বিবর্তনবাদ
আমরা
প্রতিদিন স্বাগত জানাচ্ছি বিবর্তনবাদকে, প্রতি মুহূর্তে গত হচ্ছে আমাদের বর্তমান,
প্রতি নিয়ত গম ন করছি নবীন পটে। আমরা যা শিখেছি পাঠক্রমে,
যা কিছু আমাদের মুখস্থ,
জানা অজানায়
, ঘুরে ফিরে হাজির
হচ্ছি স্মৃতিপটে...সোজা পথ হেঁটে যাচ্ছি,
হেঁটে
যাচ্ছি বাঁক- বক্র, ভিন্ন সীমানায়...
সব
ছেড়ে একাকী পৌঁছে যাচ্ছি একান্ত ঠিকানায়। সব বুঝেও ভুলে যাচ্ছি চিরন্তন বাণী, আপন চোখ বুজে ডুব দিচ্ছি নিষিক্ত রাতের
বুকে, অন্ধকার
রহস্যে, গোলকধাঁধায়!
অশনি জেনেও হাত বাড়াচ্ছি স্বৈরিণীর ডাকে! যেমন খুঁজে বেড়াচ্ছি অজানা সুখ শশিকান্ত
নির্বাণে, বিপন্ন
অসুখে, শরীরী
সঙ্গমে, স্থবির
অক্ষে...
মুহূর্ত
গুলো এমনিই—পলকে পলকে বিগত হয়ে যায়, স্মৃতি হয়ে যায়,
তিক্ত স্বাদে মিশে যায় স্খলনের একেক একটি
ফোঁটা...পুনরায় খুঁজে বেড়াই পুরনো কোন ভোর- শিশির সিক্ততায়
কবিতার
মত নরম রোদ্দুরের হাসি, খুঁজে বেড়াই ঝড়ো হাওয়া, নিগূঢ় সন্ধ্যা যাপন!
মৃত্যুর বিদ্রূপ
অন্ধকার গলিয়ে তেড়ে আসে রক্তের স্রোত
লাশের গলিত দেহ, তেড়ে আসে নির্মমতার হিংস্র ক্ষোভ
সমস্ত দিন জ্বলজ্বলে রোদ
অদূরে দাঁড়িয়ে আছে ৭১ এর শহীদদের স্মৃতিসৌধ;
অতল গহবরে পৌছায় না আলো
কয়েকটি প্রাণ তখনো ঝুলে আছে মৃত্যুর প্রতীক্ষায়
কেউ নেই কোথাও
বুকের উপর সমস্ত ধ্বংসাবশেষ!
এই মুহূর্তের সবচেয়ে ক্ষুদ্র পৃথিবী এটি
ক্লান্তির বিমূর্ত চোখে জগতের তাবৎ তন্দ্রা
প্রিয়জনের মুখ
সন্তানের নিষ্পাপ হাসি, বাহানা
মুহূর্তেই নিঃশেষ সব; পলকের ভাবনা।
কানে বাজে যন্ত্রণার আহাজারি
কে...? কে... কোন-খানে... কে...?
মাথা তুলে দেখায় স্থান নাই, হাত দুটো ফেঁসে আছে ভীমের তলে
ভন ভন করে মাছিদের উল্লাস ধ্বনি
ব্যঙ্গ বিদ্রূপে করছে মাছি হয়ে জন্মানোর জয়ধ্বনি!
