24 February 2019

গুচ্ছ কবিতা—স্নিগ্ধা বাউল



নিত্যপুরাণ
কিছু প্রসন্নরোদ বারান্দা ছুঁয়ে গেছে
রোদকে ভেবে রাখি আটলান্টিক রিজ
স্কাইভিউ বিলবোর্ডের ছবিগুলো নেমে আসে
কুয়াশায় গলা ডুবিয়ে রাখি ক্যাপ্টেনের নামে
শান্তসমুদ্র রুখে দাঁড়ায় দিকভ্রান্ত আমার হয়ে
উত্তালের মতো এমন তীব্র কটাক্ষ যায় রয়ে
শখের রোদ দূরে সরে যায় প্রহর প্রহর মেপে;
নাবিক, তীরের কলকাঠি বাতাসে কাঁপে দেখো
শহরের গম্বুজ নামে তীক্ষ্ণসুচের মতো বুকে
নোনতা বাতাসের হাহাকার নামখানি তার;
কেসে আয়েগা ইতনি হিম্মত, দেখো
রোদ সরে যায়, ছায়ারাগ নামে ক্লান্ত লাগে নিরেট
এক সমুদ্রে দুইজন থাকি দুই সমুদ্র দূরে।   

ফুলের তাঁতে—শুভ্র সরকার




০১
এবং ফুলের অশেষ থেকে জীবন নেমে যাচ্ছে উদ্বেগের গহীন। যেখানে পল্লবের ভীড়ে পিঁপড়ার মৃদু যাতায়াতে— পথ পৃথিবীর মুখে বসন্তের দাগ। ততোদিনে আমাদের স্মৃতিতে শৈত্যপ্রবাহ— তাড়া খাওয়া হরিণের দৌঁড় সরণিতে সমস্ত পরাজিত জীবন।

আধখাওয়া পেয়ারায় কীটের খাদ্য দৃশ্য আমরা তবুও মেনে নিতে পারি না।

অথচ ফুলের তাঁতে বুনে চলেছি শিশুর ভাষা—

চূর্ণীকথা—চূর্ণী



যদি পারো তবে হাতের মুঠোতে আজ
ভরে দিও কিছু প্রিয় কবিতার লাইন।
ব্যথার ওপরে মলম যে সব গান,
বিদায়ের ক্ষতে ঢেলে দিও কিছু তাই।

কারো কারো মন বিষাদের কাছে জমা...
কেউ হয়ত আঘাতের কাছে ঋণী;
যারা ভালোবাসে, তারা ভালোমত জানে
প্রেম আর দয়া এক নয় কোনোদিনই।

04 February 2019

শাহিন চাষী—একগুচ্ছ কবিতা



নিঃসঙ্গ বেহাগ
সূর্যটা পাটে গেল। পাখিরা নীড়ে এলো। আযান হলো। শঙ্খ বাজলো। পথ ঝিমালো। নিশাচর ডাকলো। শিশির ঝরলো। কাছে এলো--অন্ধকার!
জোনাকি জাগলো। ওরা উড়লো। জানালায় এলো। ঘরে ঢুকলো। গায়ে বসলো। ফিরেও গেলো। চিহ্ন রইলো--শুন্যতার, মৌনতার!
তারা ফুটলো। চাঁদ তাকালো। জ্যোৎস্না নাচলো। শিউলি হাসলো। নদী গাইলো। তারা নিভলো। চাঁদ ডুবলো। বুকে জমলো--হাহাকার!
ভোর হলো। বায়ু বইলো। পাখি গাইলো। রোদ জ্বললো। পাখি উড়লো। পড়ে থাকলো--ব্যথাভার!
সজাগ অনুভব। ঘুমহীন চোখ। লোমকূপ ঘিরে--নীল কষ্ট; মৌনতা; শুন্যতা; অন্ধকার; ব্যথাভার; হাহাকার!

