কোথায় কি!

25 May 2017

মামুন ম. আজিজ





সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে রাস্তায় এক পা দেয়া মাত্রই মনে হলো ওমন একটা মিথ্যা কথা শিলাকে না বললেও হতোশিলা আমার স্ত্রীমিথ্যা কথা গাছের শিঁকড়ের মতো, ভেজা মাটি পেলেই শাখা প্রশাখা বাড়াতে থাকবেঅপরিকল্পিত মিথ্যা নিয়ে শেকড়ের শাখা গজানো বেশিক্ষণ ঠেকানো যাবে নাকল দিয়েই দিলামদিয়েই মনে হলো আরও একটা ভুল হলোমাত্র সকাল ৮টা, ছুটির দিন, ওর ও ক্লাশ নিতে যেতে হবে নাআমারও অফিস নেইস্বভাবতই আমি সিঁড়ি দিয়ে চারতলা হতে নামতে নামতে ও আবার ঘুমিয়ে পড়তেই পারেসেই ঘুম ঘুম অবস্থায় যখন শুনালাম, শিলা তোমাকে আসলে মিথ্যে বলে এসেছি, তুমি তো জানো আমার অনিদ্রা রোগটা বেড়েছেস্বপ্নের পরিমাণও বাড়ছেতোমাকে না বলেই একজন সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে গিয়েছিলামতারই চিকিৎসার অংশ হিসেবে এই সাত সকালে ছুটির দিন বেড়িয়ে পড়াআমার মোবাইল বন্ধ থাকবেতুমি কিন্তু চিন্তা করো না

রাবেয়া রাহীম





আহসান সাহেবের বয়স মধ্য পঞ্চাশ। প্রথম স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পর বেশ কয়েক বছর একাই ছিলেন তিনি। ঠিক একা বলা যায় না। সঙ্গিনীর অভাব তাঁর কখনো ছিলনা। তবে তাঁদের কাউকে নিয়ে নিশ্চিন্তে সংসার করবেন তেমন খুঁজে পাননি। ক্ষণিকের সঙ্গিনীদের সবাই তাঁর চেয়ে তাঁর টাকাকেই বেশী গুরুত্ব দিয়েছে। বয়স বাড়ছে তার। শরীরটাও বেশী ভাল যাচ্ছেনা। রক্তে সুগার বেড়েছে সেই সাথে ব্লাড প্রেশার মাথার পিছনের রগটিকে দপদপিয়ে রাখে। তার একজন সার্বক্ষণিক সঙ্গীর দরকার। কাছের পরিচিত সবাইকেই তিনি বলে রেখেছেন পছন্দমত মেয়ের কথা। সেই সুত্র ধরেই বেশ কিছু মেয়ের ছবি তাঁর কাছে পাঠানো হয়েছে। ১৫টি ছবির মধ্যে হাল্কা পাতলা গড়নের বেশ সুশ্রী মায়াবতী চেহারার মেয়েটির ছবির দিকে তিনি অপলক চেয়ে রয়েছেন। ছবির সাথে মেয়েটির পুরো বায়ডাটাও আছে। নাম মাধবী, বয়স- ৩০। মাধবীর ছবির দিকে চেয়ে তাঁর ইচ্ছে করছে এখনি বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেলতে। এই বয়সেও শরীরে বেশ টানটান উত্তেজনা অনুভব করছেন তিনি। মাধবীর সহজ সরল মুখশ্রী ভীষণভাবে তাঁকে আন্দোলিত করে। কনকনে ঠাণ্ডা পৌষের রাত। বিয়ের জন্য উত্তম সময়। বুকের ভেতর নতুন বউয়ের সুঘ্রাণ মাখা তরতাজা শরীরের ওম। আহ! ভাবতেই আহসান সাহেবের প্রৌঢ় শরীর উষ্ণ হয়ে ওঠে।

সুলতানা রহমান





1
পিপীলিকা হঠাৎ বিষণ্ন হয়ে গেলো!
হঠাৎই!
আমার ভীষণ হাসি পায়!
তুমি বিষন্ন? বিষন্ন পিপীলিকা?

পায়রাটা উড়ছিলো
তার দীর্ঘ ছায়ায়
পুড়ে পুড়ে যাচ্ছিল
পিপীলিকার নরম ডানা।

বিন্দুর মতো চোখ তুলে
বার বার বলে যাচ্ছিলো
এবার তুমি এসো, এসো তুমি
শুষে নাও সব সুখ, সঅঅব
আমাকে দাও পালকের বিষন্নতা!

