কোথায় কি!

17 December 2017

গুচ্ছ কবিতা-রওশন হাসান



অয়নান্ত গোধূলি হাওয়ায়
যাও হাওয়া যাও বয়ে
ধূপছায়া ক্ষয়ে ক্ষয়ে
গুনি, অগনিত সময় গুনি
শোনাও কানে কানে, আগত সন্ধ্যার সিম্ফনি ।

এ বৃক্ষ, পত্রজ্বরা, ঝরা বেলার শোকের  মাতম
প্রকৃতি ছিঁড়ে  উদাসী চোখের বৈরাগ্য সমাগম
ধ্বনি, প্রতিধ্বনি শুনি
বিপরীত আওয়াজে বিচলিত মৃত্যু অশনি ।
সমুখ পথে পেছনের পথের নাম দূরত্ব
আকাশ স্পর্শপ্রবণ, সেও দুর্বোধ্য বর্তনী
বুনি, সুদূর ব্যাকুলতা বুনি
দৃষ্টির তরবারিতে খুঁজি ভঙ্গুর চাঁদ সনাতনী ।



আনাবেল লীর অন্তর্ধান
বেশ দূরত্বে স্বচ্ছ স্বত্বহীন বায়বীয় বুদ্বুদগুলো
আমার দিকেই অগ্রসর হচ্ছিলো
পাতার সবুজ, ফুল, সূর্য, পাখির পালকের রঙ ধারণ করে চলছিলো
আকাশের নাগাল পাবার আগেই বাতাসে মিলিয়ে গেলো ।

কিছু কথার সূত্রপাত করে গেলো
ওয়ার্ড বাবলগুলো কার দিকে ধাবমান হলো
ঠাহর করতে পারিনি ।
কিছু বুদ্বুদ ভেঙে যে কথাগুলো মাটিতে ঝরে পড়লো
সে কথাগুলোর সঙ্গে চারিপাশের মানুষের কথাগুলোর
কোন সাদৃশ্য নেই ।
আনাবেল লীর একাকীত্ব  চিরস্থায়ী হয়েছিলো সাগর অন্তরে
শীতল শ্বাসরোধকর হননের জয় এক প্রতারণা
অশান্ত প্রেম নিয়ে আজও কবি এলেন পো অপেক্ষা করছেন ।
 




অনাহুত আওয়াজ
(Pray but one prayer for me ’twixt thy closed lips,
Think but one thought of me up in the stars.
William Morris)


অদৃশ্য বোধগুলো মেঘের স্নায়ুতে
গচ্ছিত ছিলো
নিম্নে ধাবমান কিছু বাতাসে মিলে
চারিদিকে ঘ্রাণ ছড়ালো
তোমার ইন্দ্রিয় ছুঁয়েছিলো উপাধিহীন নেশাগ্রস্ততায়
রাত্রি শেষের নির্ভার পালক চুম্বনে ।

আমি হন্যে হয়ে খুঁজেছি যে কোন আকাশ
উৎসরা অনাহুত কেবলি ছন্নছাড়া ।
ভালোবাসা রোদে পুড়ে তাপ পরিবাহী
শব্দহীন দৈন্যতায় সবুজে জড়ানো
পাতা খসে পড়া অবাধ্য আওয়াজ
আমাকে কাঁদায় অশনি নদী, যুগপৎ, সতৃষ্ণ পরিব্যপ্তিতে
উৎসুক চোখে কাঁটাগুল্মে বিঁধে আছে, বৃষ্টি এক ঝোঁকা
বিপন্ন আজও আমি পতিত অঙ্গীকারে ।



তারা ও জোনাকি সিনড্রোম
রাতের সঙ্গে ঘুমের সম্পর্ক
অন্ধকার মূলত: কারণ
ছায়ার লিরিক্স পড়ে দিনাতিবাহিত ক্লান্ত চোখ
স্বপ্নের প্রবেশপথে নিদ্রার রেখাপাত।

তারারা খসে পড়ে মন্থনদণ্ড প্রভাবে
রাত ও দিন বাইনারি প্রাক শিল্প
মেঘেদের অবয়বে নক্সীকাঁথায়বোনা নক্ষত্রদের কনসার্টে ।
আলোর তরঙ্গ গ্যালাক্সি ভেদ করে শব্দহীন
পৃথিবী নামক গ্রহে পৌঁছায় ক্রোশ পথ পেরিয়ে
তারারা দেবে আমায় উপশম অবিভাজ্যতায়
নিভৃতচারী জোনাকিরা লণ্ঠন আলোর জ্বলা-নেভায়
গত হওয়া শতাব্দীতে হয়েছিলো সঙ্গী আলোহীন রেটিনায় ।




ভিন্নতার আস্বাদে
আমি হেঁটে যাচ্ছি, তুমিও হেঁটে চলেছো
একজন গন্তব্য জানে, অন্যজন গন্তব্যহীন
আশেপাশের বৃক্ষগুলো শেকড় বিছিয়ে
মাটির অন্তস্হে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে
স্হিরতাতেই ওদের জীবন চলমান
ওদের নজর এড়িয়ে চলছি দু'জন পথিক ।

আমরা শুনতে পাচ্ছি পূবের ডাক, পশ্চিমের ডাক
দিন ও রাতের চক্রে আবদ্ধ হচ্ছি
অভিপ্রায় ও স্পৃহার কাছে ধর্না দিচ্ছি
বৃক্ষরা যেমন সূর্যের কাছে, বৃষ্টির কাছে ঋণী
নশ্বর জীবন থেকে প্রাপ্তির সন্ধানে
আমরাও অভিন্ন পথের ভিন্নতা খুঁজে ফিরছি ।