অফস্ক্রীনঃ মন্ট্রিলে প্রদর্শনীতে
আপনার ‘দ্যা হোয়াইট বেলুন’ সিনেমাটি দেখেই আমার খুব ভালো লেগেছিলো।
আপনি এই সিনেমার পরিচালনার আগে কিয়েরোস্তামির সাথে কাজ করেছিলেন, তিনি এটির স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন এবং আপনি পরিচালনা করলেন। সিনেমা দেখে আমার কাছে এটা মনে
হয়েছে যে কিয়েরোস্তামির সাথে ভিন্নতার ব্যাপার হচ্ছে আপনি সিনেমায় একটা মেয়েকে মূল
চরিত্রে রেখে পুরো গল্পটিকে তুলে ধরেছেন।আপনার বেশিরভাগ ছবিতে এরকমটা দেখা যায়, নারী বা মেয়ে চরিত্রকে প্রধান ভুমিকায় রেখে এগিয়েছে। আপনার এই বাস্তবতাকে
ধারন করার আঘাত চেতনাতে বেশ ভালোভাবেই নাড়া দিতে পারে। তাই কিয়েরোস্তামির সাথে
আপনার কাজের কথা কিছু যদি শেয়ার করতেন?
কোথায় কি!
▼
25 September 2017
ফারহানা রহমান
বিষণ্ণ অর্কেস্ট্রার সুর
‘চাঁদের উপর
জোনাকির জ্বালে জ্বালে সেদ্ধ হচ্ছে আউসের রাঙা চাল’–
অস্বচ্ছ পুরনো ক্যানভাসে আঁকা নানারঙের মায়াবী স্নান! সাদা মৃত্তিকার
ভিতর ঘুমিয়ে থাকা পুণ্যবতী মায়া গাছগুলো কৃষ্ণপক্ষের জ্যোৎস্নায় গান গায়। নীলনদ
পাড়ে ত্রিপল টাঙ্গিয়ে বসে আছে একটি জিপসি জাদুকর! একশ বছরের নিরবতা ভেঙে বাজিয়ে চলেছে বিষণ্ণ অর্কেস্ট্রার
সুর ; আর দাঁড়িকমা সমেত নিজের আলখেল্লা পরে ডুবে যাচ্ছে এক গোলাপি সভ্যতা...
রিকি দাশ
কুহক সন্ধ্যা
এবার ব্রেকিং নিউজে আসুক কুহক সন্ধ্যা।সেলাই মেশিনের সূঁচ ফোটা অভিমানে অবিরত যে মানববন্ধন চলে,অক্ষত দাঁড়িপাল্লায় যখন ভেসে উঠে সব
সুতোর ধোঁয়াশা;সমুদ্রের এতশত গর্জনে তবুও বলপেনের শরীরে নেমে আসে কুহক সন্ধ্যা...
যে রঙে আমার উঠোনে হয়ে উঠি চন্দ্রিমা।গলগল অবাধ্য
জ্যোৎস্না ঢুকে যায় ঘরে।প্রচন্ড সুখের অসুখে, প্রতিবেশীর মতন আমিও খুলে দিই
কাঁথার উপরে তোলা ভরদুপুরের নকশী ফুল।তবুও সময়ের কার্পেটে ঢেলে দেয়া আলতা রঙে নেমে
আসে কুহক সন্ধ্যা...