আর আমার ভীষণ হাসি পেয়ে গেলো!

জাকিয়া জেসমিন যূথী




ছুনা হে ছুনা হে, ইয়ে রস্মে বাফা , যো দিল পে নেশা হে, যো পেহেলি দাফা হেগুন গুন করতে করতে পথে নামলামবাসার গেট থেকে মাথা বের করতেই রিকশা নজরে এলোরিকশা ভাড়া পাঁচ টাকা কমিয়ে ঝটপট উঠে বসতেই সে বলে, “পিছন দিয়া যাওয়া যাইবো?”
বাহ রে! পিছন দিয়া কেম্নে যাবেন? চিনেন না তাতেই আবার ভাড়া বেশি চানসামনে দিয়ে যানবলে বেশ একটা মিষ্টি ঝাড়ি দিলাম
এরপরে সে আর কথা বাড়ালো নাকিন্তু, যতই চাইছি এটা এখন পঙ্খিরাজ ঘোড়ার বেগে ছুটুককিন্তু কিসের কী? মনে হচ্ছে ঠেলাগাড়িতে উঠেছি

জাহিদ হোসেন ফাহিম





কাগজের নৌকা
বুকের গভীরে নদী নিয়ে কতটা ভেসে যাওয়া যায়?
কিংবা কতটা স্থীর হওয়া যায় ঝড়ের উপকূলে?
এখন রোদের জানালায় কেউ দাঁড়ালেই
কেমন ছায়ায় গাঢ় হয় জীবনের স্রোত!
এ শুধুই ভেসে যাওয়া নয়;
এ যেন চলে যাওয়া বহুদূর-
নিজেকে ছেড়ে,
নিজেদের ছেড়ে,
ছিড়ে আত্মার বন্ধন...
ভেসে থাকে শুধু মৃত স্বপ্নেরা 
কাগজের নৌকা হয়ে বুকের গহীন নদী জলে

আসিফ ইকবাল





স্মৃতি
ঠাণ্ডা সবুজ দীঘি
শরতের বিষণ্ণ বৃষ্টি ঝরে টুপটাপ
রাঙ্গা পায়ের ঝাপটা

রাঙ্গা পায়ের ঝাপটা
বিষণ্ণ সুখের বৈকালিক আলোড়ন
ড্রয়ারে বিস্মৃত নূপুর

ড্রয়ারে বিস্মৃত নূপুর
সোনালী বিকেলের নির্জন নিক্বণ
তোমার আলতারাঙা পা

তোমার আলতারাঙা পা
বিস্তর ঝরা পাতা অন্ধকার ঘাসে
নগ্ন, নমিত সময়


লুৎফুর রহমান পাশা


চার বালিকায় সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নাকফুল বানিয়েছেনা এটি নাকে পড়ার নাকফুল নয়কবিতার নাকফুলমলাট আকারে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে২০১৭ সালের অমর একুশে বইমেলায় কবিতা প্রেমীদের পড়ার জন্যবইট প্রকাশ করেছে কুঁড়েঘর প্রকাশনীর কর্ণধার প্রকৌশলী শামিম রহমান আবিরচমত্কার প্রচ্ছদ একেঁছে হিমেল হকবইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে কিছু বলা যেতে পারেনান্দিকতায় নারী বহু আগেই পুরুষকে ছাড়িয়ে গেছে একথায় কোন সন্দেহ নেইযারা রাঁধে তারা শুধু চুলই বাঁধেনা আজকাল চমৎকার সব কবিতা লিখে এই বইটি তার প্রমাণপ্রচ্ছদের চার কবির বিপরীতে চারটি মুখায়বয়ব আছে বলে ধরে নিতে পারিকিন্তু বড় ছোট কেন করা হলো সেটি একটি প্রশ্ন থাকেহতে পারে এখানে চারটি মুখোশ বলতে চার কবি নাও হতে পারে তাহলে ছোট বড় হওয়ার ঝামেলা চুকে যায়
কাব্যগ্রন্থের দুজনের লেখার সাথে আমি আগে থেকেই পরিচিতজাকিয়া জেসমিন যূথী ও নুশরাত জাহান আজমীবাকী দুজন অজুফা আখতার এবং ইশরাত ইরা এই দুজনের লেখার সাথে পরিচিত হয়ে হতাশ হইনিকোন পাঠকরাও হবেন বলে মনে হয়নাকবিতা লেখা অনেক কঠিন একটি কাজএকজন গল্পকারকে বলতে শুনেছি কয়েক পৃষ্ঠার গল্প লেখার চাইতে তিন লাইনের কবিতা লেখা অনেক কঠিনআর যারা গল্প লিখার ভয়ে কবিতা লিখেন তারা বেশীর ভাগই ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং নিজেরাই সেই ফাঁকিতে পড়েনকবিতা লিখতে গেলে শব্দ ভান্ডার সমৃদ্ধ থাকতে হয় ফলে প্রচুর পড়াশোনার কোন বিকল্প নেই

