.১.
লোকে আমাকে ঠান্ডা মেজাজের মানুষ
হিসেবে জানে। তবে সকালে অফিসে যাওয়ার সময় বাসে উঠতে না পেরে, ভিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে,
জ্যামে কাবু হয়ে আমার স্ক্রু-গুলো যখন খুলতে শুরু করে, তখন আমি মনেমনে বকা দেই।
জ্যাম কে বকা দেই, ঢাকায় এত লোক কেন- সে জন্য বকা দেই (বকাটা যে ঠিক কাকে দেই সেটা
অবশ্য জানি না), জ্যামে বসে তা’দেয়ার সময় নিজের কপালকেও বকা দেই। সব বকাই অবশ্য
মনে মনে দেই। এই পোড়া শহরে একটা বাস পাওয়া-না পাওয়ার উপরে যখন চাকরির থাকা- না
থাকা নির্ভর করে, তখন একটা প্রাইভেট কম্পানির এক্সিকিউটিভের মনেমনে বকা দেয়া-
মনে হয় খুব একটা দোষের কিছু না!
আজও আমি বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি।
বাসের তো আর অভাব নেই। কিন্তু বাসের চাকার উপরেও দাঁড়ানোর জায়গা নেই; ভেতরের কথা
তো বাদই দিলাম। বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে কঠিন একটা বকা দিব কিনা ভাবছিলাম... আর ঠিক
তখনই একটা বাস দেখতে পেলাম; ঠিক মতো ‘ফাইট’ দিতে পারলে ওটার দরজায় ঝোলার একটা
চান্স হয়ত পেয়ে যাব। বাসটা কাছাকাছি আসতেই বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়ানো মানুষগুলোর মধ্যে
হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেল। লাথি মেরে, কণি মেরে, গুতো মেরে যে যেভাবে পারছে, সেভাবে
সবাইকে টপকে বাসে ওঠার চেষ্টা করছে। মনে হচ্ছে যেন, এটা কোন বাস না, স্বর্গে
যাওয়ার প্লেন। এই প্লেনে যেই উঠবে, সেই বিনা হিসেবে স্বর্গে চলে যাবে! যা হোক,
অন্য সবার মতো আমিও জান প্রাণ দিয়ে বাসে ওঠার চেষ্টা করছিলাম; অফিসে তো যেতে হবে!
আমি অনেক চেষ্টা করে কোনমতে আমার ডান পায়ের আঙ্গুলের দিকের একটু অংশ বাসের দরজার
পাদানিতে রেখেছি, কিন্তু মানুষের চাপ এবং ক্রমবর্ধমান বাসের গতির জন্য আমি বাসের
দরজার হ্যান্ডেলটা ধরতে পারলাম না। আরেকটা পা মাটিতে ঘষা খাচ্ছে... আমি তারপরেও
হ্যান্ডেল টা ধরার চেষ্টা করলাম; কিন্তু ব্যার্থ হলাম। এর ফল হলো খুব মারাত্মক!
আমি চলন্ত বাস থেকে রাস্তায় পড়ে গেলাম, তবে বাসের গতি কম থাকায় আমি আমার ব্যালেন্স
ধরে রাখলাম। তাই মাটিতে গড়াগড়ি না খেয়ে মোটামুটি দৌড়ের মতো করে আমি সামনে এগিয়ে
গেলাম। কয়েক ফুট সামনে যেয়ে আমি একজন মেয়ের সাথে ধাক্কা খেলাম এবং মেয়েটিকে নিয়ে
মাটিতে পড়ে গেলাম, মেয়েটি আমার নিচে চাপা পরে রইল... ঘটনাটা ঘটল ঠিক বাংলা সিনেমার
মতো। তবে এটা বাংলা সিনেমা হলে এতক্ষণে আমাদের প্রেম হয়ে যেত, শুধু তাই না!
বৃষ্টিতে নাচা নাচি করে হয়ত এতক্ষণে আমরা----
থাক আর না বলি!