জুলিয়ান সিদ্দিকী
যৌবনে ছিলেন মক্ষীরানির
মতো। এখন বিগত যৌবনেও প্রায় তেমনই আছেন। চারপাশে শুভাকাঙ্ক্ষীর অভাব নেই। যেচে পড়ে
উপকার করবার মানুষেরও অভাব নেই। তারপরও এক ধরনের শূন্যতা অথবা অপরাধ-বোধ তাকে
কুরেকুরে খায়। রাতভর ঘুমুতে পারেন না। বিছানায় পড়ে এপাশ ওপাশ করেন শুধু। ওষুধ না
খেলে ভোরের দিকে দু ঘণ্টার ঘুমটাও ঘুমাতে পারেন না। চুল উঠতে উঠতে মাথায় প্রায় টাক
পড়ে যাচ্ছে। পরচুলা না পরে বাইরে বের হবার কথা কল্পনাও করতে পারেন না।
একেক সময় একেক জায়গায় তার নাম হয় ভিন্ন ভিন্ন। সকালে এক নাম তো বিকেলে আরেক
নাম। কেবল দলের মানুষ ছাড়া তার নাম কেউ জানে না। অবশ্য সেটাও নকল। পিতৃদত্ত নামটা
কেবল তিনি নিজেই জানেন। আর তার সঙ্গে সঙ্গে গড়ে তুলেছেন এক বিশাল অপরাধ-চক্র। অবৈধ
আয়ের এক অন্ধকার সাম্রাজ্য। যেখানে তার কথাই শেষ কথা। প্রতিবাদ করবার কেউ নেই। ভুল
করলে শুধরে দেবারও কেউ নেই।
মনোজিৎকুমার দাস
কয়েকদিন থেকে প্রীতম কারো
সাথেই যোগাযোগ রাখছে না। তার বন্ধুবান্ধবরা প্রীতমকে না পেয়ে কেমন যেন একটা শূন্যতার
মাঝে আছে। মৌ বুঝে উঠতে পারে না প্রীতমের নিরুদ্দেশের বিষয়টা। কলেজে আসছে না কয়েকদিন,
ফোনেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। ফোনটা বন্ধ রাখার কারণ কী হতে পারে! মৌ ভেবে পায় না। মৌ বেশ কদিন থেকেই প্রীতমের উড়নচণ্ডী ভাব লক্ষ করে চিন্তায় আছে। সে ভাবে, প্রীতম কি তার
জীবন থেকে হারিয়ে যাবে? কিন্তু সে তার নিজের মনের প্রশ্নের জবাব খুঁজে পায় না।
মৌ এর মনে একটা সন্দেহের কালো মেঘ ধাওয়া করে
ফিরছে। ভ্যালেনটাইন ডে’র বিকেলের কথা মনে পড়লে তার মনটা উদাসী হয়ে উঠে। ওই দিনের অনুষ্ঠানের
আয়োজনে তোড়জোড় কয়েকদিন আগ থেকেই চলছিল। অনুষ্ঠানটা কলেজ অডিটোরিয়ামে করার প্রস্তাব
দিয়েছিল প্রীতম, আর অন্যদিকে কলেজের ছাত্র সংসদের সহ সভাপতি মামুনের ইচ্ছে কলেজের মাঠে
প্যান্ডেল তৈরি করে অনুষ্ঠান করার। ঢাকা শহরের নাম করা ডেকোরেটরের দিয়ে তাদের ফরমায়েশ
অনুযায়ী ভালবাসা দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য কলেজ মাঠে প্যান্ডেল তৈরির কথা মামুন ব্যক্ত
করলে প্রীতম বলল,‘ এতে আমার সায় নেই। খোলামাঠে লোক সামলানো দায় হয়ে যাবে।
প্রীতম ছাত্র সংসদের কালচারাল সেক্রেটারি
হলেও তার কথায় কোন ঘাস জল খায় না। তার প্রস্তার কেউই সমর্থন করে না। নামেমাত্রই সে
কালচার সেক্রেটারি, এ কথা ভেবে প্রীতম কষ্ট পায়। তার ইচ্ছে হয় না কালচারাল অনুষ্ঠানে
যোগদান করতে, কিন্তু সে কালচারাল সেক্রেটারি তাই অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকা সম্ভব না। তার ঘনিষ্ঠ ছেলেমেয়েরা কেন তাকে পাত্তা দেয় না প্রীতম ভেবে পায় না।
আকিব শিকদার
চোখ ত্যাড়া
মহাত্মা
গান্ধী করেছিলেন তেরো বছর বয়সে, শেখ মুজিবকেও
আঠারোতে
বিয়ের পিঁড়িতে
বসতে
হয়। আর রবিঠাকুর...?
সে যুগের সবাই কমবেশি
মুকুল
ধরতে না ধরতেই বয়সী বকুল।
দাদারা
ভারি কাচের চশমায় পড়তেন সংবাদপত্র। কোথাও
ধর্ষণ
নেই, শব্দটা অভিধানে ছিল না নাকি...!
বউকে
কুপিয়ে তিনারা এতটাই
ঘেমে
যেতেন যে ধর্ষণ করার সুযোগই জোটেনি ঘর্মাক্ত কপালে।
20 September 2017
মেঘ অদিতি
আইডেন্টিটি
কোথাও কি চিহ্ন রইল পড়ে? ভরদুপুরে হেঁটে গেল
জটা চুলের মেমসাহেব পাগলি। ঝাঁঝাঁ দুপুরের মুখে ঝামা ঘষে ছেলেটা ঢিল ছুড়লো জলে।
বাড়ি কোথায় রে তোর? এক গাল হাসি- উধার। কিধার?- ও হুসেনপুর, পুরানাদিল্লী.. বাপ-মা, ভাই বোন ওরা কোথায়? দো ভাই থা, ওয়াসিম, বাসিন। বহিনকা নাম, মুন্নী। তা এখানে কী করে এলি? মাথা দুলিয়ে
মৃদু মৃদু হাসে। এ দেশে যে এলি, তোর কি জিপিএস একটিভ ছিল?
