কোথায় কি!

22 April 2018

গুচ্ছ কবিতা—রিয়াজ মাহমুদ


 
বেশহুরিক
পৃথিবীর অদ্ভুততম গ্রামের সিন্ডিকেটে ঢুকে যাচ্ছি।
পদাতিক প্রহরী—
ক্যাপে স্যালুট লুকিয়ে অপেক্ষা করছে
কখন আসবে সা'ব...
বাংলোর দরোজা খুলে, ঢুকে পড়বে
উলঙ্গ মদের বোতল রগড়াতে রগড়াতে
ছিপি খুললেই দেখা যায় যার নদীর উপর
আকাশের ছাউনি, রূপকথার চৌত্রিশ রজনী
গল্পের শাবল নিয়ে বসে আছে সে-তৎপর নিড়ানি।
স্কন্ধের ফেরেশতা, ও জানের জিগারেরা,
লেখো, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।’
আমি পড়ছি, 'ইকরা...'
সৃষ্টিকর্তার যাবতীয় সৃষ্টির প্রতি,
আমি পড়ছি 'ক্বুল!'
যখনই ইশারা করল তাঁর তর্জনী
তেরো কলস জ্যোৎস্না ভেজা জলে
আমি তুরুপ ফেলি।
পথিক, ও লৌহজীবী পথিক, ঘনঘন হাওয়া টানো,
তুরুপের টানে
ঘোলা মাটি, কাঁদার জৈবিক ঝাঁজ—
পুরে নাও নাকে।
রয়েছে বহু দেনা, শ্বাসনালিকায় ফুলে ওঠা ঢোলে
নাপিতের ক্ষুরের আগে—
যতটুকু বিশ্বাস নিয়ে পেতে দেয়া হয় গলা,
ততটুকু বিশ্বাসও শহরকে আর যায় না করা।


মুসাফির
ভুরভুরে বকুলের ঘ্রাণ আসে রানারের মত
সুকান্ত; দ্যাখো ভাই,
রাত্রির মধ্যস্থতাকারী চাঁদের বৈরি উপত্যকায়
বকুল বকুল গন্ধ।
ঘাসফড়িঙ গুনে যাচ্ছে ষোল ঘরের নামতা,
সুপারি গাছের তলে পূর্ণদৈর্ঘ্য দুধের পেয়ালা...
ঝাঁঝরা হয়ে আসছে তুরপুনের আঘাতে,
বাতাসের ঘোরে, সেই সূক্ষ্ম-সূচ
ঢুকে যাচ্ছে অনিন্দ্য স্বপ্নময় চোখের কোটরে।
সুকান্ত; ভাই, এইখানে তোমার কবরে রচিত ওক,
বিষণ্ণা পাখির ডানায় রোদ্দুর, পালক ছুঁড়ে গেছ
দূর্বায়, একটা ঝড়ো আকাশ মিনতি করে।
দু'চোখ ছাপিয়ে শেষ হ'লে কভু বৃষ্টির পিপাসা,
রেখে যাবে সিন্দুকে, দ্যুলোক পাহাড়ের হুতাশা।
মাছির টেলিপ্যাথি
বলে গেছে পচনের এমন সংবাদ,
'ধোপদস্ত হত যদি এ-বারোয়ারি শরীর?'
পারস্যে যেতাম, কল্লোলিনী,
মজলিশে মজলিশে করে বেড়াতাম সরফরাজি।
সুকান্তবৃত্তি।




ব্যুৎপন্ন
নিঃসঙ্গতার ঘনত্ব মাপি গ্লান্ডের স্বরলিপিতে।
অধোমুখ পাত্রে রাখা ঘুটঘুটে অন্ধকার