মামুন আব্দুল্লাহ





রাতে ঘুমাক বা না ঘুমাক, সকালে ঘুমাতে হবেইহলের অন্য সবার মতই অভ্যাসটা হয়ে গেছে আরমানেরসকাল নয়টা, তখনো ঘুমাচ্ছিল ওঅবশ্য ওর ঘুম খুব পাতলাঘুমালে কান একটা যেন সব সময় সজাগ থাকে ওরআশেপাশে মৃদু আর হালকা কোন শব্দ হলেই ওর ঘুমটা চলে যায়তবে সময়টা আসলেও আরমানের ঘুমানোর সময়রুমে আর কেউ নাইঅনুজ গেছে বাড়িতে হঠাৎ একটা কাজ পড়ে যাওয়ায়রুপাই পুরান ঢাকায় ওর মামার বাসায় গেছেরোকনের পরীক্ষা শেষ, সেই সুবাদে বাড়ি থেকে ঘুরে আসার একটা সুযোগ হাতছাড়া করেনি সেআর দুদিন ধরে বাবুর কোন পাত্তা নাইপরে জানা গেল তাড়াহুড়া করে মৌলভি বাজারে চলে গেছে ওআসবে কয়েক দিন বাদেতাই রুমে একাই ঘুমিয়েছিলো আরমান 

শাকিল রনী





ছোটবেলায় কতো আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজিয়ে আমাদের ভাত খাওয়ানো হতোছোটবেলা থেকেই আমি ছিলাম বউ পাগলমা প্লেটে ছোট ছোট বলের মতো করে ভাত গুলোকে রেখে বলতো, "দেখ কত্তো গুলা বউসব গুলা বউ খাইতে হবেনা খাইলে বউ কষ্ট পাবেকান্না করবে" আমি বেঁচে থাকতে কি বউকে কান্না করতে দিতে পারি গপাগপ খেয়ে ফেলতাম বউ সাজানো ভাত

নুসরাত জাহান আজমী




রফিকের পায়ে চকচকে এক জোড়া জুতা। সে জুতো পায়ে দিয়ে হাঁটছে না। চুপচাপ এক জায়গায় বসে আছে। এখান থেকে বাবাকে দেখা যায়। বাবা এক মনে কাজ করছে। রফিক আবার নিজের জুতো জোড়া দেখলো। তার নিজের পায়ে এমন চকচকে এক জোড়া জুতো! যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। রফিক শুধু বাবাকেই দেখছেনা, আশেপাশের সবার পায়ের দিকে তাকাচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষের পায়ে জুতো। সম্ভবত অফিসে যাচ্ছে। যাবার আগে জুতো জোড়া আরেকটু পরিষ্কার করে নিচ্ছে। আর সে কারনেই বাবা এমন এক মনে কাজ করে যাচ্ছে। 

দেবদত্তা ব্যানার্জী




আজ তিনদিন আমি এই বেসরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তিআমার পাশের বেডে একজন বৃদ্ধা ভর্তি রয়েছেন আমার আগের থেকেইদুবেলা দুটি আয়া ওনার দেখাশোনা করছে, বাড়ির কাউকে এই তিন দিনে আসতে দেখি নি একবারওওনার কি হয়েছে তাও জানি নানানারকম পরীক্ষা রোজ হচ্ছেডাক্তাররা আসছেন রাউন্ড দিতেওনাকে যখনি জিজ্ঞেস করেন উনি কেমন আছেন? কি অবস্থা?উনি নানা রকম সমস্যার কথা বলতে থাকেন ওনাকে কিছু পরীক্ষার জন্য নিয়ে গেছিল দেখে ওনার আয়াকে জিজ্ঞেস করলাম যে ওনার কি হয়েছে, বাড়ির লোক কোথায়

