রফিকের পায়ে চকচকে এক
জোড়া জুতা। সে জুতো পায়ে দিয়ে হাঁটছে না। চুপচাপ এক জায়গায় বসে আছে। এখান থেকে
বাবাকে দেখা যায়। বাবা এক মনে কাজ করছে। রফিক আবার নিজের জুতো জোড়া দেখলো। তার
নিজের পায়ে এমন চকচকে এক জোড়া জুতো! যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। রফিক শুধু বাবাকেই
দেখছেনা, আশেপাশের
সবার পায়ের দিকে তাকাচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষের পায়ে জুতো। সম্ভবত অফিসে যাচ্ছে।
যাবার আগে জুতো জোড়া আরেকটু পরিষ্কার করে নিচ্ছে। আর সে কারনেই বাবা এমন এক মনে
কাজ করে যাচ্ছে।
রফিকের বাবা জুতোজোড়া একটা প্যাকেটে করে এনেছিল। কিন্তু অনেক চকচক করছিল। রফিক
সেদিন ভীষন খুশি হয়েছিল। কিন্তু পরার সময় দেখলো জুতোজোড়া একটু বড়। তাই মা বললেন,
কিছুদিন পর পরিস। তোর পা যখন আর একটু বড়
হবে তখন পরিস। সেই নতুন জুতোর জন্য রফিকের অপেক্ষা ছিল দেখার মত।
রফিক প্রতিদিন সকালে জুতো জোড়া পায়ে গলিয়ে দেখে তার পা বড় হয়েছে নাকি। আজ
কিভাবে কিভাবে যেন এঁটে গেলো একদম। রফিকের খুশি আর দেখে কে?
জলদি করে স্কুলের জামাকাপড় পরে জুতো পায়ে
একদম বাবার কাছে। এসে দেখে বাবা এক মনে কাজ করছে। কোন বড় এক আঙ্কেলের জুতো চকচক
করে পরিষ্কার করে দিচ্ছে।
রফিকের স্কুল ওদের বাসার কাছেই। বস্তির পাশে বড় আপু আর ভাইয়ারা ওদের পড়ালেখা
শেখায়। রাস্তার কাদামাটি পেরিয়ে অনেক সময় নিয়ে রফিক স্কুলে পৌঁছল। কিন্তু ততক্ষনে
ওর জুতো জোড়া আর আগের মত নেই। একটু মলিন হয়ে গিয়েছে। রফিকের মন ভীষন খারাপ। ওর
বন্ধুরা বুঝি আর নতুন চকচকে জুতো দেখতে পারবেনা। কিন্তু তাতে কি??
ও তো জুতো পরেছে। চকচকে জুতো পরেছে।
আচ্ছা, বাবা
কি কখনো চকচকে জুতো পরেছে? রফিক কখনো দেখেনি বাবাকে জুতো পায়ে। শুধু অন্য মানুষের জুতো
চকচক করে পরিষ্কার করে দিতে দেখেছে। রফিকের খুব ইচ্ছা,
বাবার জন্য এক জোড়া জুতো কিনবে। ও যখন
অনেক বড় হবে, তখন ওর টাকা দিয়ে বাবাকে অনেক সুন্দর চকচকে জুতো কিনে দিবে।
এখন ও অনেক পড়ালেখা করবে। অনেক বড় হবে, তারপর বাবাকে আর অন্যের জুতো পরিষ্কার
করতে দিবেনা। বাবা চকচকে জুতো পরে হাঁটবে। আর বাবার মুখে থাকবে রাজা রাজা হাসি।
বাবার সেই হাসিটা দেখার জন্য হলেও রফিক জুতো কিনে দিবে বাবাকে। এক জোড়া চকচকে
বাক্সবন্দী জুতো।
No comments:
Post a Comment