কোথায় কি!

22 August 2017

বীরেন মুখার্জী



চলো, নির্লিপ্ত হেঁটে যাই
মোহনীয় সেই গোধূলি- আমরা হাঁটছিলাম এবড়ো-থেবড়ো আলপথে ছড়িয়ে পড়ছিল রক্তিম আলোক চোখের পর্দায় গলিত সবুজ এবং সম্ভ্রান্ত একটি সংসারের প্রতিধ্বনির ভেতর ফুটে উঠেছিল হলুদ হাওয়া-উদ্দেশ্যহীন! তবুও কয়েক শতাব্দী হেঁটে সেইসব প্রণয়বেলা আমরা গড়িয়ে দিয়েছিলাম প্রান্তরের ঘাসে-

আমরা সাক্ষী ছিলাম ঝরে যাওয়া সময়ের; ভেবেছিলাম- হাস্যকর কোনও ভোর নিয়ে যাবে প্রস্তর যুগের ভোজসভায়!
কিংবা, নরম অন্ধকার উসকে জেনে নেবে ক্ষরিত জীবনের সমগ্র রসায়ন ভাঁজ হওয়া বিকেলের মসৃণতা থেকে জাগিয়ে দেবে অদেখা ভুবন; পাঁজরভাঙা চিহ্নলোকও ফিরে আসা অমূলক নয় অথচ, শেষাংশ গণনায় দেখি- দণ্ডিত পৃথিবী!

অরণ্য প্রাচীন হলে, তার ছায়াতলে, জেনেছিলাম- গড়ে ওঠে পরিবর্তিত বসতি! কথারও অলঙ্কার আছে, সময়ের মোচড়ে ধ্বনিত হতে পারে প্রত্যাশিত রাগিনী ফের; চলো, নির্লিপ্ত হেঁটে যাই- ধূলিরাঙা প্রাচীন গোধূলির পথে...

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য




অনঙ্গ শৃঙ্গার
রাত্রির চক্রে কোনো মন্ত্রধ্বনির দিকে অবাক তাকিয়ে থাকে পৃথিবী আর তুমি চিরদিন গীতবিতান, বাগানের ঘরে আলো আলো অলকানন্দা, একটি গানের ভিতর থেকে তাকিয়ে আছো ঘরজুড়ে, একটি বিজলিশব্দের মুখোমুখি যেনো বা একটি প্রার্থনার রূপ, অনুরূপ তুমি বুঝতে চাইলে নিজের বাইরে একটি বাতাস গাছ উপড়ে এলোমেলো করে ঘর এবং আরো প্রলোভনসঙ্কুল দৃষ্টিতে অব্যাহত থাকে আমিই সেই এলোমেলো বিবাগী ঘর
তোমার চিত্রাঙ্গদাপর্বে আমি একটা জিরাফ এঁকে দিই, কালো রঙে জিরাফ দেখেছি চিড়িয়াখানায় চলো, চিড়িয়াখানার জিরাফগুলোকে বের করে নিয়ে আসি তারপর আসো তোমার সঙ্গে ঘুরি আর আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে ঝড়ে ভেঙে পড়ে ঘুমগাছের শুকনো একটি ডাল আর তুমি আমার হাত ধরে ফুটপাথ থেকে রাস্তায় নামিয়ে নাও তোমার সহসা স্পর্শে আমার রক্তের ভিতর বিঁধতে থাকে বৃষ্টির ফোঁটাগুলি আর নীরবে হেসে যায় তিনটি জিরাফ
যে অজাত নোনা পৃথিবীর সঙ্গে এত গভীর প্রণয়, আকাক্সক্ষা যেমন অনুভূত হবে তা থেকে অপহৃত রাস্তার আলো, মানে সোডিয়াম লাইটের অধীনে নীল ছায়া হাতাহাতি করে মেঘ আর চাঁদ ভিড় করে তুমি কার মুখ বহন করে দাঁড়িয়ে থাকো উত্তরের রাস্তায়, প্রশ্নের আকরে? একটি মধ্যরাত্রির পুকুর, জবুথবু ফিরে আসে যে প্রথম বাড়ি ছেড়ে জলাশয়ে নেমে গিয়েছিলো রাত্রিপাওয়া সেইসব জিরাফের মতো

দেবাশীষ মজুমদার



বন্ধুর জন্য এলিজি
তোকে খুন করতে পারিনি বলে এক একটা দিন
ইচ্ছে জাগে আচমকা উপর্যুপরি আঘাতের পর আঘাতে
নিজেকে থ্যাতলে ফেলি উথাল-পাথাল জোছনায়
তোর ওই নির্লিপ্ত চোখে অত কবিত্ব আমি
মানতে পারিনা হ্যাঁ, এটা জানি যে ঈর্ষারা চিরকাল
নিম্নগামী, যদিও সাগর তীরে বসে থাকা তোকে
বাল্মীকির চাইতেও বেশী ঋষি মনে হয়েছিল বলে
রত্নাকরের প্রথম জীবনের প্রেমে পড়েছিলাম

আজ এই মুহূর্তে সিঁড়ির কোনে
হাতের চেটোর উল্টো-পিঠে কপাল ঘষছি তোর
অপেক্ষায় ওই প্রশ্নের উত্তর আমার চাই, কবিতা
লিখতে দেখে
চাপা হাসি নিংড়ে কেন বলেছিলি -