দীপক চন্দ্র মজুমদার




অজানা আকাশে উড়িয়েছি মোর রথ,
কূলের কিনারা পাব কি?
জানিনা কেউ!
সবুজ-এর হালকা বাতাসে উড়ে যায় মন
কোন অলংকার পথখানি ধরে,
পথ-জানালা নেই আঁধার নেমে আসে
চোখের আলোয় শুধু স্বপ্নের ঢেউ,
চারিদিকে মোর চোখে নিরজন
উদাসী সুবাসে হৃদয় উঠেছে ভরে।।

24 May 2017

শ্যামলী চ্যাটার্জী






আনন্দরাগ
চেতনা বিতানে অহরহ আমি
তব প্রেম নাম রচি,
তুমিই আমার কেশপাশ মাঝে
শুভ্র কুমুদ সূচি।
পরাণের সখা দেবতা আমার
সাহিত্য রসধারা,
তোমারি মাঝারে সৃষ্টি সুখেতে
আমি যে আত্মহারা-
কবির কবি তুমি যে আমার
হে মহা-মহিম তুমি রূপকার
তুমিই স্রষ্টা, তুমিই সৃষ্টি
দিবালোক তুমি; তুমিই আঁধার।
আনন্দ মাঝে যেমন বিরাজো
বিষাদ আঁধারে তব পদরজ
আনন্দলোকে মঙ্গল আলোকে
সত্য সুন্দর তুমিই বিরাজো।


21 May 2017

লাবণ্য প্রভা






০১
পঙ্খীরাজ ঘোড়ার ডানা ভেঙে গেছে। মুখ থুবড়ে পড়ে আছে রাক্ষসপুরীর সিংহদুয়ারের সামনে। আমার মাথার ওপর কাঁটা, আর পায়ের নিচেও কাঁটার গালিচা।কাঁটা মাথায় নিয়ে পায়ে দলে পথ অতিক্রম করি; আমি অতিক্রম করি পাপ, পরমাঙ্ক...
রাক্ষসপুরীর চারদিকে জলের পরিখা। ব্যাঙমা-ব্যাঙমী বলেছিল, রাতের কোনো এক প্রহরে পরিখার জল শুকিয়ে যায়। আমি ও আমার ডানা ভাঙা পঙ্খীরাজ অপেক্ষা করি, যেন জল সরে যায়। নগ্ন পায়ে ওই পরিখা পার হতে হবে আমায়।
হায়!
মা আমার রাক্ষসপুরীর অলিন্দে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এক চন্দ্র
দুই চন্দ্র
তিন চন্দ্র
সহস্র চন্দ্র বৎসর পার হয়ে যায় ... আমিও  বেড়ে ওঠি রাক্ষসের উদরে। কেবলই বেড়ে উঠি,পালাবার পথ খুঁজে পাই না।
কোনো রাজপুত্র আসে না আমার জন্য। ব্যাঙমা-ব্যাঙমী সারারাত অলৌকিক বৃক্ষের ডালে বসে কাঁদে। তাদের ক্রন্দনে বৃক্ষের পাতা ঝড়ে পড়ে। ঝরা পাতারা সর্প হয়ে বাগানে নৃত্য করে। আমি রাক্ষসের উদরে বসে থাকি, দাঁড়িয়ে থাকি...

নাজমুন নাহার





ওইজা বোর্ড
ওইজা বোর্ড থেকে নেমে আসেন রাণী ক্লিওপেট্রা-চোখে কসমিক দৃশ্য-
যে ভান্তের দল বুকের বাঁদিকে ব্যথা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো সহস্রকাল অবধি-
আজ তাদের গায়ে রক্তের ঘ্রাণ-ঠোঁটে তৃষ্ণা-

গোর হেঁটে আসে নীলাম্বরীর বুকের মধ্যরেখায়-
লেগে গেছে টান শিনার গায়ে-

মধ্যরাতে নিশিন্দার ঘুম
ব্যালে ড্যান্সারের পায়ে পৃথিবী থেমে গেছে।


শঙ্খসাথি পাল





পাহাড়ের গায়ে বর্ষা নেমেছে। অথচ সেই অপার্থিব সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য কেউ জেগে নেই। ছোট্ট এই গ্রামে সামান্য কিছু মানুষের বাস ।সারাদিন ধাপ চাষ নয়তো পাশের গ্রামের চা-বাগানে কাজ করে সন্ধ্যে নামতেই কেমন যেন ঘুমিয়ে পড়ে এলাকাটাই। পূবালী মিত্র-এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের নতুন সাব ইনস্পেক্টর। টিমটিমে আলো জ্বলছে তার থানা সংলগ্ন কোয়ার্টারে ।সামনে খোলা বাইশ নাম্বার কয়েদী বিপুলের কেস হিস্ট্রির ফাইল। কালই কলকাতায় পাঠানো হবে তাকে। আজ অবধি তাকে কোনো কথা বলতে শোনে নি পূবালী। কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই, অথচ অপরাধ গুরুতর। নিজের বন্ধুকে গলার নলি কেটে খুন। কোনো মোটিভ নেই খুনের। 

