কোথায় কি!

17 December 2017

গুচ্ছ কবিতা-নাজমুন নাহার



রাজা চেক
এই আমার শেষ চাল
রাজা চেক-
তোমার আর কোনো পথ নেই
তুমি এখন খাঁচায় বন্দী শিকারী
হাত পা কণ্ঠা
তোমার ছেলেবেলাকার জরুল
খেলার মাঠের উদ্যত পা-
তোমার চোখে সর্ষে ফুল
দর্পহারা রাজা তুমি 


হাহা করে হাসছে
পালিয়ে যাওয়া ইঁদুর-
তুমি হেরে যাওয়া খরগোশ
হুর পরী সৈন্য সামন্ত
ধন সম্পদের পাহাড়
সবই কার্যতই অকার্যকর!!
তুমি হে সচেতন চালক
খুঁজো কোন পথে
মুক্তি তোমার!!
কিন্তু আমি জানি
আমি রাজা চেক দিয়েছি
তোমার সামনে পেছনে
ডানে বামে ফেরার পথ বন্ধ-
অতএব তুমি চাল দাও
আমি রাজা চেক দিয়েছি
তোমার রাজা চেক...।



কি কথা তার সাথে তাদের সাথে
আন্তিউস চলো এলোমেলো হয়ে যাই-
চলো একটা থামের আড়ালে  চুমু খাই
বেনারসে রাধা যেমনি জঠরে পাকিয়েছিলো
দশটা সন্তান-
তেমনি সন্তান হোক তোমার
আন্তিউস তুমি বেদনাহত পেঁচা
রাত ঘন হলে হা হা করে পাখা মেলো,
চুপি চুপি ওদের সাথে কথা বলো
কি কথা তাদের সাথে?
ওরা তোমার চোখের মণিতে এঁকেছে  ট্যাটু  
তুমি অন্ধ হয়েছ,
শালুকের দেশের পাখিদের বোবা কান্নার সাথে  মিশেছে  
নাজারাতের পরীদের অন্ত:ক্ষরণ।


কালো ঘর
এই ঘরে কেউ থাকে না
অন্ধকার কালো ঘর
আমার একটা চাবি হারিয়েছে
আমি এই অন্ধকারেই খুঁজছি চাবিটা
আমার আসলে শুধু চাবি নয়
আমি একটা পাখিও হারিয়েছি
তাকেও খুঁজছি-
একটা কালো বিড়ালের সন্ধানে আছি কতকাল
আমার মনে হয় ঐ বিড়ালটাও সেখানে আছে
একটা উজ্জ্বল চাঁদ লাগিয়ে দেব
ঐ অন্ধকার ঘুপচি ঘরের গলিতে
ফকফকা জোছনার বিভ্রমে কালো বিড়াল
অথবা আমার টুকটুকে পাখি
আর চাবি সব খুঁজে নেব।



অন্ধকার অরণ্যে
বদলে যাচ্ছেন পুরুষ সিংহ।
যিনি রাজা ছিলেন ত্রিপুরার, অসাম হয়ে কালকিনী এবং কিঞ্চিৎ ওজোন স্তরের
তিনি বদলে যাচ্ছেন তার মত করে যেমন বদলে যায় গিরগিটি,
 যেমন স্বপ্ন দেখে বদলে যান স্থলমাইন রোপন করা প্রিয় পিতা।
সেবার প্রিয় আংগুর বনে ফুলের সমারোহ
আমাদের ঘরে বেদনার অধিক আবহ -
তথাপি প্রিয় এরিক
নেশারু হতে গেলে পাকজমিনে যে গুল্মের রস আছে
তাতে কিঞ্চিত ঠোঁট রেখো–
উদগ্র কামনার রসে জারিত বাসনার নেশায়
পাতলা হতে শুরু করেছে পাতলুন
তোমার ভ্রমের নেশায়
ঘুম আসেনা হে প্রিয়।



বিভাস
লাল রাংতা, রঙ উড়ে গিয়ে তোমার শরীরে
নামতে নামতে  হাঁটু থেকে গোড়ালি
এরপর পা , সিঁড়ি, রাস্তায় নেমে মধ্যাকাশে
অরুন বরুন কিরণমালা রূপকথার ঘোর
সন্ধ্যাটা অনেক বেশী ঘন
রুশোর ওয়ালে বর্ষা
বালিকার খাতায় আকাশ, নদীর নীল জল
এবং অরণ্যের  পেছন থেকে সূর্যের মুখ
একদল মানবী গুহার অন্ধকারে
হাতকড়াটা বড় বেশী ডেবে গেছে হাতে অবনী
রক্তটাও নীল, শরীরে আঁকা হয়েছে বন্দী
আকাশ তাদের জানালা থেকে ঘরের ভেতর
এক পা দুপা তিন পা
একটা পাগলা ঘোড়ার অবয়ব
অবণী কোথায় তুমি
বুকের মধ্যখানটা ফাঁকা
রূপতনু বিভাস, মধ্যাকাশ
ডাকছে কেউ আড়াল থেকে
পেছন থেকে
চুপ চাপ ক্যাকটাস
বিনীত অন্ধকারে একা ভীষন ।


ক্রুসেড
বুলেট আসে বাঁ দিক হতে
ডান দিক হতে
ঘরে চাল ফুটে
ক্ষুধার্ত চিমসানো পাকস্থলীতে
ক্রুসেডের যুদ্ধ
তবু নদী ডাকে
চুলের পাশ দিয়ে কানের পাশ দিয়ে
সাঁই করে ধেয়ে আসে আদিম জওয়ান
পাকস্থলী কিংবা নাভির নীচে আদিম ফোয়ারা,
জঙ্গল ছোটে
অন্ধকারে শানানো ছুড়িতে
ফালা ফালা শরীর
তবু সে লাশ চোখ মেলে দেখে
জওয়ানের প্রেমহীন নিষ্ঠুর শিশ্ন।


No comments:

Post a Comment