পান করে নেই সুধা ভেবে।
আমি হাঁটি একটা ভালো থাকার চক্রান্ত দিয়ে,
খারিজ করবার দায়বদ্ধতা থেকে,
বারবার নিজেকে ঝুলাই নোটিশ বোর্ডে;
কখনোবা অংশ হয়েছি পাপেট নাচে।
মাতৃদুগ্ধ ছাগবৎস,
আমাকে কয় বারান্দার দুখ্, ঘাসের অসুখ
ম্যারাথন সাঁতারে, ভোল্টে চলে নৃত্য...
মাতৃবিয়োগের শোক,
এক পাহাড়ি মালির কফিবাড়িতে,
সিনথেটিক ধ্বসের মত,
খেলে যাচ্ছে অনুদ্ঘাটিত হাইড-এণ্ড-সিকের রহস্য।
ইজিপ্ট সভ্যতার বুক চিরে, হরিদ্বর্ণ মৎস্য

তারাডোবা নদীর স্রোতোবহা কূলে
ডাকে মর্মর বান।
এক চক্ষুবিশিষ্ট এক মানুষ
প্রথম দেখে ফেলে সেই মিথ,
মুঠো করে লেপে নেয় মেঝেতে,
নৃত্য, নোটিশ ও ইতিহাসকে।



সুইসাইডাল
আল্লাহ্‌
রব আমার,
মহর্লোকের এই বিজনে বসে আপনাকে ভাবি,
জানালা থেকে যত পশ্চিমে চোখ যায়
ধূধূ অন্ধকার... লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,
মদিনা মুনাওয়ারা এবং শত শতায়ুর কা'বা।
সমূহ গুপ্তরহস্যের আপনিই একমাত্র শাহেনশাহ,
দিলদরিয়া বাদশাহ।
আপনাকে ঘিরে আছে দুপুরঘন নূর,
স্ফূর্তিমান ঝুমুর।
আমি জানি না, আপনি কেমন দেখতে,
বুঝি না আপনার করণকৌশল, ক্রিয়েচার।
পাপী দিলে তবু রাখি ফরিয়াদ,
ওই নদীবর্তী উঁচুঅঞ্চল থেকে

চিঠি পাঠায় এক নিকৃষ্টের জুররিয়াত,
প্রতিবার চিঠি খুলে পড়ি
কেউ এঁকে রেখেছে আমারই মৃত্যদণ্ডের ক্যালিগ্রাফি!
প্রভু, ভৃত্য আমি, আপনার
পাপী দিলে তবু করি ফরিয়াদ,
আগাম চিঠির পাতায় পাতায়
যেনো লেখা থাকে কার্যত মৃত্যুর কেরাত।



নিরুত্তর সাইকেল
আমাদের নিম্নবর্তী অঞ্চলে বইছে ফোরাত,
তৃতীয় দৃষ্টির মত নিখুঁত ক্যামেরা

স্থলাভিষিক্ত হয়েছে দরদে;
ব্যাটারি দিলেই শুরু হবে চলতে আর
স্থিতমনস্ক ঘুড়ি, নাটাইকে জানাবে বিদায়।
কেননা, প্রতিশ্বাসের পর
আমরা ভুলে যাই বাসিবায়ুর নির্গমন
তোমাকে প্রদক্ষিণ করতে,
ব্রহ্মাণ্ড পায়নি অতিক্রমণ
যাদুর ফুঁৎকারে ডুবে রই পূবালী চত্বরে,
সম্মোহন বিষয়ক মন্ত্র পড়া হ'লে
জানাজা দিয়ে তাকাই থ্রিডি গ্লাসে,
পৃথিবীকে চকের চেয়েও চকচকে লাগে সেখানে,
যেই শব্দশহীদেরা ধামাচাপা হয়ে আছে
অর্থনৈতিকচক্রে,
সেখানে রিউমার ছড়াই
প্রেম ও পরকাম সম্পর্কে।


বন্ধুবৎসল
খননের ব্রতে অসংখ্য রোহিঙ্গাপুত্র

এঁকে দিয়েছো হূল
পারিজাতগদ্য; নক্ষত্রের নীল মূল।
সমুদ্রবেষ্টিত জাহাজের উলুধ্বনি,
চলে যায় কম্পাসের দেখানো পথে।
যখন আবিষ্কার হয়নি নথ,
পৃথিবী ঢাকা ছিল লাভাঞ্চলে।
সেই পথহারা রাতে
সুর করে কেউ বাইবেল পড়েনি,
তবে কি কোরান বেশি রিডিং-ফ্রেন্ডলি?





No comments:

Post a Comment