কোথায় কি!

22 August 2017

শাপলা জাকিয়া


রূপসার সাথে ফোনেই প্রথম আলাপ মোহিতের। মোহিত একটা জনপ্রিয় বুটিকের মালিক। সেই সূত্রে রূপসা তার পত্রিকার ঈদ ফ্যাশান সংখ্যার জন্য মোহিতের একটি সাক্ষাতকার চায়। এ্যাপয়েন্টমেন্ট  নেয়ার উদ্দেশ্যে ফোন করেছিল মোহিতকে। রূপসার কন্ঠ শুনে প্রথম দিনই মুগ্ধতা কাজ করেছিলো মোহিতের মনে। দেখা হওয়ার পর সেই  মুগ্ধতা প্রেমের রূপ নেয়। ঠিক একইভাবে মোহিতেরও প্রেমে পড়েছিলো রূপসা।
কিন্তু কয়েকমাস যেতেই সম্পর্কটা যখন ভালোলাগার তুঙ্গে তখনই বাঁধা পড়লো প্রেমে । মোহিতের পাত্তা না পাওয়া এক সুন্দরী, ধনীর দুলালি নানা কারসাজি করে রূপসাকে বুঝিয়েছিল, মোহিত একজন লম্পটশ্রেষ্ঠ পুরুষ মানুষ। কিছু বানোয়াট প্রমাণও সে হাজির করেছিলো রূপসার সামনে।

প্রচন্ড অভিমানে রূপসা মোহিতের সাথে সব সম্পর্কের ইতি টানে। মিথ্যা প্রমাণকে বিশ্বাস করায় মোহিতকে আত্মপক্ষ সমর্থনেরও কোন সুযোগ দেয়নি রূপসা। পত্রিকার চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে কোথাও একটা চলে গিয়েছিল।  অনেক খুঁজেও ওকে র পায়নি মোহিত।

এফ বি ইডি ডিএ্যাকটিভ করেছিল রূপসা। আর মোহিতের নাম্বারটা ব্লক করেছিল। রূপসার নাম্বারে ফোন করলেই একটি নারীকন্ঠ মিষ্টি অথচ নিষ্ঠুর গলায় বলতো - " পনি যে নাম্বারে ফোন করেছেন তা এই মুহূর্তে ব্যাস্ত আছে! "- দিন -রাত চব্বিশ ঘন্টা একই রিপ্লাই।

নতুন সিম কিনে ফোন করেছে মোহিত। রূপসা বুঝতে পেরে সেই নাম্বারও ব্লক করেছে।

তবু সকাল অার রাতে নিয়ম করে ফোন করে মোহিত রূপসাকে। রেকর্ডকৃত নারীকন্ঠ যখন বলে নাম্বারটি ব্যাস্ত অাছে, তখন মোহিত নিজেকে বুঝায়, আসলে ব্লক করেনি ওকে রূপসা। ওর নাম্বার সত্যিই ব্যাস্ত আছে। একটু পর কথা শেষ করে রূপসা দেখবে মোহিতের মিসকল। তখুনি ফোন করবে সে মোহিতকে। তারপর মিষ্টি, আদুরে গলায় বলবে - সরি, জরুরী কথা বলছিলাম অফিসের। রাগ করো না।

মোহিত প্রতিদিন রাতে এই মিথ্যা স্বপ্ন দেখতে দেখতে, অপেক্ষা করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর প্রথমই সে ফোন করে রূপসাকে।
রেকর্ডকৃত নারী কন্ঠ জানায় রুপসা ব্যাস্ত অাছে।  মোহিত সারাদিন ধরে তাই অপেক্ষা করে, কখন রূপসা ফ্রি হয়ে ওকে কলব্যাক করবে, সেই মিরাকলের। ও ভুলে থাকার চেষ্টা করে যে রূপসা আসলে ওকে ব্লক করেছে। কাজের মাঝে মাঝে মনে পড়লেই রুপসার নাম্বারে রিং দেয় মোহিত । সেই নিষ্ঠুর নারী কন্ঠ বলে যায় নাম্বারটি ব্যাস্ত আছে!
রূপসা যেদিন রোড এ্যাক্সিডেন্টে মারা গেলো, সেদিনও প্রতিদিনের মতো ফোন করেছিলো মোহিত। মোবাইলের রেকর্ড করা নারীকন্ঠ সত্য না জানিয়ে বলেছিল রুপসা ব্যাস্ত আছে। রুপসাকে মাটি চাপা দিয়ে যে রাতে তার আত্মীয় পরিজন বিষণ্ন মনে বাড়ি ফিরেছিল, সেই রাতেও ফোন করেছিল মোহিত ঘুমাবার আগে।
মোবাইল কোম্পানীর রেকর্ডকৃত সেই মিথ্যাবাদী কন্ঠস্বর নির্বিকারভাবে মোহিতকে জানিয়েছিল - " অাপনি যে নাম্বারে ফোন করেছেন, তা এই মূহুর্তে ব্যাস্ত ছে! "

No comments:

Post a Comment