কোথায় কি!

22 August 2017

রুদ্র আমিন



চরিত্র
আমি উলঙ্গ হলেই যত সমস্যা পৃথিবীর
কিন্তু এক চুল রাখেনি গায়ে বস্ত্র, কই?
কোথাও তো শুনিনি কান কথা কিংবা আন্দোলন
গ্রীষ্মের তাপদাহেও পুড়েনি কোনো চায়ের দোকান
তবু ক্যানো স্বর্গ নরকের হিসেব বুঝানো হয় শুধু আমাকেই!

ছায়া
আমি যখন তোমাকে দেখলাম তখন গোধূলি সন্ধ্যা
চতুর্দিকে দৃষ্টি ফেলতেই দেখি কোথাও কেউ নেই
নিশ্চুপ অন্ধকার আর ঝিঁঝিপোকারা শুধু ডাকছে
ছায়ায় ঘুরতে ঘুরতে এক সময় ছায়াহীন হয়ে
অচেনা একটি রেখায় এসে দাঁড়িয়ে ছিলাম
অথচ কী আশ্চার্য, নিজেই হারিয়ে ফেলেছি নিজের ছায়া
আলোর সম্মুখে আর দাঁড়ানো হলো না বুঝি আয়নায়
আজ দেখি ছায়াটা অনেক অনেক বদলে গেছে
ফুলের বাগান থেকে শুরু করে হাট-বাজার, বাসস্থান
অতঃপর নিষিদ্ধ পল্লী
সত্যি ছায়াহীন পৃথিবীতে মানুষ বড্ড বেমানান
ঠিক তেমনি ছায়াহীন মানুষ বড্ড বেমানান মানুষে




সময়
স্নিগ্ধতার মতো বেড়ে ওঠা ভালোবাসা ছিঁড়ে গেলে
এখন আর তেমন রঙ-বেরঙের রুধি বের হয় না,
ছিঁড়ে গেলেই নাকি বৃক্ষ শুকিয়ে যায়, অনেকেই বলে
হারিয়ে যায় দিন, হারিয়ে যায় রাত!
ভালোবাসায় দিনই বা কি, রাতই বা কি?
যে যাবার সে চলে যাবেই, এখানে দিন বা রাতের কি যায় আসে!
দিন দিনের ঘরে, রাত রাতের ঘরে
জন্ম আর মৃত্যু মিলে গেলে কিছু করার থাকে না, কিচ্ছু না
যত আলগোছে তুলে রাখা হোক না কেন
ভালোবাসা থেকে ভালোবাসা ছিঁড়ে গেলে ধরে রাখা যায় না
যেমন জীবন থেকে মৃত্যু

এক জীবনে
জল হয়ে জন্ম নিলি আর পাতিল বদল করবি না
এটা কি করে হয়?
জল তো তরঙ্গে তরঙ্গে ছলাৎ ছলাৎ নৃত্যে স্থান পরিবর্তন করে
তুই না করলে হয়?
মাটি বলেও ভাবতে পারি না তোকে, পারি না বলতে বাউরা বাতাস
আলোও না আবার আঁধারও না, আবার দুটোতেই তোর চলে শ্বাস
কেউ বলে জীবন, কেউ বলে সুখ, কেউ বলে ঝড়ো মেঘ কিংবা
দুধে জলে মেশানো এক ফোটা বিষ, আর কত এক জীবনে?



আঁধারির আঁধার
আমি ভাবি তোমার শীতল আঁচলে মুখ লুকাবো
কোমল হাতের স্পর্শে ক্লান্ত দেহ ফড়িং বানাবো
বাউরি হাওয়ায় দোল তোলা ধানের শীষের মতো
রেশমী কেশের সবুজ ঘ্রাণে মাতাল হবো,
অতঃপর,
আকাশ ভাবে মেঘের কথা আর মেঘ ভাবে সূর্যের





এক টুকরো সীমান্ত
অবশেষে জোড়াতালির দেহ জোড়াতালিই রয়ে গেলো
স্বপ্নগুলো নিদ্রা মাঝে যেমন আজও কানামাছি হয়ে খেলা করে,
ঠিক হলুদ ময়না পাখিটির মতোন, সজাগ পৃথিবীতে ঘুমন্ত
ছায়া কায়া মানুষ গুলো রঙধনুর মতো বিবেক রাঙিয়ে উঠে চরে
তবুও রোজ প্রভাতে খুঁজে ফিরি মানবতার এক টুকরো সীমান্ত

