কোথায় কি!
▼
11 May 2019
সিন্ধু সোম—আবর্তেসু
শহুরে পাট
ভেঙে ম্যানহোলের ঢাকনার মতোই খানিকটা হাঁ দিয়ে মুখের ওপর দুম করে বন্ধ হয়ে গেল
গৃহশিক্ষকের গৃহ দরজা। ওই দরজার ভেতর টুকু ওনার এক্তিয়ার। বাইরেটা ছাত্র ছাত্র
নিজেরাই সামলে আসছে। বুনো রামনাথের পদবী এনারা যথেষ্ট সিরিয়াসলি নিয়েছেন। বেড়া
ভাঙা বকুলের ছায়াস্তব্ধ সেই পাঁচিল ঘেঁসে অজগরের মতো শুয়ে থাকা জমাট চাপ চাপ
উদাসীনতার গলিতে সাইকেল নিয়ে সদ্য বেরিয়ে এল দুটি ছেলে। সতেরো আঠেরো বছরের খর যৌবন
মুখের হালকা লোমে তুলি দিয়েছে। একজনের মুখটা একটু ভাঙা তোপসানো চওড়া, অন্য জনের
নিটোল গোল। বড় বড় আয়ত চোখে প্রথম যৌনতা ও শিকড়ের সরলতার যুগপৎ ছাপ একটা আলো আঁধারি
ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে। ব্যভিচারী ভাবের মতোই তার সঙ্গে মিশেল ধরিয়েছে কানপাতা
দায়িত্ব, নেশাতুর স্বপ্ন, গোপন উৎকণ্ঠা আর অসবর্ণ বিদ্রোহ। মুখে ক্লান্তির ছাপ
স্পষ্ট পাখাটানা বকের মতোই ঝিমিয়ে আছে। মফস্বলের অঙ্কশায়িনী গ্রাম তার নিদ্রার
শমন এখনও জারি রেখেছে ধুঁকে ধুঁকে। সেই আলোকিত অভ্যাসের মধ্যে হঠাৎ ঢুকে পড়া
চামচিকের মতোই গতির প্রয়োজন গোঁৎ খায় মাঝে মধ্যেই। যে সময়ের কথা গোকুলপাসরী গ্রাম
তখন আড়মোড়া ভাঙ্গছে শহরের কণ্ঠলগ্ন হয়ে!
14 March 2019
24 February 2019
গুচ্ছ কবিতা—স্নিগ্ধা বাউল
নিত্যপুরাণ
কিছু প্রসন্নরোদ বারান্দা ছুঁয়ে গেছে
রোদকে ভেবে
রাখি আটলান্টিক রিজ
স্কাইভিউ
বিলবোর্ডের ছবিগুলো নেমে আসে
কুয়াশায় গলা
ডুবিয়ে রাখি ক্যাপ্টেনের নামে—
শান্তসমুদ্র
রুখে দাঁড়ায় দিকভ্রান্ত আমার হয়ে
উত্তালের
মতো এমন তীব্র কটাক্ষ যায় রয়ে
শখের রোদ দূরে
সরে যায় প্রহর প্রহর মেপে;
নাবিক, —তীরের
কলকাঠি বাতাসে কাঁপে দেখো
শহরের
গম্বুজ নামে তীক্ষ্ণ—সুচের
মতো বুকে
নোনতা
বাতাসের হাহাকার নামখানি তার;
কেসে আয়েগা
ইতনি হিম্মত, দেখো—
রোদ সরে
যায়, ছায়ারাগ নামে ক্লান্ত লাগে নিরেট
এক সমুদ্রে
দুইজন থাকি দুই সমুদ্র দূরে।
ফুলের তাঁতে—শুভ্র সরকার
০১
এবং ফুলের অশেষ থেকে
জীবন নেমে যাচ্ছে উদ্বেগের গহীন। যেখানে পল্লবের ভীড়ে পিঁপড়ার মৃদু যাতায়াতে— পথ পৃথিবীর
মুখে বসন্তের দাগ। ততোদিনে আমাদের স্মৃতিতে শৈত্যপ্রবাহ— তাড়া খাওয়া হরিণের দৌঁড় সরণিতে
সমস্ত পরাজিত জীবন।
আধখাওয়া পেয়ারায় কীটের
খাদ্য দৃশ্য আমরা তবুও মেনে নিতে পারি না।
অথচ ফুলের তাঁতে বুনে
চলেছি শিশুর ভাষা—
04 February 2019
শাহিন চাষী—একগুচ্ছ কবিতা
নিঃসঙ্গ বেহাগ
সূর্যটা পাটে গেল। পাখিরা নীড়ে এলো। আযান হলো। শঙ্খ বাজলো। পথ ঝিমালো। নিশাচর
ডাকলো। শিশির ঝরলো। কাছে এলো--অন্ধকার!
