কোথায় কি!

25 January 2017

জ্যোৎস্না রহমান






সবে নাইনে উঠেছে পৃথা। মিষ্টি ও নিটোল চেহারা। বাবা মা এর একমাত্র মেয়ে সে...  তাই ওকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন। ওর পড়াশুনা নিয়ে দু'জনে খুব চিন্তিত থাকে সবসময়। তবে দু'জনেই নিজের কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকে… ফলে সারাদিন পৃথাকে একাই থাকতে হয় একা একা পড়াশুনা করতে হয়।

পৃথা ভূগোলে খুব দুর্বল।  তাই সপ্তাহে চারদিন বিলাশ কর্মকার আসেন পড়াতে।  প্রতিদিন পড়া বোঝানোর অজুহাতে একটু আধটু ছুঁয়ে দিতেন ওকে।  একদিন পাহাড় ও পর্বত নিয়ে পড়তে বসে বোঝানোর সময় তার সব সীমা অতিক্রম করলেন।  পৃথা প্রথম প্রথম নিজেকে গুটিয়ে নিলেও.. ধীরে ধীরে তার দেহে এক আশ্চর্য শিহরণ অনুভব করল। আর তারপর থেকে সে নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ল।  প্রতিটা স্পর্শ তাকে পাগল করে।  সে অপেক্ষা করে থাকত…কখন বিলাশ বাবু আসবেন...। একদিন পৃথার বাবা মা একটি বিশেষ কাজে আটকে পড়াতে বেশ রাত করে ফিরবে বলে ফোন করে দিল... আর সন্ধ্যায় কাজের মাসি বাড়ি ফিরে যায়। ফলে সেদিন দেহের ভূগোলের প্রতিটা স্তাবক সুন্দর করে পড়িয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বিলাশ বাবু। 
-
বেশকিছুদিন পর থেকে পৃথা ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিছু খেতে পারছিল না...  খেলেই বমি। রিক্তার ( পৃথার মা) কাছে গ্যাস ও হজমের ওষুধ থাকে সব সময়..  ফলে প্রতিদিন একটি করে খাওয়ালেও কোন কাজ হচ্ছিল না। এভাবে একমাস পার করার পর... ওকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতেই... জানতে পারল…  পৃথা প্রেগনেন্ট। এই খবর শুনে রিক্তা পাথর হয়ে গেল। কোন মতে নিজেকে টেনে হিচড়ে বাড়ি নিয়ে এসে সোফাতে বসে পড়ে।  পৃথা বুঝতে পারছিল না... কি হয়েছে হঠাৎ তার মা'র। সে অবাক চোখে বোঝার চেষ্টা করতে চাইল..  "কি এমন হয়েছে! "
-
বিবাহিত বিলাশ কর্মকারের এমন নীচ্ কাজের জন্য তাকে কি শাস্তি দেবে ভেবেই পাচ্ছে না পৃথার বাবা মা ।  যদি এই নিয়ে হইচই করে তাহলে মেয়েটার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে..  তাই তাকে বিদেয় করে দিল কোন কিছু না বলে...  তারপর মেয়েকে এক বড় নার্সিংহোম থেকে এবরশন করে চুপি চুপি বাড়িতে নিয়ে এল। 
-
শিমলায় পাহাড়ের গায়ে একটি বিশাল বাড়ির ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে পৃথার আজ খুব মনে পড়ছে তার জীবনের অন্ধকারাচ্ছন্ন সেই অংশ গুলো। সেদিনের সেই অল্পদিনের মাতৃত্বের স্বাদ… আজও লেগে আছে তার প্রতিটি অনুভূতির কোষে। দীর্ঘ দশ বছর বিবাহিত জীবনে যার কোনো ঠিকানা খুঁজে পাইনি। আজ তার চারপাশে.. সুখ ও ভালোবাসার ছড়াছড়ি।  শাহিলের মত এত ভালো জীবন সাথী পেয়ে আজ সে ধন্য।  তার অতীত জীবনের সব জেনেও সে কখনও তাকে কোনো ভাবে এই নিয়ে খোঁটা দেয় নি…  এমন কি সে কোনো দিনও ওই এবরশনের জন্য মা হতে পারবে না এটা জেনেও তাকে দোষারোপ করেনি। কিন্তু সে যে একটি বার মা হতে চায়... সেই মিষ্টি অনুভব গুলো আবার  ছুঁতে চায়!
-
দূরের পাহাড়ে চোখ রেখে দীর্ঘশ্বাস মুছতে গিয়ে হঠাৎ দেখে একটি আলোর হাতছানি..  যার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পেল তার হারিয়ে যাওয়া সন্তানের হাতছানি। আর তারপর... হঠাৎ নীচে প্রচণ্ড শব্দ ও রক্তের ছড়াছড়ি। 
-
শাহিল ঝাপসা চোখে নিজেকেই দোষ দিল...  একবছর ধরে... ভারসাম্যহীন জীবন সঙ্গীকে বলতে পারেনি..  অক্ষমতা পৃথার নয় তার নিজের ছিল "

No comments:

Post a Comment