জলের নীরব শব্দ
উত্তাল সাগরে জলের নীরব শব্দই বলে দেয়
কতটা ঝড়ের তাণ্ডবে লোনা জল মিষ্টি স্বাদে রক্তিম রূপে সুস্বাদু
ঠিক ততটা সম্পর্কই মৃত্যুর যন্ত্রণা বুঝেও অবুঝ তাবত পৃথিবীর
প্রিয়ন্তী, বেঁচে থাকার প্রত্যয় নিয়ে আগামীর পথ খুঁজো না,
যদি বেঁচে থাকতে চাও তবে মৃত্যুকে বেঁছে নাও, সত্যকে মেনে নাও
যেমন আজ মিথ্যেকে বিশ্বাস করে, অর্থকে ভালোবেসে আপনাকে ভুলে যাও
ঠিক তা নয়, দৃষ্টান্ত স্থাপন করো; যেমন বধির বৃক্ষগুলো বেঁচে আছে
ঠিক তেমন মৃত্যুকে বেঁচে নাও..
জানি জলের নীরব শব্দই জ্বলন্ত চুল্লিতে কতটা হৃদ দগ্ধতার যন্ত্রণা




অণু কবিতা (ভালোবাসা)

()
দেখো, একবার চোখ তুলে দেখো, খুঁজে নাও অস্তিত্বে তোমার
চোখের পাতার তলদেশে, ময়ূর পেখম পাপড়ির অলিতে গলিতে
অস্থিরতায় নয়, একটু দাঁড়ায়, সামান্য চিমটি কেটে দেখো
এই তো আছি তোমার অনুভূতির অস্তিত্বে, খুঁজে পেয়েছো ?

()
সুখকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়ো না, জ্বলে পুড়ে ছাই হবে
দুঃখকে ভয় করো না, প্রিয়তম ভেবে নিও, বেঁচে যাবে
চোখ মেলে থাকো, প্রকৃতির মাঝে খুঁজে নিও ভালোবাসা
সুখ চলে যেতে চায়, চলে যাক, যেতে দাও, হয়তো নখের আঁচড় হারাবে
জানি বেঁচে যাবে যে দুঃখগুলো বারংবার হাত বাড়ায় বুক ভেদ করে

()
কালোমেঘের তর্জন গর্জন, আকাশের আর্তনাদ বজ্র স্ফুলিঙ্গ
হুদহুদ, সুনামী, নারগিস কিংবা হিরোশিমায় বিস্ফোরিত এটম বোমা
তারও অধিক, হোক সে কেয়ামতের প্রথম আলামত, হিমালয় গলে মহাসাগর
কিংবা সর্বোচ্চে কম্পিত হোক ভূমিকম্পন পৃথিবীর বুকে বা
তপ্ত মরুর প্রতিশোধী বালুর বারুদময় আলোক রশ্মির জ্বলন্ত লাভা;
এতোটুকুও ভয় করি না, যতটা তোমাকে ভয় ছোট পৃথিবীতে
আসলে ভালোবাসায় মরে গেছে বিশ্বাস, মরে গেছে লাইলী-মজনু, শিরিন-ফরহাদ

()
কখনো কী দেখেছো কিংবা অনুভব করেছো জলের মাঝেও
ডুবন্ত ডুবোরীর শরীরের ঘাম খরস্রোতা জলকে পরাজিত করতে পারে
বা কখনো কী শুনেছো একজন প্রেমিকার চেয়ে প্রেমিক জ্বরকে বেশি ভালোবাসে
যদি ঘরেই যদি থাকো, তবে কি করে বুঝবে; ভালোবাসা কতটা গহীনের কথা বলে?


সম্ভবত কারণ রেখেই পৃথিবীকে জানাবো বিদায়
আমি সম্ভবত কারণ রেখেই পৃথিবীকে জানাবো বিদায়
যেন কোন বেলি আকাশ-পাতাল ফুটো না করে ফেলে,
মানুষ হয়ে মরতে পারবো না সেও নিশ্চিত বলে রাখি
পৃথিবীতে নামানুষের আয়ু বেশ দীর্ঘ মানুষ হওয়ার দায়ে
আজ থেকে এক অনুভূতিহীন জানোয়ার হয়ে গেলাম
তুমি চাইলে যা ইচ্ছে তাই করতে পারো, কালো বনের
ভেতর সরু জ্বলন্ত ইস্পাত দন্ডের দ্বারা বিভাজন করতে
পারো খরস্রোত জলের দু'টি পাড়, এক দীর্ঘশ্বাসের জন্য
ভয় নেই, আত্মাহুতি দেবো সেটাও ভেবো না; মরে গেলে
তো বেঁচেই গেলাম, কিন্তু তিল তিল করে নিজ হৃদপিন্ড
নিজেই কাবাব করে খেতে পারলেই বুঝবো আমি অনুভূতিহীন
এক জানোয়ার হয়ে উঠেছি শুধু একফোঁটা সৌন্দর্যের জন্য
আমি সম্ভবত কারণ রেখেই পৃথিবীকে জানাবো বিদায়
পৃথিবী যেমন পৃথিবী নেই, মানুষ যেমন মানুষ নেই, প্রেম-
ভালোবাসা-বন্ধুত্ব নেই, লাল বেনারসির যেমন কদর নেই
ঠিক তেমনি চলে যাবো একদিন সমাজ সভ্যতার নামে
মানবিকতার নষ্ট দানবের আনন্দ উল্লাসে অশ্লীল উরুতে
ভালো থেকো বেলি, ভালো থেকো নীলাকাশ, ভালো
থেকো জন্মভূমির সেই ইছামতি নদীর পাড় স্মৃতিবিজড়িত
আমার গাও; আমি সম্ভবত কারণ রেখেই পৃথিবীকে জানাবো
বিদায়, ছোট একটি দুঃখ ছোট একটি স্বপ্নকে বাঁচার জন্য

