বিকেলে জানলার
ফ্রেমে চোখ রেখে ইলেকট্রিকের তার গুলোকে দেখছিলাম। সুখে, দুঃখে, সারাক্ষণ একে অপরকে ছুঁয়ে আছে। একে
অপরের হাত ধরে চলে গেছে বহুদূর। এ যেন এক অদ্ভুত প্রেম। একে অপরের সাথে সহমরণে
যাবার অঙ্গীকার বদ্ধ। চোখ গেলো একটি কাক সংসারের দিকে পাশের বাড়ীর গাছে বাসা ওদের।
মা কাক, বাবা কাক আর ওদের আদরের ছোট্ট কাক ছানা। ছোটো
সংসার সুখী সংসার।
এদিকে বিকেল
ভেঙ্গে সন্ধ্যে নেমে আসছে, প্রবাহিত মেঘেরা রং বদলাচ্ছে। হাওয়াদের সাথে
খুনসুটি করে সেরে নিচ্ছে প্রীতি বিনিময়।
ঘর ছেড়ে যেসব
পাখিরা খাবারের সন্ধানে চলে গিয়েছিল বহুদূর, তারা তাদের ডানায়
গোধূলির রং নিয়ে ঘরে ফিরছে প্রিয়তমাকে রাঙিয়ে দেবে বলে। আর আমি এইসব দেখতে দেখতে
হারিয়ে যাচ্ছিলাম সেই গোল্লাছুটের মাঠে। ফড়িং, জোনাকিদের
সাথে খেলা করার দিনগুলোতে। অতীত মগ্ন হচ্ছিলাম আমি। মনে পড়ছিল সন্ধ্যে বেলায় মায়ের
ডাক ঘরে ফেরার জন্য। সবাইকে দিনের শেষে বুঝি ঘরে ফিরতেই হয়? আর যাদের মা ডাকে না তারা কি হারিয়ে যায় গোধূলির ধুলোয়?
দিনের শেষে নিজের
ঘরে ফিরতে অনেক আলোকবর্ষ পেরিয়ে গেছে অনায়াসে। মহা শূন্যতার মতো শূন্যতা গ্রাস করে
মাঝে মাঝে। নিজের ধ্বনিই প্রতিধ্বনি হয়ে বার বার ফিরে আসে সেই অতীত দিন গুলো থেকে।
এখন আর মায়ের ঘরে ফেরার ডাক কানে আসে না।
আকাশে তারাদের
আনাগোনা শুরু হয়েছে, একে অপরের কুশল সংবাদ জেনে নিচ্ছে। আজকে আমার ঘরে
জ্বেলেছি মিথ্যে মিথ্যে নিয়ন আলো। মনখারাপের ভেলায় চড়ে বেহুলা একাই ভেসে যাচ্ছে
মান্দাসে। আমিও আজ ভেসে যাচ্ছি বহু দুরে অনন্ত বিস্তারে, সমস্ত
মাধ্যাকর্ষণ ছিন্ন করে।
No comments:
Post a Comment