যৌবনা পদ্মানদীর পাড়ে শরৎকালের পড়ন্ত বিকেলে
একা বসে আছে প্রতাপ। সময় কাটে না তার। তাই পদ্মার উন্মত্ততা দেখতে এসেছে সে। একসময়
এখানে নিয়মিত আসত। কিন্তু এখন ইচ্ছে হলেও আর আসতে পারে না। তবে যখন তার মনটা স্মৃতিকাতর
হয়ে ওঠে তখন না-এসেও পারে না। আজও তেমনই একটা দিন। স্মৃতির সান্নিধ্য পেতেই যেন এখানে
ছুটে এসেছে সে। মন ভালো নেই। ভালো লাগানোর জন্যই আসা। কিন্তু এখানে এলে আরেকটু বেশিই
খারাপ হয়ে যায় মনটা।
নদীর দিকে একমনে চেয়ে ছিল। হঠাৎ একজন এসে হাত
রাখল তার কাঁধে। চমকে উঠল প্রতাপ। পেছনে তাকিয়ে দেখে পল্লবী। নিরুপমার খুব কাছের বান্ধবী।
তাকে দেখে অবাকই হয় প্রতাপ। এখানে, এ জায়গায় একসময় নিরুপমার সঙ্গে অনেক সময় কেটেছে।
পল্লবীও আসত মাঝেমধ্যে। তখন থেকেই প্রতাপকে 'দাদা' ডাকে মেয়েটি।
-কেমন আছেন দাদা?
-ভালো আছি। তুমি?
-আমিও ভালো আছি। দীর্ঘ
পাঁচ বছর পর আপনার সাথে দেখা। একসময় কী মধুর সময়টাই-না কাটিয়েছি আমরা। নিরুপমা তো...
-সেসব কথা এখন থাক পল্লবী!
তোমার কী খবর, বল? এখন কী করছো?
-আপনার কথা ভাবলে আমারও
খারাপ লাগে, দাদা। নিরুপমাটা কেন যে...
পল্লবী মুখের দিকে প্রতাপ
চোখ তুলে তাকালে কথাটার গতি রোধ হয়ে আসে। মোড় নেয় অন্যদিকে-'এবার অর্নাস কমপ্লিট করলাম,
দাদা।'
-বেশ ভালো।
-দূর্গাপূজায় কোথাও ঘুরতে
যাবেন না?
-দেখি।
-আর যেখানেই যান; আমাদের
বাসায় এবার আসতেই হবে কিন্তু। এতদিনে একবারও তো এলেন না।
পল্লবীর আমন্ত্রণে বুকটা
কেঁপে ওঠে প্রতাপের। পল্লবীর বাসা নাটোর। নিরুপমারও। যদি দেখা হয়ে যায়?
-কী হলো দাদা? কী ভাবছেন?
যাবেন না?
-পল্লবী চলো, ওদিকে যাই।
ঐ যে ফটিক কাকা। মনে পড়ে? দারুণ ফুচকা বানায়। তোমার ফেভারিট।
একটু অবাকই হয় পল্লবী।
এখনো ওর পছন্দ-অপছন্দের কথা মনে আছে প্রতাপের? নিরুপমা একজন যোগ্য প্রেমিকপুরুষই পেয়েছিল
বটে। কিন্তু কোথাকার জল যে কোথায় গড়িয়ে গেল!
সন্ধ্যা নেমে আসে। পল্লবী
চলে যায়। যাবার সময় বারবার করে দাদাকে ডেকে যায় মেয়েটি।
-দাদা, নবমীর দিন আমি কিন্তু
দরজায় দাঁড়িয়ে থাকব।
-আমারও মাঝেমাঝে যেতে ইচ্ছে
করে পল্লবী।
তারপর। নবমীর দিন। নাটোরে। পল্লবীদের বাসার সামনে
দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে প্রতাপ। অনেক ভেবে কলিং বেল টেপে। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে চেয়েছিল
পল্লবী--কথাটা মনে উঁকি দেয়া মাত্র ভেতর থেকে দরজাটা খুলে যায়। কেউ একজন খুলে দেয়। চোখাচোখি
হয় প্রতাপের সঙ্গে। চোখ নামিয়ে নেয় প্রতাপ। তার মুখেও খেলে না কোনো কথা। কোথাও কোনো
ভুল হল না তো? এটাই কি পল্লবীদের বাসা? ভেবে কূল পায় না সে। এ ফাঁকেই কানে আসে একটি
ছোট্ট মেয়ের কণ্ঠস্বর,
-কে মা? ভেতরে ডাকছ না কেন?
মেয়েটির মা কোনো কথা বলে না। প্রতাপ এবার মাথা
ওঠায়। দেখে, মায়ের মতো সুন্দর মেয়েটির চুলে হাত বুলাচ্ছে নিরুপমা।
No comments:
Post a Comment