এবার হো হো হাসি.. চলে যাবার আগে হাত পাতে, রুপিয়া? ওর তথ্যাদি রেকর্ড রাখেনি অন্তর্জাল।
রাখে না। রাখলে কি ও ফিরে যেত হুসেনপুর, দর্জি বাপের
ভিটেয়?
আমার জিপিএস অন । পথ ভুল হয় না অনেক দিন। আমার জন্য পিক্সেল
পিক্সেল দরজা খুলেছে অন্তর্জাল। দিয়েছে আইডেন্টিটি।
বদলে?
কখন খাই, কখন ঘুমাই, কোথা
থেকে ট্যাক্সি চড়ি সমস্ত তথ্য রেখেছে জমা তার গোপন কুঠুরিতে।
নিজেকে গোটাতে চাই যত, পাখি উড়ে যায়। পাখি, সেই যে যার গায়ে লেগে আছে মেমসাহেব পাগলির বিষাদ.. আর আমি নিজের অস্তিত্ব সঙ্কট বাড়াতে
বাড়াতে আফিমের নেশায় বুঁদ..ফের ঢুকে পড়ছি সেই গোলকধাঁধারই ভেতর।
সৌমিত্র চক্রবর্তী
রঙরসিয়া বিদেশিয়া
কঁহা তেরা দেশ রে…
সময় কে জানতে
হয়, চিনতে হয়। অঙ্ককষা হিসেবী জগতে সময় কে বুঝে নিজেকে ছড়াতেও হয় আবার গুটাতেও হয়।
যারাই এটা পারে না বস্তুবাদী দেওয়া নেওয়ার পরিপাশ তাদের হেনস্থা করে, অবহেলা করে,
পেছনে কুকুর লেলিয়ে দেয়। নিজের খেয়ালে মাইল না গুনে হেঁটে যাওয়া রঙরসিয়া বিদেশিয়া
গতের অনুগত হতে না পেরে পিছিয়ে পড়া মানুষ বলে গণ্য হয় এক সময়। নাম, যশ, টাকা,
পয়সার ভাইরাস আক্রান্ত দুপেয়েরা নিজেদের পিঠ নিজেরাই চাপড়ে অট্টহেসে বিদ্রুপ করে
বাতিলের খাতায় নাম উঠে যাওয়া যাযাবরের।
বনবীথি পাত্র
ঝলসানো
জীবন
অফিস না গেলেও কোথা থেকে যেন ঠিক কাজ এসে যায়। সব সেরে স্নান-খাওয়া
সেরে উঠতে উঠতে দেখা যায় , ঘড়ির কাঁটা দুটো ছাড়িয়ে আড়াইটার দিকে ছুটছে। আজকেও ঠিক তেমনটাই
হলো। অথচ নিজের লেখালিখির কিছু জরুরী কাজ সারতে হবে বলে অফিসটা কামাই করলো। আজ সন্ধ্যেবেলা
টাউনহলে নারী দিবস উপলক্ষ্যে এক বিশাল অনুষ্ঠান হবে। উঠতি লেখক হিসাবে সেখানে আমন্ত্রণ
আছে নবারুণের। কত বড়ো বড়ো কবি-সাহিত্যিক আসবেন সেখানে, সেখানে যাওয়ার আগে একটু প্রস্তুতি
তো লাগবে। একচিমটি ভাজা মশলা মুখে নিয়ে চিবতে চিবতে ঘরের দরজাটা ভেজিয়ে লেখার টেবিলে
এসে বসে নবারুণ। পাশের ঘরে মেয়েটাকে নিয়ে পড়াতে বসেছে ঈশানী। দরজাটা না ভেজিয়ে দিলে
মা-মেয়ের চিৎকারে নবারুণের ভাবনার দফারফা হয়ে যাবে।
সুনীতি দেবনাথ
ভেবেছিলাম
শ্রাবণ জলে আগুন নেবাবো
গ্রীষ্মের
খরার পর শান্ত হবো স্নিগ্ধ হবো
এমন
শুকনো শ্রাবণ দেখিনি কখনো
রিমঝিম
বৃষ্টি কোথায় হারালো জানা নেই
জৈষ্ঠ্য
শ্রাবণে ফারাক কিছুই দেখিনা
আবহ
বিকার চলছে বদলে যাচ্ছে সব
কান্নাভেজা
