কোথায় কি!
▼
06 December 2018
সেই বসন্ত ২ —অনুপ চক্রবর্তী
প্রথম পর্বের পর...
নিরুপমা কে দেখতেই চোখ আটকে যায় সিঁথির একচিলতে সিঁদুরে। এর মধ্যেই পল্লবী চলে আসে।
—দাদা আপনি এসেছেন আমি খুব খুশি হয়েছি। ও মা বাইরে দাড়িয়ে আছেন
যে ভেতরে আসুন। কি রে নিরু চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলি যে। কেউ আসলে তো ভিতরে আসতে বলতে হয়
না কি এটা ও ভুলে গেছিস।
—না এমনি।
প্রতাপ
ভিতরে গিয়ে ভাবতে থাকে নিরুপমা র কথা। তার চোখে জল আসে। কিন্তু সে জল যে চোখে ই আটকে
যায়। প্রতাপের খুব অস্বস্তি মনে হয়। এবার পল্লবী কে ডেকে বলেই ফেলে...
—পল্লবী আমি বেশী দেরী করব না আজকেই রাজশাহী ফিরতে হবে।
—দাদা এটা কি করে সম্ভব সবে মাত্র আসলেন আর এখনি বলছেন চলে যাবেন
তা কখনো হয় না কি।
—প্লিজ জেদ করো না। আজকে আমাকে যেতেই হবে। আমি ট্রেনের টিকিট
বুকিং দিয়ে এসেছি।
—টিকিট যখন বুকিং দিয়ে ফেলেছেন তখন আর কি বা বলবো।
নিরুপমা
পাশের রুমে বসে পল্লবী কে রান্না র কাজে সাহায্য করছে। নিরুপমা র ছোট্ট মেয়েটি এ ঘর
ঐ ঘর করছে। মেয়েটি কে প্রতাপ জিজ্ঞেস করে...
—কি নাম তোমার?
—অনুপমা।
25 September 2018
সেই বসন্ত —অনুপ চক্রবর্তী
যৌবনা পদ্মানদীর পাড়ে শরৎকালের পড়ন্ত বিকেলে
একা বসে আছে প্রতাপ। সময় কাটে না তার। তাই পদ্মার উন্মত্ততা দেখতে এসেছে সে। একসময়
এখানে নিয়মিত আসত। কিন্তু এখন ইচ্ছে হলেও আর আসতে পারে না। তবে যখন তার মনটা স্মৃতিকাতর
হয়ে ওঠে তখন না-এসেও পারে না। আজও তেমনই একটা দিন। স্মৃতির সান্নিধ্য পেতেই যেন এখানে
ছুটে এসেছে সে। মন ভালো নেই। ভালো লাগানোর জন্যই আসা। কিন্তু এখানে এলে আরেকটু বেশিই
খারাপ হয়ে যায় মনটা।
নদীর দিকে একমনে চেয়ে ছিল। হঠাৎ একজন এসে হাত
রাখল তার কাঁধে। চমকে উঠল প্রতাপ। পেছনে তাকিয়ে দেখে পল্লবী। নিরুপমার খুব কাছের বান্ধবী।
তাকে দেখে অবাকই হয় প্রতাপ। এখানে, এ জায়গায় একসময় নিরুপমার সঙ্গে অনেক সময় কেটেছে।
পল্লবীও আসত মাঝেমধ্যে। তখন থেকেই প্রতাপকে 'দাদা' ডাকে মেয়েটি।
শব্দ —ফারিয়া তাবাসসুম
বাইরে আষাঢ় এর বৃষ্টির শব্দ, ভিতরে ঝাপসা অস্পষ্ট-কোলাহল।
বেশকিছু অগোছালো টেবিল চেয়ার। এক কোনায় বসে বই পড়ার মতো নিরিবিলি জায়গা, আরেক কোনায়
দেয়ালে পুরনো ভাব ফুটিয়ে তুলতে ইট-সিমেন্ট
