সংখ্যা
মেয়েটি সংখ্যার মতো, কেবল নাচে-নাচে...
আমি নয় বললে, ও বৃহস্পতি; ছয়ে বসন্ত;
সাতে জল;
পাঁচ বললে ওর হাতে তীর-ধনুক— কেবল আমাকেই বিদ্ধ করে।
মেয়েটি প্রমিক প্রেমিক
বউবউ
চাঁদপাথর
দুইয়ে এসে আমি এপক্ষ—ওপক্ষ করে ওকেই খুঁজি।
মেয়েটি রেললাইন, নিঃসঙ্গ। আট বললে
সে প্রতিজ্ঞার মতো।
তিনে সে অশ্রু।
তার শরীর কিছু ম্যাজিকফুল; ফুটতে জানে,
ফাটতে জানে।
চারে সে শব্দ-প্রথম বিন্দুচিহ্ন।
মেয়েটি পুরুষ। আমার শূন্যতা নিয়ে ওকে
দিগন্ত দেখাতে চাই...
মেয়েটি কি যাবে!
ফড়িংবেলা
ঘরেফেরা গন্ধের মতো
রাত আসে—পেছনে মোমের
সন্ধ্যা, আসন্ন শিশিরের স্নান।
ছেলেটি ঘুমাতে চায়,
মায়ের বুকে আরব্যরজনী, বাইরে ফড়িঙের ম্লান ঘাস।
মা, তুমি লম্বা সরলরেখা...
তবু যায়, সংসার তাকে
নিয়ে যায়।
ছেলে রোজ আরশির সামনে
আসে, দেখে কতটা মা লুকিয়ে আছে নিজের শরীরে।
সে রাত জাগে, বুকপকেটে
অন্ধকার নিয়ে আজও প্রশ্ন করে—
মা ফড়িঙেরা কোথায় ঘুমায়!
বৌ
বৌ নিম গাছের মতো, ছাল-বাকড়, মূল সবই
মহাঔষধি।
নিঃশ্বাসে দীর্ঘ বাতাস, উড়ে আসে ভায়োলিন
রাত।
বৌ রুমঝুম, দাপুর-দুপুর—শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে লৌকিক নদী।
বিশ আঙুলে লাজ ঘুমায়, গুন আর যোগফলের
চিহ্ন জাগে।
শরীর যেন ঝুমুর গানের আসর।
বরের চোখ নৌ-বহর, চোখে চোখে সমুদ্র-ভ্রমণ।
শুদ্ধ সন্তানের আশায় তারা স্পর্শ থেকে
শুরু করে।
প্রথম চুম্বনে কেঁপে ওঠে বৌয়ের পাতা।
একজোড়া পা...
সংসারে মেয়ে জন্মালে
দাদা ডালিমের বাগান বানায়।
গাছ বড় হয়, মেয়েও বড়
হয়...
দুজনার মন ভরে থাকে
সবুজ শৈশবে।
এবার গাছে গাছে ফল ফোটে,
প্রথম ডালিম হাতে মেয়েটিও ফেটে যায় দানায় দানায়।
দাদা তার টলটলের দিকে
তাকিয়ে বলে—তোর সংসার
লাল হয়ে থাকুক।
দাদা তার লাল দেখে যেতে
পারেনি, একা হেঁটে গেছে দূরে...
তবুও নতুন সংসার, অরণ্যের
মতো নতুন নতুন রাত।
মেয়েটি প্রতি ভোরে তাকিয়ে
দেখে—
তার সমস্ত শরীরে ডালিম
ফুটে আছে।
দিদি
দিদিরও ছায়াপথ ছিল;
তৃষ্ণায় সে অজস্র মল্লার, চর্যা ও চকলেট।
ছেলেটি উড়োজাহাজের মতো—পকেটে শো শো উষ্ণতা।
দুজন রোদ্দুর, যেতে
যেতে বেঁকে যেতো সন্ধ্যার দিকে।
বিশ বসন্তের বটপাতা,
দুলে ওঠে শাড়ি ও শূন্যতা।
তবু কতো পথ—
ছেলেটির সতেরতে এসে
দোল খায় দিদি, রাতগুলো টুপটুপ নির্জন।
ছেলেটিও জানে তার আগুনে
যে জোনাকিরা মৃত পড়ে থাকে, তা দিদির টিনএজ বেলা।
তৃতীয় নির্জন
বাবা অজস্র পথে হেঁটে আসা অন্ধকার,
মায়ের আঙুলে আঙুলে ভৈরবী।
তবু প্রেম প্রাচীন বর্ণের মতো মেধাহীন।
এইসব রাতে ছেলে ঘুমিয়ে পড়ে।
ঘুমের ভেতর পরী আসে, নাশপাতি ফলে ভরে
যায় স্কুলব্যাগ।
পরিরা গান গায়...