হোটেল আমির, কসাইবাড়ি, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০, রাত: ১০:০০, ১৯১২১৬




স্তন
আমি তাঁর স্তন স্পর্শ করেই পৃথিবীর সুখ অনুভব করি
বুঝতে পারি আমার মতো সেও এমন স্পর্শে কাতর
এমনটা শুনে তোমরা পৃথিবীর নিকৃষ্ট প্রাণী বলে যে যার মতো
ঘৃণার অবাধ্য লালা আকাশে ছুড়ে মুখ ফিরিয়ে নাও
তোমরা আমাকে যে যাই বলো না ক্যানো, বলবো ঠিক বলেছো
আমি অন্ধ হলে তো তোমরা অন্ধ হতে পারো না, দ্যাখো এবং বুঝো;
কিন্তু আমি, অতিশয় সহজ সরল, অবুঝ এক জীব; যার
বোধের ঘরে ভালোবাসা আর সরলতা ছাড়া কিছুই নেই
কোনটা অশালীন কোনটা অশ্লীল বুঝি না, শুধু বুঝি ভালোবাসা
তোমরা যেটাকে অশ্লিলতা বলো আমি বলবো সেটাই শালীন
ক্যানো না আমার স্পর্শে যদি কেউ সুখানুভব করে তবেই আমি সুখী
তোমরা হয়তো স্পর্শ করতেই জানো না কিংবা তোমাদের ত্বক
ফেলে রাখা মরিচার বসবাসে আজ কাঠ থেকে পাথর হয়ে গ্যাছে,
মনে রেখো কতটুকু অধিকার থাকলে কারো স্তন স্পর্শ করা যায়,
তোমরা হয়তো সেটাই বুঝো না...

ফরিদমার্কেট, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০, দুপুর: ১২:৩০, ০৬০৬২০১৭



সময়
আর কতোটা সময়, কতোটা স্পর্শে
কতোটুকু দূরত্ব পেছনে ফেলে এলে
বুঝবো তুমি নারী, তুমি ভালোবাসা, তুমিই জগতের আলো
আজ যতোটা বুঝেছি সেইদিন গুলির সব কথাই ছিলো আবেগী
আগামীকে না ভেবে যদি বর্তমানকে জড়িয়ে ধরতাম
ভুল হয়তো ফুল হতো, পুড়তো না আশা

কতোটা কালের পরিবর্তন, আজ ভাবনায় ঝড় তুলে
কাল নয়, যা পেয়ছো তা তুলে নাও
মূহুর্তে অতীত হয়ে যায় সকল আগামী
আজ তুমি নারী, আমি নর; কাল হয়তো পুড়ে যাবে সব



জীবন আমার নয়
আশ্বাস পেলে ঘোর শত্রুর সাথে মিত্রতার সনদে দিতে পারি সই
এখন শুধু মনের মাঝে তুমি ছাড়া আর নেই কেউ,
আকাশে মেঘেদের লুটোপুটি খেলা আছে, জলে আছে মাছ
বাড়ির উঠোনে এখন নামে সন্ধ্যাতারা, চায়ের কাপে উঠে ঢেউ,
কিছুদিন আগেও এমনটি ছিলো না, এখন সূর্যাস্ত দেখে আনন্দ পাই
রাতের অন্ধকারে খুঁজে পাই তোমাকে, যেখানে যাই যেখানেই থাকি
সকলের উপেক্ষার মাঝেও খুঁজে পাই একটু ঠাই
আজ বলতে পারি সত্যিই এজীবন আমার নয়


অভিলাষ
অধরা তোমার শীতল আঁচলে মুখ লুকাবো
কোমল হাতের স্পর্শে ক্লান্ত দেহ ফড়িং বানাবো
বাউরি হাওয়ায় দোল তোলা ধানের শীষের মতো
রেশমী কেশের সবুজ ঘ্রাণে মাতাল হবো,
অতঃপর,
আকাশ ভেবে মেঘের সাথে সুখের হলী খেলবো
সূর্যের ফলিত উত্তপ্ততাকে শরতের উষ্ণতায় ভরিয়ে দিবো
যদি একবার তোমার আঁচল তলে মুখটি লুকাতে দাও

No comments:

Post a Comment