এর খেলা করান হয়েছে, আর আবছা আলো-আধারের খেলা। এসবের সাথে বোনাস হলো উষ্ণ কফির গন্ধ।
জায়গাটাতে একটু ক্ল্যাসিক ভাব আছে তা বলতেই হবে। আজকে এসব কোনটাই মনঃপুত হচ্ছে না,
কেবল মাত্র বৃষ্টিটার জন্য, সব কেমন স্যাঁতস্যাতে লাগছে। ক্যাফেটেরিয়াও অসহ্য লাগছে
এই অপরিচিত কোলাহলের জন্য। অন্যান্য দিন ঘন্টার পর ঘন্টা পার করা যায় নিজের পছন্দের
সল্ট কফি আর ল্যাপটপের সাথে। আজ সব অসহ্য লাগছে। বৃষ্টি বাড়ার সাথে তাল মিলিয়ে কেমন
যেন অসহ্যটাও বাড়ছে। মানুষের মনে এত রং কোথা থেকে আসে? এই পানি পরা দেখে। কবিতা গল্প
গান প্রেমিক প্রেমিকার প্রেমের সিনেও বৃষ্টি নামক পানির ব্যবহার থাকা চাই।
01 August 2018
নিমগ্ন আলোচনা: ধ্বনিত প্রতিধ্বনির সুর —মুহিম মনির
“তোমাদের দুয়ারে আজ
হৈমন্তিক সকাল
নতুন ফসলের গন্ধে-গানে ভরপুর
প্রাণ।
আগুনের শিখায় পুড়েছে আমার
বাড়িঘর,
শীর্ণ কাপড়-জামা, অনাহারি
বাসনকোসন;
শুধু রয়ে গেছে ছায়াসঙ্গী এই
বেহায়া জীবন,
দুচোখের জল আর অনিঃশেষ
কান্নাকাল!”
মানবতার অবমাননায় অনিঃশেষ হয়ে
ওঠে কান্নাকাল; তবু কমে না অসহায় মানুষের আর্তনাদ। শোষণের প্রতিযোগিতা শুরু করে শোষকশ্রেণী। ব্যথিত কবির কলমে তাই লেখা হয়—
"হয়তোবা বেঁচে আছি
দেখতে মানবতার স্খলন
আর আমি প্রজা বাকি সব সামন্ত
মহাজন।"
30 July 2018
গুচ্ছ কবিতা — দাউদুল ইসলাম
বিবর্তনবাদ
আমরা
প্রতিদিন স্বাগত জানাচ্ছি বিবর্তনবাদকে, প্রতি মুহূর্তে গত হচ্ছে আমাদের বর্তমান,
প্রতি নিয়ত গম ন করছি নবীন পটে। আমরা যা শিখেছি পাঠক্রমে,
যা কিছু আমাদের মুখস্থ,
জানা অজানায়
, ঘুরে ফিরে হাজির
হচ্ছি স্মৃতিপটে...সোজা পথ হেঁটে যাচ্ছি,
হেঁটে
যাচ্ছি বাঁক- বক্র, ভিন্ন সীমানায়...
সব
ছেড়ে একাকী পৌঁছে যাচ্ছি একান্ত ঠিকানায়। সব বুঝেও ভুলে যাচ্ছি চিরন্তন বাণী, আপন চোখ বুজে ডুব দিচ্ছি নিষিক্ত রাতের
বুকে, অন্ধকার
রহস্যে, গোলকধাঁধায়!
অশনি জেনেও হাত বাড়াচ্ছি স্বৈরিণীর ডাকে! যেমন খুঁজে বেড়াচ্ছি অজানা সুখ শশিকান্ত
নির্বাণে, বিপন্ন
অসুখে, শরীরী
সঙ্গমে, স্থবির
অক্ষে...
মুহূর্ত
গুলো এমনিই—পলকে পলকে বিগত হয়ে যায়, স্মৃতি হয়ে যায়,
তিক্ত স্বাদে মিশে যায় স্খলনের একেক একটি
ফোঁটা...পুনরায় খুঁজে বেড়াই পুরনো কোন ভোর- শিশির সিক্ততায়
কবিতার
মত নরম রোদ্দুরের হাসি, খুঁজে বেড়াই ঝড়ো হাওয়া, নিগূঢ় সন্ধ্যা যাপন!
