03 January 2018

গুচ্ছ কবিতা—দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম




ধ্যান
কোন স্মৃতি বিস্মৃতির আনয়ন নয়
অন্ধকার ভেঙে আসা এক হাওয়া
অন্তস্থ গভীরে খুব করে তাড়া
একটা ভয় সুগভীর,
চক্রাকার বেড়ে ওঠা বজ্রপাত মতো
বিদীর্ণ হাহাকার জুড়ে দেয় অকৃত্রিম
তার ভাষা বুঝবার অভিপ্রায় ছেড়ে
ফিরে আসি স্তব্ধতার ভেতর,
আকাশ যেরকম ধুলিসমেত সাজে
সে মতো দৈন্যদশা নিয়ে এক ধ্যানী



যান
একটি মৃতপ্রায় নাগরিক যান শব্দ করে এমন যেন গিরিখাতে একটি বিড়ালের কান্না হচ্ছে খুব।
স্তব্ধীভূত আরেকটি যান গন্ধ ছড়ায় এমন যেন যুদ্ধশেষে একটি বেনামী পাখির শরীরে ধরেছে পচন।
অনেক সন্ধ্যা নিয়ে অনেক অভিমান নিয়ে বসে থাকে একটি মানুষ যন্ত্রের বিকলতার মতো,
যন্ত্র নয় এমনকি পাখি বিড়াল নয়, একা অন্ধকারের ভেতর একটি ছায়া কেবল বসেই থাকে নিজের ভেতর।




সাঁকো
এই সঙ্কোচ তুমি ক্ষমা করো,
বিশ্বাসের প্রশ্ন নয়,
নির্বোধ হয়ে প্রতিবার ফিরে আসি
তীর্থের কাছে এসে নিজেরে দিই হারিয়ে।

যদি তুমি সাঁকো হও,
শাখ বাঁজাতে বাঁজাতে এসে বলো,
সন্ধ্যা নামে প্রায়। চলো ভেতরে যাই।
আমি বলি, সাঁকো ভেঙে দুজন মিলে ডুব দিই! 




থাকা মানে  
আর কিছুটা পথ, কিছুটা ভাব তরঙ্গের নদী,
পেরোনো গেলেই জীবন, সন্ন্যাসে সংগতি!
এই ভাবনা লয়ে আমরা কতক চললাম,
বলিনি বুনো মহিষের মতো মেঘচক্ষু ভয়
আর তাড়িয়ে দিই করছে চলমান বনস্পতি
চলা মানে আশাবাদের টইটম্বুর বর্ষাকাল,
অলীক আকাশ,
আঙুলে আঁকা নীল ময়ূরের যৌবনগতি!
আর কিছুটা ভুখা থাকা, কিছুটা চৈতন্যহীন
হাতের মুঠোয় ধরে রাখা ক্যানভাস, মলিন...




শুভাশিস
ধুলোমাখা পথ, ধুলোয় আবৃত পথের পাশে থাকা ফুরিয়ে যাওয়া এক সিঁড়ি
পাশ দিয়ে চলে যাওয়া অনবরত যান্ত্রিক গর্জনে কান পাতা দায় যখন
তখন যারা নিজেদের নিয়ে বসে পড়ে ভাস্করের স্বর্গ স্যারিডন মতো

সমস্ত ছটফটানি দৃশ্যের আড়াল রেখে নিজস্ব শহরতলির গল্প জুড়ে বসে
দুপুর ফুরায়, আকাশে উড্ডীন সূর্য হেলে পড়ে পশ্চিম তলে তবুও

গল্প ফুরায় না তাদের, কাঁধে মাথা হেলে পড়ে শুধু।
তাদের দৃশ্যপটে আমি একটু জুড়ে দিতে চাই পাখিদের কুচকাওয়াজ, মৃদু বাঁশি স্বর
একটুখানি সবুজ, আর আকাশ আরেকটু চক্রাকারে যেন চাঁদ ফোটায়, তার শুভাশিস




No comments:

Post a Comment