25 January 2018

গুচ্ছ কবিতা- সুলতানা শিরীন সাজি




একটা জীবন খেলার ছলেই
ফুলে ফুলে সাজলো বাগান।
সেই ফুলেরই সুবাস টুকু হাতছানি দেয়।
ফায়ার প্লেসের কাঠের ভিতর জমা ছিল স্মৃতির আগুন।
পাগলপারা একটা দিনের ছবি জুড়ে তুই আর আমি।
হাত বাড়ালেই তোরই আকাশ,তোর চোখে্তে আমার যে জল।
কেউ কারো যে কাছের হবো,হতে হতেই হারিয়ে যাবো।
জানতি কি তুই আমার মত?
তুই বললি তাই,হাত ইশারায় মেঘের কাছে যাই।
একটু পাশে সরতে পারিস? তোর বুকেতে রাখতে পারিস নদী?
ইচ্ছামতো যখন তখন অবাক সাঁতার নিরবধি!
হরিণ ছানার আদর টুকু দিতেই পারিস, ঠোঁটের কাছে একটা পাখি অবাক ডাকে,
আয় শুনি আয়, পাখির গানে; ভোরের বেলা ঘুম চোখেতে,কার কতটা ইচ্ছে নাচে?
আসবি নাকি প্রানের কবি? তোর কবিতায় ধূসর ছায়ায় দূরের কোন গল্প হবো।
একটা দুপুর কেমন করে আমার কাছেই, নাকের নোলক হারিয়ে গেলি।
বাগানটুকুর যত সবুজ,তার চেয়েও তুই যে অবুঝ।
ভালোবাসার কাছে এলে তানপুরা তোর এমন বাজে।
শিখতে গেলাম পাখির কাছে,
পাখি ত নয় তোরই মতন ,উলটপালট স্মৃতির উড়াল।
আমার কাছে তোর বালিহাঁস ভালোই আছে,বুকের ভিতর নদীর কাছে।
তুই শুধু তুই কোথায় থেকে কোথায় গেলি?
একটা জীবন কোন খেয়ালে ইচ্ছেমতন ভেসেই গেলি।
সুনামী আর দাবানলের স্রোতের তোপে,আগুন হয়ে,
একটা জীবন ,
মরীচিকার মতই শুধু হারিয়ে গেলো!



তোমার জন্য
(মৌসুমীকে)
তোমার ইচ্ছে ছুঁয়ে প্রজাপতি উড়ে বেড়ায়।
তোমার চোখের কাছে দোল খায় ইচ্ছেমতি রাজকন্যা।
ভালোবাসলেই শুধু এমন!
এক একদিন এমন অদ্ভুত সব কান্ড ঘটতে থাকে।
তুমি হাত উঁচিয়ে মেঘ এর দিকে ধরতেই ঝমঝম বৃষ্টি নামে এই শীতে।
তুমি বললেই এক ঝাঁক ময়ূরের দল পেখম মেলে ঘুরে বেড়ায়।
তোমার কথার ঝঙ্কারে বেহালার সুর মূর্ছনা হয়।
তুমি হীনা এক একটা দিন,যেনো মরুভূমির পথে একা বেদুইন।
দিন কাটে তো রাত কাটে না।
ভালোবাসলেই বুঝি এমন হয় !
বুকের ভিতর ঝড়ের বাতাস। সাইক্লোন।বন্যা।
মহামারীর মত এগিয়ে আসে সুনামীর সর্বগ্রাসী ঢেউ।
তবু
শুধু ভালোবাসাকে শাকভাজি দিয়ে মেখে,
রসুন ডালের বাগাড় দিয়ে,
ভর্তা আর ডালের বড়ি দিয়ে মাছের ঝোল এ যখন টেবিল সাজাই।
তখন
কাঁটা চামচের দিকে তাকিয়ে শুধু আহত হই।
ক্ষতবিক্ষত হৃদয়টাকে ব্লাক ফরেস্ট কেক বানিয়ে স্ট্রবেরী আর চেরীতে সাজিয়ে প্লেটে রাখতেই, তুমি চিনে ফেলো।
ভালোবাসার ম্যাজিকটুকু যারা যানে,তারাই জানে,
কি করে জীবন্ত হয়ে ওঠে ভালোবাসা।
কি করেই বা সাজাতে হয় পদ্য লেখার খাতা।
আমার অস্থির চোখদু'টোর আকাঙ্খার কাছে তোমার চোখের সংসার।
চলো আজ রাতভর কেবল চোখের শরবত পান হোক!




মধ্য দুপুর আমার পাড়ায় এলে
মধ্য দুপুর আমার পাড়ায় এলে
বাতাস ভাসে মাছ ঝোলেরই ঘ্রাণে।
গাছের পাতার ঝিরি ঝিরি দোলে
উদাস বাউল মন যে উচাটনে!
উঠান জুড়ে লাউ এর মাঁচায় দোল।
কুমড়ো ফুলের বড়ায় হবে ঝোল।
রান্না ঘরের তাকের বৈয়াম যত।
স্মৃতির সুবাস খুঁজছে অবিরত!
মায়ের হাতের পোস্ত দানার ঝালে
সর্ষে ইলিশ আর পান্তা ভাতে ডালে।
মায়ের মতন কে আর বলে খোকা
আয় খেতে আয় চিতই তাওয়ায় সেকা!
মধ্য দুপুর চোখের কোনে জল।
বুকের ভিতর দুখের কোলাহল।
মধ্য দুপুর মায়ের খোলা চুল
হাতের মুঠোয় স্মৃতির জবাফুল!