গল্প: বান—নিবেদিতা আইচ
উঠোনটা একটা ছোট খাটো পুকুরে পরিণত হয়ে গেছে। খুব সাবধানে পা ফেলে
হাঁটছে দুলি। অন্য সময় হলে একছুটে ঘরের দাওয়ায় গিয়ে ওঠা যেত কিন্তু এই শরীর নিয়ে
এখন ওর সে সাহস হয় না। উঠোনে মেলে দেওয়া কাপড়গুলো শুকিয়ে এসেছিল, এখন সব এদিক ওদিক পড়ে কাদায় মাখামাখি হয়ে
গেছে। দুলির আঁচলের ভেতর আধ গামলা চাল, গোটা চারেক আলু আর
কাঁচামরিচ। ভেজা আঁচল দিয়ে গামলাটাকে ভালো করে ঢেকে রেখেছে সে।
দাঁতে
দাঁত চেপে উঠোন পেরোয় দুলি। বুকটা ঢিপঢিপ করে ওর। দাওয়ায় গিয়েই শরীরটা ছেড়ে দেয়।
উঃ এত পানি! বান আইতে আর দেরি নাই রে..নিজেকেই নিজে সতর্ক করে সে। আর এই শঙ্কাকে
সত্যি করতেই যেন বৃষ্টির তীব্রতা আরো বেড়ে যায়। ভেজা শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে ওর।
একহাতে শাড়ির নিচের অংশটুকু থেকে হাত দিয়ে নিংড়ে নিংড়ে পানি ঝেরে ফেলে । আঁচল দিয়ে
মাথাটাকে বাঁচাতে চেয়েছিল, লাভ হয়নি, ভিজে চুপসে গেছে পুরো শরীর। হি হি
করে কাঁপতে কাঁপতে ঘরে গিয়ে ঢোকে দুলি।
10 July 2018
গুচ্ছ কবিতা — রিকি দাশ
দিগন্ত
ছুঁয়ে দেখার লোভে!
চর জেগে উঠেছে বিস্তৃত সব মেঘে,
খসে পড়ছে অ্যাংলোস্যাক্সন ইতিহাস
পার করে আসা সহস্র ভূগোল
ফেলে চলেছি এতকালের গুছানো সব সন্ধ্যা, মুগ্ধ নগর।
কোন শব্দ নেই থমথমে নিমতলার মতন নিঃসাড় শহরের কর্পোরেট গলি ছেড়ে;
হেঁটে চলেছি ক্রমশ গ্যালাক্সি জুড়ে।
কবিতার ক্ষেতে বুনে চলা রসায়ন চুষে শরীরে রাঙিয়ে নিবো যাযাবরের ব্যাধি।
উষ্ণ ঠোঁটে আলিঙ্গন করে শাণিত সব সকাল, একদিন যেন এক ঋদ্ধ আমি!
চিবুকের বা-পাশে রবীন্দ্রনাথ জপ-তপে ডানা মেলে ইট-কাঠের তান্ডব নীলকমলে।
গতির তীব্রতায় ছিটকে যাবে ভিসুভিয়াস।
ভূ-খন্ড ভেসে উঠবে পৃথিবীর লাভায়। ঠাই দাঁড়িয়ে শিল্প ছোঁয়ার তাড়নায় হেঁটে যাবো
অদৃশ্যে।
দু-চোখ ভরে দিগন্ত ছোঁয়ার লোভে...