দুমড়ে মুচড়ে গুলিয়ে উঠে ভেতরটা
আপাদমস্তক বিদীর্ণতার নির্মম রুক্ষতা।
একটু দূরে এক জোড়া চোখ ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে
গুমট হাওয়ায় কাঁপে চোখের পাপড়ি
শবযাত্রার মিছিলে দিয়েছে সে পাড়ি।
কেঁদে উদ্ধার করো নিজেকে
কাঁদো,
ইচ্ছের গিঁট খুলে দিয়ে উগলে দাও সমস্ত
পঙ্কজল
বেরিয়ে আসুক অন্তরতম পবিত্রতায় শুদ্ধতম
আবেগ
নিষ্কণ্টক সুখের জন্য কান্নাই উৎকৃষ্ট
বিপন্ন জীবনের অবশিষ্ট দুঃখ নিংড়ে সৃষ্টি
হোক নতুন উদ্যোগ
কাঁদো-হে প্রিয়তমা
কেঁদে উদ্ধার করো নিজেকে
শুদ্ধতা দান করো জীবনকে।
কাঁদো, যখন যেমন জমাট বাঁধে মনের মেঘ
বুকের উপত্যকায় বয়ে আনো আষাঢ়ে ঢল,
আবেগ
বয়ে আনুক অহল্য বিবেক অস্তিত্বের
অতলান্তে;
কাঁদো- আরো বেশি...আরো বেশি
সয়ে যাওয়া বিষাদের বুক থেকে যতক্ষণ না
নামে কৃষ্ণ পাথর
যতক্ষণ না মিটে ইন্দ্রিয়ের তামাম পিয়াস,অম্ল চিত্তে
দেহ হতে দেহাণুর ভাঁজে ভাঁজে,
নিবিড় অস্তিত্বে
প্লাবিত হয় নতুন জলরাশি।
কেঁদে কেঁদে হয়ে যাও বিশ্বাসরিক্ত,
পীড়িত চক্ষের মরুময় প্রান্তর জুড়ে নাও
নিষিক্ত অশ্রু জলে
নির্ঘুম হরিণীর বিষণ্ণতা ঝেড়ে যাক
কান্নার উচ্চারিত মাতম,
নগ্ন চরণ বেয়ে উঠে আসুক ঘাস ফুলের মন্থর শিহরণ;
কাল বৈশাখীর সমস্ত উদ্বিগ্নতা নিয়ে
নির্ঘুমপক্ষীর অকারণ দহন
রুদ্ধ হয়ে যাক তোমার কান্নার অরণ্য
সিক্ততায়...
বিবেকের মৃত্যু
বিবেকের মৃত্যু!
এ শতকের সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদ
যার জন্য আদৌ হয়নি কোন শোক সভা
টানানো হয়নি কালো পতাকা, কিংবা অর্ধনির্মিত জাতীয় প্লাগ।
নিরীহ পাখিরা হতবিহ্বল চিত্তে হয়েছে নির্বাক!
বিবেকহীন মানুষের পৃথিবীতে বেমানান আপন ডাক;
বেওয়ারিশ কুকুরগুলো ক্ষুব্ধ! বিরহকান্তে চোঁয়না উচ্ছিষ্ট
মানুষের পৃথিবীতে রইলো না আর বিবেকের অবশিষ্ট!
আত্ম বিধ্বংসী মহামারিতে উন্মত্ত মানুষ
এক বার চায়নি নিজেকে চিনতে
কলঙ্কের কালিতে ঢেকেছে মুখ, মিথ্যা লিপ্সায় খুঁজেছে সুখ
চোখ বুজে সামিল হয়েছে ভ্রষ্টাচারীর স্রোতে।
নষ্টাকামের নিকৃষ্ট অজুহাতে করছে জননীর শ্লীলতাহানি
পদপিষ্টে তলিয়ে গেছে অসীম বিবেকের অমর বানী।
মানুষের গ্রন্থিতে ডাইনিদের ফুৎকার
শয়তানের হাতে হাত রেখে বাড়ছে উলঙ্গ চিৎকার;
গ্লানি বুকে রুদ্ধশ্বাসে ক্রন্দনরত নিষ্পাপ নবজাতক
পৃথিবীর উত্তাপে মানুষের বিবেক পচা দুর্গন্ধ!
হেমলকের পতিত অন্ধকারে নিজেকে মনে হয় জন্মান্ধ!
No comments:
Post a Comment