15 June 2016

শর্মিষ্ঠা ঘোষ






অপেক্ষা কর
তুমি টেনশান কোরো না, বাবা। আমি এখন হারিয়ে গেলেও ফেরার জন্য পথ খুঁজতে পারি। হয়তো কানাগলিতেও ঢুকে পড়ি সময় সময়। হতাশ লাগে। আবার ফিরে যাই অকুস্থলে। নতুন দিকে এগোতে থাকি। হ্যাঁ, বাবা। রোদ্দুরে কষ্ট হয়। বৃষ্টিতে মিশে যায় এক্সটা নমক। শীতে তো জানোই আমার গলার প্রবলেম। আমি একহাতে ফোঁপানি আটকাই, আরেক হাতে মুঠি পাকাই। চশমার কাঁচ মুছি। কপালের ঘামে বিধিলিখন ধেবড়ে যায়। কালো অক্ষর লাল হয়ে যায় রগরাতে রগরাতে। তুমি ভাবছ, আমি ভয় পাচ্ছি? না, বাবা, আমার তো কিছু নেই যা কেড়ে নিতে পারে অন্য কেউ। ঝাড়া ঝাপটা। বাবা, না না, একদম কাঁদবে না তুমি। আমি পারবো। আমি ফিরতে পারবো। একটু দেরী হতে পারে। একটু কেটে ছঁড়ে যেতে পারে। আমি একটুও থমকাই না আজকাল এসবে। কত সময় মনেই থাকে না যন্ত্রণাবোধ। খালি একটা কোয়েস্ট দেখতে পাই আমি। পথ, একটা ফেরার পথ। তোমার কাছে যাবার। আবার দেখো, তোমার হাত ধরে ছোটবেলার মত বেড়াতে যাবো। তুমি আমাকে তারা চেনাবে। তুমি ফাইভস্টার নিয়ে আসবে আমি গুড গার্ল হয়ে থেকেছি বলে। আমি তোমার মাথায় বিলি কেটে দেব। আমি চায়ের কাপ আর মুড়ি এনে ডাকবো তোমাকে। তুমি গীতাঞ্জলিআর নৈবেদ্যথেকে কবিতা বলবে। আমি সঞ্চয়িতার। আমার ফেরার জন্য আর একটু অপেক্ষা কর বাবা। হ্যাঁ, আমার একটু দেরী হচ্ছে বটে, আমি কিন্তু ফিরবোই। ঘুমিও না প্লীজ। আমায় তবে গল্প বলবে কে? আমার গল্পগুলোই বা কে শুনবে, বাবা



মেলোডি
এবং তোমার বিটার লাগছে। ঘনিষ্ঠতম মুহূর্তে অতীতের কোনো তিক্ততা ঘাই মেরে যায় আমার জিভের ডগায়। বিষাক্ত তির বিঁধে পিগমি মানুষ রক্তাক্ত হতে থাকি। লাগামছাড়া ক্রোধ পাশুপাত অস্ত্রকেও হার মানায়। বরফিলি উপত্যকায় কোন গুহা মানবের পায়ের ছাপ একটা সংগ্রামের শেষ চিহ্ন রেখে গেছে ভাবতে ভাবতে ডারউইনবাদের ফলিত প্রয়োগ নিয়ে ঘিলু গোবর করে ফেলি। বোকামির ললিপপ চুষতে চুষতে বেশ ক্ষুদিরাম ফিলিং হয়। মুখপোড়া মনটা হ্যাংলার মত তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে। এ গল্পের উপসংহার হাস্যকর। একটা জোকার আর একটা বাঁদর দিনশেষে মুখোমুখি বসে থাকে। চুপচাপ। পিটপিটে চোখে দুজন দুজনকে মাপে। কাছে আসে। এ ওর নিঃশ্বাসের শব্দ গোণে। খিদে ভুলে যায়। তেষ্টা ভুলে যায়। কেউ গুনগুন করছে মহন্মদ রফির রোম্যান্টিক মেলোডি। গলা ব্যথা করে ওদের। গান গাইতে ঠোঁট ফাঁক করে। একটা গোঙ্গানির মত কিছু ছিটকে আসে। এ ওর পিঠে হাত রাখে। হু হু করে কান্না বেরিয়ে আসে। হাল্কা হয়ে যায় দুজনের মধ্যেকার পর্দা। পরিষ্কার দেখতে পায় ওরা একদম অবিকল দেখতে।




সম্পর্ক
যে গল্পের খালি বিস্তার থাকে সে গল্পের নাম তুমি
প্রতিটি সম্ভাব্য বিপর্যয়ের শব্দ থেকে ইউ টার্ন নাও
আমিও মনে করতে পারি না বিলীয়মান যতিচিহ্ন
আমাদের সম্পর্কে সকাল হয়ে যায় যখন তখন
বিশ্বজনপদে পা ফেলা আধা নামে ডাকা প্রিয়তা
কাঁধের তিল কিম্বা নাকের আঁচিলের মতই অবিচ্ছেদ্য
স্বভাবজাত হুজ্জুতি থেকে বের হতে সময় নিই অনেক
এর মানে এই নয় নোঙ্গর কেটে ভেসে গেছি আঘাটায়

অসমাপ্ত পড়ে থাকে আদরভাষ আরেকটা লাভামুখের জন্য



No comments:

Post a Comment