28 June 2018
ফাহ্মিদা বারী—অন্ধ জীবন
:::: এক ::::
একটানা পানি পড়ার আওয়াজ ভেসে
আসছে।
কেউ বুঝি বাথরুমের ট্যাপটা
ছেড়ে রেখেই চলে গিয়েছে। টিপটিপ টিপটিপ...ফোঁটাগুলো বেশ বড়বড়। ট্যাপের নীচে মনে হয়, স্যান্ডেল টাইপের কিছু একটা আছে। আওয়াজটা খুব তীক্ষ্ণ নয়, খানিক ভোঁতা। বাইরে
এতক্ষণ গাড়ির হুইসেল আর রিক্সা টেম্পুর প্যাঁ-পু-তে মাথা ধরে যাচ্ছিলো। সেসব আওয়াজ
কমে আসতেই এখন শুরু হয়েছে এই ট্যাপের পানি পড়ার আওয়াজ।
বেশ অনেকদিন আগে একটা কথা
শুনেছিলাম। যাচাই করে দেখার সময় অথবা সুযোগ কোনটাই হয়ে ওঠে নি আগে। শুনেছিলাম,
মানুষের একটা কোনো ইন্দ্রিয় অচল হয়ে গেলে নাকি অন্য ইন্দ্রিয়রা আরো বেশি মাত্রায়
সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। এক ইন্দ্রিয়ের অবসর গ্রহণের সুযোগে অন্য ইন্দ্রিয়গুলো দায়িত্ব
বেশ কয়েক দফা বেড়ে যায়। এখন তো হাতে সময়ের অভাব নেই। তাই প্রতিনিয়ত কথাটার সত্যতা
মেপে দেখার চেষ্টা করছি। আজ দু’বছর
হতে চললো এক দূর্ঘটনায় চোখ দুটো হারিয়ে আমি পুরোপুরি অন্ধ।
15 June 2018
মাহতাব হোসেন—বীথি'র বানান ভুল
কড়া নাড়তেই
দৌঁড়ে এলো নীতু। ‘স্যার’ বলেই একটা মৃদু চিৎকার দিয়ে দ্রুত দরজা খুলে দিল। আমি খুব
স্বাভাবিক ভাবেই ওদের বসার ঘরে চলে এলাম। এরমধ্যে ও একটা গামছা নিয়ে এসেছে।
ফ্যানটাও ফুল স্পিডে ছেড়ে দিয়েছে। নীতুর হাত থেকে গামছা নিয়ে বললাম, তোমার আম্মু নেই। প্যান্ট কম ভিজেছে তবে শার্টের অবস্থা
যাচ্ছেতাই। ভেতরে শ্যান্ডো গেঞ্জি পরি না। নীতু বলল, আমু রান্নাঘরে।
09 June 2018
ভিন্ন স্বাদের পাঁচটি অণুগল্প—সুধাংশু চক্রবর্ত্তী
।। চুরি-ডাকাতির অণুগল্প ।।
এর পর কী হবে
—ডাকাতি করতে
এসে ধরা পড়লে কী হয় জানিস? ঠাশ-ঠাশ-ঠাশ-ঠাশ...ডিসুম-ডিসুম-ডিসুম-ডিসুম...
—জানবো না কেন?
যা যা জানতাম সে-সবই যে হয়ে চলে আমার সঙ্গে।
—এরপর কী হবে
জানিস? চটাস-চটাস-চটাস...ডিসুম-ডিসুম-ডিসুম-ডিসুম...
—জানবো না কেন? জানি
বলেই তো ঘেন্নায় মরে যাচ্ছি। ডাকাতেরও অধম যে থানার ওই...
—তাহলে বল এরপর
কী কি ঘটতে পারে তোর কপালে? ঠাশ-ঠাশ-ঠাশ...ডিসুম-ডিসুম...
—আর মেরো না গো
বাবুরা। বলছি বলছি। সব বলছি আপনাদের।
—বল–বল। না বলা
ইস্তক...ঠাশ-ঠাশ-ঠাশ...ডিসুম-ডিসুম...
—এগুলোই আবার রিপিট
হবে থানায় গিয়ে জমা হবার পর। তার সঙ্গে...
—তার সঙ্গে কী? ডিসুম-ডিসুম...ঠাশ-ঠাশ...
—ও বাবুরা গো-ও-ও, দারোগাবাবু যে সব ডিম...আমি আর বলতে পারবো না
বাবুরা। জানতে পারলে দারোগাবাবু যে আমাকেও হজম করে দেবেন গো-ও-ও-ও....