সুনীতি দেবনাথ




কবি সমকালে বাঁচেন, অতীতের মাটিতে শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে বর্তমানকে পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করেন, ভবিষ্যতের রূপরেখা বর্তমানেই এঁকে ফেলেন বেশ স্পষ্ট করে। আর এই জন্যই কবিকে বলা হয় বুঝি ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা, দার্শনিক। ছাপোষা সাধারণ মানুষ নিত্য নৈমিত্তিক টানাপোড়েন যেখানে হিমসিম খেয়ে নাকানিচুবানি খেতে খেতে জীবনটা নিয়ে সারাকাল হাহুতাশ করতে করতে একদিন টুপ করে মরে যায়, কবির ক্ষেত্রে সেটা হয় না। গায়েগতরে গড়পড়তা দশজনের মত হয়ে প্রত্যক্ষগোচর হলেও কবি সাহিত্যিকেরা মানসিক শক্তি আর বিচারে অতিমানবিক। কথাগুলো বলা হলো কবি হুমায়ুন আজাদ সম্পর্কে আলোচনার মুখবন্ধ হিসেবে। কবি আজাদ নিঃসন্দেহে অতিমানবিক আখ্যায় আখ্যায়িত হতে পারেন। তাঁর জীবনের সুবিস্তৃত বিষয়-আশয়, ভাবনা- চিন্তা, সমাজ- রাষ্ট্র-জীবন সম্পর্কে তাঁর সুচিন্তিত অভিমত আলোচনা সংক্ষিপ্ত পরিসরে অবশ্যই অসম্ভব। তাই একটা নির্দিষ্ট পরিসরে বর্তমান নিবন্ধে আলোচনা করা হবে।

দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম




.
'I have not ever seen my father’s grave.'
- Audre Lorde
কবরের পাশে দাঁড়ালে জীবনের ওপার সন্নিকট মনে হয়।
রোজ করে কদিন দাঁড়াতাম।
সমাজ সংস্কার মেনে -
যেমন করে পিতৃহারা কিশোরকে সন্ধ্যা সাঁজে বেরোতে নেই।
তেমন করে দাঁড়াতে গিয়ে মনে হত -
অন্ধকার কে ভয় পাওয়া বাবা কি আঁতকে উঠছেন এই বেলায়
সূর্য রশ্মি যাওয়ার পথ চিরকালীন বন্ধ দেখে -
বড্ড দুশ্চিন্তা নিয়ে উঠে বসেছেন কি তার মাদুলিতে
তার পর উপলক্ষ সাঁজে, মৃত্যু দিন ও তো এক উপলক্ষ
দিনক্ষণ ধরে স্মরণ করবা
প্রতিবার নতুন দূর্বাঘাসে সবুজ ভূমির শরীরে হঠাৎ বেনামী ফুল
দেখে মনে হত এর শিকড় বাবার হাতে, চমকে দেবার জন্য
নেড়ে দিচ্ছেন এই পড়ন্ত বেলায়, ওই সন্ধ্যা আসে ধীর!
তারপর জীবনের বিবিধ পর্যায় -
মৃত্যু যখন ঘেরাটোপের ভেতর দেখছে অবিরাম আমাকে
চিরকালীন উপলব্ধি ফিরে আসে বারংবার -
এই যে চলে যাওয়া, অনিবার্য পথ ধরে অনিঃশেষ গন্তব্যে
বাবা যেন সন্তানকে শিখিয়ে দিচ্ছেন দৌড়ে যাবার কৌশল
আর নিজে ছুটে চলছেন সম্মুখ, দৃষ্টান্তে।
বাবা যেন খেলাচ্ছলে হঠাৎ পেরিয়ে গেছেন সীমানা, আর
ওপার থেকে বলছেন, দৌড়ে আয়, এভাবেই আসতে হয়।