বৃষ্টির দিন কোথায় যে গেলো
শ্রাবণের
বুক চিরে এখন কেবল অগ্নিবর্ষণ
গেলো
বোশেখে আগুন ঝরেনি সারাটা মাস
ঝরেছে
কেবল ঝমাঝম বৃষ্টি দিনরাত রাতদিন
বদলাচ্ছে
সব বদলাবে সব ঋতুর সুবিন্যাসও
আমরাও
বদলে গেছি বদলে যাচ্ছি অবিরাম
আজ
শ্রাবণে কোমল মধুর প্রথম কদম ফুল
শুকিয়ে
ঝরে নাগকেশরের রেণু উড়ে পুড়ে যায়
মাঠের
সবুজ হলুদ মেখে করুণ চোখে চায়
অরুণিমা মন্ডল দাস
বৃষ্টি তুমি সংসারী হও
বৃষ্টি তুমি সংসারী হও-
শ্রাবনের
পেখমে রঙিন দেহ মেলে ধরো না
আলোর
ছটায় পাগল হয়ে যাই
যৌবনের জোনাকি
পোকাগুলো উপচে পড়ছে আকাশ থেকে
ব্যথাগুলো রঞ্জনদাদার
বিরহের ছেঁড়া অবহেলিত চিঠি-
ফুলে উঠা দুধের সর
বিদগ্ধ যন্ত্রণায় মানুষ হতে চাইছে
গাভীর বোঁটা থেকে পাওয়া
এক কৃত্রিম আ্যলিয়ান
বৃষ্টি
তুমি সংসারী হও
শ্রাবণী সিংহ
প্রেমে-অপ্রেমে
রাধা
দিনের ঠিকানা কেউ রাত্রি দেয়?
অশ্রুপাতের শব্দকেও কবিতা ভাববে কেন কেউ?
অশ্রুপাতের শব্দকেও কবিতা ভাববে কেন কেউ?
অনেকদিনের স্পর্শ ভেঙ্গে দুপুর হয়,
সে সম্পর্ককে বাঁধে অন্তর্গত শেকলে ও মুক্তিতে,
সে সম্পর্ককে বাঁধে অন্তর্গত শেকলে ও মুক্তিতে,
আজব কুদরতি আলো জ্বলে
পিদিমে এক তারা,
আমার আর একলা থাকা হয় না ...
পিদিমে এক তারা,
আমার আর একলা থাকা হয় না ...
শুধু কলসের আত্মদহনটাই নদীর ঘাটে
উহ্য পড়ে থাকে।
মুহাম্মাদ সানি
বেশ কিছুক্ষণ ধরেই শুক্রাবাদ পার্কে বসে আছি! নাদিয়া আসতে বলেছে।
জরুরী তলব। কিছু একটা বলবে হয়তো! ফোনে বললো, 'খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা, সামনাসামনি
বলতে হবে!'
কিছুটা বুঝতে পারছি, সে কী বলতে চায়। তাই আমি একটু আগেভাগেই এসে বসে আছি!
অবশ্য নাদিয়া ডাকলে আমিই আগে আসি। কারন আপাতত আমার কোনো কাজবাজ নেই! আমি আগে আসি
আর নাদিয়া পরে এসে দেরী করার কারন বর্ণনা করে। যদিও আমি কখনোই কোনো কারন জানতে চাই
না!
তিনমাস আগে এক শপিংমলে নাদিয়ার সাথে আমার সিনেমেটিক পরিচয় হয়েছে!
আসলে পরিচয়ের পর থেকে সবকিছু যেন সিনেমেটিক ভাবেই চলছে! প্রথমে শপিংমলে অপ্রস্তুত
ভাবে হাঁটার সময় নাদিয়ার সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে গেছিলাম! প্রচুর মানুষ ছিলো সেখানে,
ভরা মজলিসে ওভাবে পড়ে যাওয়া আসলেই লজ্জাজনক ছিলো! আমারচে' নাদিয়ার দোষটাই বেশি
ছিলো, তাই হয়তো ও সে নিজেও অনেক লজ্জা পেয়েছিলো! এবং সেদিন তার লজ্জারাঙ্গা-মুখ
সত্যিই দেখার মত ছিলো!