নিঃসঙ্গ বেহাগ
সূর্যটা পাটে গেল। পাখিরা নীড়ে এলো। আযান হলো। শঙ্খ বাজলো। পথ ঝিমালো। নিশাচর
ডাকলো। শিশির ঝরলো। কাছে এলো--অন্ধকার!
জোনাকি জাগলো। ওরা উড়লো। জানালায় এলো। ঘরে ঢুকলো। গায়ে বসলো। ফিরেও গেলো।
চিহ্ন রইলো--শুন্যতার, মৌনতার!
তারা ফুটলো। চাঁদ তাকালো। জ্যোৎস্না নাচলো। শিউলি হাসলো। নদী গাইলো। তারা
নিভলো। চাঁদ ডুবলো। বুকে জমলো--হাহাকার!
ভোর হলো। বায়ু বইলো। পাখি গাইলো। রোদ জ্বললো। পাখি উড়লো। পড়ে থাকলো--ব্যথাভার!
সজাগ অনুভব। ঘুমহীন চোখ। লোমকূপ ঘিরে--নীল কষ্ট; মৌনতা; শুন্যতা; অন্ধকার;
ব্যথাভার; হাহাকার!
গৃহ বৈঠক
তোমার—
মনটা কি খারাপ?
মুখটা ভার;
চোখের গহনেও যেন—
ঘন অন্ধকার!
বেশ একটু।
মনের আকাশে হতাশা,
বুকের ভেতর চঞ্চল—
বিচ্ছিন্ন কষ্ট।
কি হলো আবার?
কিসের হতাশা?
কি ব্যথাভার?
তেমন কিছু নয়!
তবুও—
বাতাস যেন প্রতিদিন
দুর্গন্ধময়।
আহা! কি হলো!
খুলে বলো।
সভ্যতা,
আমার সোনার সভ্যতা
দিনদিন শিখছে শুধু
বর্বরতা!
জানা কথা।
তবে, কি কারণে আজ
এত বিষন্নতা!
অন্ধকার!
ঘড়ির কাঁটায়
সরে যাচ্ছে দূরে
আমার চলার অধিকার,
আমার বাকের অধিকার।
ফুঁসছে মানুষ- ক্ষেদে ও ক্ষোভে
চোখে চোখে বুনো আগুন,
বাতাসে লাশের ঘ্রাণ,
মাটিতে রক্ত গন্ধ,
বাজে হাহাকার,
অন্ধকার!
অন্ধকার!
কেন এমন?
কেন ভয়ানক কাল?
কোথায় যাবে প্রজন্ম আমার?
এই রুদ্র মেঘের দিন—
কাটবে কখন?
জানা নাই।
পোষাকি গণতন্ত্র
সারাক্ষণ পড়ে চলে
স্বৈরের ব্যাকরণ।
সময়ের হৃদপিণ্ডে—
উজ্জ্বল রাজবাড়ি।
রাষ্ট্র মৌনতায়,
জনতার কাঁধে—
গোলামির প্রহসন।
আর?
আর কোন হতাশা?
আর কোন চাপা আর্তনাদ?
আসলেই—
সাদা চোখে দেখলেই
পায়ে পায়ে হাঁটছে বিবাদ,
দূরের যাত্রায় আলো,
নিকটে অন্ধকার!
কত আর—
কত আর বলি বল!
স্রষ্টা এক, আদিও অভিন্ন
অথচ, অথচ দেখ—
হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান;
কি আশ্চর্য! ধর্ম গড়ছে—
মানুষে- মানুষে বিচিত্র ব্যাবধান!
ধর্ম যেন দিন দিন—
রক্ত কাহিনীর এক শাস্ত্রীয় গান।
ধর্ম যেন আজ—
বৈষম্যের বারুদ ভরা বোমা
সদা প্রস্তুত, সদা উসখুস—
উৎকণ্ঠিত পৃথিবী,
আকাশে ভয়—
শুন্যতার।
তাহলে?
তাহলে কি হবে?
আমাদের মুক্ত সূর্য ও চাঁদ
যাবে অবেলায়—
অস্তাচলে?
