল।"
----------------------------------------------------------------------------------------
No comments:
Post a Comment