22 April 2018

পলিয়ার ওয়াহিদ—এর গুচ্ছ কবিতা



নিরাকার
আমি যার প্রেমে পড়ি-
তার আছে ফলের দোকান

যে আমার প্রেমে পড়েছিল-
তিনি এক মাংসের দোকানি

আমাদের ভালোবাসার যিনি মালিক-
তার আছে পাখির আড়ৎ
খাঁচার স্কুলে তাই ভর্তি হচ্ছে পালক!
আমরা কেউ স্বাধীনতা চাইনি।




জীবনের আহ্লাদ
মানুষের উচিত
মাছেদের মাতৃভাষা শেখা
জানা প্রয়োজন
গাছেদের নিরবতা
পাখিদের কলরব শেষে
পানির কল্লোল
ঢেউয়ের মাতৃভাষা নৃত্য
ফেনিল স্বভাব

তোমার হাসি ব্যঞ্জনামুখর মুগ্ধতায়
সময়গুলোর ঠোঁট ফেটে যায়
কৌতুকের ছলে তুমি কি ভুলিয়ে দিলে
আমার প্রকৃত জীবনের স্বাদ!




 
ওয়াহিদ যার শিরোনাম
আল্লার মতোন আমি
নিজের প্রশংসা করতে শিখেছি
আপনি বরং নিন্দাগুলো
গুজে দিন আমার ফুলেল মতোন
লাল রক্তের ছিনায়।

আর নিন্দা করতে করতে
ঘেন্না জমতে জমতে
থু থু গিলতে গিলতে
এক আমি’কে মিশিয়ে দিন
সকল আমি’র ভেতর!



 
ক্ষমতা ও দায়িত্ব
(আল মোমেন ভাইকে)
ক্ষমতা হলো, কাকে কতো ক্ষতি করা যায়!
আমরা ক্ষমতায় এসে হ্যানো ত্যানো করেছি
আমরা ক্ষমতায় গেলে ওমুক তমুক করবো
আমরা ক্ষমতায় থাকতে ঘটি-বাটি করেছিলাম!
দায়িত্ব শব্দটা তোমরা ভুলে গেলে?
আর কেউ এই শব্দ ব্যবহার করলে
দেশের মালিকানার অধিকারে
তাদের নামে আমরা মামলা করবো।

ক্ষমতায় পৃথিবীতে ক্ষতির কারণ!

আমরা তোমাকে দায়িত্ব দিবো
দায়িত্ব বিষয়টা দেবার
ছিনতাইয়ের তো নয়ই
তোমরা তার উপযুক্ত হও, পেয়ে যাবে
অথচ তুমি জোর করে দায়িত্ব নিলে!

দায়িত্বের জন্য মৃদু ক্ষমতা প্রয়োজন
কারণ
আমি চুরি করলে জরিমানা করবে
খুন করলে গারদে ভরবে
তদ্রূপ
তুমি চুরি করলে আমরা থাপ্পর মারবো
ডাকাতি করলে লাথি মারবো
খুন করলে ফাঁসি দিবো
ভুলে যেও না, দায়িত্বের স্বার্থে তোমাকে ক্ষমতা দিয়েছি
কিন্তু তুমি ক্ষমতার জন্য দায়িত্ব বাগিয়ে নিলে!

দায়িত্বের চওড়া কাঁধে একদিন ক্ষমতা উঠে বসে
তুমি তাকে স্নেহের সহিত নামিয়ে দাও
তা না হলে এই ক্ষমতায় তোমার ঘাড়ে মল ত্যাগ করবে!
লঘু প্রশ্রয় কখনো শুভফুল ফোটায় না।
একদিন সেই প্রশ্রয়ের ফুল, ফল হয়ে
তোমার মাথা থেকে পায়ে গড়িয়ে পড়বে।



নবি
দাউদ নবীর সুরের মতোন পান
করবে আমার এ কবিতা
সমুদ্রের মাছ।




ঈর্ষা নবির মা
মহুয়া কলঙ্ক চেয়েছিল, বুঝি প্রেম তার মেয়ে
পরম চিবুকে ঝুঁকে খুঁজেছিলো আপনার ছায়া
বলতো আমাকে কানে কানে আমি হবো যিশুর মা
তুমি হবে দৃশ্যহীন বীর্যের মৌমাছি ঈর্ষা নবির পিতা!

