27 March 2018

গুচ্ছ কবিতা- শ্রাবণ সাহা



মরীচিকা
আমি যতবার তোমার দিকে আপতিত হই
তুমি ততোবার প্রতিসৃত রশ্মির মত বেঁকে যাও।
যেনো প্রতিসরণের সুত্র জানা তুমি এক  চতুর রমনী।

ভেবে আমার খুব দুঃখ বাড়ে, আমি আরো আপতিত হয়ে উঠি।
তুমি আরো উপরের দিকে উঠে যাও।

তারপর অনেক দূরে দেখি তোমার উল্টানো ছায়া।
ভাবি ঐখানে রেখেছ জলজ প্রেম।
আমি তোমার ছায়ার দিকে দৌড়াই,
দৌড়াতে থাকি অনন্ত জীবন।

রোড সাইড রোমিও- তামান্না তাবাসসুম




।। এক ।।
শান্তা পাড়ার গলি দিয়ে হেটে স্কুল থেকে ফিরছে, ওর পিছু পিছু তুষার  আর লিমন নামের  দুই ছোকড়া আসছে।
-শান্তা কই যাও?
শান্তা কিছু না বলে এগিয়ে যাচ্ছে
-বল্লানাতো কই যাও?
শান্তা চোখ গরম করে তাকায়- স্কুল ড্রেস পড়ে কি আমি বিয়ে খেতে যাচ্ছি?
তুষার বলে, না তাও শিওর হয়ে নিলাম তুষার আর লিমন এবার শান্তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে লিমন বলে, ওই তুষার তোর ফোন নাম্বারটা দে তো
-কস কি দোস্ত , আমার নাম্বার তোর কাছে নাই ? তাও আবার ক, মুখস্থ করে রাখি
০১৭...
আবার বল
০১৭...
আবার বল
ভাল কইরা শোন যেন অন্তরে গাইথা যায় ০১৭...
শান্তা দ্রুত হেঁটে গলির অন্য মোড়ে চলে যাচ্ছিলো ওকে শুনিয়ে তুষার বলে, রাতে যেন মিসকল পাই  

রাতে মা ঘুমিয়ে পড়লে লুকিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে মায়ের ফোন থেকে সত্যি সত্যিই ঐ নাম্বারে মিসকল দেয় শান্তা নিজের পরিচয় না দিয়ে রং নাম্বার বলে কথা চালিয়ে যেতে থাকে কিন্তু দুদিন পরেই কথায় কথায় তুষার বুঝে যায় এটা শান্তা  আর কথায় কথায় শান্তাও গলে যায় স্কুল থেকে যাওয়া আসার সময় দূরত্ব রেখে হেটে হেটে ইশারায় কথা বলা, রাতে ফিসফিস করে মায়ের ফোনে চুরি করে কথা, তুষারের শান্তাদের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকা; শান্তার বারান্দা দিয়ে ইশারা দেয়া, এভাবে ভালই যাচ্ছিলো দিন 
একদিন পাড়ার মুদি দোকানি শান্তার বাবার কাছে বিচার দেয়, বলে আপনার ছোট মেয়েটাকে রোজই দেখি ভ্যাগাবন্ড তুষারের সাথে কথা বলতে ঐ ছেলেতো ভাল না, দুইবার ম্যাট্রিক ফেল করে এখন সারাদিন খারাপ পোলাপানের সাথে মিশে
সেদিন বাবার হাতে খুব মার খায় শান্তা মা তার ফোন মাথার কাছে নিয়ে ঘুমায় তারপর থেকে কথা বলা বন্ধ শান্তার বড় ভাইয়ের এলাকায় খুব দাপট সে তুষারকে ডেকে একদিন ঝাড়ি দিতেই তুষারও চুপ দুইদিন কান্নাকাটি করার পর  শান্তার এসএসসি পরীক্ষার সময় চলে আসে, সে সব ভুলে পড়ালেখায় ব্যাস্ত হয়ে যায়


সেবক বিশ্বাসের কাব্য ‘ভাঙা বেহালার অন্ধকার’- আবুল কাইয়ুম।




কবি সেবক বিশ্বাস এই সময়ের একজন প্রতিশ্রুতিশীল কবি। অমর একুশে বইমেলা, ২০১৭ উপলক্ষে তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ভাঙা বেহালার অন্ধকার’ প্রকাশ করেছে ঢাকার বিশিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দেশ পাবলিকেশন্স। একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৬ সালে বেরিয়েছিল কবির প্রথম কাব্য ‘পেনসিলে আঁকা জীবন’। প্রথম কাব্যেই তিনি একটি স্বতন্ত্র ধারার ঋদ্ধ কাব্য ভাষায় তাঁর মগ্নচৈতন্য, বৌদ্ধিকতা ও সমাজ সংলগ্নতার ছাপ রেখেছিলেন; তা একজন সম্ভাবনাময় কবির আগমন-বার্তাকেই জানান দিয়েছিল। দুশ্চিকিৎস্য অসুস্থ সভ্যতা, যাতাঁর ভাষায় ‘নীলসভ্যতা’, নানা ভাবে চিত্রিত হয়েছিল তাঁর লেখনীর নান্দনিক তুলির আঁচড়ে। সামাজিক-পারিপার্শ্বিক অন্ধকার নিরীক্ষণ করে কবির আন্ত রসত্তায়কী ভাবে বিষন্নতা জনিত শূন্যবোধ চারিয়ে ওঠে আমরা তারও প্রকাশ দেখেছি কাব্যটিতে। আর আলোচ্য ‘ভাঙা বেহালার অন্ধকার’ কাব্যে অন্ধকার ঠিকই রয়ে গেল, শূন্যবোধের জায়গাটি নিয়ে নিল তার মৃত্যুবোধ। এসব থেকে কি আমরা বলবো কবি তাঁর কাব্যদর্শন এক নিদ্রিত তমসায় আবৃত, তিনি এক অনালোকিত ভুবনের দিকে ধাবমান অসহায়যাত্রী? না, পৃথিবী, সমাজ ও পারিপার্শ্বের দখলদার বিপুল অন্যায় ও অপঘাত তাঁর চিত্তে যে প্রচণ্ড দংশন হেনেছে তারই প্রকাশ নিঃসৃত হয়েছে তাঁর লেখনী থেকে। 

