14 March 2019

সামছুন নাহার-গুচ্ছ কবিতা





     মুনিয়ার জীবন
একদিন একটা চড়ুই পাখি এসে বসল
আমার জানালায়...আমি চকিতে চাইলাম...
তারপর কি যেন হল...
চড়ুইরা আমার জানালায় আলো ফেলে রইল।

এরপর আমি এই চড়ুই পাখির কিচিরমিচির
আর শুনতে চাইলাম না...
এ-এক অভ্যাসের মত হয়ে গেল

নিত্যতার ভারে- পরিণতি সংসারের মত।

এর ওপর একদিন এক মুনিয়া এসে উঁকি দিল
আমার বারান্দায়।
আমি চড়ুই ভেবে ভুল করে হেসে তাকালাম...

আটকে গেলাম...
প্রাণপণে আমার চড়ুইভাতির বাঁশির সুরে
সুর মিলাতে যত্ন করে গাইতে গেলাম।
কি হল তখন-
মুনিয়ার জীবন আমি পেলাম।




দেখা হবে সুবিনয়

সুবিনয়, তোমার সাথে একদিন-
আমার ঠিক দেখা হবে।
সেদিন হয়তো গোধূলি রঙা আকাশ
ধূসর নীলে নীলকমলিনী সাজে দিগন্তে বিস্তৃত হবে।
আর আমি দুচোখে উজ্জ্বল বিস্ময় নিয়ে একবার আকাশ আর-
একবার তোমার দিকে চাইব।
কে বেশি ধূসর নীলে সাজিয়ে বাঁজিয়ে প্রতিনিয়ত
বিপন্ন বিস্ময়ে রেখেছে আমার মন-
তাই দেখব সন্ধ্যাতারায়!

সুবিনয়, আমি জানি একদিন-
তোমাতে আমাতে ঠিক দেখা হবে।
ভোরের প্রথম আলোয়, ঘোলাটে আঁধারে।
হয়ত সেদিন সোনারঙা আকাশে একটু একটু
করে লাল টিপের বিন্যাস থাকবে না, কিন্তু-
আলো ফুটতে ফুটতে আকাশ কালো করে মেঘ
ডাকবে মন্দ্রস্বরে।
আমি সেই বিস্মিত প্রহরে তোমার উজ্জ্বল চোখে
বিষাদের গর্জন দেখতে পেয়ে সমস্ত টুকু শুষে নিব আমার বিষাদসমুদ্রে।


সুবিনয়, আসলেই কি আমরা জানি, কার সমুদ্রে কত বিষাদের-
লোনা জল বইছে বেশি প্রতি প্রহর!
তোমার নাকি আমার
?
একদিন তবুও ঠিক দেখা হবে আমাদের।




আমার ভালবাসার গল্পে নতুন কিছু নেই
আমার এই ভালবাসার গল্পে নতুন কিছু নেই। 
আমার এই গল্পে যেমন পাওয়ার কিছু নেই,
তেমনি দেয়ার মতও কিছু আছে বলেও আমি মনে করি না।
 
এইসব গল্পে যা লেখা আছে তারও বাড়াবাড়ি রকম
কোন মূল্য আছে বলেও ভাবি না।
যা থাকার ছিল তাই আছে, যা ছিল না তা নেই।
বড্ড সাদাসিধা বুননে একটু একটু করে গাঁথা হয়ে গেছে,
অসংযত এক অহমিকার শেকল! এই শেকল ভেঙে যাওয়া যায় না।
 
প্রশ্ন করবেন না।
বলেছিই তো, আত্ম অহমিকায় বড্ড বেশি বড্ড জর্জরিত
এই শেকলে জড়িয়ে পরা ব্যক্তিবর্গ।
এই সব কিছুতে, যা হারাবার আমি হারিয়েছি,
নিজস্বতা বা অন্তঃ লীন শান্তির আঁধার আজ অধরা বটে!
 
এই সমস্ত হৃদয়ের গল্পে যদি কারও হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে থাকে,
তবে সেটাও আমার।
 
যদি কাঁচের শত শত টুকরো রক্তাক্ত করে জাঁকিয়ে বসে হৃৎপিণ্ডে,
তবে একটু একটু করে বেঁচে থেকে মৃত্যু বেছে নেয়ার
পথটাও একান্তই আমার।
 
আমার এই গল্পে কারও কোন দায় নেই, কারও কোন ভুমিকা নেই।
 
কারও উদাসীনতায় এক পৃথিবী ভেঙে গড়ার কোন গল্প নেই।
 
যতটুকু মুছে যাবার গল্প, সে কেবল আমার।
এই আয়ু রেখার শেষ দাগটুকুও আমারই হবে জানি।
আমার এই ভালবাসার গল্পে নতুন কিছুই নেই,
যাতে আপনারা এক মুহূর্ত থমকে যেতে পারেন।
পড়তে পড়তে বিচিত্র কিছু যে আবিস্কার করতে পারবেন
পাতা উলটে তার সম্ভাবনা একদম শূন্য বলেই জানবেন;
 
তার চেয়ে বরং পাতাটা বাদ দিয়ে চলে যেতে পারেন।
 
অহেতুক সময় নষ্ট, এতটুকু আমি বেশ বলে দিতে পারি।
 
তবুও যদি অধিক কৌতূহলবশত এক পলক থেমে যান,
দেখতে পাবেন এক আকাশ জলে সমুদ্র হয়েছে বটে
কিন্তু সেখানে নোনা স্বাদ নেই। কিছু ভাসেও নি কখনো!
অতঃপর, বলেছিই তো আগে এই গল্পে কিছুই নেই,
শুধু অনেক অনেক রাতের নির্ঘুম ভেজা প্রহর ছাড়া!
এ গল্পে কারও কিছু যায়নি! কারও কিছু হারায়নি।
যা যাবার আমার গিয়েছে, যা হারাবার আমিই হারিয়েছি!
হৃদয়ের শান্তি এক ফুৎকারে আমিই জলাঞ্জলি দিয়েছি কেবল!





অবাধ্য ইচ্ছেগুলো
ইচ্ছে করে খুব করে তোমায় দখল করি,
যেমনটা দখলে আছে বুড়িগঙ্গা!
প্রতিনিয়ত একটু একটু করে প্রোথিত হই তোমার মাঝে,
যেমনটা আছে পুরোন দালান গুলোতে বট অশ্বথ এর ছায়া!

খুব ইচ্ছে করে তোমার মাঝেই লিখি সর্বনাশ,
গভীরতম ক্ষত যতটা করা যায় করে নিজের মাঝে,
এই শহরের বুকের মত। দিনগত খুড়ো খুড়িতে এ শহর ক্লান্ত,
থাকবে না শুধু আমার।

খুব ইচ্ছে করে দিনমান তোমায় ঘিরে রাখি,
আমার সুবাস ঘিরে রাখুক তোমায় নেশার মত!
বন্ধ চোখেও ছবির মত ভাসতে থাকুক আমার হাসি!
কপোলের ওই তিলটা টানুক তোমায় সারা বেলা।

খুব ইচ্ছে করে অন্য কেও কখনো না ছুঁয়ে যাক তোমায়,
আমার মনে খেলে যাক তোমার মন!
খুব ইচ্ছে করে প্রতিদিন দিনপাত এর হিসাবে
 আর কোথাও না থাকো তুমি,বাজারের দামে
কেনাবেচায় যেন উদ্বেলিত না হয় আমাদের
একান্ত
 হিসাবখানি।


No comments:

Post a Comment