13 January 2019

গুচ্ছ কবিতা —সৈয়দ আহসান কবীর



চুপকথায় ডুবে আছে সময়
এভাবে কীভাবে চলে? চুপকথায় ডুব আছে সময়
ক্লান্ত হয়ে পড়ে আছে দিন, দুপুর; সাঁঝ—রাত—ভোর
শব্দহীন হয়ে আছে আমার যতো কবিতারা
গল্প বলে না কথা আর আগের মতোন।

চাঁদের নরম আলোয় বসে বসে আজ রাতে খুব করে মনে পড়ে—
পরিপাড়ার যাদুর শহর; শহরের অলিগলি, রাঙা ধুল্—পথ।
যে শহরের সিঁড়ি বেয়ে প্রতি রাতে মেঘের খাঁজ চিড়ে
নেমে আসা নীল ফুলপরি পেড়ে দিতো জোছনামাখা পাঁচপাতা—তারাফুল,
কৈশোরে তার শরীরের ভাঁজে ভাঁজে আমার ইচ্ছেরা খেলা করে যেতো
তার আনা চার-আনার সলতে ভরা কুপিবাতির আলোয় পালিয়ে যেতো
রাতপথে লুকিয়ে থাকা খোক্কসী আলেয়ারা,
আর জোনাকের দল আনন্দে উড়ে ঘুরে দুলে দুলে
নেচে বেড়াতো আমাদের চারপাশ
কবিতার ছন্দে, গল্পের কথায় সারা রাত এক হয়ে যেতো
তারপর ভোররাতে মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে
ঘুমপাড়ানি গানে দু’চোখে টুপ করে পেড়ে দিতো আরো এক ঘুম।

ঘুম ভেঙে উঠে তার স্পর্শ পেতাম।

আজ আলোময় চাঁদ উবে গ্যাছে
লালসিটে কালরাত্রির বুকে সেঁটে আছে তেলসিটে ময়লার সলতেরা।
আলো হাতে সেই পরি এ শহরে আর আসে না এখন
স্বপ্নরা তাই হারিয়ে গ্যাছে, অথচ আমার শরীরে ভরা যৌবন।
তবু তার পথ চেয়ে তাকিয়ে থাকি, থাকতে থাকতে দিন ক্লান্ত হয়ে যায়।
ক্লান্ত হয়ে পড়ে সোনালু—দুপুর; সাঁঝ-রাত-ভোর।
পরি আসে না, নীল নীল ঘুমে ভেসে যায় যাদুর শহর।
 
পরি আসে না।
নির্বাক তাই আজ কবিতারা,
গল্পও বলে না কথা আগের মতোন।




তখন চোখে শীত জড়িয়ে ছিলো
তখন চোখে শীত জড়িয়ে ছিলো
কুয়াশায় সব হয়ে পড়েছিলো আবছা;
তাই ভালো দেখিনি কিছুই।
দেখতে পাইনি ফুল, তোমার দু’কূল
যৌবনের খাঁজে-ভাঁজে উতলে গড়িয়ে পড়া
মধুতে মধুতে মাখা রঙিন বুনন।
যে বুনন—দুলে ফুলে ফুলে উড়ে ঘুরে
মধুচোষা ডেকেছিলো সবুজ ফড়িং,
নাকি আজ সেই ডাকে খুব ঘেষে বসেছিলো
মগডালে জোটে জোটে হলুদ টিয়া!
দেখিনি কিছুই
দেখিনি আমি—
ক্ষমা কোরো, ক্ষমা করে দিও।

ক্ষমা করে দিও হে প্রেয়সী আমার! ক্ষমা করে দিও;
ক্ষমা করে দিও ভুল, দোষের নকুল,
ক্ষীণদৃষ্টিদোষ, সাথে দূরদৃষ্টিতে যতো
আর সাথে ক্ষমা কোরো আমার লজ্জাকে...

তখন ভালো দেখিনি কিছুই;
চোখে শীত জড়িয়ে ছিলো, কুয়াশায় সব—
হয়ে পড়েছিলো ঝাপসা।



আমি কবি, মরতে আসিনি
মেরিডিথের কথা খুব করে মনে পড়ে—
‘সাহস নিয়ে বেঁচে থাকো, না হয় মরে যাও।’

অথচ আমি কবি, মরতে আসিনি।
এসেছি—বর্ণে, অক্ষরে, শব্দে শব্দে কথা বাঁধতে,
কবিতার শরীরে পর্বে পর্বে হেঁটে হেঁটে
ভালোবাসাবাসি-প্রেম বোঝাতে, বুঝতে।
এসেছি স্নেহ বোঝাতে; দ্রোহ—ক্ষোভ—সমাজ তুলে ধরতে
কালোর মাঝে আলো আর আলোর মাঝে কালোর ইঙ্গিত দিতে।

আমি তো ভেসে যেতে আসিনি,
হাসাহাসি আর আনন্দের বাণ তোমার বুকে বিঁধে দিতে, আমার বুকে বিঁধে নিতে এসেছি;
এসেছি সাহস নিয়ে বেঁচে থাকতে—ইহলোকে সব সময়,সর্বক্ষণ।

অথচ আজ খুব করে মেরিডিথের কথা মনে পড়ছে
কে য্যানো বার বার কর্ণকুহরে ফিসফিস করে বলছে—
মরে যাও, মরে যাও, মরে যাও...

আমি তো কবি—সত্তায়, মননে, মগজে
আমার আপদমস্তক কবিতার কথা বলে।


আমি মরে যেতে আসিনি।




No comments:

Post a Comment