জোনাকি জাগলো। ওরা উড়লো। জানালায় এলো। ঘরে ঢুকলো। গায়ে বসলো। ফিরেও গেলো।
চিহ্ন রইলো--শুন্যতার, মৌনতার!
তারা ফুটলো। চাঁদ তাকালো। জ্যোৎস্না নাচলো। শিউলি হাসলো। নদী গাইলো। তারা
নিভলো। চাঁদ ডুবলো। বুকে জমলো--হাহাকার!
ভোর হলো। বায়ু বইলো। পাখি গাইলো। রোদ জ্বললো। পাখি উড়লো। পড়ে থাকলো--ব্যথাভার!
সজাগ অনুভব। ঘুমহীন চোখ। লোমকূপ ঘিরে--নীল কষ্ট; মৌনতা; শুন্যতা; অন্ধকার;
ব্যথাভার; হাহাকার!
ফারিয়া তাবাসসুম — মনিমার বটবৃক্ষ
১.
আজকাল দূর গ্রামের কোন কুটির হোক বা প্রাচীন কোন
রাজা বাদশাহদের মহল এর ঘর সবটাতেই রয়েছে ব্যক্তির ব্যক্তিতের ছাপ। সেটা চালের গুড়ো
পানিতে মিশিয়ে কুটির এর গায়ে আলপনা আঁকা হোক বা নকশা কেটে মহলের দেওয়াল এর সৌন্দর্য্য
সৃষ্টি করা হোক। সবটাতেই থাকে ব্যক্তির নিজস্ব মনোজগৎ এর প্রতিফলন বা সুন্দরতার দিক
উঠে আসে। এই সময়ে ডিজাইনে ব্যপারে এতো কষ্ট করতে হয় না, হাতে মোটা অংকের কাগজের নোট
আর ইন্টেরিয়র ডিজাইনার থাকলেই হল। এমনি একটা সুন্দর ঘর নিয়েই আজকের গল্প।
রাত ক’টা বাজে মনে নেই। যে ঘরটায় আমি বসে আছি সে ঘরের নতুন রঙয়ের কাজ শেষে হয়েছে, দুদিন হলো। ঘরে রঙয়ের গন্ধ নেই। এখন আর গন্ধ থাকে না রঙে। আমি আর মনিমা বসে কফি খাচ্ছিলাম। মনিমা বসে আছে উইনডো সিটে আর আমি মেঝেতে। মেঝে থেকেই বসে দেখতে ভাল লাগছিল বটবৃক্ষ এর ওয়াল পেইন্টিংটা।
রাত ক’টা বাজে মনে নেই। যে ঘরটায় আমি বসে আছি সে ঘরের নতুন রঙয়ের কাজ শেষে হয়েছে, দুদিন হলো। ঘরে রঙয়ের গন্ধ নেই। এখন আর গন্ধ থাকে না রঙে। আমি আর মনিমা বসে কফি খাচ্ছিলাম। মনিমা বসে আছে উইনডো সিটে আর আমি মেঝেতে। মেঝে থেকেই বসে দেখতে ভাল লাগছিল বটবৃক্ষ এর ওয়াল পেইন্টিংটা।
আমার জিজ্ঞাসা এবং কৌতূহল মিটাতে অনেকটা অনিচ্ছায়
বলতে হলো, কেন ঘর জুড়ে এমন ছেলেখেলা হলো। আমার সাথে বসা মনিমা সহজ মানুষ নয়; তাকে ভেঙ্গে
কথা বের করা কঠিন। হয় সে নিজে বলবে, না হয় বিষয়টা চেপে যাবে। আমার আবার আগ্রহের কমতি
নেই।
অরুণিমা মন্ডল দাস—দ্যা ইংলিশ টিচার
ইংলিশ টিচার
হেঁটে হেঁটে আসা আনমনা তিনতলার “ছাদ”
ইংরেজী নামক চারকোনা “তলোয়ার” দেখলেই—
মাধ্যমিকের উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ’র ডেফোডিলস কবিতাটি
চোখের সামনে ভেসে ওঠে—
সেই ফুলেদের বার বার ঘুরে বেড়ানো
আকাশ বাতাস জুড়ে “ফুলমেলা”।
বসে থাকা, উঠে দাঁড়ানো, ঘুরে বেড়ানো
বড্ড প্র্যাকটিক্যাল “চশমা”র শিক্ষা প্রদান
চোখের গভীরতা এতটাই বেশী—
হারিয়ে যাওয়া “প্রকাণ্ড মারিয়ানা খাত”।
বারবার বই চাপড়ানো আর মিষ্টি মিষ্টি ল্যাডিকানি ব্যবহার—
“খুব ভালো হয়েছে,খুব ভালো হয়েছে”।
সাজেশনের প্রতিটি পিঠে নিমপাতার গন্ধ