কাজী জুবেরী মোস্তাক- কবি আর কবিতা


হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি আর বাঙালের পিতা 
পাঁচ ফুট এগারো ইঞ্চি ছিলো তার দৈহিক উচ্চতা

আমি বলছি ১৯৭১ এর ৭-ই মার্চের সেই কবির কথা
আবৃত্তি করেছিলো সে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতা ৷

রেসকোর্স ময়দানে উন্মুখ হয়ে আছে দর্শক শ্রোতা
শুনবে কবির মুখেই দরাজ কণ্ঠের বিদ্রোহী কবিতা ৷

লেনিনের মূর্তি- অরুণিমা মন্ডল দাস




রাজনীতি ভাঙা হৃদয়ের আবেগ নিয়ে দাবা খেলে-
রাজা-রাণীরা বিমানেই সংসার করেন-
পর্টি কাগজেই মুছে ফেলেন
           জনগন পিঁপড়ের জাত
নিজেদের বিষে নিজেরাই জ্বলে মরি
কবিত্ব মমত্ব ঐতিহ্য ভাস্কর্য নিজেদের স্বার্থেই খেলার মাঠে পণ্য করি
পিঁপড়েরা মরতেই পারে-
বিপ্লব ঘটাতে বড় স্তম্ভের বাঘরূপী নেতাই প্রয়োজন?

ঈশ্বরের প্রতি করুণা- আকিব শিকদার




তোমার একাকিত্বে আমার খুব করুণা হয়, হে ঈশ্বর।
বারান্দায় লোহার খাঁচায়
দুটো পাখি; ঘুঘু প্রজাতির। মাটির হাঁড়িতে বাচ্চা।
দেখতাম পুরুষ পাখিটা ছানাদের খাওয়াতো
খাদ্যনালী থেকে উগলে দানা। কখনো বা স্ত্রী পাখিটাকেও
একই কায়দায়। ঠোঁটে ঠোঁট ঘষার ছলে
পরস্পর মাথার পালকে দিতো আলতো টান।
এক ধরনের বাঁধভাঙা ভালোবাসায়
নেশাচ্ছন্ন হয়ে ভাবতাম যখন সংসার হবে,
হবে স্ত্রী-সন্তান, তখন আমিও...

অনুভূতির রঙ- নিবেদিতা পুণ্যি সঞ্চারিণী



অদৃশ্য রঙে সাজাই তোমাকে।
চাঁদের মায়াবী আলো
         বিচ্ছুরিত টিনের ছাদে,
বাড়ির দেয়ালে সাদা
         উদ্ভাসিত নিয়ন আলোকে।

06 March 2018

যুগল কবিতা—রিকি দাশ



শব্দঝরা শ্রাবণ
শব্দসমুহের অশ্বমেধ যজ্ঞ চলে শরীরী বৃন্দাবনে।যেন জেগে আছে শব্দঝরা শ্রাবণ অনন্তকাল ধরে ঘোরের, বিস্ময়ের ঝুলবারান্দায়।পোষা গাছের মতন কান্ডে ঝুলতে থাকে অহম, আনন্দ, ক্রোধসমুহ। শব্দমোহের তীব্র হাত যেন ডেকে আনে বহুদুর।বদলায় আকাশ,বদলে যায় শরীরঘ্রাণ। আলিঙ্গন করে শহর ও সন্ধ্যার যত ফলাফল। নড়বড়ে দাঁত নিয়ে সিঁড়ির নিচে নামতে থাকে এক একটি পা!

বিমূর্ত নেশায় আগলে ধরে শব্দজ্বর।
শব্দদ্রোহের ভার নিয়ে বিষণ্ন এক পারফিউমে চন্দন তিলকে কপাল চুইয়ে কাঠ পেন্সিলের দেহ ভস্ম হয়ে যায় শব্দঝরার শ্রাবণে...


যুগল কবিতা—সঞ্চারিণী



নক্ষত্র স্থির 
ধীরে নিঃশ্বাস...
যেন বাতাসও না কেঁপে ওঠে; আশেপাশে
নক্ষত্র হারানো রাত
দেয়ালে কেবল নিজের-ই ছায়া দেখে; জানলার কাছে

মন জুড়ে ভালো লাগা...
তোমার চোখের তারা দু’টো জ্বলে; কী গভীর বিশ্বাসে।
কেমন বদলে দিলে!
মেঘের বেগনি ছুঁয়ে স্বপ্ন এঁকে দিলে চোখের কাজলে।