প্রজ্ঞা মৌসুমী


কেউ একজন আমার ময়লার বিনে কী যেন খুঁজে হয়তো বাস্তুহারা, হয়তো মাদকাসক্ত, লোকটাকে দেখা হয়নি আজও শুধু হঠাৎ দেখি একান্ত গোপনীয়তা প্রকাশের মতো ছড়িয়ে আছে ডিমের খোসা, জেসমিন চালের প্যাকেট, রেস্তরাঁর খাবারের বাকসো উড়ে এসে জুড়ে বসা এই ঝামেলা কিংবা শুক্রবারে পাশাপাশি থাকা একুশটা সবুজরঙা ট্র্যাশবিন দেখে ইদানিং মনে হয় - পড়ে থাকা জঞ্জালও জানান দেয় একেকটা বাড়ির স্ট্যাটাস এ বাড়ির লোকেরা দামী চালটা কেনে ও বাড়িতে বোধকরি একজন লেখক থাকেন সে বাড়িতে অফুরান অনলাইন শপিং আর এতসব ডাইপারের ঝাঁক মানে পাড়ায় জন সংখ্যাবৃদ্ধি

শাপলা জাকিয়া


রূপসার সাথে ফোনেই প্রথম আলাপ মোহিতের। মোহিত একটা জনপ্রিয় বুটিকের মালিক। সেই সূত্রে রূপসা তার পত্রিকার ঈদ ফ্যাশান সংখ্যার জন্য মোহিতের একটি সাক্ষাতকার চায়। এ্যাপয়েন্টমেন্ট  নেয়ার উদ্দেশ্যে ফোন করেছিল মোহিতকে। রূপসার কন্ঠ শুনে প্রথম দিনই মুগ্ধতা কাজ করেছিলো মোহিতের মনে। দেখা হওয়ার পর সেই  মুগ্ধতা প্রেমের রূপ নেয়। ঠিক একইভাবে মোহিতেরও প্রেমে পড়েছিলো রূপসা।

সাদিয়া সুলতানা

প্রায় ঘন্টা দুয়েক সময় ধরে প্রদীপ কুমার সাহা বড় রাস্তার মোড়ে বুড়ো বটের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন এবার খুব অসহায় লাগছে তার গাছের নিচে কিংবা আশেপাশের টঙে দাঁড়িয়ে বা বসে সময় কাটাচ্ছেন তিনি বসে স্বস্তি না পেলে দাঁড়াচ্ছেন দাঁড়াতে স্বস্তি না পেলে বসছেন দুই পায়ের হাঁটু বারবার ভাঁজ করা আর সোজা করা এই বয়সে তার জন্য খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার মাঝে মাঝে অবশ্য তিনি দুই হাত দুপাশে ছড়িয়ে দিয়ে গাছের মতো শরীরের বিস্তৃতি ঘটাচ্ছেন এই বিষয়টাতে খুব ছেলেমানুষি অনুভূতি হচ্ছে তার ডালপালার মতো দুহাত ছড়িয়ে দিলে বেশ গাছ গাছ লাগছে নিজেকে

দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু



সুমেরুপ্রভা
গভীর কোনো বেদনাবোধে পাটোয়ারি পাড়ায় আল্লার আযান ছড়িয়ে পড়ে- আসসালাতু খাইরুম্ মিনান নাউম...

ধীরে কুয়াশা কাটতে শুরু করে দূর গ্রামে...
ঊনত্রিশ রজনী পার হলে বেলিফুল-ফোটা ভর সন্ধ্যায় রায়পুরার দাদীর ইন্তেকাল হবে... ইন্নাহ লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজেউন

এমন সুন্দরী দাদীর পাকনা কেশর আর উড়বে না দক্ষিণমুখি বাতাসে। পিতলের বাটাল দিয়ে সুপারি কুটতে কুটতে দাদী বলবেন না- আমি মা ফাতেমা, হযরত আলীর বউ; আমি মা ফাতেমা, হযরত আলীর বউ...

আসমা অধরা



অতল, তোমায় ডাকি
জাড্য পাখী, উড়বে বলে ডানা মেলে আমরা আপদ কাল লিখে রাখি মুখ থুবড়ে পড়ে থাকি  রাস্তায় ফেলে রাখা দ্বিখণ্ডিত ডাবের খোলের মত, যেন ছাপোষা চাপরাশি কোনো যার মাথা উঁচু করার দম্ভ হয়না কোনো কালেই অথচ তার জন্ম তো মাথার উপরেই ছিলো, নাগালের বাইরে

দেখ রোদ উঠলেই বৃষ্টির জন্য হাহাকার করি, বৃষ্টি এলে পচে যাই, শুকোতে চাই মনের মধ্যে জমা রাখা ছোট্ট ছোট্ট ইজের স্বপ্ন লিখি তোমাকে, তুমিও লিখেই যাও কেউ উল্কার গল্প বললে গুনেই তেমনি ছাই ভস্ম হতে ইচ্ছে করে মাছের গায়ে কাদার আঁশের মত ছাড়িয়ে নেই ইচ্ছের একপ্রস্থ বাকল কষ ঝরে, কষ্ট ডাকি তারে পুষে রাখি সাপ, কিন্তু ছোবল দেই না

হোসনে আরা জাহান



কদম ফোটে
আমি না পারতে তোর শরণ লই, খুব গোপনে
ও আমার ফুসমন্তর গো
ও আমার অষ্টমীর পুতলা
যখন আষাইঢ়া ঝিলে বিহান নামে
হাইঞ্জা উজান যায় হাওড়ের জলে
মনটা তখন আকুলি-বিকুলি করে, খুব গোপনে
ও আমার দোষের দুশমন
আমি না পারতে তোর শরণ লই গো...