26 May 2018
আলোকলতা— স্মৃতি ভদ্র
“মা—ভালবাসা জীবনের যে কোন সময় আসতে পারে।”
বুবুনের এই কথাটা আমার জীবনে মিলে যাবে তা—যেন আমার ভাবনার
অতিরিক্ত ছিল। জীবনের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা পিছনে ফেলে তখন আমি বেশ গুছিয়ে উঠেছি।
স্বনির্ভর আমিই বুবুনের একমাত্র আশ্রয়স্থল। না, আশ্রয় নয় বুবুন আমার জীবনে জড়িয়ে
আছে লতার মতোন। আর আমি ওর আলোকলতা।
আশ্রয়, এই শব্দটি ঠিক কতটা লজ্জাজনক হতে পারে তার উদাহরণ
আমার জীবন। খুব ছোটবেলায় মা মারা যায়। এরপর বাবা বিয়ে করে নতুন মা ঘরে আনলে সেই ঘর
আমাকে পর করে দেয়। আমার জায়গা হয় মামাদের কাছে। জায়গা নয় আশ্রয় দেয়। যা দিয়ে
বিনিময়ে আমার আত্মসম্মানটুকু নিয়ে নিতে চায়। কিন্তু আমার আশ্রয়দাতারা বিনিময় সূত্রেই যে ভুল করছিলো তা মানতে নারাজ ছিল। তারা আমাকে তাদের উচ্ছিষ্ট একটু জায়গা
দিয়েছিলো আশ্রয় হিসেবে যা ছিল স্টোররুমের এক কোণা কিন্তু বিনিময়ে চাইছিলো আমার সব
থেকে মূল্যবান আত্মসম্মান। তাহলে কিভাবে সম্ভব ছিল এই বিনিময়? আর তাই আমার জন্য
তারা বরাদ্দ রাখত কটু কথা আর উপহাস। তাদের সবচেয়ে বেশী উপহাসের স্বীকার হতো আমার
পড়াশোনা করার ইচ্ছাটি। “কুঁজোর শখ হয় সোজা হয়ে দাঁড়াতে!” মামির এই বাক্যটির সাথে
ঘর ছিল যেন আমার সকাল—বিকাল। এই উপহাসকে গা থেকে ঝেরে
ফেলে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যেতাম। মায়ের নামে নানার রেখে যাওয়া শেষ সম্বল টুকু দিয়েই
আমি এগিয়ে যেতে থাকলাম।
22 May 2018
সুনীতি দেবনাথ—মসলিনের সাতকাহন
একটি বহুল প্রচলিত গল্প আছে–মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের দরবারে একদিন তাঁর এক কন্যা এলে আওরঙ্গজেব কন্যাকে স্বল্প বস্ত্র পরে আসার জন্য তিরস্কার করেন। বিস্মিত কন্যা জানান তিনি
আব–ই–রওয়ানের (এক বিশেষ
প্রকারের মসলিন) সাতটি জামা পরে আছেন। বিস্ময়! আরো বিস্ময় চল্লিশ হাত লম্বা আর দুই
হাত চওড়া সূক্ষ্ম এই শ্রেণীর মসলিন কাপড় একটা
আংটির ছিদ্র দিয়ে পার করা যেতো। মাত্র এক পাউন্ড সুতোর দৈর্ঘ্য হতো প্রায় আড়াইশো মাইলা!
৫০ মিটার দীর্ঘ মসলিন কাপড় একটা দেশলাই বাক্সে জায়গা হতো। ১৭৫ গজ মসলিন কাপড় একসঙ্গে
গুটিয়ে নিলে একটি পায়রার ছোট্ট ডিমের সাইজ হতো। বিস্ময়ের ব্যাপার কতটা সূক্ষ্ম বস্ত্র
ছিলো এই পুরোনো কালের মসলিন।
20 May 2018
গুচ্ছ কবিতা- অনুপ চক্রবর্তী
একাকিত্ব
এইতো
ক'দিন আগেও একা ভালো ছিলাম ।
নিঃসঙ্গ
জীবন উচ্ছল ঝলমল।
ছিলো প্রদীপের মতো জ্বলজ্বল।
ছিলো প্রদীপের মতো জ্বলজ্বল।
একাকিত্বের
জীবনে তোমাকে পেয়ে ধন্য ছিলাম।
তুমি সেই একজন; যার সাথে-
তুমি সেই একজন; যার সাথে-
দেহে
নয় আত্মার সম্পর্ক গড়ে ছিলাম।
একদিন হঠাৎ ধূমকেতুর মতো হারিয়ে গেলে..
নীরব আঁধারে আমায় ধোঁকা দিলে।
কান্নার সাগরে ভাসিয়ে নিলে,
চলে গেলে না বলে- না ফেরার দেশে।
একদিন হঠাৎ ধূমকেতুর মতো হারিয়ে গেলে..