আত্মার টান
ট্রেনটা চলে যাচ্ছিল যখন।
সিগন্যালে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম আলোর শেষ রেখাটুকু।
প্লাটফর্মে পড়ে ছিল কি কিছু?
চলে যাওয়া মানুষরা পিছনে তাকায় না।
সামনে চোখ
শুধু
অবারিত স্বপ্নের কাছে ছুটতে থাকে তারা।
পিছনে পড়ে থাকা মানুষের চোখের ভিতর বর্ষা নামে।
এখানে মায়া পড়ে থাকে ঘরে বাহিরে ,বাতাসে
এমনকি ঘরের কোনে ফেলে রাখা ছোট্ট মাউথ অর্গানে।
মানুষ হবার তিপ্পান্নটা কারণের একটাতেও খুঁজে পাইনা তাকে আর।
মনে হয় মানুষ না হয়ে একটা গাছ হলে বেশ হতো।
হৃদয় মোচড়ানো গন্ধ মাখানো একটা বাতাবী লেবুর গাছ।
কেউ কাছে থাকে নারে।
প্রিয় মানুষেরা দূর থেকে দূরে চলে যায়।
ঘরের আনাচে কানাচে ছায়ার মত ঘুরে বেড়ায় জলপাই রঙ আদর।
টেবিলের উপর কয়েকটা সেফটিপিন কত মাস থেকে যায়?
সেখানেই স্মৃতি লেগে থাকে।
শাড়ি,ব্লাউজের গন্ধ মাখানো সেইখানে ফিরে আসে কি মানুষ?
বাতাসে ঘুরে বেড়ায় দীর্ঘশ্বাস।
একটা উলের বল ঘুরে বেড়ায় ঘরের এপাশ থেকে ওপাশ।
ত্রিভূজ নাকি বৃত্ত
নাকি আয়তক্ষেত্রের মত ছুটে চলে বল।
ইচ্ছে করে আবার সেই গান বাজুক, সেই লুলাবাই।
আবার সিড়ির উপর থেকে নেমে আসুক আধো আধো বোল।
আবার
কাঁধের কাছে প্রিয় নিঃশ্বাসের মত কেউ!
আবার অযুত নিযুত ভুল!
তবুও
ফিরে আসুক না সেই শুকসারী দিন।
দেয়ালের ক্যানভাসের চোখ তাকিয়ে দেখুক, ওরা আবারো সেই আগের মত।
সিগন্যালে দাঁড়িয়ে চোখের ওপারে দেখি একটা লক্ষীপেঁচা বসে আছে ।
ওর জ্বলজ্বল চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হোক,
ওরা ফিরে আসছে,
ওরা ফিরে আসবে বলেই চলে গেছে।
বাতাসে ভেসে আসছে লাউপাতা ,শোলের ঘ্রাণ।
মানুষকে তার আত্মার কাছে ফিরে আসতেই হয়,
দুইদিন আগে আর পরে!



তুমি
ধূসর,
মায়াময়,
ক্লান্ত শ্রান্ত পথিকের মত
তুমিও একলা ভীষন?
গ্রানাইট,
ভাঙছে,
রাতের নীরবতার ব্রত
তুমিও কি ভাঙছো তেমন?
বেহালার তারে কি করুণ চিৎকার।
শেষ রাতের ট্রেন চলে গেলে ,
সিগন্যালে জমে থাকে জোনাক জোনাকী।
পূর্বাকাশে আলোর মতন ঝুর ঝুর করে ঝরে পড়ে নক্ষত্ররা।
অভিমানী,
চোখের স্বপ্ন আবেশে,
কতটুকু জাগো তুমি নদী?
কত ঝড় ,
বালিয়াড়ি ভেঙে,
তোমার ভিতরে জেগে উঠে পলিমাটি দেশ!
যে চোখে অভিলাষ থাকে।
যে ছোঁয়ায় প্রাণ পায়, মূর্ছা যাওয়া পাখি।
সেই তুমি পাঁজরে ধরে রাখো ভালোবাসার তুমুল আদর।
ভাঙতে ভাঙতেই একদিন ,সেখানেই জেগে ওঠে সে,
এবং
এরপর
সে থেকে যায় নিঃশ্বাসের পরতে পরতে।
একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত সেই একলা তোমাকে নিয়ে লুকিয়ে রাখি বুকের গভীরে।
মাঝে মাঝে রাতের গভীরে,
তোমাকে বের করে দেখি।
চোখ,
কান,
মুখ দেখি।
দেখি, হাতের মুঠো জুড়ে ভোরের সবটুকু আলো।
দেখি কি করে তুমি দিনে দিনে আমি হয়ে উঠেছো এক অচীন অভ্যাসে!



No comments:

Post a Comment