“তোমাদের দুয়ারে আজ
হৈমন্তিক সকাল
নতুন ফসলের গন্ধে-গানে ভরপুর
প্রাণ।
আগুনের শিখায় পুড়েছে আমার
বাড়িঘর,
শীর্ণ কাপড়-জামা, অনাহারি
বাসনকোসন;
শুধু রয়ে গেছে ছায়াসঙ্গী এই
বেহায়া জীবন,
দুচোখের জল আর অনিঃশেষ
কান্নাকাল!”
মানবতার অবমাননায় অনিঃশেষ হয়ে
ওঠে কান্নাকাল; তবু কমে না অসহায় মানুষের আর্তনাদ। শোষণের প্রতিযোগিতা শুরু করে শোষকশ্রেণী। ব্যথিত কবির কলমে তাই লেখা হয়—
"হয়তোবা বেঁচে আছি
দেখতে মানবতার স্খলন
আর আমি প্রজা বাকি সব সামন্ত
মহাজন।"
আগুনের তাপ হতে বাঁচার
প্রলুব্ধ নেশায় যারা জনাকীর্ণ নৌকোয় উঠেছিল; চাতক পাখির মতো চেয়ে ছিল একচিলতে
আশ্রয়ের জন্য, সেইসব আশ্রয়প্রার্থীর করুণ কণ্ঠে ঝরে পড়ে—
"আমিও মানুষ, মমতা না
দাও--ঝেঁটিয়ে না।"
আর এখানে এসেই শাহিন চাষীর
'আমি সাহারা বলছি' হয়ে ওঠে আর্তমানবতার কবিতা। চেনা শব্দের আয়নায় মানবতার এই
প্রতিবিম্বে পাঠককে বিস্মিত করার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন কবি।
কেবল মানবতাই নয়; একাকিত্বের
বিষণ্ণতা আর অতৃপ্ত ভালোবাসাও অনন্য হয়ে উঠেছে শাহিন চাষীর কবিতায়। তাঁর প্রথম
কাব্য 'প্রতিধ্বনি মনে মনে' পড়তে গিয়ে এ সত্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে পাঠকের। পাঠক
টের পান, চাষীর কবিতারা ধ্বনিত হচ্ছে মনের দেয়ালে, প্রতিধ্বনি তুলছে বিবেকের
পরাকাষ্ঠায়।
“আর শুনলাম যথারীতি
সারা রাত্রির প্রতিধ্বনি--
কাঙ্ক্ষিত নম্বরটি এখন ব্যস্ত
আছে
যেমন শুনেছিলাম
সেই আটটা পাঁচে!”
'ব্যথারাত্রি'র বেদনায়
তাই বলে কি ভেঙে পড়েন কবি? না, পড়েন না। তিনি আবার নরম কোমল সবুজ গালিচায় স্বপ্ন
বুনেন। যদিও একদিন—
"সেখানে জন্মালো
আগাছার বিষকাঁটা
কাঠফাটা রোদে পোড়ে স্বপ্নের
বিলাস।"
তবুও হতাশায় আশা ছাড়েন না
তিনি। বরং 'দায়িত্ব অর্পণ' করেন উত্তরসূরিদের ওপর—
"মুক্ত হাওয়ায় সেই
নদী, আকাশ, মাঠ
তোমাদের হাতে বিকশিত হোক
পুনঃ বার, বারংবার।"
কে না জানেন, সাবলীলতাই
সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ অলঙ্কার। আর সেই সাবলীলতার সুতোয় অসহায়ত্বকে, প্রেমপ্রণয়কে, দ্রোহ বিরহকে গাথার মতো করে গেঁথেছেন শাহিন চাষী তাঁর একেকটা কবিতায়। ফলে পাঠ শেষেও
পাঠকের মনে ধ্বনিত হতে থাকে প্রতিধ্বনির সুর। আর তাই কিছু অপূর্ণতা সত্ত্বেও এখানে
এসে কৃতিত্বের সাক্ষর রাখে শাহিন চাষীর 'প্রতিধ্বনি মনে মনে'।
——————————————————————————————————————————
প্রতিধ্বনি
মনে মনে
লেখক: শাহিন চাষী
প্রচ্ছদ: ফারুক মুহাম্মদ
প্রচ্ছদ: ফারুক মুহাম্মদ
প্রকাশক: ছিন্নপত্র
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ১৭ খ্রি.
No comments:
Post a Comment