নীরব আঁধারে আমায় ধোঁকা দিলে।
কান্নার সাগরে ভাসিয়ে নিলে,
চলে গেলে না বলে- না ফেরার দেশে।
আমি
আবার সেই একাই হয়ে গেলাম,
তবে নয় আগের ন্যায় একা নিঃসঙ্গ।
একাকীত্ব ই জীবনের আলো, হোক না অমাবস্যার ন্যায় কালো।
তবে নয় আগের ন্যায় একা নিঃসঙ্গ।
একাকীত্ব ই জীবনের আলো, হোক না অমাবস্যার ন্যায় কালো।
03 May 2018
গুচ্ছ কবিতা—শফিক আহমেদ
পদচ্ছাপ
যেখানে যেখানে পড়েছিল পদচ্ছাপ
এই পিচ্ছিল ধাঁধাঁময় পথে
আর যত পথিক ছিল আনমনা
পরিচয় লুকিয়ে রাখতো কৌশলে
সেইসব পদচ্ছাপের পরে আরও অনেক মানুষ নিশ্চয়ই এসেছিল
এগিয়ে
মনে রাখার প্রত্যয় নিয়ে আমিও কি হেঁটেছিলাম
সানন্দে?
তবে আজও কেন খুঁজছি সেই সে পথের মানবীকণ্ঠ
আর গেরস্থময় গোটা আঙিনায়
ছড়িয়ে রেখে বিচালি
তার সেই প্রথম তমোহর হাসি!
অজ্ঞাত গ্রাম নয় যদিও অজ্ঞাত
তার ঠিকানারাশি
আমি কী চিনি?সেই দৃশ্যত নিগূঢ় জটিল রহস্যের
ফাগুনভরা দুপুরের
প্রায় তামাদি হয়ে যাওয়া বালিকার
ঘুঙুরের প্রথম তন্দ্রার ঘোরটি?
একগুচ্ছ কবিতা—অনিরুদ্ধ সৌরভ
বর্ণহীন
ধূসর দেয়াল জুড়ে কে আঁকে বর্ণহীন চিত্র?
বুক- পিঠ জাপটে ধরেছে দীঘল কালো রাত
বুকের মাঝ বরাবর ভেদ করে যাচ্ছে অন্ধকার।
পড়ে আছি নিঃস্তব্ধ যেন ডায়নোসারের ফসিল!
জলের স্রোতে ভেসেছে অহঙ্কার—আমিত্ব,
কালের ভাঙনে গেছে সংসার—সুখের বসত ভিটা।
টিনের চুলো, পোড়া মাটির পাতিল, পাতার থালা...
বাঁধের ওপর সংসার।
কাকের চোখের মতো কালো রাত জড়িয়ে ধরে
তৃষ্ণার্ত শরীর, বিষাক্ত চুমু আঁকে পরম মমতায়!
সারা রাত কেটেছে সংশয়ে—আলোহীন,
জীবনের স্বাদ যেন বিষাক্ত, রূপ বর্ণহীন।
গুচ্ছ কবিতা—সেবক বিশ্বাস
কবুতর
রাতভর আমি স্বপ্ন দেখেছি
এক
সাদা পায়রার!
বাজারের এক বন্দী পায়রা কিনেছি
নগদ টাকায় খাব বলে,
সারা পথ কোনো কথা বলেনি সে,
হাতের মধ্যেই কেবল কেঁপে উঠেছে বারবার,
হৃৎপিণ্ডের এক জীবন ধুকধুকানি টের
পেয়েছি আমি হাতের আঙুলে।
দুপুরে যখন গলাটা কেটেছি তার,
কাটা গলার এক অদ্ভুত স্বরে হঠাৎ সে
বলে ওঠে—
চল্লিশ বছর ধরে উড়ছি খুশির ডানায়;
আর আজ বয়স থাকতেই তুমি আমার গলাটা
কেটে ফেললে!
চমকে ছুঁড়ে ফেলি কাটা—কবুতর দু'হাত তফাতে।
মাটিতে চলে বেশ কিছুক্ষণ তার নিদারুণ
দাপাদাপি।
অতঃপর সন্তপ্ত আমি তখনই ঠিক করে ফেলি—
আমি আর কখনো কবুতরের মাংস খাবো না!