ফারিয়া তাবাসসুম — মনিমার বটবৃক্ষ


 
১.
আজকাল দূর গ্রামের কোন কুটির হোক বা প্রাচীন কোন রাজা বাদশাহদের মহল এর ঘর সবটাতেই রয়েছে ব্যক্তির ব্যক্তিতের ছাপ। সেটা চালের গুড়ো পানিতে মিশিয়ে কুটির এর গায়ে আলপনা আঁকা হোক বা নকশা কেটে মহলের দেওয়াল এর সৌন্দর্য্য সৃষ্টি করা হোক। সবটাতেই থাকে ব্যক্তির নিজস্ব মনোজগৎ এর প্রতিফলন বা সুন্দরতার দিক উঠে আসে। এই সময়ে ডিজাইনে ব্যপারে এতো কষ্ট করতে হয় না, হাতে মোটা অংকের কাগজের নোট আর ইন্টেরিয়র ডিজাইনার থাকলেই হল। এমনি একটা সুন্দর ঘর নিয়েই আজকের গল্প।

রাত ক’টা বাজে মনে নেই। যে ঘরটায় আমি বসে আছি সে ঘরের নতুন রঙয়ের কাজ শেষে হয়েছে, দুদিন হলো। ঘরে রঙয়ের গন্ধ নেই। এখন আর গন্ধ থাকে না রঙে। আমি আর মনিমা বসে কফি খাচ্ছিলাম। মনিমা বসে আছে উইনডো সিটে আর আমি মেঝেতে। মেঝে থেকেই বসে দেখতে ভাল লাগছিল বটবৃক্ষ এর ওয়াল পেইন্টিংটা।
আমার জিজ্ঞাসা এবং কৌতূহল মিটাতে অনেকটা অনিচ্ছায় বলতে হলো, কেন ঘর জুড়ে এমন ছেলেখেলা হলো। আমার সাথে বসা মনিমা সহজ মানুষ নয়; তাকে ভেঙ্গে কথা বের করা কঠিন। হয় সে নিজে বলবে, না হয় বিষয়টা চেপে যাবে। আমার আবার আগ্রহের কমতি নেই।

অরুণিমা মন্ডল দাস—দ্যা ইংলিশ টিচার




ইংলিশ টিচার
হেঁটে হেঁটে আসা আনমনা তিনতলার “ছাদ”
ইংরেজী নামক চারকোনা “তলোয়ার” দেখলেই—
মাধ্যমিকের উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ’র ডেফোডিলস কবিতাটি
চোখের সামনে ভেসে ওঠে—
সেই ফুলেদের বার বার ঘুরে বেড়ানো 
আকাশ বাতাস জুড়ে “ফুলমেলা”।
বসে থাকা, উঠে দাঁড়ানো, ঘুরে বেড়ানো 
বড্ড প্র্যাকটিক্যাল “চশমা”র শিক্ষা প্রদান
চোখের গভীরতা এতটাই বেশী—
হারিয়ে যাওয়া “প্রকাণ্ড মারিয়ানা খাত”।
বারবার বই চাপড়ানো আর মিষ্টি মিষ্টি ল্যাডিকানি ব্যবহার—
“খুব ভালো হয়েছে,খুব ভালো হয়েছে”।
সাজেশনের প্রতিটি পিঠে নিমপাতার গন্ধ
পুরোটাই চাপের কঠোর “বাস্তব”—
বাঁকা বাঁকা “টেনস” ভার্ব” সেনটেনস”র আলপনা।
দুই কানের দুইপাশ দিয়ে
“ইংলিশ” গুলি হ্যাভ” আর
“ইঙ্গ” লাগিয়ে সাদা “সাবানের ফেনা” বনে জানালা দিয়ে উড়ে চলেছে…
কিছু কিছু শব্দ কুয়াশাচ্ছন্ন
দূর থেকে “দীঘা র সমুদ্র দেখলে ঠিক যেভাবে নিজেকে বড্ড অসহায়” মনে হয়;
ঘন্টা বেজে ওঠে—
কালো কালো অক্ষরগুলো একটু ক্লান্ত 
অনেকক্ষণ আছড়ে আছড়ে“ আখের রস” বের করাতে, মাথাগুলো“ সাইলেন্স জোন”
এ পৌঁছে যায়—
 “খোলা হাসিখুশি আধা রাগি তিনতলা ছাদের ধীর গতিতে প্রত্যাবর্তন
যতটা এনার্জি আসার সময় থাকে যাওয়ার সময় তাঁর “হার্ট” যেন ক্লাশের এককোণে রেখে যায়—
কপালের কুঁচকানো ফিলিংসের ভিতরে ও বড় “হরপ্পা”র স্নানাগারে র হদিস পাওয়া যায়।