আমাকে বলতো আরো, রীতিনীতি আরো যতো দায়
ভেঙে কেন ফেলবো না নাটকের মহড়ার তাবৎ স্বভাব
তুড়ি মেরে উড়াবো তো মন আর শরীরের প্রাণ
বলবে লোকেরা ঝরাফুল মিটিমিটি খসাবো তারা

ফলের আলেখ্যে ডুবে প্রভু আদি তার দরজায়
হবো মাতা তার, ক্রুশে যে ছেলে পেতে দিতে পারে একক মাথা
নিজের কথায় যার মনে নেই হবো তার উত্তর সাধক
বিলাবো আখের সব হিসেবের যতসব ক্ষত





মহুয়ার ভেলা
কোনো শব্দে তোমাকে বন্দী করা গেল না
এতো সামান্য করে কখনো ভাবিনি আমি
স্বপ্নে বেহুলার ভাসানে চিৎ হয়ে শুয়ে আসো তুমি
কপাল গুণে হয়েছি আমি লখিন্দর!

পৃথিবীর চাদর থেকে তোমাকে বেছে বেছে নিই
সমস্ত শরীরে যেন তুমি একফোঁটা তিল!
যার লালিমা শোভায় জেগে ওঠে ঘুমন্ত শিবির।




বোতলে আটকোনো ভূত
ছটফট করা একটা সময়
দমবন্ধ করা একরাশ মানুষেরা
কোথাও নেই কুলি-কুচির মতো সামান্য পানি!
পুকুরগুলো ক্রমেই চোখের ভেতরে চলে এলো
মানুষের চোখে তবু ধুলো আর আবেদনহীন মসলায় রান্না হচ্ছে।

চিকচিক করা কষ্টের ঘামগুলো সস্তা
ও ভিখারীর করুণার মতো ধুকছে
শহরেও আর লোমওঠা কুকুর নেই
নেই শান্ত কোমল বিড়াল!
যৎসামান্য কাকের দেখাও বড্ড দূরহ
প্রাণীর জন্য কতোটা অনিরাপদ এই নগর!

সামনে ছুটতে গিয়ে পিছনে ঝুকে পড়ছে
জীবন বোতলে আটকানো এক একটা ভূত যেন
যার বিনাশ নেই, নেই মুক্তিও!





সেরা কবিতার গান
আমরা তো জানি কেউ না কেউ
ছেনে ফেলেছে সেরা কবিতার সিনা
কেন তবু এই মিথ্যে আস্ফালন?
শেখ সাদী কিংবা জালালুদ্দিন রুমি
আল মাহমুদ বা শহীদ কাদরী
গ্যেটে কিংবা রবীন্দ্রনাথ
আলাওল থেকে নাজিম হিকমত অথবা কাহলিল জিবরান
পাবলো নেরুদা কিংবা কাজী নজরুল ইসলাম
বুদ্ধদেব বসু বা এজরা পাউন্ড
সুকান্ত, হাসান অথবা শেলি ও জন কিটস
সৈয়দ আলী আহসান নাকি ইয়েটস
শামসুর রাহমান নাকি ইলিয়েট
আমরা সকলে তো লিখছি প্রেম ও মানবতার গান
এমনকি আমাদের দুই উরুর মাঝে
স্থাপন করা মুখফাটা মরমী একই কলম কিংবা কামান
তাদের কালির রঙও অভিন্ন
আফ্রিকার প্যাপিরাস বা কালি
এশিয়ার অক্ষর আর ইউরোপের মেশিনে
আমাদের পরষ্পরের সভ্যতা দাঁড়িয়ে আছে
আমরা সকলে ভিন্ন ভিন্ন সময়ের বিদ্রোহী দাস
আহারে তুমি কি বলো ট্রামে হুঁচোট খাওয়া বোধ
বনলতার প্রেমিক জীবনানন্দ দাশ?



No comments:

Post a Comment