না।
হয়ত বেড়ে যাবে বিভেদ,
হয়ত ভায়ে-ভায়ে প্রবল শত্রুতা;
হয়ত ভেসে যাবে রক্ত ধারায়—
ভালবাসা, সখ্য।
তারপর?
তারপর, একদিন—
ঘুম ভেঙে জাগবে পৃথিবী,
মানুষে- মানুষে ধ্বনিত ঐক্যতান;
পালাবে দূরে—
শ্বাপদ- শকুন- নমরুদ- শয়তান।
তখন—
আসবে ঊষা,
জাগবে সূর্য,
গাইবে পাখি,
হাসবে ফুল,
দূরন্ত—উন্মাদ—উন্মাতাল
চির উচ্ছল, চির অম্লান।
মনে আশাবাদ,
চোখে আলোর হাতছানি;
তবে কেন,
কেন এত আর্তনাদ!
যা কিছু আমার,
যা কিছু এই সমাজ ও সভ্যতার,
তার জন্য মিছেমিছি
কেন ঝরবে রক্ত ও জীবন?
নশ্বর ধরায়, কি মোহ মায়ায়
অবরুদ্ধ সরল বোধের দূয়ার
বিষাদের
জ্যামিতি
যৌগিক মেঘ, কালো আকাশ;
ব্যথা সর্বনাম, অব্যয়
দীর্ঘশ্বাস;
পাঁজরে গ্রীবায়,
বুকে পিঠে,
মনে।
ক্ষয়—ক্ষয়—ক্ষয়; সময়ের বুকে ক্ষয়।
ক্ষয়—ক্ষয়—ক্ষয়; মাটির গতরে ক্ষয়।
ক্ষয়—চৈতন্যের দ্রাঘিমায়;
ক্ষয়—মননের উপত্যকায়;
ক্ষয়—দরোজায়,
গৃহের কোণে।
সভ্যতার কপালে মৃত্যুর
ছায়া; সমাজের চোখে কান্নার জল; মানুষের দেহে রুগ্নতার ছাপ;
উঠোনে—আঙিনায় শ্বাপদের কোলাহল; চারিদিকে শ্মশান ও মরুর জাগরণ মহা আয়োজনে।
উঠোনে—আঙিনায় শ্বাপদের কোলাহল; চারিদিকে শ্মশান ও মরুর জাগরণ মহা আয়োজনে।
স্বপ্নদল পুড়ে ছাই,
উড়ে যায় আশা;
জেগে ওঠে নিষ্ঠুরতা,
বিবর্ণ ভালবাসা।
দীর্ঘতর লাশের সারি।
মনুষ্যত্ব হ্যালির ধুমকেতু,
নিঃশ্বাসে আহাজারি।
লালসা ও মোহ বুনোলতা,
সততা কাঁটাবনে।
ঈশ্বর হাসে চির উদাসীন
অদৃশ্যে সঙ্গোপনে।
শান্তির কাঠামোয় অশান্তির
প্রলেপ—বুকে
বিষের দহন;
সুখের বেলাভূমি অসুখের
জোয়ার—রুক্ষ
ব্যথার প্লাবন;
হাঁটে—চলে দিন—রাত উৎকণ্ঠা—ভয়; কি হয়, কি হয়—কখন, কোন ক্ষণে!
হাঁটে—চলে দিন—রাত উৎকণ্ঠা—ভয়; কি হয়, কি হয়—কখন, কোন ক্ষণে!
ভাললাগে না আর ঝড়ের
বাতাস,
ভাললাগে না আর এসব হাহুতাশ;
ভাললাগে না আর এ দুশ্চিন্তার গান,
ভাললাগে না আর দহনের উপাখ্যান;
ভাললাগে না আর কালো
শব্দ- অক্ষর,
ভাললাগে না আর তো ধ্বংসের
স্বাক্ষর;
হৃদয় পুরোহিত গোপনে, আনমনে
বিষাদ রেখায় ব্যথার বৃত্তে অঙ্কনে।
যৌগিক বিভেদ, অনিশ্চিত
আকাশ,
অগণিত ক্ষেদ কারক—সন্ধি—সমাস
দূয়ারে—দূয়ারে
বুকে পিঠে
মনে
No comments:
Post a Comment