দিগন্ত রেখার কাছে কয়েকটি ঘড়ি, সময়
নিয়ে হুল্লোড় করে...
তখনো ছেলে ঘুমায়, যার শরীরে পাঁচতারের
নির্জনতা।
মা সেতার, বাবা একতারা—
ছেলের আরেক তার কেউ বাজাতে পারে না।
নথ
দাদা ঘরে এলে দাদি অন্ধকার
নাচিয়ে দিতো। ম্লান আলোর নীচে কতোবার দোল খেতো নথ।
দাদা সেই চকচকে সোনার
দিকে তাকিয়ে বৌয়ের লাজ গুনতো।
এসব দাদির কাছে স্বরবর্ণের
মতো প্রথম।
দ্বিতীয় পাঠে দাদা হারিয়ে
যায়...
নাতিরা শহরে সংসার পাতে,
কাজ করে।
তারাও এখন রাত করে বাড়ি
ফেরে।
বৌগুলো নানারকম বিজলি
জ্বালে, নতুন শরীর জ্বেলে দেয়।
দাদি তাকিয়ে দেখে—দাদি আজ আর নথ নাড়াতে পারে না।
বৌ—৩
বৌয়ের অনেক ছায়া, ঘড়ির কাঁটার মতো
গোল টিকটিক।
অন্ধকার নেমে এলে ঘুমেরা নাচে, মুদ্রা
ভেঙ্গে জেগে ওঠে নক্ষত্রতারা।
বৌয়ের শরীর আজ ক্লান্ত এক্কা-দোক্কা।
বরের ভেতরও রোদ নামে।
অরণ্যের পথে হেঁটে আসা দীর্ঘনিঃশ্বাস,
রাতের বিছানায় ফুটে থাকে বাগানবিলাস।
ধ্যান ভেঙ্গে কয়েকটি শমীগাছ
ডেকে আনে চুম্বনরেখা।
আকাশে আকাশে ডানার সংসার।
তবু বৌ প্রতিদিন ছেড়ে যায় রোদ...
গাছেরা একান্নবর্তী...
তারা একসাথে খায়, পাতা
ঝরায় আর অরণ্যকে ভালোবেসে শরীর দোলায়।
বকুলের ডাকে বট ও তমাল
জাগে, চম্পা জাগে।
চম্পার প্রেম বোঝেনা
অশোক।
ওদিকে নিম মহাঔষধি,
কদমের বাঁশিবাঁশি মন।
গাছেদের জীবন আছে, মানুষের
শ্বাস নিয়ে তারাও দীর্ঘশ্বাসে ভোগে।
মরে গিয়ে কাঠ হয়ে জ্বলে,
ভাতের হাঁড়িতে ফোটায় আনন্দজল।
এভাবে গাছেরা জ্বলতে
জ্বলতে জেনে যায় মানুষের সংসারপাতি।
গাছ
মেয়েটি অবাক হয়—
ইতিউতি চোখ, মাথার উপরে বেড়ে ওঠা ডালপালা
হরিণ যেন চলমান গাছ।
দাদি ডাক দেয়—আয় পাতাপাতা খেলি।
কল্পনায় হেতাল বাগান...
হরিণেরা জিরায় আবার দৌড়ে গভীরে যায়,
মাতাল হয়ে কেউ কস্তুরী খোঁজে।
গাছগুলো ছায়া দেয়, মায়া ছড়িয়ে দেয়।
মেয়েটি নাচে, বেনী দুলিয়ে গাছ হয়ে
ওঠে।
তারপর খেলা ভেঙ্গে যায়।
দাদির বুকে মেয়ে ঘুমায়—দাদি হেতালগাছ, মেয়েটি দুরন্ত হরিণ।
কানামাছি
একজন মা, দুইগালে মানচিত্রের
সংসার। চুলে মেঘ নেই তবু আকাশ তলে আসে।
ঘাসের সন্ধ্যায় তার
সাদা শৈশব।
কিছুটা সময় নিয়ে দৌড়ে
যায় নিজের কাছে—
বাতাসের মতো আঁচলে ঘুম
তোলে, শিশুদের হাতে দেয় বটপাতা স্নেহ।
যতটুকু একা তার অধিক
ছোঁয়াছুয়ি খেলা, সাজানো অন্ধকারে মানুষ খোঁজা।
দৃশ্য খুলে যাওয়া একজোড়া
নদী।
শিশুরাও ডাক দেয়—আয় চাঁদ...
মায়ের চোখের নীচে কানামাছি
খেলি।
No comments:
Post a Comment