09 June 2018

গুচ্ছ কবিতা—সম্পা পাল



কাল্পনিক পৃথিবী
সামনে একটা কাল্পনিক লম্বা রাস্তা
সেখানে অনেক নির্জনতা, আর ধুপছায়া।

এরপরে আরও একটা রাস্তা সেটাও কাল্পনিক
রাস্তার ওপাশে একটা দরজা সেটাও কাল্পনিক।
দরজার ওপাশে কাল্পনিক পৃথিবী
কাল্পনিক পৃথিবীতে একটা কাল্পনিক চরিত্র।
                     কবে দেখা হয়েছিল?
গত জন্মের কোনো জীবাশ্মের ভীড়ে।

জীবাশ্মগুলোর ছিল সব কাল্পনিক।
দৌড়ে এলাম, সামনে লম্বা রেসের ঘোড়া।
ঘোড়াগুলো কাল্পনিক, মাঠটা কার্পেটে ঢাকা।
বারোটা ঘোড়ার বাচ্চা জন্ম নিলো।

তারপর একদিন হঠাৎই কাল্পনিক পৃথিবীতে বড়ো হয়ে ওঠা
সব কল্পনার মাঝে একদিন সেই কাল্পনিক চরিত্র।
চারিদিকে কাল্পনিক কুয়াশা।
আমি এগোচ্ছি, আমি ও সে দুজনেই কাল্পনিক।



চিঠি
দৈনিক মহানন্দায় নতুন ঢেউ
আর ওর বুকে নতুন চিঠি।

কে লেখে সেই চিঠি?
কেইবা তার প্রাপক?

অনেক স্বপ্ন আর শব্দ প্রত্নতত্ত্বকে ভেদ করে।
পোড়ো বাড়িতে ইলেকট্রিকের আলো।

অশরীরী শরীর খুঁজে ফেরে,
শরীর খোঁজে আত্মা।
আত্মারা বন্ধ দরজায় গুমড়ে মরে,
দরজা কান পেতে দেয় ডোরবেলে।

ডোরবেলের অপেক্ষা অবগুণ্ঠিত নারী
নারীর অপেক্ষা খোলা আকাশের উড়ন্ত চিল।

সত্যিই সে চিঠির কোনো লেখক নেই, প্রাপক নেই।
তবু সে চিঠি রোজ লেখা হয়।



ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র
আজকের সারাদিনে তুই অনুভবেই ছিলি।
বহুবার কাছে এসে ফিরে গেছিস।

কে তুই? ধনতন্ত্র না সমাজতন্ত্র?
কোনো তন্ত্রেই তো আমি বিশ্বাসী নই।
 
ধনতন্ত্র পৃথিবীর বেকারত্ব ঘোচাতে পারেনি।
সমাজতন্ত্র পৃথিবীকে সমতা দেয়নি।

দ্বন্দ্বটা রোমে রোমে বেচে আছে।
এপার ওপার কখনো এক হবার নয়।

তবু দিনের শেষে সেই চাহিদা।
প্রতিরাতে ব্যর্থতা পুড়ছে ,ছাই হয়েছে,
তাতে ধনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র কেউ বাদ যায়নি।

আয়, আজ এ-একলা দুপুরে
এঁকে দে আমার নগ্ন দুহাতে দুটো নদী।
তবে ভলগা কিংবা মিসিসিপি নয়।
                            
                            

                                হলুদ জামদানি
হলুদ জামদানিতে তখন সকালের রোদ।
পুজো আছে, প্রার্থনাও আছে।
শাড়িগুলো ভাজে ভাজে আলমারিতে।

শুধু কয়েকটা বছর নেই, বছরের হিসেব নেই।
লড়াইয়ের হাতে কোনো পতাকা নেই,
গলার কঠিন শব্দটা আজ শান্ত।

পাশের বাড়ির তিনতলায় এখনো কবিতার রিহার্সেল হয়।
রাত আটটার গলি রাস্তাটা তখন শুনশান।
ফাঁকা রাস্তায় জমা হয় একটা দুটো করে শিমুল পাতা।

পাতাদের অনেক কথা আর মাখামাখি।
একে একে কবিতারা পার হয়ে যায়
পার হয় কবিতার লাইন।

হলুদ জামদানি তখনও হলুদ।
শুধু হাওয়ারা বদল হয়।




অঙ্ক ও জীবন
এ-অঙ্কে কার কী মেলে?
হাজারো জোড়ালো যুক্তি একটা জায়গায় থেমে।

মনস্তত্ব এখানে নির্বাক, সমাজতত্ত্ব দিনে দিনে বদলে যাচ্ছে।
রাজনীতির মঞ্চে রক্তের দাগ।

আসুক ফিরে একটা ঢেউ
তিস্তাকে অনেক দিন দেখেনি টেমস।

চাওয়া পাওয়া মিশে গেছে কোনো এক জুলাইয়ের বৃষ্টিতে।
বৃষ্টির দাগ এখনো লাল কার্পেটে।

অঙ্কটা হয়তো মেলাতে পারবো না
ওতে অনেক ভীতি আর এড়িয়ে যাওয়া।

আসুক সংস্কৃতের কয়েকটা শ্লোক
ফালাফালা করে দিক অঙ্কের খাতাটা।





No comments:

Post a Comment