পুরোটাই চাপের কঠোর “বাস্তব”—
বাঁকা বাঁকা “টেনস” ভার্ব” সেনটেনস”র
আলপনা।
দুই কানের দুইপাশ দিয়ে
“ইংলিশ” গুলি হ্যাভ” আর
“ইঙ্গ” লাগিয়ে সাদা “সাবানের ফেনা” বনে জানালা দিয়ে উড়ে চলেছে…
কিছু কিছু শব্দ কুয়াশাচ্ছন্ন
দূর থেকে “দীঘা র সমুদ্র দেখলে ঠিক যেভাবে নিজেকে বড্ড অসহায়”
মনে হয়;
ঘন্টা বেজে ওঠে—
কালো কালো অক্ষরগুলো একটু ক্লান্ত
অনেকক্ষণ আছড়ে আছড়ে“ আখের রস” বের করাতে, মাথাগুলো“ সাইলেন্স
জোন”
এ পৌঁছে যায়—
“খোলা হাসিখুশি আধা
রাগি তিনতলা ছাদের ধীর গতিতে প্রত্যাবর্তন
যতটা এনার্জি আসার সময় থাকে যাওয়ার সময়
তাঁর “হার্ট” যেন ক্লাশের এককোণে রেখে যায়—
কপালের কুঁচকানো ফিলিংসের ভিতরে ও বড় “হরপ্পা”র
স্নানাগারে র হদিস পাওয়া যায়।
19 January 2019
গুচ্ছ কবিতা—জকিয়া এস আরা
গিয়ারটা চেপে ধরো
এবার
নিজেকে সামাল দাও, সামিনা,
গিয়ারটা চেপে ধরো,
গিয়ারটা চেপে ধরো,
জীবন
মানেই কী, “কানামাছি ভোঁ ভোঁ যাকে পাবি তাকে ছোও”!
অথবা জাকিয়া যাবে—লং ড্রাইভে?
লং ড্রাইভ, জাকিয়া, লং ড্রাইভ!
অথবা জাকিয়া যাবে—লং ড্রাইভে?
লং ড্রাইভ, জাকিয়া, লং ড্রাইভ!
শিলালিপির
বয়স বাড়ছে, ওজোন—স্তর ক্ষয়ে যাচ্ছে!
আমাদের বদরাগী বাবার নিশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে
উফ! হাসিটা থামাও তো বড্ড কানে লাগছে!
আমাদের বদরাগী বাবার নিশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে
উফ! হাসিটা থামাও তো বড্ড কানে লাগছে!
সামিনা
তুমি কি শমীবৃক্ষ?
যুগ যুগ ধরে একই রকম থাকবে?
দেখছো না সবকিছু কেমন পালটে যাচ্ছে!
মোড়ের দোকানের মতিন এখন হবু শিল্পপতি!
ব্যবসাটা ভালোই বুঝেছে সে!
উফ! হাসিটা থামাও তো,
জীবনের গিয়ারটা চেপে ধরো!
যুগ যুগ ধরে একই রকম থাকবে?
দেখছো না সবকিছু কেমন পালটে যাচ্ছে!
মোড়ের দোকানের মতিন এখন হবু শিল্পপতি!
ব্যবসাটা ভালোই বুঝেছে সে!
উফ! হাসিটা থামাও তো,
জীবনের গিয়ারটা চেপে ধরো!
14 January 2019
গুচ্ছ কবিতা —রিকি দাশ
অদৃশ্য স্রোত
শাড়ির আঁচলে লুকিয়ে রেখেছি প্রশমিত শামুক—মায়া,
নবজাতকের
কান্নার মতন ছিটকে আসা ভ্রুণ হাতে;
একবৃক্ষ
আষাঢ়ী নকশার বেণী খুলে খুলে হতে চেয়েছিলাম গৃহত্যাগী!
পাছে
জড়িয়ে পড়ি দু-হাত ভর্তি তেজস্ক্রিয় চুম্বনে—
তোমার
চোখের গভীরে উষ্ণ নিষিদ্ধ যে নদী;
তার
শিরায় জু্ঁইফুলের সঙ্গম ঢেলে সুধার মতন পান করেছি কবিতা!
পৃথিবীর
হরিৎ পেন্সিলে ভেসে উঠে এক একটি জিয়নকাঠি—
বৈকালিক
দেয়ালঘরে তুলসীতলায় ধুপ—ধুনোর
খেয়ালে;
ঠাঙিয়েছি অস্তিত্বের মোহমুগ্ধ চৌকাঠ!
হারিয়েছি,অতলে
গিয়েছি,দেখেছি; দুপুরের অসুখে বুঁদ হয়ে থাকা স্তব্ধতা—
হেমন্ত
আকাশের কোন গোধূলি গন্ধে গৃহত্যাগী হব বলে বয়ে যাচ্ছি মানবীয় স্রোতে...!